ফারুক মেহেদী
করোনার ধাক্কা অর্থনীতিকে কতটা বিপর্যস্ত করেছে? সরকারের প্রণোদনা কি সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো পেয়েছে? কেন পেল না? প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যবসা-উদ্যোগ চাঙা করতে কী করা উচিত? বিনিয়োগ বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস–চেয়ারম্যান, বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক মেহেদী।
আজকের পত্রিকা: করোনাকালে কেমন চলছে ব্যবসা-উদ্যোগ?
জসিম উদ্দিন: গেল বছরের মার্চে করোনা আঘাতের মধ্য দিয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। তখন লকডাউনে প্রায় সব বন্ধ হয়ে যায়। দেশি–বিদেশি উৎপাদন ও সেবা খাত, দোকান, ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা ইত্যাদি প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এরপর কয়েকটি ঈদ আসে। তখনো খুচরা, পাইকারি ব্যবসা, ফ্যাশন হাউস—এদের বলতে গেলে ব্যবসাই হয়নি। এরপর যখন করোনা কিছুটা সহনীয় হলো, তখন আবার সবাই গোছাতে শুরু করল। এ প্রক্রিয়ায় সবাই স্থিত হওয়ার আগেই আবারও করোনা বাড়ছে। সরকার বাধ্য হয়ে লকডাউন দিয়েছে। এর প্রভাব বেশি পড়ে অর্থনীতির ওপর। দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখে বেসরকারি খাত। একটা সময় ছিল, যখন অন্য দেশে করোনার প্রভাব বেশি ছিল। বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত ভালো ছিল। এখন অন্যরা সবাই টিকা দিয়ে মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে, আর আমরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছি। সবার জন্য এখনো টিকার ব্যবস্থা করা যায়নি। ভারত থেকে টিকা আনার কথা থাকলেও ওই দেশে করোনা বাড়ায় তারা দিতে পারছে না। যদিও সরকার অন্য উৎস থেকে টিকার ব্যবস্থা করছে। তারপরও ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে অন্তত দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। তাই করোনা থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
আজকের পত্রিকা: করোনা থেকে বাঁচতে লকডাউনের বাইরে আর কী করা উচিত?
জসিম উদ্দিন: আমরা দেখছি, টিকা দিয়ে আমেরিকা পুরোই স্বাভাবিক গতিতে ফিরছে। সেখানের দোকানপাট খুলছে। মানুষের হাতে টাকা আসছে। তারা অর্ডার দিতে শুরু করেছে। অথচ আমরা এখন লকডাউনে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ শুধু শহরে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেও। আমরা কম দামে পণ্য দিতে পারলেও করোনার কারণে বায়াররা শঙ্কিত যে তাঁদের দেওয়া অর্ডারের পণ্য আমরা যথাসময়ে দিতে পারব কি না? যদিও লকডাউনে পণ্য পরিবহন ছাড় রয়েছে; তারপরেও এটাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। সামনে ঈদ আসছে। পরিবহন, দোকানপাট, হোটেল রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। যেটুকু খোলা আছে, তা দিয়ে কর্মীদের বেতন ভাতা দেওয়া কঠিন। লোকসান ঠেকানো অসম্ভব। নতুন করে আমরা সবাই আরেকটি ঝুঁকিতে পড়ে গেলাম। অন্য দেশ তাদের খাতগুলোকে চাঙা রাখতে প্রণোদনা দেয়। আমাদের সরকারের এই সার্মথ্য নেই যে সবাইকে সহায়তা করতে পারবে। সচেতনতাও সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে মানুষকে সচেতন করার। আর্মি, পুলিশ দিয়ে কতটা সচেতন করা যাবে? রাজনৈতিক কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। স্কুলের শিক্ষক, ইমাম, গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত হতে হবে। না হলে করোনা ঠেকানো সত্যিই কঠিন হবে। এখন গ্রামে সংক্রমণ বাড়ছে। সেখানে সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই সর্বস্তরের মানুষকে বোঝাতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে ক্যাম্পেইন করতে হবে। এফবিসিসিআই আগামী সপ্তাহ থেকে ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছে। সারা দেশের চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে মাস্ক বিতরণসহ নানান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এভাবে সবাই এগিয়ে না এলে করোনাকে দূরে রাখা সম্ভব হবে না।
আজকের পত্রিকা: বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারা? তারা প্রণোদনার সুবিধা কতটা পেল?
জসিম উদ্দিন: কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন খাত। হোটেল ব্যবসা রীতিমতো বসে গেছে। ক্যাটারিং ব্যবসা এখন নেই। ফার্মাসিউটিক্যালস, অনলাইনসহ কিছু খাত হয়তো ভালো আছে। সিঙ্গাপুরে সরকার তাদের হোটেল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু করেছে। নাগরিকদের নগদ টাকা দিচ্ছে যাতে তাঁরা হোটেলে গিয়ে খেতে পারে। এতে হোটেল চাঙা হবে।
আজকের পত্রিকা: প্রণোদনা সুবিধা কি সবাই ঠিকমতো পেল?
জসিম উদ্দিন: সরকারের প্রণোদনা ঘোষণা ছিল সময়োপযোগী। বিশেষ করে এর ফলে পোশাক খাতসহ ছোট–বড় কিছু খাত ক্ষতির মুখ থেকে ফিরে এসেছে। তবে এসএমইর জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা আইনের দুর্বলতায় ঠিকমতো বণ্টন হয়নি। যারা পাওয়ার কথা তারা পায়নি। মূলত বড় ব্যবসায়ীরাও এসএমইর প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। তারপরও এখনো একটা অংশ বিতরণ করা যায়নি। কেন হয়নি এটা একটা প্রশ্ন। আসলে ব্যাংকগুলো তেলা মাথায় তেল দিয়েছে। তারা নানান অজুহাত দেখায়। বিশেষ করে জামানতের কথা বলে। তাদের যুক্তি টাকাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা। এসব কারণে মূলত প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রণোদনার সুবিধা পাননি ঠিকমতো।
আজকের পত্রিকা: প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য কী করা উচিত?
জসিম উদ্দিন: আমরা বলেছি, ব্যাংকগুলো চাইলে আমাদের চেম্বারগুলো তাদের সহায়তা করতে পারে। আমাদের সারা দেশে যত চেম্বার আছে, তারা জেলায় জেলায় কারা সত্যিকার ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের তালিকা করে কার কতটুকু পাওয়া উচিত—এ ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারে। তাতে ব্যাংকের জন্য সুবিধা হয়। তা ছাড়া তাদের অনেকেরই এজেন্ট ব্যাংক আছে। তারপরও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা না পাওয়া দুঃখজনক। আসলে ব্যাংকগুলোকে আরও অ্যাকটিভ হতে হবে। তারা আরাম–আয়েশে ব্যাংকিং করতে চায়। বড় বড় ঋণ দিয়ে সেফজোনে থাকতে চায়। এভাবে হলে হবে না। শুধু তেলা মাথায় তেল দিলে হবে না। গ্রামে যেতে হবে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের দিকে তাকাতে হবে। সরকারকে তাদের বাধ্য করতে হবে। বলতে হবে যে তোমরা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য অন্তত ১-২ শতাংশ ঋণ সহজে দিতে হবে।
আজকে যে আমরা অর্থনীতি দেখছি তাতে সবজি, আম, মাছ—এসব খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পরিশ্রম জড়িত। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে ইনফরমাল সেক্টর বিশেষ করে ব্যক্তি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে করেছে। সেখানে তারা খেলাপি নয়। এনজিওদের ঋণ আদায় প্রায় শতভাগ। এটা কীভাবে সম্ভব? তারা যদি পারে তবে ব্যাংকগুলো পারবে না কেন? আমাদের বেঙ্গল ব্যাংককে বলেছি গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে। এ জন্য বলি, সরকার উদ্যোগ নিয়ে তাদের বাধ্য করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: করোনার প্রভাব চলতে থাকলে রাজস্ব আয় কতটা সফল হবে?
জসিম উদ্দিন: আপনি জানেন যে করোনার কারণে অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে। এটা একটা বিশেষ সময়। এই বিশেষ সময়ে রাজস্ব ঠিকমতো পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক। বিদায়ী অর্থবছরে এর প্রভাব ছিল, সামনেও হবে। ব্যবসা না হলে রাজস্ব দেবে কীভাবে? আর এমনিতেই এখানে কর জিডিপি অনুপাত অনেক কম। এলটিইউ’র আওতায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪০-৪৫ শতাংশ রাজস্ব আয় হয়। যারা মাঝামাঝি তারা বা যারা করের আওতায় নেই, তাদের ধরতে হবে। কর বিভাগ সেখানে যাচ্ছে না। আমরা বলেছি, গ্রামে, উপজেলা পর্যায়েও কর অফিস নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার অর্থনীতিও এখন চাঙা। নানান কার্যক্রম হচ্ছে। তাদের কাছ থেকেও কর আদায় করতে হবে। কর বিভাগের স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। করের আওতা না বাড়িয়ে যারা বারবার কর দেয়, তাদের ওপর চাপ দিয়ে লাভ হবে না।
আর বাজেটে যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা ইতিবাচক। তবে তা কিছু কিছু খাতের জন্য। অনেক খাত বাকি রয়েছে। মেড ইন বাংলাদেশ করার ইচ্ছা সরকারের। এটা ভালো দিক। যে খাতকে দেওয়া হচ্ছে অর্থনীতিতে তার কতটা অবদান সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর বাজেটে আমরা অগ্রিম কর উঠিয়ে দিতে বলেছিলাম। উল্টো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ করটা কেন দিতে হবে? এক বছর পর ফেরতের কথা বলা হয়। এর পেছনে আরও বাড়তি খরচ হয় ২০-৩০ শতাংশ টাকা। এটা উঠিয়ে দিতে পারত সরকার। সব দোকান মালিক ইএফডি চায়, দিচ্ছেন না। একটি মার্কেটে কয়েকটি দোকানে দিলেন, সবাইকে দিলেন না। তাতে কাজ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সবাই ইএফডি চাচ্ছেন। না পারলে একসঙ্গে দেন। এটা সবার কাছে পৌঁছাতে পারলে রাজস্ব অনেক বেড়ে যাবে।
আজকের পত্রিকা: এত কিছুর পরও আপনি বিনিয়োগ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
জসিম উদ্দিন: বিনিয়োগের একটি পজিটিভ দিক আছে। প্রধানমন্ত্রী যেসব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন এবং তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করছেন, তাতে বিনিয়োগ হবে। বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনমিক জোনসসহ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বিনিয়োগের হার ২৩ থেকে ২৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কাজ হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়ছে বলেই প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে। সামনে আরও সুযোগ আছে। চায়না থেকে শিল্প রি–লকেট হচ্ছে। আমাদের এ সুযোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে আমাদের স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন নন-ট্যারিফ, অ্যান্টিপাম্পিং পলিসি নিয়ে শিল্পের সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের মিশন ও এর কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের মিশন হওয়া উচিত বাণিজ্য প্রসারের। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। অথচ সেখানে আমাদের ব্যবসা নেই। সত্যিকার অর্থে আমাদের সামনে এগোতে হলে প্রধানমন্ত্রীর দর্শন সামনে রেখে কাজ করতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কার করতে হবে। নীতি করলেই হবে না, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে এনবিআরের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে এনবিআরকে আমরা একটি চিঠি দিয়ে একটি টাস্কফোর্স করার কথা জানিয়েছি।
করোনার ধাক্কা অর্থনীতিকে কতটা বিপর্যস্ত করেছে? সরকারের প্রণোদনা কি সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো পেয়েছে? কেন পেল না? প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যবসা-উদ্যোগ চাঙা করতে কী করা উচিত? বিনিয়োগ বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস–চেয়ারম্যান, বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক মেহেদী।
আজকের পত্রিকা: করোনাকালে কেমন চলছে ব্যবসা-উদ্যোগ?
জসিম উদ্দিন: গেল বছরের মার্চে করোনা আঘাতের মধ্য দিয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। তখন লকডাউনে প্রায় সব বন্ধ হয়ে যায়। দেশি–বিদেশি উৎপাদন ও সেবা খাত, দোকান, ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা ইত্যাদি প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এরপর কয়েকটি ঈদ আসে। তখনো খুচরা, পাইকারি ব্যবসা, ফ্যাশন হাউস—এদের বলতে গেলে ব্যবসাই হয়নি। এরপর যখন করোনা কিছুটা সহনীয় হলো, তখন আবার সবাই গোছাতে শুরু করল। এ প্রক্রিয়ায় সবাই স্থিত হওয়ার আগেই আবারও করোনা বাড়ছে। সরকার বাধ্য হয়ে লকডাউন দিয়েছে। এর প্রভাব বেশি পড়ে অর্থনীতির ওপর। দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখে বেসরকারি খাত। একটা সময় ছিল, যখন অন্য দেশে করোনার প্রভাব বেশি ছিল। বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত ভালো ছিল। এখন অন্যরা সবাই টিকা দিয়ে মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে, আর আমরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছি। সবার জন্য এখনো টিকার ব্যবস্থা করা যায়নি। ভারত থেকে টিকা আনার কথা থাকলেও ওই দেশে করোনা বাড়ায় তারা দিতে পারছে না। যদিও সরকার অন্য উৎস থেকে টিকার ব্যবস্থা করছে। তারপরও ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে অন্তত দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। তাই করোনা থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
আজকের পত্রিকা: করোনা থেকে বাঁচতে লকডাউনের বাইরে আর কী করা উচিত?
জসিম উদ্দিন: আমরা দেখছি, টিকা দিয়ে আমেরিকা পুরোই স্বাভাবিক গতিতে ফিরছে। সেখানের দোকানপাট খুলছে। মানুষের হাতে টাকা আসছে। তারা অর্ডার দিতে শুরু করেছে। অথচ আমরা এখন লকডাউনে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ শুধু শহরে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেও। আমরা কম দামে পণ্য দিতে পারলেও করোনার কারণে বায়াররা শঙ্কিত যে তাঁদের দেওয়া অর্ডারের পণ্য আমরা যথাসময়ে দিতে পারব কি না? যদিও লকডাউনে পণ্য পরিবহন ছাড় রয়েছে; তারপরেও এটাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। সামনে ঈদ আসছে। পরিবহন, দোকানপাট, হোটেল রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। যেটুকু খোলা আছে, তা দিয়ে কর্মীদের বেতন ভাতা দেওয়া কঠিন। লোকসান ঠেকানো অসম্ভব। নতুন করে আমরা সবাই আরেকটি ঝুঁকিতে পড়ে গেলাম। অন্য দেশ তাদের খাতগুলোকে চাঙা রাখতে প্রণোদনা দেয়। আমাদের সরকারের এই সার্মথ্য নেই যে সবাইকে সহায়তা করতে পারবে। সচেতনতাও সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে মানুষকে সচেতন করার। আর্মি, পুলিশ দিয়ে কতটা সচেতন করা যাবে? রাজনৈতিক কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। স্কুলের শিক্ষক, ইমাম, গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত হতে হবে। না হলে করোনা ঠেকানো সত্যিই কঠিন হবে। এখন গ্রামে সংক্রমণ বাড়ছে। সেখানে সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই সর্বস্তরের মানুষকে বোঝাতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে ক্যাম্পেইন করতে হবে। এফবিসিসিআই আগামী সপ্তাহ থেকে ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছে। সারা দেশের চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে মাস্ক বিতরণসহ নানান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এভাবে সবাই এগিয়ে না এলে করোনাকে দূরে রাখা সম্ভব হবে না।
আজকের পত্রিকা: বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারা? তারা প্রণোদনার সুবিধা কতটা পেল?
জসিম উদ্দিন: কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন খাত। হোটেল ব্যবসা রীতিমতো বসে গেছে। ক্যাটারিং ব্যবসা এখন নেই। ফার্মাসিউটিক্যালস, অনলাইনসহ কিছু খাত হয়তো ভালো আছে। সিঙ্গাপুরে সরকার তাদের হোটেল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু করেছে। নাগরিকদের নগদ টাকা দিচ্ছে যাতে তাঁরা হোটেলে গিয়ে খেতে পারে। এতে হোটেল চাঙা হবে।
আজকের পত্রিকা: প্রণোদনা সুবিধা কি সবাই ঠিকমতো পেল?
জসিম উদ্দিন: সরকারের প্রণোদনা ঘোষণা ছিল সময়োপযোগী। বিশেষ করে এর ফলে পোশাক খাতসহ ছোট–বড় কিছু খাত ক্ষতির মুখ থেকে ফিরে এসেছে। তবে এসএমইর জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা আইনের দুর্বলতায় ঠিকমতো বণ্টন হয়নি। যারা পাওয়ার কথা তারা পায়নি। মূলত বড় ব্যবসায়ীরাও এসএমইর প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। তারপরও এখনো একটা অংশ বিতরণ করা যায়নি। কেন হয়নি এটা একটা প্রশ্ন। আসলে ব্যাংকগুলো তেলা মাথায় তেল দিয়েছে। তারা নানান অজুহাত দেখায়। বিশেষ করে জামানতের কথা বলে। তাদের যুক্তি টাকাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা। এসব কারণে মূলত প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রণোদনার সুবিধা পাননি ঠিকমতো।
আজকের পত্রিকা: প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য কী করা উচিত?
জসিম উদ্দিন: আমরা বলেছি, ব্যাংকগুলো চাইলে আমাদের চেম্বারগুলো তাদের সহায়তা করতে পারে। আমাদের সারা দেশে যত চেম্বার আছে, তারা জেলায় জেলায় কারা সত্যিকার ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের তালিকা করে কার কতটুকু পাওয়া উচিত—এ ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারে। তাতে ব্যাংকের জন্য সুবিধা হয়। তা ছাড়া তাদের অনেকেরই এজেন্ট ব্যাংক আছে। তারপরও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা না পাওয়া দুঃখজনক। আসলে ব্যাংকগুলোকে আরও অ্যাকটিভ হতে হবে। তারা আরাম–আয়েশে ব্যাংকিং করতে চায়। বড় বড় ঋণ দিয়ে সেফজোনে থাকতে চায়। এভাবে হলে হবে না। শুধু তেলা মাথায় তেল দিলে হবে না। গ্রামে যেতে হবে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের দিকে তাকাতে হবে। সরকারকে তাদের বাধ্য করতে হবে। বলতে হবে যে তোমরা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য অন্তত ১-২ শতাংশ ঋণ সহজে দিতে হবে।
আজকে যে আমরা অর্থনীতি দেখছি তাতে সবজি, আম, মাছ—এসব খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পরিশ্রম জড়িত। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে ইনফরমাল সেক্টর বিশেষ করে ব্যক্তি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে করেছে। সেখানে তারা খেলাপি নয়। এনজিওদের ঋণ আদায় প্রায় শতভাগ। এটা কীভাবে সম্ভব? তারা যদি পারে তবে ব্যাংকগুলো পারবে না কেন? আমাদের বেঙ্গল ব্যাংককে বলেছি গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে। এ জন্য বলি, সরকার উদ্যোগ নিয়ে তাদের বাধ্য করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: করোনার প্রভাব চলতে থাকলে রাজস্ব আয় কতটা সফল হবে?
জসিম উদ্দিন: আপনি জানেন যে করোনার কারণে অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে। এটা একটা বিশেষ সময়। এই বিশেষ সময়ে রাজস্ব ঠিকমতো পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক। বিদায়ী অর্থবছরে এর প্রভাব ছিল, সামনেও হবে। ব্যবসা না হলে রাজস্ব দেবে কীভাবে? আর এমনিতেই এখানে কর জিডিপি অনুপাত অনেক কম। এলটিইউ’র আওতায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪০-৪৫ শতাংশ রাজস্ব আয় হয়। যারা মাঝামাঝি তারা বা যারা করের আওতায় নেই, তাদের ধরতে হবে। কর বিভাগ সেখানে যাচ্ছে না। আমরা বলেছি, গ্রামে, উপজেলা পর্যায়েও কর অফিস নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার অর্থনীতিও এখন চাঙা। নানান কার্যক্রম হচ্ছে। তাদের কাছ থেকেও কর আদায় করতে হবে। কর বিভাগের স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। করের আওতা না বাড়িয়ে যারা বারবার কর দেয়, তাদের ওপর চাপ দিয়ে লাভ হবে না।
আর বাজেটে যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা ইতিবাচক। তবে তা কিছু কিছু খাতের জন্য। অনেক খাত বাকি রয়েছে। মেড ইন বাংলাদেশ করার ইচ্ছা সরকারের। এটা ভালো দিক। যে খাতকে দেওয়া হচ্ছে অর্থনীতিতে তার কতটা অবদান সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর বাজেটে আমরা অগ্রিম কর উঠিয়ে দিতে বলেছিলাম। উল্টো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ করটা কেন দিতে হবে? এক বছর পর ফেরতের কথা বলা হয়। এর পেছনে আরও বাড়তি খরচ হয় ২০-৩০ শতাংশ টাকা। এটা উঠিয়ে দিতে পারত সরকার। সব দোকান মালিক ইএফডি চায়, দিচ্ছেন না। একটি মার্কেটে কয়েকটি দোকানে দিলেন, সবাইকে দিলেন না। তাতে কাজ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সবাই ইএফডি চাচ্ছেন। না পারলে একসঙ্গে দেন। এটা সবার কাছে পৌঁছাতে পারলে রাজস্ব অনেক বেড়ে যাবে।
আজকের পত্রিকা: এত কিছুর পরও আপনি বিনিয়োগ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
জসিম উদ্দিন: বিনিয়োগের একটি পজিটিভ দিক আছে। প্রধানমন্ত্রী যেসব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন এবং তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করছেন, তাতে বিনিয়োগ হবে। বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনমিক জোনসসহ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বিনিয়োগের হার ২৩ থেকে ২৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কাজ হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়ছে বলেই প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে। সামনে আরও সুযোগ আছে। চায়না থেকে শিল্প রি–লকেট হচ্ছে। আমাদের এ সুযোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে আমাদের স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন নন-ট্যারিফ, অ্যান্টিপাম্পিং পলিসি নিয়ে শিল্পের সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের মিশন ও এর কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের মিশন হওয়া উচিত বাণিজ্য প্রসারের। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। অথচ সেখানে আমাদের ব্যবসা নেই। সত্যিকার অর্থে আমাদের সামনে এগোতে হলে প্রধানমন্ত্রীর দর্শন সামনে রেখে কাজ করতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কার করতে হবে। নীতি করলেই হবে না, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে এনবিআরের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে এনবিআরকে আমরা একটি চিঠি দিয়ে একটি টাস্কফোর্স করার কথা জানিয়েছি।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪