মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
যখন কোনো গোষ্ঠী ইসলাম, কোরআন, মহানবী (সা.) ও ইসলামের অন্যান্য বিষয় নিয়ে উপহাস করে অথবা কোনো মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালায়, তখন মুসলিম বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ওই গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার অথবা তাদের ব্যবসায়িক পণ্য বর্জন করার দাবি তোলে। তবে ইসলামে যেহেতু মুসলিম-অমুসলিম সবার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য অনুমোদিত, তাই কেউ কেউ দাবি করে থাকেন, ইসলামে বাণিজ্যিক বয়কটের কোনো ভিত্তি নেই; এটা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে যায় না। ফলে বিষয়টি নিয়ে কারও কারও মনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আসলেই কি ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই? ইসলামের নীতিমালা এবং ইতিহাস কী বলে এ ব্যাপারে, আলোচ্য নিবন্ধে তা-ই আলোকপাত করা হয়েছে।
অমুসলিমদের সঙ্গে (স্বদেশি হোক বা ভিনদেশি) সব ধরনের বৈধ বেচাকেনা ইসলামে অনুমোদিত। রাসুল (সা.) মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতেন। একইভাবে বাইরে থেকে আসা জনৈক পৌত্তলিক বণিকের কাছ থেকে ছাগল কিনেছেন এমন বর্ণনাও এসেছে হাদিসে। (বুখারি ও মুসলিম) তবে যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধাস্ত্র তৈরির কাঁচামাল এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাজে আসে এমন সব বস্তু অমুসলিমদের কাছে বিক্রি করা হারাম। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘কাফিরদের সঙ্গে সব ধরনের বৈধ বেচাকেনা সর্বসম্মতিক্রমে জায়েজ, তবে যুদ্ধের অস্ত্র ও সরঞ্জাম এবং তাদের ধর্ম ও মতবাদ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে এমন বস্তু বিক্রি করা জায়েজ নয়।’ (শরহে সহিহ মুসলিম) আল মাজমু গ্রন্থে তিনি একে সব মতের ফকিহগণের সর্বসম্মত মত বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লিখিত মাসআলা থেকে ইসলামি শরিয়তের একটি মূলনীতি স্পষ্ট হয়। তা হচ্ছে, যে ব্যবসায়িক লেনদেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কাফির গোষ্ঠীকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে, তা জায়েজ নয়। সুতরাং যেসব কোম্পানি ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে অর্থ সরবরাহ করে অথবা মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতনে সহযোগিতা করে, প্রতিবাদস্বরূপ তাদের পণ্য বর্জন করা শুধু বৈধই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে মুসলমানদের ইমানের দাবিও বটে। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘যত পন্থা ও পদক্ষেপ (অর্থনৈতিক, সামাজিক বা অন্য যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ), যা মুসলমানদের উপকারে আসে, ইসলাম ও শরিয়তের ওপর আগত যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করে, মজলুম ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করে এবং সত্যবিরোধী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে, তা উত্তম ও উপকারী।’ (ইগাসাতুল লাহফান)
অমুসলিমদের সঙ্গে (স্বদেশি হোক বা ভিনদেশি) সব ধরনের বৈধ বেচাকেনা ইসলামে অনুমোদিত। রাসুল (সা.) মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতেন। একইভাবে বাইরে থেকে আসা জনৈক পৌত্তলিক বণিকের কাছ থেকে ছাগল কিনেছেন এমন বর্ণনাও
এসেছে হাদিসে।
মাওলানা আশরাফ আলি থানভি (রহ.) বলেন, ‘বয়কট ও অসহযোগ আন্দোলন মৌলিকভাবে যুদ্ধ নয়, তবে তা শত্রুকে দুর্বল করার একটি কৌশল, যা মুবাহ তথা বৈধ।’ (হাকিমুল উম্মত কি সিয়াসি আফকার) মাওলানা জফর আহমদ উসমানি (রহ.) বলেন, ‘যদি কোনো বৃহৎ স্বার্থের কারণে শত্রুরাষ্ট্রের পণ্য ছেড়ে দেশি পণ্য ব্যবহার করা হয়, তবে সেটা বৈধ। বরং বৃহৎ স্বার্থ বিবেচনায় এমনটি করা উত্তমও বটে। (ইমদাদুল আহকাম) সমকালীন আরব আলিমদের মধ্যে শায়েখ আবদুর রহমান ইবনে নাসির আস-সাদি (রহ.), শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.), আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে জিবরিন, ইউসুফ আল-কারজাভি (রহ.), শায়েখ হামুদ ইবনে উকালা আশ-শাবিসহ আরও অনেকে উপরিউক্ত ফতোয়া প্রদান করেছেন। (আল-মুকালামাতুল ইকতিসাদিয়্যাহ)
শত্রুপক্ষকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য বাণিজ্যিক বয়কটের একাধিক ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায়। নিচে দুটি ঘটনা তুলে ধরা হলো—
এক. সহিহ বুখারির এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, এক অভিযানে ইয়ামামাবাসীদের সরদার সুমামা ইবনে উসাল (রা.)কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার কয়েক দিন পর রাসুল (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দিলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর ওমরাহ আদায়ের জন্য মক্কায় গেলে মক্কার কাফিররা ইসলাম গ্রহণ করার জন্য তাঁকে উত্ত্যক্ত করে। এর জবাবে তিনি তাদের উদ্দেশে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, যতক্ষণ পর্যন্ত নবী (সা.) অনুমতি না দেবেন, ইয়ামামা থেকে একটা শস্যদানাও তোমাদের কাছে আসবে না।’ এরপর সুমামা (রা.) নিজ শহরে ফিরে গেলেন এবং মক্কায় শস্য রপ্তানি বন্ধ করে দিলেন। এতে মক্কাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। উপায় না পেয়ে তারা রাসুল (সা.)-এর কাছে অনুরোধ করলে তিনি সুমামাকে বয়কট তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ ঘটনা থেকে কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়। প্রথমত, ইসলামের প্রাথমিক যুগে অর্থনৈতিক বয়কটের প্রমাণ। দ্বিতীয়ত, শত্রুর অনিষ্টতার বিলোপ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক বয়কটের বৈধতা। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক বয়কট শত্রুপক্ষকে নমনীয় করে তুলতে ভূমিকা পালন করে। শায়েখ হুসামুদ্দিন আফফানা বলেন, ‘সুমামা (রা.) যা করেছেন, তা ছিল অর্থনৈতিক বয়কট। রাসুল (সা.) তাঁর এই পদক্ষেপে বাধা দেননি। কোনো আপত্তি করেননি। এই বয়কট অব্যাহত ছিল রাসুল (সা.) উঠিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি লেখা পর্যন্ত।’ (ফাতাওয়া ইয়াসআলুনাক)
দুই. খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মরওয়ানের যুগে রোম থেকে দিনার-দিরহাম আমদানি করা হতো। এর বিনিময়ে মুসলমানরা তাদের কাছে কাগজ রপ্তানি করত। মুসলমানরা যে কার্টনে করে কাগজ পাঠাত, তার গায়ে লেখা থাকত—‘মাসিহ (ইসা আ.) কখনো আল্লাহর বান্দা হওয়াতে লজ্জাবোধ করেন না; অনুরূপ নৈকট্যশীল ফেরেশতারাও না।’ (সুরা নিসা: ১৭২) একবার রোম সম্রাট লেখাটি দেখে ভীষণ রেগে যান। কারণ তাঁরা ইসা (আ.)কে আল্লাহর পুত্র বলে ধারণা করতেন। তিনি খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের কাছে চিঠি লিখলেন—যদি লেখাটি বাদ দেওয়া না হয়, তাহলে আমি দিনার-দিরহামের ওপর আপনাদের নবীর ব্যাপারে কটাক্ষমূলক কথা লিখে দেব। চিঠি পেয়ে আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান চিন্তায় পড়ে গেলেন। ইত্যবসরে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ (রহ.) উপস্থিত হলেন। তিনি খলিফার চিন্তার কারণ জানতে পেরে বললেন, ‘চিন্তা করবেন না, নিজেরা দিনার বানানো শুরু করুন এবং রোমে কাগজ রপ্তানি বন্ধ করে দিন। তাদের কাগজের প্রয়োজন হলে আপনি যেভাবে চান তারা সেভাবেই নিতে বাধ্য হবে।’ খলিফা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। (বুগইয়াতুত তলব ফি তারিখি হালাব)
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
যখন কোনো গোষ্ঠী ইসলাম, কোরআন, মহানবী (সা.) ও ইসলামের অন্যান্য বিষয় নিয়ে উপহাস করে অথবা কোনো মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালায়, তখন মুসলিম বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ওই গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার অথবা তাদের ব্যবসায়িক পণ্য বর্জন করার দাবি তোলে। তবে ইসলামে যেহেতু মুসলিম-অমুসলিম সবার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য অনুমোদিত, তাই কেউ কেউ দাবি করে থাকেন, ইসলামে বাণিজ্যিক বয়কটের কোনো ভিত্তি নেই; এটা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে যায় না। ফলে বিষয়টি নিয়ে কারও কারও মনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আসলেই কি ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই? ইসলামের নীতিমালা এবং ইতিহাস কী বলে এ ব্যাপারে, আলোচ্য নিবন্ধে তা-ই আলোকপাত করা হয়েছে।
অমুসলিমদের সঙ্গে (স্বদেশি হোক বা ভিনদেশি) সব ধরনের বৈধ বেচাকেনা ইসলামে অনুমোদিত। রাসুল (সা.) মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতেন। একইভাবে বাইরে থেকে আসা জনৈক পৌত্তলিক বণিকের কাছ থেকে ছাগল কিনেছেন এমন বর্ণনাও এসেছে হাদিসে। (বুখারি ও মুসলিম) তবে যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধাস্ত্র তৈরির কাঁচামাল এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাজে আসে এমন সব বস্তু অমুসলিমদের কাছে বিক্রি করা হারাম। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘কাফিরদের সঙ্গে সব ধরনের বৈধ বেচাকেনা সর্বসম্মতিক্রমে জায়েজ, তবে যুদ্ধের অস্ত্র ও সরঞ্জাম এবং তাদের ধর্ম ও মতবাদ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে এমন বস্তু বিক্রি করা জায়েজ নয়।’ (শরহে সহিহ মুসলিম) আল মাজমু গ্রন্থে তিনি একে সব মতের ফকিহগণের সর্বসম্মত মত বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লিখিত মাসআলা থেকে ইসলামি শরিয়তের একটি মূলনীতি স্পষ্ট হয়। তা হচ্ছে, যে ব্যবসায়িক লেনদেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কাফির গোষ্ঠীকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে, তা জায়েজ নয়। সুতরাং যেসব কোম্পানি ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে অর্থ সরবরাহ করে অথবা মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতনে সহযোগিতা করে, প্রতিবাদস্বরূপ তাদের পণ্য বর্জন করা শুধু বৈধই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে মুসলমানদের ইমানের দাবিও বটে। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘যত পন্থা ও পদক্ষেপ (অর্থনৈতিক, সামাজিক বা অন্য যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ), যা মুসলমানদের উপকারে আসে, ইসলাম ও শরিয়তের ওপর আগত যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করে, মজলুম ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করে এবং সত্যবিরোধী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে, তা উত্তম ও উপকারী।’ (ইগাসাতুল লাহফান)
অমুসলিমদের সঙ্গে (স্বদেশি হোক বা ভিনদেশি) সব ধরনের বৈধ বেচাকেনা ইসলামে অনুমোদিত। রাসুল (সা.) মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতেন। একইভাবে বাইরে থেকে আসা জনৈক পৌত্তলিক বণিকের কাছ থেকে ছাগল কিনেছেন এমন বর্ণনাও
এসেছে হাদিসে।
মাওলানা আশরাফ আলি থানভি (রহ.) বলেন, ‘বয়কট ও অসহযোগ আন্দোলন মৌলিকভাবে যুদ্ধ নয়, তবে তা শত্রুকে দুর্বল করার একটি কৌশল, যা মুবাহ তথা বৈধ।’ (হাকিমুল উম্মত কি সিয়াসি আফকার) মাওলানা জফর আহমদ উসমানি (রহ.) বলেন, ‘যদি কোনো বৃহৎ স্বার্থের কারণে শত্রুরাষ্ট্রের পণ্য ছেড়ে দেশি পণ্য ব্যবহার করা হয়, তবে সেটা বৈধ। বরং বৃহৎ স্বার্থ বিবেচনায় এমনটি করা উত্তমও বটে। (ইমদাদুল আহকাম) সমকালীন আরব আলিমদের মধ্যে শায়েখ আবদুর রহমান ইবনে নাসির আস-সাদি (রহ.), শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.), আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে জিবরিন, ইউসুফ আল-কারজাভি (রহ.), শায়েখ হামুদ ইবনে উকালা আশ-শাবিসহ আরও অনেকে উপরিউক্ত ফতোয়া প্রদান করেছেন। (আল-মুকালামাতুল ইকতিসাদিয়্যাহ)
শত্রুপক্ষকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য বাণিজ্যিক বয়কটের একাধিক ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায়। নিচে দুটি ঘটনা তুলে ধরা হলো—
এক. সহিহ বুখারির এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, এক অভিযানে ইয়ামামাবাসীদের সরদার সুমামা ইবনে উসাল (রা.)কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার কয়েক দিন পর রাসুল (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দিলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর ওমরাহ আদায়ের জন্য মক্কায় গেলে মক্কার কাফিররা ইসলাম গ্রহণ করার জন্য তাঁকে উত্ত্যক্ত করে। এর জবাবে তিনি তাদের উদ্দেশে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, যতক্ষণ পর্যন্ত নবী (সা.) অনুমতি না দেবেন, ইয়ামামা থেকে একটা শস্যদানাও তোমাদের কাছে আসবে না।’ এরপর সুমামা (রা.) নিজ শহরে ফিরে গেলেন এবং মক্কায় শস্য রপ্তানি বন্ধ করে দিলেন। এতে মক্কাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। উপায় না পেয়ে তারা রাসুল (সা.)-এর কাছে অনুরোধ করলে তিনি সুমামাকে বয়কট তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ ঘটনা থেকে কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়। প্রথমত, ইসলামের প্রাথমিক যুগে অর্থনৈতিক বয়কটের প্রমাণ। দ্বিতীয়ত, শত্রুর অনিষ্টতার বিলোপ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক বয়কটের বৈধতা। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক বয়কট শত্রুপক্ষকে নমনীয় করে তুলতে ভূমিকা পালন করে। শায়েখ হুসামুদ্দিন আফফানা বলেন, ‘সুমামা (রা.) যা করেছেন, তা ছিল অর্থনৈতিক বয়কট। রাসুল (সা.) তাঁর এই পদক্ষেপে বাধা দেননি। কোনো আপত্তি করেননি। এই বয়কট অব্যাহত ছিল রাসুল (সা.) উঠিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি লেখা পর্যন্ত।’ (ফাতাওয়া ইয়াসআলুনাক)
দুই. খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মরওয়ানের যুগে রোম থেকে দিনার-দিরহাম আমদানি করা হতো। এর বিনিময়ে মুসলমানরা তাদের কাছে কাগজ রপ্তানি করত। মুসলমানরা যে কার্টনে করে কাগজ পাঠাত, তার গায়ে লেখা থাকত—‘মাসিহ (ইসা আ.) কখনো আল্লাহর বান্দা হওয়াতে লজ্জাবোধ করেন না; অনুরূপ নৈকট্যশীল ফেরেশতারাও না।’ (সুরা নিসা: ১৭২) একবার রোম সম্রাট লেখাটি দেখে ভীষণ রেগে যান। কারণ তাঁরা ইসা (আ.)কে আল্লাহর পুত্র বলে ধারণা করতেন। তিনি খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের কাছে চিঠি লিখলেন—যদি লেখাটি বাদ দেওয়া না হয়, তাহলে আমি দিনার-দিরহামের ওপর আপনাদের নবীর ব্যাপারে কটাক্ষমূলক কথা লিখে দেব। চিঠি পেয়ে আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান চিন্তায় পড়ে গেলেন। ইত্যবসরে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ (রহ.) উপস্থিত হলেন। তিনি খলিফার চিন্তার কারণ জানতে পেরে বললেন, ‘চিন্তা করবেন না, নিজেরা দিনার বানানো শুরু করুন এবং রোমে কাগজ রপ্তানি বন্ধ করে দিন। তাদের কাগজের প্রয়োজন হলে আপনি যেভাবে চান তারা সেভাবেই নিতে বাধ্য হবে।’ খলিফা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। (বুগইয়াতুত তলব ফি তারিখি হালাব)
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকা চাই। পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও মজবুত সম্পর্ক তৈরি করতে মহানবী (সা.) ৬টি কর্তব্যের কথা বলেছেন, যা পালন
১ দিন আগেএখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
২ দিন আগেওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
৩ দিন আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
৩ দিন আগে