মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
আরবি শুরা শব্দের অর্থ পরামর্শ। ইসলামে পরামর্শ বলতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানাশোনা ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রচেষ্টাকে বোঝায়। ইসলামে পরামর্শের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পরামর্শের মাধ্যমে সমাজের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দেওয়ার প্রতি অধিক জোর দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে পরামর্শের কথা
শুরা বা পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করানোর জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে একটি সুরার নামকরণ করেন ‘সুরা শুরা’। এ ছাড়া আরও একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। যেমন—রাসুল (সা.)–কে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন, ‘আর তুমি কাজের বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো। এরপর যখন (কোনো মতের ভিত্তিতে) তোমার স্থির সংকল্প হবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো।’ (সুরা আল ইমরান: ১৫৯)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘নবী (সা.)–কেই যেখানে পরামর্শ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে অন্যদের জন্য পরামর্শের আবশ্যকতা সহজেই অনুমেয়।’ (আস সিয়াসাতুস শরয়িয়াহ)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা পরামর্শ করাকে ইমানদারদের বৈশিষ্ট্য বলেছেন। ইরশাদ করেন, ‘(মুমিন তারা,) যারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয়, নামাজ কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কাজ করে এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা শুরা: ৩৮)
বিয়ে, বৈবাহিক জীবন, তালাক ইত্যাদি ব্যাপারে পরামর্শ সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ এসেছে অনেক আয়াতে। যেমন—আয়াতে বলেন, ‘আর যদি কোথাও তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে একজন সালিস এবং স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে একজন সালিস নির্ধারণ করো। তারা দুজন (পরামর্শ সাপেক্ষে) সংশোধন করে নিতে চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন।’ (সুরা নিসা: ৩৫)
হাদিসে পরামর্শের গুরুত্ব
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর চেয়ে অধিক পরামর্শ করতে আর কাউকে দেখিনি।’ (বায়হাকি) একই কথা হজরত আয়েশা (রা.) থেকেও বর্ণিত আছে। (আখলাকুন নবী)
আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমাদের নেতারা হবেন ভালো মানুষ, ধনীরা হবেন দানশীল এবং তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে, তখন মাটির ওপরের অংশ নিচের অংশ থেকে উত্তম হবে।’ (তিরমিজি)
যাদের থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়, তাদের উদ্দেশে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, সে ওই ব্যক্তির মতো, যার কাছে কোনো আমানত রাখা হয়।’ (আবু দাউদ) অর্থাৎ, আমানতের খিয়ানত করা যেমন কবিরা গুনাহ, তেমনি নিজ স্বার্থের জন্য জেনেশুনে ভুল পরামর্শ দেওয়াও মারাত্মক কবিরা গুনাহ।
মহানবী (সা.)-এর জীবনে পরামর্শ
রাসুল (সা.) ছোট-বড় সব বিষয়ে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। যেমন হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নামাজের জন্য ডাকতে কী পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে, তা নিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কেউ শিঙা বাজানোর এবং কেউ ঘণ্টা বাজানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু এগুলো বিধর্মীদের পন্থা হওয়ায় রাসুল (সা.) তা গ্রহণ করেননি। সেই রাতে আবদুল্লাহ বিন জায়েদ নামে এক আনসারি সাহাবি ও ওমর (রা.)–কে স্বপ্নে আজান দেখানো হয়। আনসারি সাহাবি তাৎক্ষণিক রাসুল (সা.)–কে তা জানালে তিনি বেলাল (রা.)–কে স্বপ্নে দেখা পদ্ধতিতে (অর্থাৎ আজান দিয়ে) নামাজে ডাকার নির্দেশ দেন। (ইবনে মাজাহ)
অন্য এক বর্ণনায় দেখা যায়, বদরে গিয়ে নিজেদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী শত্রু দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে কি না—এ নিয়ে রাসুল (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। আবু বকর ও ওমর (রা.) যুদ্ধ করার পরামর্শ দেন। রাসুল (সা.) আনসারি সাহাবিদের থেকেও পরামর্শ তলব করেন। তাঁরা যুদ্ধে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন। এরপর সাহাবিদের পরামর্শ অনুসারে রাসুল (সা.) বদর প্রান্তরের উদ্দেশে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) এ ধরনের আরও অসংখ্য ঘটনা হাদিস ও ইতিহাসের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে।
ইসলামের সোনালি যুগে পরামর্শ
রাসুল (সা.)-এর পরে সাহাবিগণও পরামর্শের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের সিদ্ধান্ত নিতেন। যেমন—নবীজির ইন্তেকালের পর বনু সায়িদা গোত্রের মিলনায়তনে পরামর্শ সভায় বসে সাহাবিগণ আবু বকর (রা)–কে খলিফা নির্বাচিত করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) অভিজ্ঞ সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোরআনকে কেবল কুরাইশি লিপিতে লিপিবদ্ধ করে বাকি লিপিগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেন। পরবর্তী সময়ে কিছু লোক উসমান (রা.)-এর পদক্ষেপের সমালোচনা করলে আলি (রা.) তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘উসমান (রা.)-এর ব্যাপারে কেউ খারাপ মন্তব্য করবে না। আল্লাহর কসম, তিনি কোরআনের ব্যাপারে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তা মুহাম্মদ (সা.)-এর একদল অভিজ্ঞ সাহাবির সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়েছেন। তাঁর জায়গায় আমি থাকলে আমিও এমনটাই করতাম।’ (আহকামুল কোরআন)
তাবেয়িগণও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। বিশিষ্ট তাবিয়ি ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) যখন মদিনার প্রশাসক নিযুক্ত হন, তখন মদিনার সর্বশ্রেষ্ঠ ১০ জন আলিমকে তাঁর অফিসে ডেকে আনেন এবং বলেন, ‘আমি আপনাদের খুবই জরুরি কাজে ডেকেছি। তা হচ্ছে, শহরের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাকে যথোপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া। কারণ আমি আপনাদের পরামর্শ ছাড়া কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই না। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
ফকিহদের দৃষ্টিতে পরামর্শ
কোরআন-হাদিস ও সাহাবি-তাবিয়িদের এসব কথা ও ঘটনার আলোকে অধিকাংশ ফকিহ বলেন, কোনো বিষয়ে কোরআন বা হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানাশোনা ও অভিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করা ওয়াজিব। কেউ কেউ পরামর্শ করাকে মুস্তাহাবও বলেছেন।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) ইবনে আতিয়া (রহ.)-এর বরাত দিয়ে বলেন, ‘পরামর্শ ইসলামের অবশ্যপালনীয় একটি বিধান।’ (তাফসিরে কুরতুবি)
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
আরবি শুরা শব্দের অর্থ পরামর্শ। ইসলামে পরামর্শ বলতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানাশোনা ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রচেষ্টাকে বোঝায়। ইসলামে পরামর্শের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পরামর্শের মাধ্যমে সমাজের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দেওয়ার প্রতি অধিক জোর দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে পরামর্শের কথা
শুরা বা পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করানোর জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে একটি সুরার নামকরণ করেন ‘সুরা শুরা’। এ ছাড়া আরও একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। যেমন—রাসুল (সা.)–কে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন, ‘আর তুমি কাজের বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো। এরপর যখন (কোনো মতের ভিত্তিতে) তোমার স্থির সংকল্প হবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো।’ (সুরা আল ইমরান: ১৫৯)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘নবী (সা.)–কেই যেখানে পরামর্শ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে অন্যদের জন্য পরামর্শের আবশ্যকতা সহজেই অনুমেয়।’ (আস সিয়াসাতুস শরয়িয়াহ)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা পরামর্শ করাকে ইমানদারদের বৈশিষ্ট্য বলেছেন। ইরশাদ করেন, ‘(মুমিন তারা,) যারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয়, নামাজ কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কাজ করে এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা শুরা: ৩৮)
বিয়ে, বৈবাহিক জীবন, তালাক ইত্যাদি ব্যাপারে পরামর্শ সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ এসেছে অনেক আয়াতে। যেমন—আয়াতে বলেন, ‘আর যদি কোথাও তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে একজন সালিস এবং স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে একজন সালিস নির্ধারণ করো। তারা দুজন (পরামর্শ সাপেক্ষে) সংশোধন করে নিতে চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন।’ (সুরা নিসা: ৩৫)
হাদিসে পরামর্শের গুরুত্ব
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর চেয়ে অধিক পরামর্শ করতে আর কাউকে দেখিনি।’ (বায়হাকি) একই কথা হজরত আয়েশা (রা.) থেকেও বর্ণিত আছে। (আখলাকুন নবী)
আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমাদের নেতারা হবেন ভালো মানুষ, ধনীরা হবেন দানশীল এবং তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে, তখন মাটির ওপরের অংশ নিচের অংশ থেকে উত্তম হবে।’ (তিরমিজি)
যাদের থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়, তাদের উদ্দেশে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, সে ওই ব্যক্তির মতো, যার কাছে কোনো আমানত রাখা হয়।’ (আবু দাউদ) অর্থাৎ, আমানতের খিয়ানত করা যেমন কবিরা গুনাহ, তেমনি নিজ স্বার্থের জন্য জেনেশুনে ভুল পরামর্শ দেওয়াও মারাত্মক কবিরা গুনাহ।
মহানবী (সা.)-এর জীবনে পরামর্শ
রাসুল (সা.) ছোট-বড় সব বিষয়ে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। যেমন হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নামাজের জন্য ডাকতে কী পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে, তা নিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কেউ শিঙা বাজানোর এবং কেউ ঘণ্টা বাজানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু এগুলো বিধর্মীদের পন্থা হওয়ায় রাসুল (সা.) তা গ্রহণ করেননি। সেই রাতে আবদুল্লাহ বিন জায়েদ নামে এক আনসারি সাহাবি ও ওমর (রা.)–কে স্বপ্নে আজান দেখানো হয়। আনসারি সাহাবি তাৎক্ষণিক রাসুল (সা.)–কে তা জানালে তিনি বেলাল (রা.)–কে স্বপ্নে দেখা পদ্ধতিতে (অর্থাৎ আজান দিয়ে) নামাজে ডাকার নির্দেশ দেন। (ইবনে মাজাহ)
অন্য এক বর্ণনায় দেখা যায়, বদরে গিয়ে নিজেদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী শত্রু দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে কি না—এ নিয়ে রাসুল (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। আবু বকর ও ওমর (রা.) যুদ্ধ করার পরামর্শ দেন। রাসুল (সা.) আনসারি সাহাবিদের থেকেও পরামর্শ তলব করেন। তাঁরা যুদ্ধে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন। এরপর সাহাবিদের পরামর্শ অনুসারে রাসুল (সা.) বদর প্রান্তরের উদ্দেশে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) এ ধরনের আরও অসংখ্য ঘটনা হাদিস ও ইতিহাসের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে।
ইসলামের সোনালি যুগে পরামর্শ
রাসুল (সা.)-এর পরে সাহাবিগণও পরামর্শের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের সিদ্ধান্ত নিতেন। যেমন—নবীজির ইন্তেকালের পর বনু সায়িদা গোত্রের মিলনায়তনে পরামর্শ সভায় বসে সাহাবিগণ আবু বকর (রা)–কে খলিফা নির্বাচিত করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) অভিজ্ঞ সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোরআনকে কেবল কুরাইশি লিপিতে লিপিবদ্ধ করে বাকি লিপিগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেন। পরবর্তী সময়ে কিছু লোক উসমান (রা.)-এর পদক্ষেপের সমালোচনা করলে আলি (রা.) তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘উসমান (রা.)-এর ব্যাপারে কেউ খারাপ মন্তব্য করবে না। আল্লাহর কসম, তিনি কোরআনের ব্যাপারে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তা মুহাম্মদ (সা.)-এর একদল অভিজ্ঞ সাহাবির সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়েছেন। তাঁর জায়গায় আমি থাকলে আমিও এমনটাই করতাম।’ (আহকামুল কোরআন)
তাবেয়িগণও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। বিশিষ্ট তাবিয়ি ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) যখন মদিনার প্রশাসক নিযুক্ত হন, তখন মদিনার সর্বশ্রেষ্ঠ ১০ জন আলিমকে তাঁর অফিসে ডেকে আনেন এবং বলেন, ‘আমি আপনাদের খুবই জরুরি কাজে ডেকেছি। তা হচ্ছে, শহরের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাকে যথোপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া। কারণ আমি আপনাদের পরামর্শ ছাড়া কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই না। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
ফকিহদের দৃষ্টিতে পরামর্শ
কোরআন-হাদিস ও সাহাবি-তাবিয়িদের এসব কথা ও ঘটনার আলোকে অধিকাংশ ফকিহ বলেন, কোনো বিষয়ে কোরআন বা হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানাশোনা ও অভিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করা ওয়াজিব। কেউ কেউ পরামর্শ করাকে মুস্তাহাবও বলেছেন।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) ইবনে আতিয়া (রহ.)-এর বরাত দিয়ে বলেন, ‘পরামর্শ ইসলামের অবশ্যপালনীয় একটি বিধান।’ (তাফসিরে কুরতুবি)
লেখক: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
আল্লাহ মানুষকে দুভাবে পরীক্ষা করেন। বিপদ দিয়ে এবং নিয়ামত দিয়ে। নিয়ামতের পরীক্ষা বিপদের পরীক্ষার চেয়ে কঠিন। বিপদের সময় মানুষ আল্লাহর স্মরণ করে; তার সাহায্য প্রার্থনা করে।
২১ ঘণ্টা আগেসমাজের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকা চাই। পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও মজবুত সম্পর্ক তৈরি করতে মহানবী (সা.) ৬টি কর্তব্যের কথা বলেছেন, যা পালন
২ দিন আগেএখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
৩ দিন আগেওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
৪ দিন আগে