অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন
মানবজীবনে আয় ও ব্যয় অতি পরিচিত এবং জীবনঘনিষ্ঠ দুটি বিষয়। ইসলামি জীবনবোধে বিশ্বাসী সবাইকেই বৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদ থেকে জীবন-জীবিকার ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সম্পদ অর্জন আর সম্পদের খরচ জোগান—দুটোই হতে হবে সংবিধিবদ্ধ নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে। ইসলাম তাই ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের বিষয়টিকে মানবজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইসলামি জীবন-দর্শনে ব্যয়ের খাতসমূহও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। কেউ সম্পদ অর্জন করবে এবং তা একাই ভোগ করবে—এমনটি হতে পারে না। বরং জীবনের কল্যাণে, পরিবারের চাহিদা পরিপূরণে, সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে, জনকল্যাণমূলক কাজে অথবা মানবতা ও ধর্মীয় কল্যাণ সাধনে অব্যাহত ব্যয় করাই হচ্ছে প্রকৃত মানবাত্মার দায়িত্ব। সেই ব্যয় নানা সময়ে, বিভিন্ন উপলক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন খাতে আর আলাদা আলাদা বিষয়ে একেক রকম তাৎপর্য বহন করে।
আল্লাহর পথে ব্যয় সব মুমিনের জন্য কাঙ্ক্ষিত বিষয়। পবিত্র মাহে রমজানে ব্যয় পুণ্যার্জন আর অধিকতর বরকত লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কেননা, রমজানে প্রতিটি ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সওয়াব দেওয়া হয়। পবিত্র কোরআনে বিশ্বাসীদের যেসব গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে, তার একটি হলো এই কল্যাণমূলক ব্যয়। তাই মহান আল্লাহর পথে ব্যয় এবং তা পবিত্র রমজানে সম্পন্নকরণ নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম ব্যয়ের পর্যায়ে উপনীত।
আল্লাহর পথে ব্যয় কী? এ নিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি রয়েছে। আল্লাহকে সরাসরি কিছু দেওয়া যাচ্ছে না, আল্লাহর কোনো পরিবারও নেই, তাঁর খাওয়ার, পরিধানের কোনো চাহিদাও নেই। কিন্তু আমরা যদি জমিনে তাঁরই সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়াশীল হই, তাদের সেবা করি, আর্তমানবতার ডাকে সাড়া দিই, তাহলে তা-ই হবে মহান আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। গোটা সৃষ্টিজগৎই হলো আল্লাহর পরিবার, সমগ্র বিশ্বই আল্লাহর সংসারের অন্তর্ভুক্ত।
মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর (সৃষ্টিজীব) প্রতি রহম করো, তবে আকাশবাসী (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি রহম করবেন। ইসলাম, মানবতা, পরিবার, আত্মীয়স্বজন, মুখাপেক্ষী, ফকির-মিসকিন, প্রার্থী, দরিদ্র, তথা গোটা সৃষ্টির জন্যই আমরা ইতিবাচক ও নিয়মের মধ্যে যে ব্যয় নির্বাহ করব, তা-ই মহান আল্লাহর পথে ব্যয়ের পরিধির মধ্যে পড়বে।’
সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় মানে কোনো সংকীর্ণ বা গণ্ডীবদ্ধ বা কোনো বিশেষ খাতে ব্যয় নয়—এটি সামগ্রিক ও ব্যাপক প্রসারিত। পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করার দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেন একটি শস্যদানা, যা সাতটি ছড়া উৎপন্ন করল এবং প্রতিটি ছড়ায় আরও ১০০টি করে দানা বের হলো। মহান আল্লাহ চাইলে তা আরও বহু পরিমাণে বৃদ্ধি করে দিতে পারেন।’
আল্লাহর পথে ব্যয় হচ্ছে নিজেকে ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচানো। ইরশাদ হচ্ছে—‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো; আর তোমরা (আল্লাহর পথে ব্যয় না করে) নিজেরা নিজেদের ধ্বংসের পথে নিক্ষেপ কোরো না।’ বরং আল্লাহর পথে ব্যয় করার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ মহান আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে দিনে বা রাতে আর প্রকাশ্যে বা গোপনে, তাদের জন্য পরম প্রভুর নিকট রয়েছে পুণ্য এবং তারা কখনো চিন্তিত বা শঙ্কিত হবে না।’ এই ব্যয়ের কোনো লোকসান নেই, বরং তা আরও সম্পদের প্রবৃদ্ধি দান করে। বলা হচ্ছে, ‘এমন কে আছে, যে মহান আল্লাহকে তার সম্পদ ধার দেবে? আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে দ্বিগুণ বা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন।’
মহান আল্লাহ ব্যয়ের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে বলছেন, ‘আমি তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা তোমাদের মৃত্যু আসার পূর্বেই ব্যয় করো।’ আমরা যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছি, কিন্তু কল্যাণের পথে ব্যয় করছি না, তাদের জন্য এটি এক কঠোর বার্তা; অন্তত নিজের অস্তিত্বে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার পূর্বেই যেন আমরা সচেতন হই, জেগে উঠি এবং আর্তমানবতার জন্য ব্যয় করি। আর সেই ব্যয়ের প্রকৃষ্ট মৌসুম আমাদের দ্বারে সমুপস্থিত; মাহে রমজানের এই পুণ্যলগ্নে আল্লাহর পথে ব্যয়ের মাধ্যমে আমরা যেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণ সাধনে ব্রতী হতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সকল ব্যয় কবুল করুন।
লেখক: চেয়ারম্যান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মানবজীবনে আয় ও ব্যয় অতি পরিচিত এবং জীবনঘনিষ্ঠ দুটি বিষয়। ইসলামি জীবনবোধে বিশ্বাসী সবাইকেই বৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদ থেকে জীবন-জীবিকার ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সম্পদ অর্জন আর সম্পদের খরচ জোগান—দুটোই হতে হবে সংবিধিবদ্ধ নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে। ইসলাম তাই ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের বিষয়টিকে মানবজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইসলামি জীবন-দর্শনে ব্যয়ের খাতসমূহও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। কেউ সম্পদ অর্জন করবে এবং তা একাই ভোগ করবে—এমনটি হতে পারে না। বরং জীবনের কল্যাণে, পরিবারের চাহিদা পরিপূরণে, সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে, জনকল্যাণমূলক কাজে অথবা মানবতা ও ধর্মীয় কল্যাণ সাধনে অব্যাহত ব্যয় করাই হচ্ছে প্রকৃত মানবাত্মার দায়িত্ব। সেই ব্যয় নানা সময়ে, বিভিন্ন উপলক্ষে, ভিন্ন ভিন্ন খাতে আর আলাদা আলাদা বিষয়ে একেক রকম তাৎপর্য বহন করে।
আল্লাহর পথে ব্যয় সব মুমিনের জন্য কাঙ্ক্ষিত বিষয়। পবিত্র মাহে রমজানে ব্যয় পুণ্যার্জন আর অধিকতর বরকত লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কেননা, রমজানে প্রতিটি ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সওয়াব দেওয়া হয়। পবিত্র কোরআনে বিশ্বাসীদের যেসব গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে, তার একটি হলো এই কল্যাণমূলক ব্যয়। তাই মহান আল্লাহর পথে ব্যয় এবং তা পবিত্র রমজানে সম্পন্নকরণ নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম ব্যয়ের পর্যায়ে উপনীত।
আল্লাহর পথে ব্যয় কী? এ নিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি রয়েছে। আল্লাহকে সরাসরি কিছু দেওয়া যাচ্ছে না, আল্লাহর কোনো পরিবারও নেই, তাঁর খাওয়ার, পরিধানের কোনো চাহিদাও নেই। কিন্তু আমরা যদি জমিনে তাঁরই সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়াশীল হই, তাদের সেবা করি, আর্তমানবতার ডাকে সাড়া দিই, তাহলে তা-ই হবে মহান আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। গোটা সৃষ্টিজগৎই হলো আল্লাহর পরিবার, সমগ্র বিশ্বই আল্লাহর সংসারের অন্তর্ভুক্ত।
মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর (সৃষ্টিজীব) প্রতি রহম করো, তবে আকাশবাসী (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি রহম করবেন। ইসলাম, মানবতা, পরিবার, আত্মীয়স্বজন, মুখাপেক্ষী, ফকির-মিসকিন, প্রার্থী, দরিদ্র, তথা গোটা সৃষ্টির জন্যই আমরা ইতিবাচক ও নিয়মের মধ্যে যে ব্যয় নির্বাহ করব, তা-ই মহান আল্লাহর পথে ব্যয়ের পরিধির মধ্যে পড়বে।’
সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় মানে কোনো সংকীর্ণ বা গণ্ডীবদ্ধ বা কোনো বিশেষ খাতে ব্যয় নয়—এটি সামগ্রিক ও ব্যাপক প্রসারিত। পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করার দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেন একটি শস্যদানা, যা সাতটি ছড়া উৎপন্ন করল এবং প্রতিটি ছড়ায় আরও ১০০টি করে দানা বের হলো। মহান আল্লাহ চাইলে তা আরও বহু পরিমাণে বৃদ্ধি করে দিতে পারেন।’
আল্লাহর পথে ব্যয় হচ্ছে নিজেকে ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচানো। ইরশাদ হচ্ছে—‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো; আর তোমরা (আল্লাহর পথে ব্যয় না করে) নিজেরা নিজেদের ধ্বংসের পথে নিক্ষেপ কোরো না।’ বরং আল্লাহর পথে ব্যয় করার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ মহান আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে দিনে বা রাতে আর প্রকাশ্যে বা গোপনে, তাদের জন্য পরম প্রভুর নিকট রয়েছে পুণ্য এবং তারা কখনো চিন্তিত বা শঙ্কিত হবে না।’ এই ব্যয়ের কোনো লোকসান নেই, বরং তা আরও সম্পদের প্রবৃদ্ধি দান করে। বলা হচ্ছে, ‘এমন কে আছে, যে মহান আল্লাহকে তার সম্পদ ধার দেবে? আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে দ্বিগুণ বা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন।’
মহান আল্লাহ ব্যয়ের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে বলছেন, ‘আমি তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা তোমাদের মৃত্যু আসার পূর্বেই ব্যয় করো।’ আমরা যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছি, কিন্তু কল্যাণের পথে ব্যয় করছি না, তাদের জন্য এটি এক কঠোর বার্তা; অন্তত নিজের অস্তিত্বে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার পূর্বেই যেন আমরা সচেতন হই, জেগে উঠি এবং আর্তমানবতার জন্য ব্যয় করি। আর সেই ব্যয়ের প্রকৃষ্ট মৌসুম আমাদের দ্বারে সমুপস্থিত; মাহে রমজানের এই পুণ্যলগ্নে আল্লাহর পথে ব্যয়ের মাধ্যমে আমরা যেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণ সাধনে ব্রতী হতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সকল ব্যয় কবুল করুন।
লেখক: চেয়ারম্যান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
১১ ঘণ্টা আগেওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১ দিন আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১ দিন আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১ দিন আগে