অনলাইন ডেস্ক
গত বছর যখন রিচার্ড ম্যাককিনির বিয়ের অনুষ্ঠানের সব আয়োজন করেন বিবি বাহরানি। তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর বন্ধুরা। অতিথিদের জন্য আফগান খাবার রান্না করেন বাহরামি। কারণ তিনিও যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়ানো একজন আফগান অভিবাসী। গাজর ও কিশমিশ দিয়ে ভাত, মুরগির মাংস, গরুর মাংসসহ নানা মজাদার পদ প্রস্তুত করেন। আর ইসলামি রীতিতে ম্যাককিনির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন বাহরামির স্বামী ডা. মোহাম্মদ সাবের বাহরামি।
খুবই অনাড়ম্বর কিন্তু অতিথিদের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর এই বিবাহের দৃশ্যকে অস্বাভাবিক ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু ম্যাককিনি এবং বাহরামিদের বন্ধুত্বের শুরুটা কেমন ছিল সেই গল্পটি ক্যামেরায় ধারণের আগে খুব কম মানুষেরই জানা ছিল। সিনেমার মতো সেই গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’। এটি গত বছর নির্মিত হলেও এবারের অস্কার মনোনয়নে নাম আসায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
সংক্ষেপে গল্পটি এমন: ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষুব্ধ এবং মুসলমানদের প্রতি তীব্র ঘৃণা বয়ে বেড়ানো চওড়া কাঁধের, বাহুতে মার্কিন নেভির ট্যাটু আঁকা এক প্রবীণ ব্যক্তি; তিনি একবার যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে ইসলামিক সেন্টার অব মানসিতে গিয়েছিলেন শক্তিশালী বোমা পেতে রাখতে। তিনি চেয়েছিলেন এই মসজিদে আসা সব ব্যক্তিকে একসঙ্গে প্রাণে মেরে ফেলতে।
এই ব্যক্তিই হলেন রিচার্ড ম্যাককিনি। বোমা মেরে হত্যা করতে গিয়েই আশ্চর্যজনকভাবে বদলে যাওয়া ম্যাককিনিকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে ৩০ মিনিটের ডকুমেন্টারি শর্ট ফিল্ম। ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ইসলামিক সেন্টারের লোকদের সঙ্গে ম্যাককিনির সখ্য গড়ে ওঠে। তাঁদের সাদর অভ্যর্থনায় ব্যর্থ হয়ে যায় তাঁর হত্যা পরিকল্পনা। শুধু তা–ই দ্রুতই বদলে যায় তাঁর জীবনের গতিপথ।
রোববার (১২ মার্চ) অনুষ্ঠেয় ৯৫ তম অস্কার পুরস্কারের জন্য সেরা ডকুমেন্টারি শর্ট ফিল্ম ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছে ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’।
ম্যাককিনি সম্পর্কে বিবি বাহরামি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরে বন্ধু ছিলাম। আর এখন পরিবারের মতো।’ ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালালে গৃহহারা হয়ে পড়েন বিবি বাহরামি। পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে শরণার্থী হয়ে যান। সেখানে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। সেখানে ডা. সাবেরের সঙ্গে পরিচয়। এরপর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁদের বিয়ে হয়। এখন তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
ম্যাককিনি বলেন, বাহরামি পরিবারের সঙ্গে এই ‘অসম্ভব আত্মীয়তা’ অনেকের কাছে ‘বিভ্রান্তিকর’ মনে হতে পারে। এই পুরো যাত্রাটি ছিল অত্যন্ত পরাবাস্তব একটা ব্যাপার!
‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ সিনেমার নির্মাতা জোশুয়া সেফটেল বলেন, এটি হলো ম্যাককিনির দ্বিতীয় সুযোগ এবং রূপান্তরের গল্প। ঘৃণাকে জয় করা একটি প্রেমের গল্প।
সেফটেল বলেন, ‘আজকাল নিরাশায় ডুবে যাওয়াটা সহজ; যখন আমি এই গল্পটি জেনেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম, বাহ, মানবতায় বিশ্বাস করার কারণ এখনো রয়ে গেছে। যদি এই দুই ব্যক্তি বন্ধু হতে পারেন, তবে আমাদের কেউ কেন পারে না!’
‘সিক্রেট লাইফ অব মুসলিমস’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র সিরিজে কাজ করতে গিয়ে এই অসাধারণ গল্পের সন্ধান পান সেফটেল। এই সিরিজের মাধ্যমে সেফটেল বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমেরিকান মুসলমানদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং নেতিবাচক গৎবাঁধা ধারণাগুলো ভেঙে দিতে চাইছিলেন।
এই সিরিজের অনুপ্রেরণা নিজের বিভীষিকাময় শৈশব থেকেই পেয়েছিলেন সেফটেল। নিজের মধ্যে এখনো ছোটবেলার ইহুদি বিদ্বেষের শিকার হওয়ার স্মৃতি দগদগে। তাঁকে একটি ইহুদি শিশু হিসেবে নানাভাবে হয়রানি শিকার হতে হয়েছিল। সেই ঘৃণার শিকল ছিঁড়তে চেয়েছেন তিনি।
সেফটেল বলেন, নাইল ইলেভেনের পর আমি মুসলমানদের প্রতি এই ধরনের ঘৃণা দেখেছিলাম। আমি শুধু ভেবেছিলাম, হয়তো আমি আমার চলচ্চিত্রের কাজ দিয়ে এই জায়গাটাতে কিছু করার চেষ্টা করতে পারি।
২০২১ সালে নাইন ইলেভেন ২০ তম বার্ষিকীর আগে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ যৌথভাবে একটি জরিপ করেছিল। সেই জরিপে দেখা যায়, ৫৩ শতাংশ আমেরিকান ইসলামের প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। ম্যাককিনিও এই দলেই ছিলেন। বলতে গেলে, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উৎসাহী ও সহিংস মনোভাবেরই ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ সামরিক কর্মজীবন রিচার্ড ম্যাককিনিকে অনেকগুলো তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়েছে। তিনি দেখেছেন ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ। যুদ্ধের ময়দানে জীবনবাজি রেখেছেন। কর্মজীবনের সমাপ্তির পর ক্ষুব্ধ, তিক্ত এবং জীবন সম্পর্কে হতাশার বোধ তীব্র হয় তাঁর। এসব ভুলে থাকতে প্রচুর মদ্যপান করতেন। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তাঁর নিয়তি ছিল যুদ্ধে গিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং একটি পতাকা-ঢাকা কফিনে করে বাড়ি ফেরা। বড়জোর বীর হিসেবে একটা সম্মাননা।
যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ম্যাককিনির মনে মুসলমানদের প্রতি চরম বিদ্বেষের জন্ম দেয়। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় বিদেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই মুসলমানরাই ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের শত্রু।
তথ্যচিত্রটিতে ম্যাককিনিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল একটি আইইডি (দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো। শুক্রবারে ইসলামিক সেন্টারের বাইরে যখন লোকজন নামাজের জন্য জড়ো হবে তখনই ঘটবে বিস্ফোরণ। আমি কমপক্ষে ২০০ বা তার বেশি মানুষকে হত্যা অথবা জখম করতে চেয়েছিলাম।’
যুদ্ধ থেকে ২০০৬ সালে মানসিতে ফেরেন ম্যাককিনি। এসে দেখেন পুরো এলাকায় মুসলিমদের বাস। স্কুলে মুসলিম শিশুদের সঙ্গে পড়তে হচ্ছে তাঁর সন্তানকেও। এটি সহ্য করতে পারেননি ম্যাককিনি। ২০০৯ সালে ইসলামিক সেন্টারের ওই মসজিদে যাতায়াত শুরু করেন তিনি। সেখানে গিয়ে লোকজনকে বলেন, তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে চান।
সিনেমায় ম্যাককিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের বিশ্বাস করিনি।...আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে বেসমেন্টে আমার গলায় তলোয়ার ধরে রাখবে।’ কিন্তু বাস্তবে, মুসল্লিরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তাঁরা তাঁকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
সিনেমাতে দেখা যায়, বিবি বাহরামি লোকসংগীতের একজন অনুরাগী শ্রোতা। তাঁর স্বামী ড. মোহাম্মদ সাবের বাহরামি তাঁকে ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের মাদার তেরেসা’ বলে অভিহিত করেন। বাহরামি ম্যাককিনিকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেছেন, পছন্দের খাবার খাইয়েছেন। বাহরামির সংস্পর্শে শেষ পর্যন্ত নিজের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছেন ম্যাককিনির। অন্তরের কথা শুনেছেন কান পেতে। একদিন ম্যাককিনি বাহরামি বলেন, ‘আমার মুসলিম হওয়া উচিত।’
সিনেমাটির নির্মাতা সেফটেল বলেন, বাহরামি দর্শকদের দেখিয়েছেন, মানুষ তাঁকে আলিঙ্গন করেছেন। কেউ কেউ অশ্রুসজল চোখে তাঁর কাছে এসেছেন, তাঁকে বলেছে যে, তিনি তাঁদের আশা এবং সাহস দিয়েছেন। তাঁদের কমিউনিটির জন্য কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
কেউ কেউ এমন কঠিন প্রশ্নেরও মুখোমুখি করেছেন বাহরামিকে যে, ম্যাককিনিকে তিনি কীভাবে ক্ষমা করেছিলেন?
জবাবে বাহরামি বলেন, যখন তিনি ম্যাককিনির কথা শুনেছিলেন, তাঁর বিশ্বাস হয়নি। ম্যাককিনি পরিকল্পনার কথা জেনে তিনি তাঁকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান। ম্যাককিনি যা ভেবেছিলেন সেটি তাঁর কাছ থেকে জানতে চান। বাহরামি বলেন, আমার এক দৃঢ় বিশ্বাসী (ইমানদার), আমি মনে করি, আমার ইমানের একটি বড় অংশ হলো ক্ষমা।
আরেকটি দিক তুলে ধরেন বাহরামি, তিনি ম্যাককিনির মধ্যে একটা দুর্বলতা টের পেয়েছিলেন। ম্যাককিনি আকুলভাবে ক্ষমাপ্রার্থী ছিলেন।
সেফটেল যখন সিনেমাটির জন্য তাঁর কাছে গিয়েছিলে সেই সময়কার কথা স্মরণ করে বাহরামি বলেন, তিনি তখন অত্যন্ত অসুস্থ। কোমায় ছিলেন। সুস্থ হয়ে সেফটেলের অনুরোধটি বিবেচনা করেছিলেন। বাহরামির ভাষায়, ‘খোদা আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন। যদি আমি মারা যাই, গল্পটি তো বেঁচে থাকবে!’
‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ সিনেমাটি ২০২২ সালে ট্রিবেকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিশেষ জুরি পুরস্কার জেতে। এর প্রযোজকদের একজন পাকিস্তানের নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই। প্রচারিত হচ্ছে দ্য নিউ ইয়র্কার পত্রিকার ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে।
এ বছর অস্কারের মনোনয়ন পাওয়া ধর্মীয় থিমের সিনেমার মধ্যে ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ একমাত্র নয়। ‘উইমেন টকিং’ নামে একটি সিনেমাও সেরা ছবির জন্য মনোনীত হয়েছে। মিরিয়াম টোউসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি বলিভিয়ার একটি মেনোনাইট সম্প্রদায়ের (খ্রিষ্টানদের বিশেষ গোত্র) একটি ভয়ংকর সত্য গল্প নিয়ে। ওই সম্প্রদায়ের পুরুষেরা বহু নারী ও শিশু–কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। সিনেমায় দেখানো হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা ধর্ম ত্যাগ করবেন কি না সেই সিদ্ধান্তহীনতায় লড়ছেন। কারণ দাগি অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা, দ্য নিউ ইয়র্কার
গত বছর যখন রিচার্ড ম্যাককিনির বিয়ের অনুষ্ঠানের সব আয়োজন করেন বিবি বাহরানি। তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর বন্ধুরা। অতিথিদের জন্য আফগান খাবার রান্না করেন বাহরামি। কারণ তিনিও যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়ানো একজন আফগান অভিবাসী। গাজর ও কিশমিশ দিয়ে ভাত, মুরগির মাংস, গরুর মাংসসহ নানা মজাদার পদ প্রস্তুত করেন। আর ইসলামি রীতিতে ম্যাককিনির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন বাহরামির স্বামী ডা. মোহাম্মদ সাবের বাহরামি।
খুবই অনাড়ম্বর কিন্তু অতিথিদের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর এই বিবাহের দৃশ্যকে অস্বাভাবিক ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু ম্যাককিনি এবং বাহরামিদের বন্ধুত্বের শুরুটা কেমন ছিল সেই গল্পটি ক্যামেরায় ধারণের আগে খুব কম মানুষেরই জানা ছিল। সিনেমার মতো সেই গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’। এটি গত বছর নির্মিত হলেও এবারের অস্কার মনোনয়নে নাম আসায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
সংক্ষেপে গল্পটি এমন: ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষুব্ধ এবং মুসলমানদের প্রতি তীব্র ঘৃণা বয়ে বেড়ানো চওড়া কাঁধের, বাহুতে মার্কিন নেভির ট্যাটু আঁকা এক প্রবীণ ব্যক্তি; তিনি একবার যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে ইসলামিক সেন্টার অব মানসিতে গিয়েছিলেন শক্তিশালী বোমা পেতে রাখতে। তিনি চেয়েছিলেন এই মসজিদে আসা সব ব্যক্তিকে একসঙ্গে প্রাণে মেরে ফেলতে।
এই ব্যক্তিই হলেন রিচার্ড ম্যাককিনি। বোমা মেরে হত্যা করতে গিয়েই আশ্চর্যজনকভাবে বদলে যাওয়া ম্যাককিনিকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে ৩০ মিনিটের ডকুমেন্টারি শর্ট ফিল্ম। ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ইসলামিক সেন্টারের লোকদের সঙ্গে ম্যাককিনির সখ্য গড়ে ওঠে। তাঁদের সাদর অভ্যর্থনায় ব্যর্থ হয়ে যায় তাঁর হত্যা পরিকল্পনা। শুধু তা–ই দ্রুতই বদলে যায় তাঁর জীবনের গতিপথ।
রোববার (১২ মার্চ) অনুষ্ঠেয় ৯৫ তম অস্কার পুরস্কারের জন্য সেরা ডকুমেন্টারি শর্ট ফিল্ম ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছে ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’।
ম্যাককিনি সম্পর্কে বিবি বাহরামি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরে বন্ধু ছিলাম। আর এখন পরিবারের মতো।’ ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালালে গৃহহারা হয়ে পড়েন বিবি বাহরামি। পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে শরণার্থী হয়ে যান। সেখানে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। সেখানে ডা. সাবেরের সঙ্গে পরিচয়। এরপর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁদের বিয়ে হয়। এখন তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
ম্যাককিনি বলেন, বাহরামি পরিবারের সঙ্গে এই ‘অসম্ভব আত্মীয়তা’ অনেকের কাছে ‘বিভ্রান্তিকর’ মনে হতে পারে। এই পুরো যাত্রাটি ছিল অত্যন্ত পরাবাস্তব একটা ব্যাপার!
‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ সিনেমার নির্মাতা জোশুয়া সেফটেল বলেন, এটি হলো ম্যাককিনির দ্বিতীয় সুযোগ এবং রূপান্তরের গল্প। ঘৃণাকে জয় করা একটি প্রেমের গল্প।
সেফটেল বলেন, ‘আজকাল নিরাশায় ডুবে যাওয়াটা সহজ; যখন আমি এই গল্পটি জেনেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম, বাহ, মানবতায় বিশ্বাস করার কারণ এখনো রয়ে গেছে। যদি এই দুই ব্যক্তি বন্ধু হতে পারেন, তবে আমাদের কেউ কেন পারে না!’
‘সিক্রেট লাইফ অব মুসলিমস’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র সিরিজে কাজ করতে গিয়ে এই অসাধারণ গল্পের সন্ধান পান সেফটেল। এই সিরিজের মাধ্যমে সেফটেল বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমেরিকান মুসলমানদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং নেতিবাচক গৎবাঁধা ধারণাগুলো ভেঙে দিতে চাইছিলেন।
এই সিরিজের অনুপ্রেরণা নিজের বিভীষিকাময় শৈশব থেকেই পেয়েছিলেন সেফটেল। নিজের মধ্যে এখনো ছোটবেলার ইহুদি বিদ্বেষের শিকার হওয়ার স্মৃতি দগদগে। তাঁকে একটি ইহুদি শিশু হিসেবে নানাভাবে হয়রানি শিকার হতে হয়েছিল। সেই ঘৃণার শিকল ছিঁড়তে চেয়েছেন তিনি।
সেফটেল বলেন, নাইল ইলেভেনের পর আমি মুসলমানদের প্রতি এই ধরনের ঘৃণা দেখেছিলাম। আমি শুধু ভেবেছিলাম, হয়তো আমি আমার চলচ্চিত্রের কাজ দিয়ে এই জায়গাটাতে কিছু করার চেষ্টা করতে পারি।
২০২১ সালে নাইন ইলেভেন ২০ তম বার্ষিকীর আগে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ যৌথভাবে একটি জরিপ করেছিল। সেই জরিপে দেখা যায়, ৫৩ শতাংশ আমেরিকান ইসলামের প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। ম্যাককিনিও এই দলেই ছিলেন। বলতে গেলে, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উৎসাহী ও সহিংস মনোভাবেরই ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ সামরিক কর্মজীবন রিচার্ড ম্যাককিনিকে অনেকগুলো তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়েছে। তিনি দেখেছেন ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ। যুদ্ধের ময়দানে জীবনবাজি রেখেছেন। কর্মজীবনের সমাপ্তির পর ক্ষুব্ধ, তিক্ত এবং জীবন সম্পর্কে হতাশার বোধ তীব্র হয় তাঁর। এসব ভুলে থাকতে প্রচুর মদ্যপান করতেন। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তাঁর নিয়তি ছিল যুদ্ধে গিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং একটি পতাকা-ঢাকা কফিনে করে বাড়ি ফেরা। বড়জোর বীর হিসেবে একটা সম্মাননা।
যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ম্যাককিনির মনে মুসলমানদের প্রতি চরম বিদ্বেষের জন্ম দেয়। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় বিদেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই মুসলমানরাই ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের শত্রু।
তথ্যচিত্রটিতে ম্যাককিনিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল একটি আইইডি (দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো। শুক্রবারে ইসলামিক সেন্টারের বাইরে যখন লোকজন নামাজের জন্য জড়ো হবে তখনই ঘটবে বিস্ফোরণ। আমি কমপক্ষে ২০০ বা তার বেশি মানুষকে হত্যা অথবা জখম করতে চেয়েছিলাম।’
যুদ্ধ থেকে ২০০৬ সালে মানসিতে ফেরেন ম্যাককিনি। এসে দেখেন পুরো এলাকায় মুসলিমদের বাস। স্কুলে মুসলিম শিশুদের সঙ্গে পড়তে হচ্ছে তাঁর সন্তানকেও। এটি সহ্য করতে পারেননি ম্যাককিনি। ২০০৯ সালে ইসলামিক সেন্টারের ওই মসজিদে যাতায়াত শুরু করেন তিনি। সেখানে গিয়ে লোকজনকে বলেন, তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে চান।
সিনেমায় ম্যাককিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের বিশ্বাস করিনি।...আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে বেসমেন্টে আমার গলায় তলোয়ার ধরে রাখবে।’ কিন্তু বাস্তবে, মুসল্লিরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তাঁরা তাঁকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
সিনেমাতে দেখা যায়, বিবি বাহরামি লোকসংগীতের একজন অনুরাগী শ্রোতা। তাঁর স্বামী ড. মোহাম্মদ সাবের বাহরামি তাঁকে ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের মাদার তেরেসা’ বলে অভিহিত করেন। বাহরামি ম্যাককিনিকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেছেন, পছন্দের খাবার খাইয়েছেন। বাহরামির সংস্পর্শে শেষ পর্যন্ত নিজের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছেন ম্যাককিনির। অন্তরের কথা শুনেছেন কান পেতে। একদিন ম্যাককিনি বাহরামি বলেন, ‘আমার মুসলিম হওয়া উচিত।’
সিনেমাটির নির্মাতা সেফটেল বলেন, বাহরামি দর্শকদের দেখিয়েছেন, মানুষ তাঁকে আলিঙ্গন করেছেন। কেউ কেউ অশ্রুসজল চোখে তাঁর কাছে এসেছেন, তাঁকে বলেছে যে, তিনি তাঁদের আশা এবং সাহস দিয়েছেন। তাঁদের কমিউনিটির জন্য কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
কেউ কেউ এমন কঠিন প্রশ্নেরও মুখোমুখি করেছেন বাহরামিকে যে, ম্যাককিনিকে তিনি কীভাবে ক্ষমা করেছিলেন?
জবাবে বাহরামি বলেন, যখন তিনি ম্যাককিনির কথা শুনেছিলেন, তাঁর বিশ্বাস হয়নি। ম্যাককিনি পরিকল্পনার কথা জেনে তিনি তাঁকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান। ম্যাককিনি যা ভেবেছিলেন সেটি তাঁর কাছ থেকে জানতে চান। বাহরামি বলেন, আমার এক দৃঢ় বিশ্বাসী (ইমানদার), আমি মনে করি, আমার ইমানের একটি বড় অংশ হলো ক্ষমা।
আরেকটি দিক তুলে ধরেন বাহরামি, তিনি ম্যাককিনির মধ্যে একটা দুর্বলতা টের পেয়েছিলেন। ম্যাককিনি আকুলভাবে ক্ষমাপ্রার্থী ছিলেন।
সেফটেল যখন সিনেমাটির জন্য তাঁর কাছে গিয়েছিলে সেই সময়কার কথা স্মরণ করে বাহরামি বলেন, তিনি তখন অত্যন্ত অসুস্থ। কোমায় ছিলেন। সুস্থ হয়ে সেফটেলের অনুরোধটি বিবেচনা করেছিলেন। বাহরামির ভাষায়, ‘খোদা আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন। যদি আমি মারা যাই, গল্পটি তো বেঁচে থাকবে!’
‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ সিনেমাটি ২০২২ সালে ট্রিবেকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিশেষ জুরি পুরস্কার জেতে। এর প্রযোজকদের একজন পাকিস্তানের নোবেলজয়ী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই। প্রচারিত হচ্ছে দ্য নিউ ইয়র্কার পত্রিকার ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে।
এ বছর অস্কারের মনোনয়ন পাওয়া ধর্মীয় থিমের সিনেমার মধ্যে ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ একমাত্র নয়। ‘উইমেন টকিং’ নামে একটি সিনেমাও সেরা ছবির জন্য মনোনীত হয়েছে। মিরিয়াম টোউসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি বলিভিয়ার একটি মেনোনাইট সম্প্রদায়ের (খ্রিষ্টানদের বিশেষ গোত্র) একটি ভয়ংকর সত্য গল্প নিয়ে। ওই সম্প্রদায়ের পুরুষেরা বহু নারী ও শিশু–কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। সিনেমায় দেখানো হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা ধর্ম ত্যাগ করবেন কি না সেই সিদ্ধান্তহীনতায় লড়ছেন। কারণ দাগি অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা, দ্য নিউ ইয়র্কার
স্পেনের একটি বৃদ্ধাশ্রমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ১০ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তপক্ষ। আজ শুক্রবার স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এল পেইসের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে আল-জাজিরা।
৪১ মিনিট আগেঅপ্রাপ্তবয়স্ক নারী হলেও সম্মতির ভিত্তিতে তাঁর সঙ্গে যৌনসঙ্গম ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে বলে রায় দিয়েছে মুম্বাই হাইকোর্ট। আইন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে সম্মতিকে বৈধতার জন্য যুক্তি হিসেবে প্রদর্শন গ্রহণযোগ্য হবে না।
৫ ঘণ্টা আগেএখন থেকে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারতের জন্য আগাম অনুমতি নিতে হবে। অতিরিক্ত ভিড় থেকে মসজিদের কার্যক্রম বিঘ্ন হওয়া ঠেকাতে এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য সংরক্ষণের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেকোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এই পতনের প্রধান কারণ। জাতীয় দারিদ্র্য হ্রাস ত্বরান্বিতকরণ টিমের নীতি বিশেষজ্ঞ এগা কুরনিয়া ইয়াজিদ বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তঃসংযুক্ত কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকোচনের জন্য দায়ী। মধ্যবিত্তরা মূলত কর রাজস্বে বড় অবদান রাখে। কিন্তু তারা খুবই সীমিত
৬ ঘণ্টা আগে