অবশেষে ৭৪ কোটি টাকায় বিক্রি হলো স্কচটেপ মারা সেই কলাটি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ৩৯
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ২২: ০৫
ধারণার চেয়েও ছয়গুণ বেশি দামে বিক্রি হলো ‘কমেডিয়ান’ শিল্পকর্ম। ছবি: বিবিসি

দেয়ালে স্কচটেপ দিয়ে আটকানো একটি সাধারণ কলা হলেও এটি আসলে একটি শিল্পকর্ম। ইতালিয়ান শিল্পী মরিজিও ক্যাটালান এই শিল্পের স্রষ্টা। ধারণা করা হয়েছিল, চলতি সপ্তাহেই সথোবির নিলামে এই কলাটি বাংলাদেশি মুদ্রায় মান অনুযায়ী প্রায় ১২ কোটি টাকায় বিক্রি হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত এটি প্রত্যাশার চেয়ে ছয় গুণেরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত একটি নিলামে শেষ পর্যন্ত ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে একটি সাধারণ কলা দিয়ে তৈরি ‘কমেডিয়ান’ শিরোনামের শিল্পটি। বাংলাদেশি মুদ্রার মান অনুযায়ী, যার দাম পড়েছে ৭৪ কোটি টাকারও বেশি।

গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত ওই নিলামে ‘কমেডিয়ান’ কিনে নেওয়ার জন্য অন্তত ছয়জন আগ্রহীকে পেছনে ফেলেন চীনা ক্রিপটোকারেন্সি উদ্যোক্তা জাস্টিন সান।

শিল্পটি কেনার পর সান বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনন্য শৈল্পিক অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে কলাটি খেয়ে ফেলব।’

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নিলামের দিন ‘কমেডিয়ান’ শিল্পকর্মে যে কলাটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, সেটি সেদিন সকালেই মাত্র ৩৫ সেন্ট দিয়ে কেনা হয়েছিল। অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে পারে, মাত্র ৪০ টাকা দিয়ে কেনা একটি কলা কোন যুক্তিতে ৭৪ কোটি টাকায় বিক্রি হলো!

এ বিষয়ে সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে মিয়ামি বিচের আর্ট বাসেল মেলায় প্রথমবারের মতো এই শিল্পের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। সেই সময়ই এটি বিপুল আলোচনার খোরাক হয়ে যায়। এই আলোচনা সেবার আরও তুঙ্গে ওঠে যখন মেলায় অংশ নেওয়া পারফরম্যান্স শিল্পী ডেভিড দাতুনা কলাটি দেয়াল থেকে হাতে নিয়ে খেয়ে ফেলেন। বিষয়টি নিয়ে পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দাতুন জানান, এটিও ছিল তাঁর একটি পারফরম্যান্স আর্ট।

যা হোক, সেবার ব্যাকআপ হিসেবে আনা আরেকটি কলা একই রকমভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই কলাকে কেন্দ্র করে পরে সেলফি তোলার মহোৎসব শুরু হয়। সেলফি সন্ধানীদের ভিড়ে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত এমন পর্যায়ে যায় যে মেলাটির শো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বিশেষ এই শিল্পটি সেবার ঠিকই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার ডলারে।

আসলে কলা বদলে গেলেও শিল্প বদলে ফেলা সম্ভব নয়। কেউ যদি মরিজিয়া ক্যাটালানের ওই শিল্পকর্মটি কেনেন, তবে তিনি কলাটির সঙ্গে একটি সার্টিফিকেট পাবেন। সেই সার্টিফিকেট যার কাছে থাকবে শুধু তিনিই যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে নতুন আরেকটি কলা দিয়ে শিল্পটি তৈরি করার সুযোগ পাবেন। শুধু তা-ই নয়, শিল্পমূল্যের স্বাভাবিক প্রবণতা অনুযায়ী, তিনি ওই কলাটি বর্তমানে কেনা দামের চেয়েও বেশি দামেই বিক্রি করবেন।

সোথোবির সমসাময়িক শিল্পের প্রধান ডেভিড গ্যালপেরিন বলেছেন, ‘শিল্পী ক্যাটেলানকে প্রায় সময়ই একজন ‘চালবাজ শিল্পী’ হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু তাঁর কাজ আসলে মানুষের হাস্যরস এবং গভীর ক্ষোভের সংযোগস্থলে থাকে। তিনি প্রায়ই আমাদের উসকানি দেওয়ার উপায়গুলো দেখেন, কেবল উসকানির জন্য নয়, বরং আমাদেরকে ইতিহাসের এবং নিজেদের সম্পর্কে কিছু অন্ধকার অংশের দিকে নজর দিতে বলেন।’

কলার একটি অন্ধকার দিক আছে। এটি সাম্রাজ্যবাদ, শ্রম শোষণ এবং করপোরেট ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত ইতিহাসসহ একটি ফল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত