আবদুল আযীয কাসেমি
শিক্ষকতা মহৎ পেশা। একজন আদর্শ শিক্ষকের হাত ধরেই গড়ে ওঠে একটি আদর্শ প্রজন্ম। শিক্ষকের মহৎ গুণাবলির সার্থক ছায়াপাত ঘটে তাঁর ছাত্রের জীবনে। একজন শিক্ষক সফল হন তাঁর মহৎ গুণের কারণে। গুণী একজন শিক্ষকই গড়তে পারেন যোগ্য ছাত্রের দল।
শিক্ষকের ব্যর্থতা কিংবা আদর্শহীনতা প্রজন্মকে বন্ধ্যা করে দেয়। মহানবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সেরা শিক্ষক। আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়ে তাদের প্রতি দয়া করেছেন, যিনি তাদের আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেন, তাদের পরিশুদ্ধ করবেন এবং কিতাব ও প্রজ্ঞা শেখাবেন।’
(সুরা আলে ইমরান: ১৬৪)
মহানবী (সা.)-এর আলোকিত জীবনের নানা ঘটনায় শিক্ষাদানের আদর্শ নীতি প্রতিভাত হয়। এখানে তেমনই কয়েকটি নীতির কথা তুলে ধরা হলো—
সহনশীলতা ও ধৈর্য
শিক্ষকের জন্য সহনশীলতার গুণ থাকা অপরিহার্য। কারণ মাঝেমধ্যে তাঁকে এমন কঠিন সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, যখন মানুষ সাধারণত মেজাজ হারায়। এমন পরিস্থিতিতে রাগ না করে অত্যন্ত শান্ত-শিষ্টভাবে সংশোধন করতে পারা একজন আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্য। একবার এক বেদুইন মসজিদে নববিতে ঢুকে এক কোণে প্রস্রাব করতে শুরু করল। সাহাবিরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে নবী (সা.) তাদের নিষেধ করলেন। বললেন, ‘তাকে প্রস্রাব শেষ করতে দাও।’ সে শেষ করলে নবীজি এক সাহাবিকে নির্দেশ দিলেন, ‘পানি এনে জায়গাটি পরিষ্কার করে দাও।’ এরপর সেই বেদুইন লোককে কাছে ডেকে অত্যন্ত মমতাসহকারে বললেন, ‘দেখো ভাই, এসব মসজিদ আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এসব নির্মাণ করা হয়নি।’ এরপর নবীজি তাকে আর কিছু বললেন না। (আবু দাউদ)
মহানবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সেরা শিক্ষক। আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থী সম্পর্কে জানা
একজন প্রাজ্ঞ শিক্ষক তাঁর সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে একই আচরণ করেন না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রকৃতি ও স্বভাব বোঝার চেষ্টা করেন এবং সে অনুপাতে নির্দেশনা প্রদান করেন। মহানবী (সা.)-এর মধ্যে এ গুণ সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যমান ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বলেন, আমরা নবীজির সঙ্গে একটি মজলিশে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে এক যুবক এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি কি আমার স্ত্রীকে রোজা রেখে চুম্বন করতে পারব?’ নবীজি বললেন, ‘না, এটা তোমার জন্য অনুমোদিত নয়।’ কিছুক্ষণ পর এক বৃদ্ধ এসে একই প্রশ্ন করল। নবীজি তাকে বললেন, ‘হ্যাঁ, এটা আপনার জন্য অনুমোদিত।’ আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলাম। নবীজি আমাদের বিস্ময়ের বিষয়টি বুঝে গেলেন এবং আমাদের বললেন, ‘বৃদ্ধ লোকটি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
যুক্তি ও উদাহরণের ব্যবহার
কঠিন বিষয় সহজে বোঝাতে সফল শিক্ষকেরা কৌশলটির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন। যে শিক্ষক যত সার্থক দৃষ্টান্ত দিয়ে আলোচ্য বিষয় ছাত্রদের সামনে সরলভাবে তুলে ধরতে পারেন, তিনি তত বেশি ছাত্রদের মধ্যে নিজের বিশেষ অবস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হন। মহানবী (সা.) চমৎকার সব উদাহরণ দিয়ে জ্ঞানার্থীর সামনে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করতেন। আবু জর গিফারি বলেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘(স্ত্রীর সঙ্গে) সহবাসের কারণেও তোমাদের সদকা ও দানের সওয়াব হয়।’ সাহাবিরা বিস্ময়ের সুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমরা যদি নিজের মনোবাঞ্ছা ও জৈবিক চাহিদা পূর্ণ করি তখনো সওয়াব হবে?’ রাসুল (সা.) সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আচ্ছা বলো তো, যদি তোমরা অবৈধ উপায়ে তোমাদের যৌন চাহিদা পূর্ণ করতে, তবে কি তোমাদের পাপ হতো না?’ তারা বলল, ‘অবশ্যই হতো।’ তখন নবীজি বললেন, ‘তবে বৈধভাবে পূর্ণ করলে সওয়াব হবে না কেন? অবশ্যই সে সওয়াবের অধিকারী হবে।’ (মুসলিম)
শিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝা
শিশুদের সংশোধন ও শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি বেশ জটিল। তাদের মনস্তত্ত্ব না বোঝার ফলে অনেক শিক্ষকই শিক্ষাকে শিশুদের কাছে ভীতিকর করে তোলেন। অথচ শিক্ষা আনন্দের বিষয়। শিশুরা মুখে বলার চেয়ে কাজের মাধ্যমে বেশি শেখে। এ ছাড়া তাদের আদর করে শিখিয়ে দিলে খুব দ্রুত বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারে। ওমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, আমি নবীজির ঘরে পালিত হচ্ছিলাম। আমরা একসঙ্গে খেতে বসতাম। খাওয়ার সময় প্লেটে আমার হাত এদিক-সেদিক ঘুরত। অর্থাৎ একবার ওর সামনে থেকে, একবার এর সামনে থেকে নিয়ে খেতাম। একদিন মহানবী (সা.) স্নেহমাখা কণ্ঠে বললেন, ‘বাবু, খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ে নেবে। ডান হাতে খাবে ও নিজের সামনে থেকে খাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
শিক্ষকতা মহৎ পেশা। একজন আদর্শ শিক্ষকের হাত ধরেই গড়ে ওঠে একটি আদর্শ প্রজন্ম। শিক্ষকের মহৎ গুণাবলির সার্থক ছায়াপাত ঘটে তাঁর ছাত্রের জীবনে। একজন শিক্ষক সফল হন তাঁর মহৎ গুণের কারণে। গুণী একজন শিক্ষকই গড়তে পারেন যোগ্য ছাত্রের দল।
শিক্ষকের ব্যর্থতা কিংবা আদর্শহীনতা প্রজন্মকে বন্ধ্যা করে দেয়। মহানবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সেরা শিক্ষক। আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়ে তাদের প্রতি দয়া করেছেন, যিনি তাদের আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেন, তাদের পরিশুদ্ধ করবেন এবং কিতাব ও প্রজ্ঞা শেখাবেন।’
(সুরা আলে ইমরান: ১৬৪)
মহানবী (সা.)-এর আলোকিত জীবনের নানা ঘটনায় শিক্ষাদানের আদর্শ নীতি প্রতিভাত হয়। এখানে তেমনই কয়েকটি নীতির কথা তুলে ধরা হলো—
সহনশীলতা ও ধৈর্য
শিক্ষকের জন্য সহনশীলতার গুণ থাকা অপরিহার্য। কারণ মাঝেমধ্যে তাঁকে এমন কঠিন সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, যখন মানুষ সাধারণত মেজাজ হারায়। এমন পরিস্থিতিতে রাগ না করে অত্যন্ত শান্ত-শিষ্টভাবে সংশোধন করতে পারা একজন আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্য। একবার এক বেদুইন মসজিদে নববিতে ঢুকে এক কোণে প্রস্রাব করতে শুরু করল। সাহাবিরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে নবী (সা.) তাদের নিষেধ করলেন। বললেন, ‘তাকে প্রস্রাব শেষ করতে দাও।’ সে শেষ করলে নবীজি এক সাহাবিকে নির্দেশ দিলেন, ‘পানি এনে জায়গাটি পরিষ্কার করে দাও।’ এরপর সেই বেদুইন লোককে কাছে ডেকে অত্যন্ত মমতাসহকারে বললেন, ‘দেখো ভাই, এসব মসজিদ আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এসব নির্মাণ করা হয়নি।’ এরপর নবীজি তাকে আর কিছু বললেন না। (আবু দাউদ)
মহানবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সেরা শিক্ষক। আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থী সম্পর্কে জানা
একজন প্রাজ্ঞ শিক্ষক তাঁর সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে একই আচরণ করেন না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রকৃতি ও স্বভাব বোঝার চেষ্টা করেন এবং সে অনুপাতে নির্দেশনা প্রদান করেন। মহানবী (সা.)-এর মধ্যে এ গুণ সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যমান ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বলেন, আমরা নবীজির সঙ্গে একটি মজলিশে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে এক যুবক এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি কি আমার স্ত্রীকে রোজা রেখে চুম্বন করতে পারব?’ নবীজি বললেন, ‘না, এটা তোমার জন্য অনুমোদিত নয়।’ কিছুক্ষণ পর এক বৃদ্ধ এসে একই প্রশ্ন করল। নবীজি তাকে বললেন, ‘হ্যাঁ, এটা আপনার জন্য অনুমোদিত।’ আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলাম। নবীজি আমাদের বিস্ময়ের বিষয়টি বুঝে গেলেন এবং আমাদের বললেন, ‘বৃদ্ধ লোকটি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
যুক্তি ও উদাহরণের ব্যবহার
কঠিন বিষয় সহজে বোঝাতে সফল শিক্ষকেরা কৌশলটির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন। যে শিক্ষক যত সার্থক দৃষ্টান্ত দিয়ে আলোচ্য বিষয় ছাত্রদের সামনে সরলভাবে তুলে ধরতে পারেন, তিনি তত বেশি ছাত্রদের মধ্যে নিজের বিশেষ অবস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হন। মহানবী (সা.) চমৎকার সব উদাহরণ দিয়ে জ্ঞানার্থীর সামনে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করতেন। আবু জর গিফারি বলেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘(স্ত্রীর সঙ্গে) সহবাসের কারণেও তোমাদের সদকা ও দানের সওয়াব হয়।’ সাহাবিরা বিস্ময়ের সুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমরা যদি নিজের মনোবাঞ্ছা ও জৈবিক চাহিদা পূর্ণ করি তখনো সওয়াব হবে?’ রাসুল (সা.) সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আচ্ছা বলো তো, যদি তোমরা অবৈধ উপায়ে তোমাদের যৌন চাহিদা পূর্ণ করতে, তবে কি তোমাদের পাপ হতো না?’ তারা বলল, ‘অবশ্যই হতো।’ তখন নবীজি বললেন, ‘তবে বৈধভাবে পূর্ণ করলে সওয়াব হবে না কেন? অবশ্যই সে সওয়াবের অধিকারী হবে।’ (মুসলিম)
শিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝা
শিশুদের সংশোধন ও শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি বেশ জটিল। তাদের মনস্তত্ত্ব না বোঝার ফলে অনেক শিক্ষকই শিক্ষাকে শিশুদের কাছে ভীতিকর করে তোলেন। অথচ শিক্ষা আনন্দের বিষয়। শিশুরা মুখে বলার চেয়ে কাজের মাধ্যমে বেশি শেখে। এ ছাড়া তাদের আদর করে শিখিয়ে দিলে খুব দ্রুত বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারে। ওমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, আমি নবীজির ঘরে পালিত হচ্ছিলাম। আমরা একসঙ্গে খেতে বসতাম। খাওয়ার সময় প্লেটে আমার হাত এদিক-সেদিক ঘুরত। অর্থাৎ একবার ওর সামনে থেকে, একবার এর সামনে থেকে নিয়ে খেতাম। একদিন মহানবী (সা.) স্নেহমাখা কণ্ঠে বললেন, ‘বাবু, খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ে নেবে। ডান হাতে খাবে ও নিজের সামনে থেকে খাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১৭ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১৭ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১৭ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
২ দিন আগে