মাওলানা আতাউর রহমান
মক্কার কাফিরদের অত্যাচারে যখন মুসলমানেরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখন আল্লাহ তাআলার আদেশে সাহাবিগণ মদিনায় হিজরত করতে শুরু করেন। মহানবী (সা.) যখন হজরত আবু বকর (রা.)কে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে মদিনায় পৌঁছালেন, তখন মদিনাবাসী তাঁকে উষ্ণ অভিবাদন জানায়। এরপর তিনি মদিনায় একটি সমৃদ্ধ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেন।
মহানবী (সা.) আগেই মদিনাবাসীর কাছে এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে আমরা আপনাদের কাছে চলে এলে আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন কি না। তাঁরা জানমাল দিয়ে মুসলমানদের সাহায্য করার ওয়াদা করেছিলেন। মদিনার আনসার সাহাবিরা সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। হিজরতের পর মক্কা থেকে আগত ছিন্নমূল মুহাজির সাহাবিদের নিজের ভাইয়ের মতো আপন করে নিয়েছিলেন তাঁরা। এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
এই ভ্রাতৃত্ব শুধু সাহায্য-সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। মুহাজিরদের নিজেদের উত্তরাধিকারী বানানোর দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন আনসার সাহাবিরা। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নবী (সা.) আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর ঘরে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দেন। সে সময় ৯০ জন সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। অর্ধেক মুহাজির ও অর্ধেক আনসার। ভ্রাতৃত্ববন্ধনের মূল কথা ছিল তাঁরা পরস্পরের দুঃখে দুঃখী এবং সুখে সুখী হবেন। মৃত্যুর পর আত্মীয়দের পরিবর্তে পরস্পরের সম্পদের উত্তরাধিকারী হবেন। উত্তরাধিকারী হওয়ার এই নিয়ম বদরের যুদ্ধ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এরপর সুরা আনফালের ৭৫ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে উত্তরাধিকারের বিধানটি রহিত করা হয়।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ১৯৪; সিরাতে মোস্তফা: ৪২০)
এ কারণেই পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে মুহাজিরদের পাশাপাশি আনসারদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের জন্যও, মুহাজিরদের আসার আগে যারা এই নগরীতে বসবাস করেছে ও ইমান এনেছে। তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা (আনসার) তাদের নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়; নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। অন্তরের কার্পণ্য থেকে যাদের মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর: ৯)
এই ভ্রাতৃত্বের কিছু নমুনা আমরা হাদিসের পাতায় দেখতে পাই। যেমন এক হাদিসে এসেছে, সাআদ ইবনে রাবি (রা.) তাঁর মুহাজির ভাই আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)কে বললেন, ‘দেখো, এই আমাদের ধন-সম্পদ। এর অর্ধেক তোমার। যেটা খুশি গ্রহণ করো। আমার দুজন স্ত্রী। এদের মধ্যে তোমার কাকে পছন্দ বলো। আমি তাকে তালাক দিই এবং তোমার সঙ্গে বিয়ে দিই।’ মুহাজিররাও আত্মমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব রক্ষা করেই চলতেন। ফলে আনসার ভাইয়ের উত্তরে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার ঘরে-বাইরে ও ধনসম্পদে বরকত দান করুন। দয়া করে তুমি আমাকে বাজারের রাস্তাটা দেখিয়ে দাও। ওখানে আমি আমার ভাগ্য পরীক্ষা করব।’ (বুখারি: ৩৭৮১; নবীয়ে রহমত, পৃ. ২০৫)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)কে বনু কায়নুকার বাজার দেখিয়ে দেওয়া হলো। যখন তিনি ঘরে ফিরলেন, সঙ্গে কিছু পনির ও ঘি নিয়ে এলেন। এরপর প্রতিদিন সকালে বাজারে যেতে লাগলেন। একদিন নবী (সা.)-এর কাছে এমন অবস্থায় এলেন যে তাঁর শরীর ও কাপড়ে হলুদ রঙের চিহ্ন ছিল। নবী (সা.) বললেন, ‘ব্যাপার কী?’ তিনি (রা.) বললেন, ‘আমি বিয়ে করেছি।’ (বুখারি: ৩৭৮০)
অর্থাৎ, তিনি আনসার সাহাবির ওপর নির্ভর করে বসে থাকেননি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং নিজের ঘর-সংসার নিজেই সাজিয়ে নিয়েছেন। মোট কথা, মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনায় সাহাবিরা এমন সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলেন যে, নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে মদিনায় চলে আসা মানুষকে যেমন আনসার সাহাবিরা ভালোবাসার চাদরে আবৃত করে নিয়েছিলেন, তেমনি মুহাজিররাও নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিলেন।
লেখক: শিক্ষক
মক্কার কাফিরদের অত্যাচারে যখন মুসলমানেরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখন আল্লাহ তাআলার আদেশে সাহাবিগণ মদিনায় হিজরত করতে শুরু করেন। মহানবী (সা.) যখন হজরত আবু বকর (রা.)কে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে মদিনায় পৌঁছালেন, তখন মদিনাবাসী তাঁকে উষ্ণ অভিবাদন জানায়। এরপর তিনি মদিনায় একটি সমৃদ্ধ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেন।
মহানবী (সা.) আগেই মদিনাবাসীর কাছে এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে আমরা আপনাদের কাছে চলে এলে আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন কি না। তাঁরা জানমাল দিয়ে মুসলমানদের সাহায্য করার ওয়াদা করেছিলেন। মদিনার আনসার সাহাবিরা সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। হিজরতের পর মক্কা থেকে আগত ছিন্নমূল মুহাজির সাহাবিদের নিজের ভাইয়ের মতো আপন করে নিয়েছিলেন তাঁরা। এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
এই ভ্রাতৃত্ব শুধু সাহায্য-সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। মুহাজিরদের নিজেদের উত্তরাধিকারী বানানোর দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন আনসার সাহাবিরা। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নবী (সা.) আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর ঘরে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দেন। সে সময় ৯০ জন সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। অর্ধেক মুহাজির ও অর্ধেক আনসার। ভ্রাতৃত্ববন্ধনের মূল কথা ছিল তাঁরা পরস্পরের দুঃখে দুঃখী এবং সুখে সুখী হবেন। মৃত্যুর পর আত্মীয়দের পরিবর্তে পরস্পরের সম্পদের উত্তরাধিকারী হবেন। উত্তরাধিকারী হওয়ার এই নিয়ম বদরের যুদ্ধ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এরপর সুরা আনফালের ৭৫ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে উত্তরাধিকারের বিধানটি রহিত করা হয়।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ১৯৪; সিরাতে মোস্তফা: ৪২০)
এ কারণেই পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে মুহাজিরদের পাশাপাশি আনসারদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের জন্যও, মুহাজিরদের আসার আগে যারা এই নগরীতে বসবাস করেছে ও ইমান এনেছে। তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা (আনসার) তাদের নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়; নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। অন্তরের কার্পণ্য থেকে যাদের মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর: ৯)
এই ভ্রাতৃত্বের কিছু নমুনা আমরা হাদিসের পাতায় দেখতে পাই। যেমন এক হাদিসে এসেছে, সাআদ ইবনে রাবি (রা.) তাঁর মুহাজির ভাই আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)কে বললেন, ‘দেখো, এই আমাদের ধন-সম্পদ। এর অর্ধেক তোমার। যেটা খুশি গ্রহণ করো। আমার দুজন স্ত্রী। এদের মধ্যে তোমার কাকে পছন্দ বলো। আমি তাকে তালাক দিই এবং তোমার সঙ্গে বিয়ে দিই।’ মুহাজিররাও আত্মমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব রক্ষা করেই চলতেন। ফলে আনসার ভাইয়ের উত্তরে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার ঘরে-বাইরে ও ধনসম্পদে বরকত দান করুন। দয়া করে তুমি আমাকে বাজারের রাস্তাটা দেখিয়ে দাও। ওখানে আমি আমার ভাগ্য পরীক্ষা করব।’ (বুখারি: ৩৭৮১; নবীয়ে রহমত, পৃ. ২০৫)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)কে বনু কায়নুকার বাজার দেখিয়ে দেওয়া হলো। যখন তিনি ঘরে ফিরলেন, সঙ্গে কিছু পনির ও ঘি নিয়ে এলেন। এরপর প্রতিদিন সকালে বাজারে যেতে লাগলেন। একদিন নবী (সা.)-এর কাছে এমন অবস্থায় এলেন যে তাঁর শরীর ও কাপড়ে হলুদ রঙের চিহ্ন ছিল। নবী (সা.) বললেন, ‘ব্যাপার কী?’ তিনি (রা.) বললেন, ‘আমি বিয়ে করেছি।’ (বুখারি: ৩৭৮০)
অর্থাৎ, তিনি আনসার সাহাবির ওপর নির্ভর করে বসে থাকেননি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং নিজের ঘর-সংসার নিজেই সাজিয়ে নিয়েছেন। মোট কথা, মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনায় সাহাবিরা এমন সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলেন যে, নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে মদিনায় চলে আসা মানুষকে যেমন আনসার সাহাবিরা ভালোবাসার চাদরে আবৃত করে নিয়েছিলেন, তেমনি মুহাজিররাও নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিলেন।
লেখক: শিক্ষক
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১২ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১২ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১২ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগে