মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
প্রশ্ন: মানবদেহের কোনো অঙ্গ যেমন রক্ত, চোখ, কিডনি ইত্যাদি দান করা জায়েজ কি না—কোরআন-হাদিসের আলোকে জানাবেন। মো. আশিকুর রহমান, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা
উত্তর: শরীরের যেসব অঙ্গ আলাদা করার পর দ্রুত সময়ে নতুন করে তৈরি হয়, যেমন চামড়া ও রক্ত, একান্ত প্রয়োজনে তা দান করা জায়েজ। তবে চোখ, কিডনি ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দান করা জায়েজ কি না—এ ব্যাপারে ফকিহদের দুটি মত আছে।
এক. জীবিত বা মৃত অবস্থায় কোনো ব্যক্তির অঙ্গ অন্য কারও জন্য নেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। স্বেচ্ছায় কাউকে দান করাও বৈধ নয়। এটি বর্তমান ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ ফতোয়া বোর্ড এবং আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলিম আবদুল আজিজ বিন বায ও মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল উসাইমিনের অভিমত। তাঁদের দলিল হলো—পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আদমের সন্তানদের মর্যাদামণ্ডিত করেছি।’ (সুরা ইসরা: ৭০) হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙা জীবিত ব্যক্তির হাড় ভাঙার মতোই মারাত্মক গুনাহের কাজ।’ (আবু দাউদ) ওই আয়াত ও হাদিসের রেফারেন্স টেনে প্রখ্যাত ফিকহবিদ শামসুল আয়িম্মা সারাখসি (রহ.) বলেন, ‘জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় মানবদেহকে মর্যাদা দিতে হবে। তাই জীবিত ও মৃত মানুষের কোনো অঙ্গ দিয়ে কারও চিকিৎসা করা বৈধ নয়।’ (শরহুস সিয়ারিল কবির: ১/ ৮৯) এ ছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ নিজ দেহের মালিক নয়, তাই আত্মহত্যা ইসলামে হারাম। সুতরাং যে জিনিসের সে মালিক নয়, তা দান করার অধিকার সে রাখে না। এ ধরনের আরও অসংখ্য দলিলের ভিত্তিতে তাঁদের মতে এটি অবৈধ।
দুই. শর্ত সাপেক্ষে অঙ্গ দান বৈধ। আন্তর্জাতিক ফিকহ সংস্থার চতুর্থ সেমিনারের সিদ্ধান্ত, মিসর ফতোয়া বোর্ড, সৌদি শীর্ষস্থানীয় আলেমদের সংগঠন, পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচিসহ আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ ফতোয়া বোর্ডের অভিমত এটাই। দলিল হিসেবে তারা ইসলামে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর গুরুত্ব সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিস এবং ইসলামি ফিকহের সর্বস্বীকৃত কয়েকটি মূলনীতি, অর্থাৎ অপারগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুপাতে নিষিদ্ধ বিষয় অবলম্বন করা বৈধ এবং দুই ক্ষতির মুখোমুখি হলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি গ্রহণ করা অনুমোদিত...ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। (আল-মাওসুআতুল মুয়াসসারাহ ফি ফিকহিল কাজায়াল মুআসিরাহ)
অঙ্গ দান ও প্রতিস্থাপন জায়েজ হওয়ার জন্য তাঁরা যেসব শর্ত উল্লেখ করেছেন তা হলো:
» অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া সুস্থ হওয়া অসম্ভব—এ কথা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষ থেকে আসতে হবে।
» অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, তার নিশ্চয়তা বা প্রবল ধারণা থাকতে হবে।
» মুসলিমের অঙ্গ অমুসলিমের শরীরে, তদ্রূপ অমুসলিমের অঙ্গ মুসলিমের শরীরে প্রতিস্থাপন থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকতে হবে।
» মৃত ব্যক্তি কর্তৃক মৃত্যুর আগে লিখিত অনুমতি দিয়ে যেতে হবে। অবশ্য অপারগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির বৈধ ওয়ারিশদের অনুমতি যথেষ্ট গণ্য হবে।
» অঙ্গ নেওয়ার জন্য দেহের মূল কাঠামো বিকৃত করা যাবে না।
» দাফনের আগেই অঙ্গ নিতে হবে।
» অঙ্গ সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দিতে হবে।
উল্লিখিত শর্তগুলো জীবিত ও মৃত উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। জীবিত ব্যক্তি থেকে অঙ্গ নেওয়ার জন্য এ ছাড়া আরও চারটি শর্ত আবশ্যক। তা হলো:
» অঙ্গ দান করার কারণে তার স্বাস্থ্য বড় ধরনের কোনো ঝুঁকির সম্মুখীন না হওয়া।
» এমন কোনো অঙ্গ দান করা যাবে না, যার ওপর মানুষের জীবন নির্ভর করে, যেমন—হৃদয়, উভয় কিডনি ইত্যাদি।
» এমন অঙ্গ দেওয়া যাবে না, যার কারণে মানুষ তার কোনো একটি মৌলিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, উভয় চক্ষু দান করা যাবে না।
» শুধু এমন অঙ্গ দান করা যাবে, যার ব্যাপারে অভিজ্ঞ চিকিৎসক আশ্বস্ত করবেন যে ওই অঙ্গ ছাড়া সে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।
তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শর্ত সাপেক্ষে বৈধ হওয়ার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছেন, তাঁরা এ-ও বলেছেন যে যথাসম্ভব এই পদ্ধতি এড়িয়ে চলা আবশ্যক।
সূত্র: মাজাল্লাতুল মাজমায়িল ফিকহিদ দুয়ালি, চতুর্থ সংখ্যা: ১/ ৮৯ (৬-১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২); দারুল ইফতা, দারুল উলুম করাচি, ফতোয়া: ১৭/ ১৮৬৩।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
প্রশ্ন: মানবদেহের কোনো অঙ্গ যেমন রক্ত, চোখ, কিডনি ইত্যাদি দান করা জায়েজ কি না—কোরআন-হাদিসের আলোকে জানাবেন। মো. আশিকুর রহমান, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা
উত্তর: শরীরের যেসব অঙ্গ আলাদা করার পর দ্রুত সময়ে নতুন করে তৈরি হয়, যেমন চামড়া ও রক্ত, একান্ত প্রয়োজনে তা দান করা জায়েজ। তবে চোখ, কিডনি ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দান করা জায়েজ কি না—এ ব্যাপারে ফকিহদের দুটি মত আছে।
এক. জীবিত বা মৃত অবস্থায় কোনো ব্যক্তির অঙ্গ অন্য কারও জন্য নেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। স্বেচ্ছায় কাউকে দান করাও বৈধ নয়। এটি বর্তমান ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ ফতোয়া বোর্ড এবং আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলিম আবদুল আজিজ বিন বায ও মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল উসাইমিনের অভিমত। তাঁদের দলিল হলো—পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আদমের সন্তানদের মর্যাদামণ্ডিত করেছি।’ (সুরা ইসরা: ৭০) হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙা জীবিত ব্যক্তির হাড় ভাঙার মতোই মারাত্মক গুনাহের কাজ।’ (আবু দাউদ) ওই আয়াত ও হাদিসের রেফারেন্স টেনে প্রখ্যাত ফিকহবিদ শামসুল আয়িম্মা সারাখসি (রহ.) বলেন, ‘জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় মানবদেহকে মর্যাদা দিতে হবে। তাই জীবিত ও মৃত মানুষের কোনো অঙ্গ দিয়ে কারও চিকিৎসা করা বৈধ নয়।’ (শরহুস সিয়ারিল কবির: ১/ ৮৯) এ ছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ নিজ দেহের মালিক নয়, তাই আত্মহত্যা ইসলামে হারাম। সুতরাং যে জিনিসের সে মালিক নয়, তা দান করার অধিকার সে রাখে না। এ ধরনের আরও অসংখ্য দলিলের ভিত্তিতে তাঁদের মতে এটি অবৈধ।
দুই. শর্ত সাপেক্ষে অঙ্গ দান বৈধ। আন্তর্জাতিক ফিকহ সংস্থার চতুর্থ সেমিনারের সিদ্ধান্ত, মিসর ফতোয়া বোর্ড, সৌদি শীর্ষস্থানীয় আলেমদের সংগঠন, পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচিসহ আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ ফতোয়া বোর্ডের অভিমত এটাই। দলিল হিসেবে তারা ইসলামে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর গুরুত্ব সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিস এবং ইসলামি ফিকহের সর্বস্বীকৃত কয়েকটি মূলনীতি, অর্থাৎ অপারগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুপাতে নিষিদ্ধ বিষয় অবলম্বন করা বৈধ এবং দুই ক্ষতির মুখোমুখি হলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি গ্রহণ করা অনুমোদিত...ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। (আল-মাওসুআতুল মুয়াসসারাহ ফি ফিকহিল কাজায়াল মুআসিরাহ)
অঙ্গ দান ও প্রতিস্থাপন জায়েজ হওয়ার জন্য তাঁরা যেসব শর্ত উল্লেখ করেছেন তা হলো:
» অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া সুস্থ হওয়া অসম্ভব—এ কথা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষ থেকে আসতে হবে।
» অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, তার নিশ্চয়তা বা প্রবল ধারণা থাকতে হবে।
» মুসলিমের অঙ্গ অমুসলিমের শরীরে, তদ্রূপ অমুসলিমের অঙ্গ মুসলিমের শরীরে প্রতিস্থাপন থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকতে হবে।
» মৃত ব্যক্তি কর্তৃক মৃত্যুর আগে লিখিত অনুমতি দিয়ে যেতে হবে। অবশ্য অপারগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির বৈধ ওয়ারিশদের অনুমতি যথেষ্ট গণ্য হবে।
» অঙ্গ নেওয়ার জন্য দেহের মূল কাঠামো বিকৃত করা যাবে না।
» দাফনের আগেই অঙ্গ নিতে হবে।
» অঙ্গ সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দিতে হবে।
উল্লিখিত শর্তগুলো জীবিত ও মৃত উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। জীবিত ব্যক্তি থেকে অঙ্গ নেওয়ার জন্য এ ছাড়া আরও চারটি শর্ত আবশ্যক। তা হলো:
» অঙ্গ দান করার কারণে তার স্বাস্থ্য বড় ধরনের কোনো ঝুঁকির সম্মুখীন না হওয়া।
» এমন কোনো অঙ্গ দান করা যাবে না, যার ওপর মানুষের জীবন নির্ভর করে, যেমন—হৃদয়, উভয় কিডনি ইত্যাদি।
» এমন অঙ্গ দেওয়া যাবে না, যার কারণে মানুষ তার কোনো একটি মৌলিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, উভয় চক্ষু দান করা যাবে না।
» শুধু এমন অঙ্গ দান করা যাবে, যার ব্যাপারে অভিজ্ঞ চিকিৎসক আশ্বস্ত করবেন যে ওই অঙ্গ ছাড়া সে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।
তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শর্ত সাপেক্ষে বৈধ হওয়ার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছেন, তাঁরা এ-ও বলেছেন যে যথাসম্ভব এই পদ্ধতি এড়িয়ে চলা আবশ্যক।
সূত্র: মাজাল্লাতুল মাজমায়িল ফিকহিদ দুয়ালি, চতুর্থ সংখ্যা: ১/ ৮৯ (৬-১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২); দারুল ইফতা, দারুল উলুম করাচি, ফতোয়া: ১৭/ ১৮৬৩।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
এখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
১৮ ঘণ্টা আগেওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
২ দিন আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
২ দিন আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
২ দিন আগে