ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে এমন প্রমাণ নেই: আইএইএ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৬: ৪৮
আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রসি। ছবি: ইরনা

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, এমন কোনো প্রমাণ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) কাছে নেই। সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি গতকাল মঙ্গলবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে এই কথা বলেন। ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা ইরনার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাকুতে চলমান জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৯ এর ফাঁকে আইএইএ প্রধান গ্রসি স্পষ্ট করে বলেন, তেহরান সফরের সময় ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘কথিত নিরাপত্তা ইস্যুগুলো’ সমাধানের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

আইএইএ বলেন, ‘এই যে ফাঁক, এই যে আস্থার অভাব—এটা এমন একটি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত, যেখানে (ইরানের) পারমাণবিক স্থাপনাগুলো (হামলার) লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটা আমরা হতে দিতে পারি না। আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার বিষয়টি নিয়ে আইএইএ উদ্বিগ্ন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে রাফায়েল গ্রসি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আইএইএ-এর কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই যা এই দাবিকে সমর্থন করে।’ এর আগে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রসি বলেছিলেন, ইরান সফরের উদ্দেশ্য দেশটির পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে বাকি থাকা বিষয়গুলো নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান খোঁজা।

ভবিষ্যতে যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাফায়েল গ্রসি বলেন, ‘এটি কোনো গোপন বিষয় নয়। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ বিষয়ে সমাধান খুঁজছে।’ ইরান সফরে গ্রসি ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

দুই সপ্তাহ আগে আইএইএ প্রধানের সঙ্গে ভিয়েনায় সাক্ষাতের পর ইরানের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী কাজেম গরিমাবাদি ঘোষণা করেন, গ্রসির এই সফর ইরান ও সংস্থাটির মধ্যে চলমান যোগাযোগের ধারাবাহিকতা এবং ২০২৩ সালের ৪ মার্চ দুই পক্ষের যৌথ বিবৃতির আলোকে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বাকি বিষয়গুলো পেশাদার দৃষ্টিকোণ থেকে ও পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সমাধানের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপের অংশ।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি মিলে ২০১৫ সালের যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার আওতায় একটি পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার পরই ধীরে ধীরে নিজের প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে সরে আসে ইরান। এর আগে, পশ্চিমা দেশগুলো জাতিসংঘের সনদের সপ্তম অধ্যায়ের ভিত্তিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করে এবং এর সমাধান সামরিক পদক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে করার চেষ্টা করে।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) তাদের একাধিক প্রতিবেদনে ইরানের ২০১৫ সালের চুক্তি মেনে চলার বিষয়টি যাচাই করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনঃ আরোপ করায় ইরানও এক বছরের মাথায় তার প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

এরপর, ২০১৮ সালে ইরান জেসিপিওএ চুক্তির যৌথ কমিশনের আওতায় বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া সক্রিয় করে। যেখানে চুক্তির বাকি সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন। এর ফলে জেসিপিওএ সদস্যরা একটি বিবৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১১টি প্রতিশ্রুতি দেয়।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের অধীনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর পূর্বসূরির একতরফা পদক্ষেপের নিন্দা জানালেও তিনিও ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির সেই ‘ম্যাক্সিমাম প্রেশার’ বা ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি চালিয়ে যান। সাম্প্রতিক নির্বাচনে ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরতে চলেছেন।

ইরান বারবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো যদি জেসিপিওএ চুক্তির ধারাগুলো মেনে চলে তবে ইরানের নেওয়া পদক্ষেপগুলোও প্রত্যাহারযোগ্য।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত