ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সর্বাধিক জোর দেয় ইসলাম। ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো পালন করতে পবিত্র হতে হয়। পাশাপাশি দৈহিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাসীন অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন ইসলামের শিক্ষা নয়। দৈহিক পরিচ্ছন্নতার যে শিষ্টাচারগুলো রয়েছে, সেগুলোকে হাদিসে নবী ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত এবং মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্বভাবজাত কাজ ১০ টি। গোঁফ খাটো করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, হাত ও পায়ের আঙুলের গিরাগুলো ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের লোম মুণ্ডানো, এস্তেনজা করা এবং কুলি করা।’ (মিশকাত: পৃ.৪৪)
গোঁফ ও দাড়ির বিধান
হাদিসে গোঁফ খাটো রাখার এবং দাড়ি লম্বা রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করো—গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করো।’ (মুয়াত্তা মালেক: ৯৪৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সুন্দর করে দাড়ি রেখেছেন।’ (তিরমিজি: ২৭৬২)
সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) গোঁফ এমনভাবে খাটো করতেন যে চামড়া দেখা যেত। তিনি দাড়ি ধরতেন এবং এক মুঠোর বেশি হলে হজ ও ওমরাহর সময় কেটে ফেলতেন। (বুখারি: ৫৮৯২)
মেসওয়াক করা
দাঁত পরিষ্কার রাখতে এবং মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে মিসওয়াক করা উচিত। মহানবী (সা.) এ সুন্নত সব সময় পালন করতেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টের কারণ হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে প্রতি নামাজে (অজুতে) মিসওয়াক আবশ্যক করে দিতাম।’ (বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৪)
মেসওয়াক করলে মুখ পরিচ্ছন্ন হয়, এতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মিসওয়াক মুখ পরিচ্ছন্ন করে এবং পালনকর্তাকে সন্তুষ্ট করে।’ (দারেমি ও নাসায়ির সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৪)
অজুর সময় ছাড়াও মহানবী (সা.) মিসওয়াক করতেন। আল-মিকদাদ ইবনে শুরাইহ থেকে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত, আমি আয়িশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মহানবী (সা.) ঘরে প্রবেশ করে প্রথম কোন কাজ করতেন?’ তিনি বলেন, মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজতেন।’ (মুসলিম: ৩৭১)
সাধারণভাবে মিসওয়াক ব্যবহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তবে কোনো কোনো আলেমের মতে, মিসওয়াকের পরিবর্তে প্রচলিত ব্রাশ ব্যবহার করলেও সুন্নত আদায় হবে। কারণ তাতে মিসওয়াকের আসল উদ্দেশ্য—দাঁত পরিষ্কার করা এবং মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখার বিষয়টি অর্জিত হচ্ছে।
কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া
অজুর সময় কুলি করা সুন্নত। ফরজ গোসলের জন্য গড়গড়া করে কুলি করা ফরজ। তবে রোজার সময় গড়গড়া করা যাবে না। কারণ এতে ভেতরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা থাকে। মাইমুনা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর জন্য গোসলের পানি এনে একটি কাপড় দিয়ে পর্দা করলাম, তিনি পানি দিয়ে উভয় হাত ধৌত করলেন, এরপর বাঁ হাতে পানি নিয়ে গুপ্তাঙ্গ ধুয়ে মাটিতে হাত মাসেহ করে পানি দ্বারা হাত ধৌত করলেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং চেহারা ও হাত দুটো কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। এরপর গোটা শরীরে পানি ঢাললেন, নাক সাফ করলেন এবং উভয় পা ধৌত করলেন। আমি তাঁর জন্য একটি কাপড় আনলে তিনি তা না নিয়ে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন।’ (বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৮)
অজু করার সময় নাকে পানি দেওয়াও সুন্নত। ফরজ গোসলে নাকে পানি দেওয়া ফরজ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জেগে অজু করে, তখন সে যেন তিনবার নাক পরিষ্কার করে। কেননা শয়তান নাকের ছিদ্রে রাতযাপন করে।’ (বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৫)
এস্তেনজার বিধান
প্রস্রাব ও পায়খানা করার পর মলদ্বার ও মূত্র দ্বার পরিষ্কার করা আবশ্যক। আর এ জন্য পানি ও ঢিলা উভয়ই ব্যবহার করা উত্তম। উভয়টি ব্যবহারের কারণেই কোরআনে কুফাবাসীর প্রশংসা করা হয়েছে। ঢিলার পরিবর্তে আধুনিক কালের টিস্যুও ব্যবহার করা যাবে। দুটির মধ্যে পানি দিয়ে এস্তেনজা করা উত্তম। আর ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহার করা মুস্তাহাব। নাপাকি নির্গত হওয়ার স্থান অতিক্রম করে আশপাশে ছড়িয়ে গেলে পানি ব্যবহার করা ওয়াজিব।
হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন টয়লেটে যায়, তখন সে যেন তার সঙ্গে তিনটি পাথর নিয়ে যায়, যা দিয়ে সে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ: ৪০)
অন্য হাদিসে আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) টয়লেটে যেতেন আর আমি ও আমার মতো আরেকটি ছেলে পানির পাত্র ও বর্শার মতো লাঠিসহ তাঁর জন্য পানি নিয়ে যেতাম। এই পানি দিয়ে তিনি শৌচকার্য সম্পন্ন করতেন।’ (বুখারি: ১৫১; মুসলিম: ২৭০ ও ২৭১)
অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নিচের পশম মুণ্ডানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কেননা বগলের পশম সহজে ওপড়ানো যায়। পক্ষান্তরে নাভির নিচের পশম সহজে ওপড়ানো যায় না। এ বিধান পরিচ্ছন্নতার জন্য। যদি কেউ এর বিপরীত করে—অর্থাৎ বগলের পশম মুণ্ডায় এবং নাভির নিচের পশম উপড়ে ফেলে, এতেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
৪০ দিনের মধ্যে একবার হলেও অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের গোঁফ খাটো করার, নখ কাটার, নাভির নিচের পশম মুণ্ডানোর এবং বগলের পশম ওপড়ানোর মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা হলো ঊর্ধ্বে ৪০ দিন। (মুসলিম: ২৫৮; আবু দাউদ; ৪২০০)
কেউ অবহেলা করে ৪০ দিনের বেশি সময় অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকলে গুনাহগার হবে। তবে তা পরিষ্কার না করার কারণে শরীর নাপাক হয়ে যাবে না। বরং নামাজ, রোজা, তেলাওয়াত ইত্যাদি আদায় করা তখনো বৈধ হবে। কারণ এসব লোম শরিয়তের দৃষ্টিতে নাপাক নয়।
নখ কাটার বিধান
নখ কাটা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার নামাজে যাওয়ার আগে গোঁফ ও নখ কাটতেন। (আল-মাজমাহ: ২৫ / ১৮০)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নখ কাটো, কর্তিত অংশ পুঁতে রাখো, হাত ও পায়ের গিরাগুলো ধৌত করো, মুখে লেগে থাকা খাদ্য দূর করো এবং মিসওয়াক করো। দুর্গন্ধ অবস্থায় আমার কাছে এসো না।’ (নাওয়াদেরুল উসুল: পৃ.১১৫)
তবে নখ কাটার কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম হাদিসে বর্ণিত নেই। এ বিষয়ে প্রচলিত যে নিয়ম রয়েছে—ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে শুরু করে কনিষ্ঠ আঙ্গুলে শেষ করা—এ ধরনের বিষয় পরবর্তী মুহাদ্দিস ও বুজর্গদের তৈরি। সুতরাং তাকে সুন্নত বলা যায় না। বড়জোর পরবর্তী বুজর্গদের বাতলানো পদ্ধতি ও নিয়ম বলা যায়। (আল-মাকাসিদ লিস-সাখাবি: পৃ.৩১৩ ও ৪২১; আল-আসরার লি-মুল্লা আলি কারি: পৃ.১৭০ ও ২৪১)
চুল রাখার বিধান
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, কান পর্যন্ত চুল রাখতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)-এর চুল মোবারক কানের অর্ধেক পর্যন্ত লম্বা ছিল।’ হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ও মহানবী (সা.) একই পাত্রে গোসল করতাম। তাঁর চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা থেকে খানিক লম্বা এবং কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল থেকে খানিক খাটো ছিল। হজরত উম্মেহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)-এর চুলকে চার ঝুঁটিবিশিষ্ট দেখেছি।’ (শামায়েলে তিরমিজি: ২৩-৩০)
হজ বা ওমরাহ ছাড়া মহানবী (সা.) কখনো মাথার চুল মুণ্ডন করেছেন বলে জানা যায় না। (যাদুল মাআদ: ১ / ১৬৭)
তাই হজ-ওমরাহ ছাড়া মাথা মুণ্ডন করা অনেকেই মাকরুহ বলেছেন। সাহাবিরা চুল ছোট রাখতেন, তবে মুণ্ডন করতেন না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ বা ওমরাহ ছাড়া মাথার চুল ফেলা যাবে না।’ (আল-মুজামুল আওসাত: ৯ / ১৮০)
তবে ছোট করে চুল রাখাও জায়েজ। মাথার সব অংশে তা সমান হতে হবে। কোথাও বড়, আবার কোথাও ছোট—এভাবে কাটা ইসলামসম্মত নয়। আর লম্বা চুল রাখলে তা নিয়মিত আঁচড়ে পরিপাটি করে রাখতে হবে। মহানবী (সা.) এমনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। (নাসায়ি: ৮ / ১৮৪)
হাদিসে আরও এসেছে, চুলে তেল দেওয়া, সুগন্ধি মিশিয়ে তেল দেওয়া, পুরুষের জন্য আঁচড়িয়ে পরিপাটি রাখা, মাঝে সিঁথি করাও সুন্নত। (মুয়াত্তা মালিক: ২ / ৯৪৯)
চুল, নখ ও লোম কাটার নির্ধারিত সময় নেই। সপ্তাহের বিশেষ দিনে কাটতে হবে, অমুক দিন কাটা যাবে না, রাতে কাটা যাবে না—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এগুলো সমাজের প্রচলিত সংস্কার।
আল্লাহ আমাদের দৈহিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনে ইসলাম নির্দেশিত শিষ্টাচারগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দিন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সর্বাধিক জোর দেয় ইসলাম। ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো পালন করতে পবিত্র হতে হয়। পাশাপাশি দৈহিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাসীন অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন ইসলামের শিক্ষা নয়। দৈহিক পরিচ্ছন্নতার যে শিষ্টাচারগুলো রয়েছে, সেগুলোকে হাদিসে নবী ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত এবং মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্বভাবজাত কাজ ১০ টি। গোঁফ খাটো করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, হাত ও পায়ের আঙুলের গিরাগুলো ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের লোম মুণ্ডানো, এস্তেনজা করা এবং কুলি করা।’ (মিশকাত: পৃ.৪৪)
গোঁফ ও দাড়ির বিধান
হাদিসে গোঁফ খাটো রাখার এবং দাড়ি লম্বা রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করো—গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করো।’ (মুয়াত্তা মালেক: ৯৪৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সুন্দর করে দাড়ি রেখেছেন।’ (তিরমিজি: ২৭৬২)
সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) গোঁফ এমনভাবে খাটো করতেন যে চামড়া দেখা যেত। তিনি দাড়ি ধরতেন এবং এক মুঠোর বেশি হলে হজ ও ওমরাহর সময় কেটে ফেলতেন। (বুখারি: ৫৮৯২)
মেসওয়াক করা
দাঁত পরিষ্কার রাখতে এবং মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে মিসওয়াক করা উচিত। মহানবী (সা.) এ সুন্নত সব সময় পালন করতেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টের কারণ হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে প্রতি নামাজে (অজুতে) মিসওয়াক আবশ্যক করে দিতাম।’ (বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৪)
মেসওয়াক করলে মুখ পরিচ্ছন্ন হয়, এতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মিসওয়াক মুখ পরিচ্ছন্ন করে এবং পালনকর্তাকে সন্তুষ্ট করে।’ (দারেমি ও নাসায়ির সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৪)
অজুর সময় ছাড়াও মহানবী (সা.) মিসওয়াক করতেন। আল-মিকদাদ ইবনে শুরাইহ থেকে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত, আমি আয়িশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মহানবী (সা.) ঘরে প্রবেশ করে প্রথম কোন কাজ করতেন?’ তিনি বলেন, মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজতেন।’ (মুসলিম: ৩৭১)
সাধারণভাবে মিসওয়াক ব্যবহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তবে কোনো কোনো আলেমের মতে, মিসওয়াকের পরিবর্তে প্রচলিত ব্রাশ ব্যবহার করলেও সুন্নত আদায় হবে। কারণ তাতে মিসওয়াকের আসল উদ্দেশ্য—দাঁত পরিষ্কার করা এবং মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখার বিষয়টি অর্জিত হচ্ছে।
কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া
অজুর সময় কুলি করা সুন্নত। ফরজ গোসলের জন্য গড়গড়া করে কুলি করা ফরজ। তবে রোজার সময় গড়গড়া করা যাবে না। কারণ এতে ভেতরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা থাকে। মাইমুনা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর জন্য গোসলের পানি এনে একটি কাপড় দিয়ে পর্দা করলাম, তিনি পানি দিয়ে উভয় হাত ধৌত করলেন, এরপর বাঁ হাতে পানি নিয়ে গুপ্তাঙ্গ ধুয়ে মাটিতে হাত মাসেহ করে পানি দ্বারা হাত ধৌত করলেন। এরপর তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং চেহারা ও হাত দুটো কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। এরপর গোটা শরীরে পানি ঢাললেন, নাক সাফ করলেন এবং উভয় পা ধৌত করলেন। আমি তাঁর জন্য একটি কাপড় আনলে তিনি তা না নিয়ে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন।’ (বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৮)
অজু করার সময় নাকে পানি দেওয়াও সুন্নত। ফরজ গোসলে নাকে পানি দেওয়া ফরজ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জেগে অজু করে, তখন সে যেন তিনবার নাক পরিষ্কার করে। কেননা শয়তান নাকের ছিদ্রে রাতযাপন করে।’ (বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মিশকাত: পৃ.৪৫)
এস্তেনজার বিধান
প্রস্রাব ও পায়খানা করার পর মলদ্বার ও মূত্র দ্বার পরিষ্কার করা আবশ্যক। আর এ জন্য পানি ও ঢিলা উভয়ই ব্যবহার করা উত্তম। উভয়টি ব্যবহারের কারণেই কোরআনে কুফাবাসীর প্রশংসা করা হয়েছে। ঢিলার পরিবর্তে আধুনিক কালের টিস্যুও ব্যবহার করা যাবে। দুটির মধ্যে পানি দিয়ে এস্তেনজা করা উত্তম। আর ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহার করা মুস্তাহাব। নাপাকি নির্গত হওয়ার স্থান অতিক্রম করে আশপাশে ছড়িয়ে গেলে পানি ব্যবহার করা ওয়াজিব।
হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন টয়লেটে যায়, তখন সে যেন তার সঙ্গে তিনটি পাথর নিয়ে যায়, যা দিয়ে সে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ: ৪০)
অন্য হাদিসে আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) টয়লেটে যেতেন আর আমি ও আমার মতো আরেকটি ছেলে পানির পাত্র ও বর্শার মতো লাঠিসহ তাঁর জন্য পানি নিয়ে যেতাম। এই পানি দিয়ে তিনি শৌচকার্য সম্পন্ন করতেন।’ (বুখারি: ১৫১; মুসলিম: ২৭০ ও ২৭১)
অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বগলের পশম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নিচের পশম মুণ্ডানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কেননা বগলের পশম সহজে ওপড়ানো যায়। পক্ষান্তরে নাভির নিচের পশম সহজে ওপড়ানো যায় না। এ বিধান পরিচ্ছন্নতার জন্য। যদি কেউ এর বিপরীত করে—অর্থাৎ বগলের পশম মুণ্ডায় এবং নাভির নিচের পশম উপড়ে ফেলে, এতেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
৪০ দিনের মধ্যে একবার হলেও অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের গোঁফ খাটো করার, নখ কাটার, নাভির নিচের পশম মুণ্ডানোর এবং বগলের পশম ওপড়ানোর মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা হলো ঊর্ধ্বে ৪০ দিন। (মুসলিম: ২৫৮; আবু দাউদ; ৪২০০)
কেউ অবহেলা করে ৪০ দিনের বেশি সময় অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকলে গুনাহগার হবে। তবে তা পরিষ্কার না করার কারণে শরীর নাপাক হয়ে যাবে না। বরং নামাজ, রোজা, তেলাওয়াত ইত্যাদি আদায় করা তখনো বৈধ হবে। কারণ এসব লোম শরিয়তের দৃষ্টিতে নাপাক নয়।
নখ কাটার বিধান
নখ কাটা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার নামাজে যাওয়ার আগে গোঁফ ও নখ কাটতেন। (আল-মাজমাহ: ২৫ / ১৮০)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নখ কাটো, কর্তিত অংশ পুঁতে রাখো, হাত ও পায়ের গিরাগুলো ধৌত করো, মুখে লেগে থাকা খাদ্য দূর করো এবং মিসওয়াক করো। দুর্গন্ধ অবস্থায় আমার কাছে এসো না।’ (নাওয়াদেরুল উসুল: পৃ.১১৫)
তবে নখ কাটার কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম হাদিসে বর্ণিত নেই। এ বিষয়ে প্রচলিত যে নিয়ম রয়েছে—ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে শুরু করে কনিষ্ঠ আঙ্গুলে শেষ করা—এ ধরনের বিষয় পরবর্তী মুহাদ্দিস ও বুজর্গদের তৈরি। সুতরাং তাকে সুন্নত বলা যায় না। বড়জোর পরবর্তী বুজর্গদের বাতলানো পদ্ধতি ও নিয়ম বলা যায়। (আল-মাকাসিদ লিস-সাখাবি: পৃ.৩১৩ ও ৪২১; আল-আসরার লি-মুল্লা আলি কারি: পৃ.১৭০ ও ২৪১)
চুল রাখার বিধান
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, কান পর্যন্ত চুল রাখতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)-এর চুল মোবারক কানের অর্ধেক পর্যন্ত লম্বা ছিল।’ হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ও মহানবী (সা.) একই পাত্রে গোসল করতাম। তাঁর চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা থেকে খানিক লম্বা এবং কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল থেকে খানিক খাটো ছিল। হজরত উম্মেহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)-এর চুলকে চার ঝুঁটিবিশিষ্ট দেখেছি।’ (শামায়েলে তিরমিজি: ২৩-৩০)
হজ বা ওমরাহ ছাড়া মহানবী (সা.) কখনো মাথার চুল মুণ্ডন করেছেন বলে জানা যায় না। (যাদুল মাআদ: ১ / ১৬৭)
তাই হজ-ওমরাহ ছাড়া মাথা মুণ্ডন করা অনেকেই মাকরুহ বলেছেন। সাহাবিরা চুল ছোট রাখতেন, তবে মুণ্ডন করতেন না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ বা ওমরাহ ছাড়া মাথার চুল ফেলা যাবে না।’ (আল-মুজামুল আওসাত: ৯ / ১৮০)
তবে ছোট করে চুল রাখাও জায়েজ। মাথার সব অংশে তা সমান হতে হবে। কোথাও বড়, আবার কোথাও ছোট—এভাবে কাটা ইসলামসম্মত নয়। আর লম্বা চুল রাখলে তা নিয়মিত আঁচড়ে পরিপাটি করে রাখতে হবে। মহানবী (সা.) এমনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। (নাসায়ি: ৮ / ১৮৪)
হাদিসে আরও এসেছে, চুলে তেল দেওয়া, সুগন্ধি মিশিয়ে তেল দেওয়া, পুরুষের জন্য আঁচড়িয়ে পরিপাটি রাখা, মাঝে সিঁথি করাও সুন্নত। (মুয়াত্তা মালিক: ২ / ৯৪৯)
চুল, নখ ও লোম কাটার নির্ধারিত সময় নেই। সপ্তাহের বিশেষ দিনে কাটতে হবে, অমুক দিন কাটা যাবে না, রাতে কাটা যাবে না—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এগুলো সমাজের প্রচলিত সংস্কার।
আল্লাহ আমাদের দৈহিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনে ইসলাম নির্দেশিত শিষ্টাচারগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দিন।
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১৬ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১৬ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১৬ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
২ দিন আগে