ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
আল্লাহ তাআলাই দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তবে তিনি পৃথিবীতে যাকে যেভাবে চান, কিছু ক্ষমতার মালিক বানান। প্রত্যেকেই আপন অবস্থানে কিছু না কিছু ক্ষমতার মালিক হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশমতো ইনসাফের সঙ্গে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়। ক্ষমতার সদ্ব্যবহার হলো—ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে ক্ষমতার প্রয়োগ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অধীনস্থদের অধিকার পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের প্রতি দয়ালু ও কল্যাণকামী হয়ে কাজ করা। আর ক্ষমতার অপব্যবহার জুলুমের শামিল। মহান আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না। পরকালে তাদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
ক্ষমতার মালিক আল্লাহ: সৃষ্টিজগতের সব শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। সম্মান-অসম্মানও তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি পথের ভিখারিকে রাজমুকুটের অধিকারী যেমন করতে পারেন, তেমনি প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহর হাত থেকেও ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ, আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন; যাকে ইচ্ছা পরাক্রমশালী বানান, আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনার হাতেই। নিশ্চয়ই আপনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আল ইমরান: ২৬)
ব্যক্তিজীবন: মানুষের জীবন মহান আল্লাহর একান্ত দান, যা অতি মূল্যবান। এই মূল্যবান জীবনকে মূল্যায়ন করে নিজের প্রতি সদ্ব্যবহার একান্ত কাম্য। স্বেচ্ছায় নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। জীবন বিপন্ন হওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। নিজেকে হত্যা করা যাবে না। আত্মহত্যা নিজের প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা: ২৯) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে অনন্তকাল একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে এবং অনন্তকাল জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি লৌহ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহ অস্ত্র জাহান্নামে তার হাতে থাকবে, যা দিয়ে সে তার পেটে অনন্তকাল আঘাত করতে থাকবে’। (বুখারি: ৫৪৪২; মুসলিম: ৩১৩)
কর্মক্ষেত্র: সব পেশাজীবীর কিছু ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে নিজের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব পালন করে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা প্রভাব খাঁটিয়ে অন্যায়ভাবে স্বার্থ হাসিল করা ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল। এভাবে কারও ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা বা পদ-পদবি ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় জুলুম।
আবু হুমাইদ আস-সাঈদি (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আস্দ গোত্রের ইবনে লাতবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে জাকাত উশুলের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করে কোথাও পাঠালেন। তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে বললেন, ‘এগুলো আপনাদের, অর্থাৎ রাষ্ট্রের আর এগুলো আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছে।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারে দাঁড়ালেন। আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ‘সে কর্মচারীর কী হলো, যাকে আমি দায়িত্ব দিয়ে পাঠালাম? আর সে বলে, এগুলো আপনাদের এবং এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে? সে তার বাবা-মায়ের ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে উপহার দেওয়া হয় কি না?’ (বুখারি: ২৪৫৭; মুসলিম: ৪৮৪৩)
ন্যায়পরায়ণ শাসক কিয়ামতের দিন আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত হবেন। আর অত্যাচারী শাসক আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত ও শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
আমানত আদায়ের ক্ষেত্রে: নিজের কাছে থাকা অন্যের কোনো কিছু যথাসময়ে যথাস্থানে মালিককে পৌঁছে দেওয়াই আমানত। আমানত শুধু অর্থ-সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যাপক অর্থে চাকরি, সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক কাজকর্ম, শিক্ষকতা, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব-কর্তব্য—সবই আমানতের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি নিজের হাত-পা, চোখ-কানসহ সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ব্যক্তির কাছে আমানত। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমানতের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে।’ (সুরা নিসা: ৫৮)
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে: দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা যাবে না। অন্যথায় তা ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে গণ্য হবে। কর্তব্যে অবহেলা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—ইচ্ছা করে দায়িত্ব পালন না করা, অযথা কালক্ষেপণ, বিলম্বে কর্মস্থলে উপস্থিতি, নির্ধারিত সময়ের আগে প্রস্থান, সেবা প্রদানে অলসতা ইত্যাদি। দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলার জন্য প্রত্যেককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি: ৮৫৩; মুসলিম: ৪৮২৮)
আচার-ব্যবহারে: অধিকাংশ মানুষকে প্রতিদিন অনেকের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন ছাত্ররা শিক্ষকের, যাত্রীরা চালকের এবং অন্য সেবাগ্রহীতারা সেবাপ্রদানকারীর দ্বারস্থ হয়। সবার কাছে আসা, সবার সঙ্গে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ একান্ত কাম্য। এটি আচার-আচরণে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার। এর ব্যতিক্রম করা ক্ষমতার অপব্যবহার। আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন কর্ম বিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান আমল হবে সুন্দর আচরণ। আর সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর আচরণের কারণে নফল নামাজ ও রোজা পালন করার সওয়াব অর্জন করবে।’ (তিরমিজি: ২০০৩)
ক্ষমতার সদ্ব্যবহারকারীর পুরস্কার: ক্ষমতার সদ্ব্যবহারকারীর জন্য রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সীমাহীন মর্যাদা ও সম্মান। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ন্যায়পরায়ণ শাসক কিয়ামতের দিন আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত হবেন। আর অত্যাচারী শাসক আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত ও শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। এ ছাড়া সে আল্লাহর দরবার থেকেও বহু দূরে অবস্থান করবে।’
(তিরমিজি: ১৩৭৯) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না, তখন সাত শ্রেণির মানুষকে তিনি তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। এর মধ্যে একজন হলেন ক্ষমতার সদ্ব্যবহারকারী ন্যায়পরায়ণ শাসক। (বুখারি: ৬৪২১)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আল্লাহ তাআলাই দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তবে তিনি পৃথিবীতে যাকে যেভাবে চান, কিছু ক্ষমতার মালিক বানান। প্রত্যেকেই আপন অবস্থানে কিছু না কিছু ক্ষমতার মালিক হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশমতো ইনসাফের সঙ্গে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়। ক্ষমতার সদ্ব্যবহার হলো—ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে ক্ষমতার প্রয়োগ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অধীনস্থদের অধিকার পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের প্রতি দয়ালু ও কল্যাণকামী হয়ে কাজ করা। আর ক্ষমতার অপব্যবহার জুলুমের শামিল। মহান আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না। পরকালে তাদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
ক্ষমতার মালিক আল্লাহ: সৃষ্টিজগতের সব শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। সম্মান-অসম্মানও তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি পথের ভিখারিকে রাজমুকুটের অধিকারী যেমন করতে পারেন, তেমনি প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহর হাত থেকেও ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ, আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন; যাকে ইচ্ছা পরাক্রমশালী বানান, আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনার হাতেই। নিশ্চয়ই আপনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আল ইমরান: ২৬)
ব্যক্তিজীবন: মানুষের জীবন মহান আল্লাহর একান্ত দান, যা অতি মূল্যবান। এই মূল্যবান জীবনকে মূল্যায়ন করে নিজের প্রতি সদ্ব্যবহার একান্ত কাম্য। স্বেচ্ছায় নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। জীবন বিপন্ন হওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। নিজেকে হত্যা করা যাবে না। আত্মহত্যা নিজের প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা: ২৯) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে অনন্তকাল একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে এবং অনন্তকাল জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি লৌহ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহ অস্ত্র জাহান্নামে তার হাতে থাকবে, যা দিয়ে সে তার পেটে অনন্তকাল আঘাত করতে থাকবে’। (বুখারি: ৫৪৪২; মুসলিম: ৩১৩)
কর্মক্ষেত্র: সব পেশাজীবীর কিছু ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে নিজের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব পালন করে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা প্রভাব খাঁটিয়ে অন্যায়ভাবে স্বার্থ হাসিল করা ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল। এভাবে কারও ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা বা পদ-পদবি ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় জুলুম।
আবু হুমাইদ আস-সাঈদি (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আস্দ গোত্রের ইবনে লাতবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে জাকাত উশুলের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করে কোথাও পাঠালেন। তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে বললেন, ‘এগুলো আপনাদের, অর্থাৎ রাষ্ট্রের আর এগুলো আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছে।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারে দাঁড়ালেন। আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ‘সে কর্মচারীর কী হলো, যাকে আমি দায়িত্ব দিয়ে পাঠালাম? আর সে বলে, এগুলো আপনাদের এবং এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে? সে তার বাবা-মায়ের ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে উপহার দেওয়া হয় কি না?’ (বুখারি: ২৪৫৭; মুসলিম: ৪৮৪৩)
ন্যায়পরায়ণ শাসক কিয়ামতের দিন আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত হবেন। আর অত্যাচারী শাসক আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত ও শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
আমানত আদায়ের ক্ষেত্রে: নিজের কাছে থাকা অন্যের কোনো কিছু যথাসময়ে যথাস্থানে মালিককে পৌঁছে দেওয়াই আমানত। আমানত শুধু অর্থ-সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যাপক অর্থে চাকরি, সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক কাজকর্ম, শিক্ষকতা, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব-কর্তব্য—সবই আমানতের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি নিজের হাত-পা, চোখ-কানসহ সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ব্যক্তির কাছে আমানত। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমানতের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে।’ (সুরা নিসা: ৫৮)
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে: দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা যাবে না। অন্যথায় তা ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে গণ্য হবে। কর্তব্যে অবহেলা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন—ইচ্ছা করে দায়িত্ব পালন না করা, অযথা কালক্ষেপণ, বিলম্বে কর্মস্থলে উপস্থিতি, নির্ধারিত সময়ের আগে প্রস্থান, সেবা প্রদানে অলসতা ইত্যাদি। দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলার জন্য প্রত্যেককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি: ৮৫৩; মুসলিম: ৪৮২৮)
আচার-ব্যবহারে: অধিকাংশ মানুষকে প্রতিদিন অনেকের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন ছাত্ররা শিক্ষকের, যাত্রীরা চালকের এবং অন্য সেবাগ্রহীতারা সেবাপ্রদানকারীর দ্বারস্থ হয়। সবার কাছে আসা, সবার সঙ্গে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ একান্ত কাম্য। এটি আচার-আচরণে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার। এর ব্যতিক্রম করা ক্ষমতার অপব্যবহার। আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন কর্ম বিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান আমল হবে সুন্দর আচরণ। আর সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর আচরণের কারণে নফল নামাজ ও রোজা পালন করার সওয়াব অর্জন করবে।’ (তিরমিজি: ২০০৩)
ক্ষমতার সদ্ব্যবহারকারীর পুরস্কার: ক্ষমতার সদ্ব্যবহারকারীর জন্য রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সীমাহীন মর্যাদা ও সম্মান। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ন্যায়পরায়ণ শাসক কিয়ামতের দিন আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত হবেন। আর অত্যাচারী শাসক আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত ও শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। এ ছাড়া সে আল্লাহর দরবার থেকেও বহু দূরে অবস্থান করবে।’
(তিরমিজি: ১৩৭৯) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না, তখন সাত শ্রেণির মানুষকে তিনি তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। এর মধ্যে একজন হলেন ক্ষমতার সদ্ব্যবহারকারী ন্যায়পরায়ণ শাসক। (বুখারি: ৬৪২১)
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকা চাই। পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও মজবুত সম্পর্ক তৈরি করতে মহানবী (সা.) ৬টি কর্তব্যের কথা বলেছেন, যা পালন
১ দিন আগেএখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
২ দিন আগেওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
৩ দিন আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
৩ দিন আগে