ইসলাম ডেস্ক
পৃথিবীর ইতিহাসের মহাপ্রতাপশালী শাসকদের একজন নমরুদ। আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.) তাকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দাওয়াত দিয়েছিলেন। এতে নমরুদ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং ইবরাহিম (আ.)-কে কঠোর শাস্তি দিতে চেয়েছিল। পবিত্র কোরআনের এসব ঘটনার কিছু ইঙ্গিত এসেছে। নমরুদের বড় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল বলেও তাফসিরগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়। এখানে সংক্ষেপে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—
নমরুদের পরিচয়
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে পৃথিবীর বাদশাহ ছিল নমরুদ। বলা হয়, প্রায় পুরো পৃথিবী শাসনকারী চারজন পরাক্রমশালী শাসকের একজন নমরুদ। পৃথিবীতে সে-ই সর্বপ্রথম রাজমুকুট পরিধান করেছে এবং নিজেকে খোদা দাবি করেছে। ব্যাবিলনে সে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ বানিয়েছিল।
ইতিহাসবিদ ইবনুল আসিরের বর্ণনা মতে, নমরুদ হজরত নুহ (আ.)-এর পুত্র হামের নাতি। তার বংশপরম্পরা এ রকম—নমরুদ বিন কিনআন বিন কুশ বিন হাম বিন নূহ (আ.)। কেউ কেউ বলেছেন, তার বংশপরম্পরা হলো—নমরুদ বিন কিনআন বিন রাইব বিন নমরুদ বিন কুশ বিন হাম বিন নুহ।
নমরুদ শব্দটির উৎপত্তি মূলত ‘নমর ও উদ’ বা ‘নমরা ও উদু’ শব্দ দুটি থেকে, যার অর্থ জাজ্বল্যমান আলো। কারও কারও মতে, আবার এ নামের অর্থ বিদ্রোহী, অর্থাৎ খোদার বিরুদ্ধে দ্রোহিতার কারণে তাকে এ নামে ডাকা হতো। এর আরও একটি অর্থ হলো বাঘিনী। আরবের কিংবদন্তি অনুযায়ী, নমরুদকে বাল্যকালে এক বাঘিনী স্তন্যপান করিয়েছিল। ইতিহাসবিদেরা নমরুদকে আল-জব্বার বা চরম স্বেচ্ছাচারী হিসেবে বিবেচনা করে। বাইবেল অনুসারে নমরুদ ছিল ‘এক মহাশক্তিধর ব্যক্তি, যে ঈশ্বরকে শিকার করতে চেয়েছিল’।
হজরত নুহ (আ.)-এর মৃত্যুর পরের বছর মিসরে ৪২টি রাজ্যের অধিপতিদের একটি সম্মেলন হয়, যেখানে নমরুদ ‘রাজাদের রাজা’ উপাধিতে ভূষিত হয়। এই খ্যাতি ও সম্মানের শিখরে পৌঁছে তার মানসিকতার পরিবর্তন আসে এবং নিজেকে দেবতা বলে দাবি করে এবং তার কাছে প্রার্থনা করার আদেশ দেয়। আর তখন থেকেই প্রজারা উপাস্যরূপে তার পূজা ও অর্চনা শুরু করে।
ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ
হজরত ইবরাহিম (আ.) ১০ বছর সবার আড়ালে এক গুহায় বসবাস করেছিলেন। হয়তো নির্জনে বসবাস করার জন্য বাল্যকাল থেকেই হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রকৃতি এবং স্রষ্টাকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। অবশেষে তিনি আসল স্রষ্টাকে চিনতে পারেন। আর তাই তাঁর গোত্রের লোকদের দেব-দেবীর অসারত্ব দেখিয়ে দিতে সেসব মূর্তি ভেঙে দেন এবং বলেন, যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, তারা তোমাদের কীভাবে রক্ষা করবে।
এই অপরাধে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে বন্দী করা হয় এবং নমরুদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘হে ইবরাহিম, তোমার রব কে?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘যিনি এক, যাঁর কোনো শরিক নেই, যিনি আরশের অধিপতি।’ নমরুদ রেগে গিয়ে তার লোকদের বলল, ‘ওকে পুড়িয়ে ফেল; সাহায্য করো তোমার দেবতাদের, যদি একান্তই তাদের জন্য কিছু করতে চাও।’ (সুরা আম্বিয়া: ৬৮)
নমরুদ বলল, ‘একটি অগ্নিকুণ্ড তৈরি করো, আর হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দাও। আর পাহারা দাও যেন তার কোনো সাহায্যকারী তাকে সাহায্য করতে না আসে।’
লোকেরা এক জায়গায় লাকড়ি জোগাড় করে সেগুলোতে তেল ও ঘি ঢেলে তাতে অগ্নিসংযোগ করল। সাত দিন পর পূর্ণ অগ্নিকুণ্ড তৈরি হলো, কিন্তু সমস্যা হলো হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য কেউ আগুনের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারছিল না। এ সময় ইবলিস পর্যটকের বেশে সেখানে পৌঁছে চড়কগাছ তৈরির পরামর্শ দিল। তার পরামর্শে একটা চড়কগাছ তৈরি করা হয় এবং ইবরাহিম (আ.)–কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়।
মহান আল্লাহ আগুনকে নির্দেশ দেন—‘হে অগ্নি, তুমি হজরত ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া: ৬৯)
হজরত ইবরাহিম (আ.) ৪০ দিন পর্যন্ত অগ্নিকুণ্ডে ছিলেন। আল্লাহর হুকুমে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় অগ্নিকুণ্ড থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
নমরুদের ভয়ংকর পরিণতি
নমরুদ আল্লাহর বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। হজরত ইবরাহিম (আ.) দূরে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন। দূরে কালো রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছিল, যখন সেটা কাছে চলে এল, লাখ লাখ মশার গুনগুন শব্দে ময়দান মুখরিত হলো। কিন্তু নমরুদ অবজ্ঞার সুরে বলল, এ তো মশা! তুচ্ছ প্রাণী, তা-ও আবার নিরস্ত্র।
এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সৈন্যের মাথার ওপর মশা অবস্থান নিল। অতঃপর তারা বুঝে ওঠার আগেই মশাগুলো নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করল। তারপর দংশন করা শুরু করল। সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তিরন্দাজেরা ঊর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চারপাশে অন্ধের মতো তরবারি চালাল, যার ফলে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই আহত বা নিহত করে ফেলল।
মশার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে চলে এল। এ সময় একটি দুর্বল লেংড়া মশা তাকে তাড়া করল এবং কিছুক্ষণ মাথার চারপাশে ঘুরে নাক দিয়ে মাথায় ঢুকে পড়ল। এরপর মগজে দংশন করা শুরু করল। নমরুদ যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উন্মাদের মতো প্রাসাদে প্রবেশ করল এবং যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে জুতা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করল। অবশেষে মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্য একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করল নমরুদ। সুদীর্ঘ ৪০ বছর তাকে এই দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। অবশেষে মাথায় আঘাতের ব্যথায় নমরুদের মৃত্যু হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃ.৬৮৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ নমরুদের জন্য একটি মশা পাঠান। সেটি তার নাকে ঢুকে পড়ে। মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চার শ বছর তার মাথায় আঘাত করা হয়। কারণ সে চার শ বছর জুলুম করেছে। তাই আল্লাহ তাকে চার শ বছর আজাব দিয়েছেন। এরপর মৃত্যু দিয়েছেন। (তাবারি: ১৪ / ২০৪)
মশার কামড়ের গল্প কতটুকু সত্য
কোরআন-হাদিসে মশার কামড়ে নমরুদের মৃত্যু হওয়ার গল্পটি বা এর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। এটি যে হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাফসিরকারগণ ও ইতিহাসবিদগণ এই ঘটনা বয়ান করেছেন। একে সেসব গল্পের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা আগের বিভিন্ন আসমানি কিতাব ও সহিফা থেকে জানা যায়। এসব গল্পকে তাফসিরের ভাষায় ইসরাইলি রেওয়ায়ত বা ইসরাইলিয়্যাত বলা হয়।
কোরআন-হাদিসের মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধী নয়, এমন বিষয়ে ইসরাইলি রেওয়ায়ত বর্ণনা করার অনুমতি দেন তাফসিরবিদগণ। তবে একে শতভাগ সত্য বা মিথ্যা বলা যাবে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বরাতে বয়ান করা যাবে না। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও। বনি ইসরাইল থেকে বর্ণনা করো—অসুবিধা নেই। আর যে আমার নামে ইচ্ছা করে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি: ৩৪৬১)
মুফাসসিরগণ বলেন, পৃথিবীর সকল জালিম ও অবাধ্যের শেষ পরিণতিতে আমাদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষা। এটিও তেমনই একটি ঘটনা। এই ঘটনার শিক্ষা হলো, জালিম যতই অবাধ্য হোক, অহংকার করুক এবং নিপীড়ন চালাক, আল্লাহ তাআলা তাকে সবচেয়ে ছোট কীটপতঙ্গ দিয়েও ধ্বংস করতে পারেন। (ইসলাম কিউএ ডট ইনফো)
পৃথিবীর ইতিহাসের মহাপ্রতাপশালী শাসকদের একজন নমরুদ। আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.) তাকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দাওয়াত দিয়েছিলেন। এতে নমরুদ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং ইবরাহিম (আ.)-কে কঠোর শাস্তি দিতে চেয়েছিল। পবিত্র কোরআনের এসব ঘটনার কিছু ইঙ্গিত এসেছে। নমরুদের বড় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল বলেও তাফসিরগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়। এখানে সংক্ষেপে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—
নমরুদের পরিচয়
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়ে পৃথিবীর বাদশাহ ছিল নমরুদ। বলা হয়, প্রায় পুরো পৃথিবী শাসনকারী চারজন পরাক্রমশালী শাসকের একজন নমরুদ। পৃথিবীতে সে-ই সর্বপ্রথম রাজমুকুট পরিধান করেছে এবং নিজেকে খোদা দাবি করেছে। ব্যাবিলনে সে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ বানিয়েছিল।
ইতিহাসবিদ ইবনুল আসিরের বর্ণনা মতে, নমরুদ হজরত নুহ (আ.)-এর পুত্র হামের নাতি। তার বংশপরম্পরা এ রকম—নমরুদ বিন কিনআন বিন কুশ বিন হাম বিন নূহ (আ.)। কেউ কেউ বলেছেন, তার বংশপরম্পরা হলো—নমরুদ বিন কিনআন বিন রাইব বিন নমরুদ বিন কুশ বিন হাম বিন নুহ।
নমরুদ শব্দটির উৎপত্তি মূলত ‘নমর ও উদ’ বা ‘নমরা ও উদু’ শব্দ দুটি থেকে, যার অর্থ জাজ্বল্যমান আলো। কারও কারও মতে, আবার এ নামের অর্থ বিদ্রোহী, অর্থাৎ খোদার বিরুদ্ধে দ্রোহিতার কারণে তাকে এ নামে ডাকা হতো। এর আরও একটি অর্থ হলো বাঘিনী। আরবের কিংবদন্তি অনুযায়ী, নমরুদকে বাল্যকালে এক বাঘিনী স্তন্যপান করিয়েছিল। ইতিহাসবিদেরা নমরুদকে আল-জব্বার বা চরম স্বেচ্ছাচারী হিসেবে বিবেচনা করে। বাইবেল অনুসারে নমরুদ ছিল ‘এক মহাশক্তিধর ব্যক্তি, যে ঈশ্বরকে শিকার করতে চেয়েছিল’।
হজরত নুহ (আ.)-এর মৃত্যুর পরের বছর মিসরে ৪২টি রাজ্যের অধিপতিদের একটি সম্মেলন হয়, যেখানে নমরুদ ‘রাজাদের রাজা’ উপাধিতে ভূষিত হয়। এই খ্যাতি ও সম্মানের শিখরে পৌঁছে তার মানসিকতার পরিবর্তন আসে এবং নিজেকে দেবতা বলে দাবি করে এবং তার কাছে প্রার্থনা করার আদেশ দেয়। আর তখন থেকেই প্রজারা উপাস্যরূপে তার পূজা ও অর্চনা শুরু করে।
ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ
হজরত ইবরাহিম (আ.) ১০ বছর সবার আড়ালে এক গুহায় বসবাস করেছিলেন। হয়তো নির্জনে বসবাস করার জন্য বাল্যকাল থেকেই হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রকৃতি এবং স্রষ্টাকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। অবশেষে তিনি আসল স্রষ্টাকে চিনতে পারেন। আর তাই তাঁর গোত্রের লোকদের দেব-দেবীর অসারত্ব দেখিয়ে দিতে সেসব মূর্তি ভেঙে দেন এবং বলেন, যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, তারা তোমাদের কীভাবে রক্ষা করবে।
এই অপরাধে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে বন্দী করা হয় এবং নমরুদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘হে ইবরাহিম, তোমার রব কে?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘যিনি এক, যাঁর কোনো শরিক নেই, যিনি আরশের অধিপতি।’ নমরুদ রেগে গিয়ে তার লোকদের বলল, ‘ওকে পুড়িয়ে ফেল; সাহায্য করো তোমার দেবতাদের, যদি একান্তই তাদের জন্য কিছু করতে চাও।’ (সুরা আম্বিয়া: ৬৮)
নমরুদ বলল, ‘একটি অগ্নিকুণ্ড তৈরি করো, আর হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দাও। আর পাহারা দাও যেন তার কোনো সাহায্যকারী তাকে সাহায্য করতে না আসে।’
লোকেরা এক জায়গায় লাকড়ি জোগাড় করে সেগুলোতে তেল ও ঘি ঢেলে তাতে অগ্নিসংযোগ করল। সাত দিন পর পূর্ণ অগ্নিকুণ্ড তৈরি হলো, কিন্তু সমস্যা হলো হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য কেউ আগুনের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারছিল না। এ সময় ইবলিস পর্যটকের বেশে সেখানে পৌঁছে চড়কগাছ তৈরির পরামর্শ দিল। তার পরামর্শে একটা চড়কগাছ তৈরি করা হয় এবং ইবরাহিম (আ.)–কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়।
মহান আল্লাহ আগুনকে নির্দেশ দেন—‘হে অগ্নি, তুমি হজরত ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া: ৬৯)
হজরত ইবরাহিম (আ.) ৪০ দিন পর্যন্ত অগ্নিকুণ্ডে ছিলেন। আল্লাহর হুকুমে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় অগ্নিকুণ্ড থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
নমরুদের ভয়ংকর পরিণতি
নমরুদ আল্লাহর বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। হজরত ইবরাহিম (আ.) দূরে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন। দূরে কালো রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছিল, যখন সেটা কাছে চলে এল, লাখ লাখ মশার গুনগুন শব্দে ময়দান মুখরিত হলো। কিন্তু নমরুদ অবজ্ঞার সুরে বলল, এ তো মশা! তুচ্ছ প্রাণী, তা-ও আবার নিরস্ত্র।
এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সৈন্যের মাথার ওপর মশা অবস্থান নিল। অতঃপর তারা বুঝে ওঠার আগেই মশাগুলো নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করল। তারপর দংশন করা শুরু করল। সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তিরন্দাজেরা ঊর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চারপাশে অন্ধের মতো তরবারি চালাল, যার ফলে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই আহত বা নিহত করে ফেলল।
মশার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে চলে এল। এ সময় একটি দুর্বল লেংড়া মশা তাকে তাড়া করল এবং কিছুক্ষণ মাথার চারপাশে ঘুরে নাক দিয়ে মাথায় ঢুকে পড়ল। এরপর মগজে দংশন করা শুরু করল। নমরুদ যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উন্মাদের মতো প্রাসাদে প্রবেশ করল এবং যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে জুতা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করল। অবশেষে মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্য একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করল নমরুদ। সুদীর্ঘ ৪০ বছর তাকে এই দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। অবশেষে মাথায় আঘাতের ব্যথায় নমরুদের মৃত্যু হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃ.৬৮৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ নমরুদের জন্য একটি মশা পাঠান। সেটি তার নাকে ঢুকে পড়ে। মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চার শ বছর তার মাথায় আঘাত করা হয়। কারণ সে চার শ বছর জুলুম করেছে। তাই আল্লাহ তাকে চার শ বছর আজাব দিয়েছেন। এরপর মৃত্যু দিয়েছেন। (তাবারি: ১৪ / ২০৪)
মশার কামড়ের গল্প কতটুকু সত্য
কোরআন-হাদিসে মশার কামড়ে নমরুদের মৃত্যু হওয়ার গল্পটি বা এর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। এটি যে হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাফসিরকারগণ ও ইতিহাসবিদগণ এই ঘটনা বয়ান করেছেন। একে সেসব গল্পের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা আগের বিভিন্ন আসমানি কিতাব ও সহিফা থেকে জানা যায়। এসব গল্পকে তাফসিরের ভাষায় ইসরাইলি রেওয়ায়ত বা ইসরাইলিয়্যাত বলা হয়।
কোরআন-হাদিসের মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধী নয়, এমন বিষয়ে ইসরাইলি রেওয়ায়ত বর্ণনা করার অনুমতি দেন তাফসিরবিদগণ। তবে একে শতভাগ সত্য বা মিথ্যা বলা যাবে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বরাতে বয়ান করা যাবে না। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও। বনি ইসরাইল থেকে বর্ণনা করো—অসুবিধা নেই। আর যে আমার নামে ইচ্ছা করে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি: ৩৪৬১)
মুফাসসিরগণ বলেন, পৃথিবীর সকল জালিম ও অবাধ্যের শেষ পরিণতিতে আমাদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষা। এটিও তেমনই একটি ঘটনা। এই ঘটনার শিক্ষা হলো, জালিম যতই অবাধ্য হোক, অহংকার করুক এবং নিপীড়ন চালাক, আল্লাহ তাআলা তাকে সবচেয়ে ছোট কীটপতঙ্গ দিয়েও ধ্বংস করতে পারেন। (ইসলাম কিউএ ডট ইনফো)
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
৭ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
৭ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
৭ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগে