ভারতে মুঘল আমলের মসজিদে জরিপকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ২

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ৩২
উত্তর প্রদেশে মসজিদ জরিপকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। ছবি: পিটিআই

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে একটি মুঘল আমলের জামে মসজিদে জরিপ পরিচালনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। উত্তর প্রদেশের সম্বল জেলায় আজ রোববার সকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মসজিদটির যে জায়গায় অবস্থিত তা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। সেই দ্বন্দ্বের জেরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এক পক্ষের দাবি, যে স্থানে মসজিদটি অবস্থিত সেখানে একটি মন্দির ছিল আগে। অর্থাৎ, হিন্দু মন্দিরের জায়গায় এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। পরে আদালত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, জরিপ দল কাজ শুরু করার পর মসজিদের কাছে একদল জনতা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সেখানে হাজার খানেক লোক সমবেত হয়। একপর্যায়ে কিছু ব্যক্তি পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে এবং অন্তত ১০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। এ সময় সংঘর্ষে নিহত হন বিলাল আনসারি ও নাঈম আহমেদ নামে দুজন।

জরিপটি শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টায়। আদালতে দায়ের করা মামলায় বাদী পক্ষের দাবি, মসজিদের স্থানে একসময় একটি মন্দির ছিল। পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ১৫২৯ সালে সম্রাট বাবর এই স্থানে থাকা মন্দির ধ্বংস করেছিলেন।

জরিপের পক্ষে সমর্থকেরা এটিকে ঐতিহাসিক সত্য উদ্ঘাটনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে সমালোচকেরা বলছেন, এটি ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইনের বিরোধিতা এবং ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা লঙ্ঘন।

সম্বল জেলার পুলিশ সুপার কৃষ্ণ কুমার বিষ্ণোই বলেন, ‘জনতার মধ্যে থাকা কিছু দুষ্কৃতকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। যারা সহিংসতায় যুক্ত, তাদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজেন্দ্র পেসিয়া জানান, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্তত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে মসজিদের কাছে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরানোর দৃশ্য দেখা গেছে। তারপরও নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।

আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন জানান, জরিপ দল আদালতের নির্দেশ অনুসারে ছবি ও ভিডিওসহ স্থানের বিস্তারিত পরীক্ষা চালিয়েছে। জরিপ প্রতিবেদন ২৯ নভেম্বর জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

এই ঘটনা উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই অশান্তি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘সম্বলে গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। জরিপ দলকে সকালে পাঠিয়ে আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে বিতর্ক এড়ানো।’

সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বারক ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইন উল্লেখ করে জরিপের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘সম্বলের জামে মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের মতোই উপাসনালয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত