অনলাইন ডেস্ক
কম্বোডিয়া ক্রমেই একদলীয় শাসনের পথে হাঁটছে। নির্বাচনের ঠিক আগে দেশটির জনগণের কাছে একমাত্র আস্থাভাজন বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একপ্রকার নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। নানা কৌশলে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটির নাগরিকেরা। সোভানি নামে এক নাগরিক বলেন, ‘আমি ভোটই দেব না। কেন আমি ভোট দিতে যাব, যেখানে নির্বাচনে একটিমাত্র দলই অংশ নিয়েছে? ভোট দিতে যাওয়া তো স্রেফ সময়ের অপচয়।’ সোভানি বলেন, ‘খেলার মাঠে অন্তত দুজন প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রয়োজন।’ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী একজন হলে সেই খেলার আর কোনো অর্থ থাকে...—প্রশ্ন সোভানির।
রোববার (২৩ জুলাই) কম্বোডিয়ার সপ্তম জাতীয় নির্বাচন। এতে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টিসহ (সিপিপি) সব মিলিয়ে ১৮টি দল অংশ নেবে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল ‘ক্যান্ডেল লাইট পার্টিকে’ নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য করায় এবারও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনই ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন।
এর আগেও ২০১৮ সালে হুন সেন যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখনো বিরোধী দলকে দমনের একই খেলা মঞ্চায়িত হয়েছিল। সে সময়কার জনপ্রিয় প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকেও আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে গতবারের মতো এবারও ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ করে নিয়েছেন হুন সেন। যদিও তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হুন সেনের সরকার কেবল প্রধান বিরোধী দলকে দমন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সরকারের সমালোচক সব মুখ বন্ধ করতেও উঠেপড়ে লেগেছে। এইতো, গত ২৩ জুন কম্বোডিয়ার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিপিপি দেশটির নির্বাচন আইন সংশোধন করেছে। যেখানে বলা হয়েছে—কোনো কেউ নাগরিকদের ভোট না দিতে উৎসাহিত করে তবে তা অপরাধমূলক ‘উসকানি’ বলে বিবেচিত হবে। সরকার সতর্ক করে বলেছে, যারা এমনটা করবে তাদের জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
তবে হুন সেনের দাবি, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং যারা মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখার ‘অপচেষ্টা’ চালায় তাদের রুখতেই এই আইন সংশোধন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত কম্বোডিয়ার বিগত ৩০ বছরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিশ্চিত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে সংশোধিত আইনের প্রথম ‘বলি’ যূপকাষ্ঠে উঠে গেছে। গত সপ্তাহেই ক্যান্ডেল লাইট পার্টির দুই কর্মীকে এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তাঁরা জনগণকে ভোট না দিতে ‘উসকে’ দিচ্ছিলেন। এরপর একই আইনে ক্যান্ডেল লাইট পার্টির আরও দুজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বিদেশে থাকা ১৭ জন বিরোধী রাজনীতিবিদকে এ আইনের আওতায় ২০ থেকে ২৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কেবল তাই নয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণের খড়্গ গিয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ওপরও। সরকার বেশ কয়েকটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং ডেটাবেইস সংস্থার ওয়েবসাইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছে এবং ‘সরকারের মর্যাদাকে’ আক্রমণ করছে।
সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, নির্বাচন নিয়ে নতুন আইন করার ফলে সাধারণ কম্বোডীয়রা ভাবছেন, তাঁদের সামনে এখন একটাই বিকল্প রয়েছে—তা হলো, ভোটের দিন চুপচাপ বাড়িতে বসে থাকা। এমন মনোভাবই দেখা গেল লি মিঙ নামে ২৩ বছর বয়সী এক তরুণের মধ্যে। তিনি দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মিঙ বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে, ৩০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ভোট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। কারণ আমি জানি, কী ঘটতে যাচ্ছে।’
তবে লি মিঙকে বেশ সতর্ক মনে হলো। তিনি জানালেন, তাঁর ভোট না দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানাতে চান না। পরিবার কিংবা বন্ধু-স্বজন; কাউকেই না। যদিও সরকারের সঙ্গে তাঁর পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সামান্যতম কোনো সংযোগ নেই, এরপরও তিনি বিষয়টি গোপন রাখতে চান। তাঁর কাছে, বর্তমান কম্বোডিয়ায় চুপ থাকা এবং ভোট দিতে না যাওয়াটাই নিরাপদ থাকার সবচেয়ে বড় উপায়।
কেবল সাধারণ জনগণ কিংবা বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই নয়, ক্ষমতাসীন দলেরও অনেকেই বিশ্বাস করেন যে—যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। তাঁদের মতে, এটি কম্বোডিয়ার সরকারব্যবস্থার জন্য ভালো তো নয়ই, এটি কম্বোডিয়ার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করবে।
এমনটাই জানালেন, পিসেই নামে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। ৩৫ বছর বয়সী এই কর্মকর্তার মতে, নির্বাচনে বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করার ফলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কম্বোডিয়ার নাম খারাপ হবে। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সব সময়ই বিরোধী দল থাকবে।’ তাঁর মতে, সরকার কী করছে, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারার জন্য বিরোধী দলের উপস্থিতি জরুরি। তবে পিসেই ভোট দেবেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমাকে মন্ত্রণালয় যা করতে বলবে আমি তা–ই করব।’
আইনের শিক্ষার্থী কুশল জানান, তাঁর বাবা-মা সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন এবং তাঁরা সব সময়ই সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করে থাকেন। কুশল জানালেন, ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। সে বছর নির্বাচনে বিরোধীরা হুন সেনের কাছ থেকে বিজয় প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক ধর-পাকড় এবং নানা কারণেই বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত আর সরকারি দলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ফলে দেশটির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তনও আসেনি। তাঁর মতে, বিরোধীদের ওপর নির্যাতন স্রেফ হাস্যকর। কুশলের মতে, এমন দমন-পীড়ন যতই চলতে থাকবে সমাজে এসব বিষয় ততই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
কুশল বলেন, ‘আপনি যখন প্রতিনিয়ত একই বিষয় বারবার ঘটতে দেখবেন তখন আপনি দ্রুত বিষয়টির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। তাই আসলে নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ আমি জানি, কোনো কিছুই বদলাবে না।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু ভোট দেওয়া এখন আইন করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাই আমি কেন্দ্রে যাব এবং ভোট দিয়ে বাড়িতে চলে আসব।’
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে, আদালতের আদেশে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পর দেশটির নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অধিকারকর্মীরা জনগণকে নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁরা ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান, যদি তাঁরা ভোট দিতে বাধ্য হন তবে যেন ভোট কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ব্যালট নষ্ট করে ফেলেন কিংবা খালি রেখে আসেন। এই আহ্বান বেশ কাজে দিয়েছিল। সে বছর কাস্ট হওয়া মোট ভোটের দশ ভাগের এক ভাগই বাতিল হয়েছিল।
২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে— এই আশঙ্কায় অগ্রিম হুমকি দিয়েছেন হুন সেন। তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কী করছেন তা আমার অজানা নয় এবং আপনারা কী বলছেন তাও আমার কানে পৌঁছায়।’
সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইস্ট অ্যান্ড সাউথ-ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার এবং কম্বোডিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাস্ট্রিড নরেন-নিলসেন বলেন, ‘সম্ভবত এবারের নির্বাচনে গতবারের চেয়ে প্রতিরোধ কমই হতে যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, এর পেছনে বড় কারণ হলো, সরকার ভিন্নমত দমন করার পরও ২০২২ সালে সাউথ-ইস্ট এশিয়ান গেমসের মতো বড় ইভেন্ট এবং একই বছরে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনসে (আসিয়ান) হুন সেন সভাপতিত্ব করেন। এটা তাঁর বড় বিজয়। এসব বিষয় নির্দেশ করে, সরকার দেশের বাইরে বেশ কিছু সমর্থন অর্জন করতে পেরেছে।
নিলসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগের তুলনায় বর্তমান নির্বাচন সরকারের জন্য অনেক কম বিপজ্জনক। তবে এর মানে এই নয় যে, মানুষ প্রধান বৈধ বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে মেনে নেবে। তবে আমি মনে করি, এর মাধ্যমে জনগণের মনোযোগ নির্বাচন থেকে অন্যদিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’
তবে বিরোধীরা জানেন, মানুষের ক্ষোভ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি বরং তা এক ধরনের ‘শীতনিদ্রা’ বা ‘শীতল পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছে। এ বিষয়ে, ক্যান্ডেল লাইট পার্টির নেতা ফন সোফিয়া বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, কম্বোডিয়ার তরুণেরা রাজনীতি সচেতন নয়। তারা অবশ্যই সচেতন, তবে আশা হারিয়ে ফেলেছে।’
সোফিয়ার মতে, ‘কম্বোডিয়ার তরুণেরা স্মার্ট। তারা জানে, কীভাবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কম্বোডিয়ার তরুণেরা যদি দেখে, কোনো একটি দল সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছে তবে তারা আবার ফিরে আসবে।’
আল-জাজিরা থেকে অনূদিত
কম্বোডিয়া ক্রমেই একদলীয় শাসনের পথে হাঁটছে। নির্বাচনের ঠিক আগে দেশটির জনগণের কাছে একমাত্র আস্থাভাজন বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একপ্রকার নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। নানা কৌশলে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটির নাগরিকেরা। সোভানি নামে এক নাগরিক বলেন, ‘আমি ভোটই দেব না। কেন আমি ভোট দিতে যাব, যেখানে নির্বাচনে একটিমাত্র দলই অংশ নিয়েছে? ভোট দিতে যাওয়া তো স্রেফ সময়ের অপচয়।’ সোভানি বলেন, ‘খেলার মাঠে অন্তত দুজন প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রয়োজন।’ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী একজন হলে সেই খেলার আর কোনো অর্থ থাকে...—প্রশ্ন সোভানির।
রোববার (২৩ জুলাই) কম্বোডিয়ার সপ্তম জাতীয় নির্বাচন। এতে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টিসহ (সিপিপি) সব মিলিয়ে ১৮টি দল অংশ নেবে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল ‘ক্যান্ডেল লাইট পার্টিকে’ নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য করায় এবারও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনই ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন।
এর আগেও ২০১৮ সালে হুন সেন যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখনো বিরোধী দলকে দমনের একই খেলা মঞ্চায়িত হয়েছিল। সে সময়কার জনপ্রিয় প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকেও আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে গতবারের মতো এবারও ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ করে নিয়েছেন হুন সেন। যদিও তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হুন সেনের সরকার কেবল প্রধান বিরোধী দলকে দমন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সরকারের সমালোচক সব মুখ বন্ধ করতেও উঠেপড়ে লেগেছে। এইতো, গত ২৩ জুন কম্বোডিয়ার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিপিপি দেশটির নির্বাচন আইন সংশোধন করেছে। যেখানে বলা হয়েছে—কোনো কেউ নাগরিকদের ভোট না দিতে উৎসাহিত করে তবে তা অপরাধমূলক ‘উসকানি’ বলে বিবেচিত হবে। সরকার সতর্ক করে বলেছে, যারা এমনটা করবে তাদের জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
তবে হুন সেনের দাবি, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং যারা মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখার ‘অপচেষ্টা’ চালায় তাদের রুখতেই এই আইন সংশোধন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত কম্বোডিয়ার বিগত ৩০ বছরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিশ্চিত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে সংশোধিত আইনের প্রথম ‘বলি’ যূপকাষ্ঠে উঠে গেছে। গত সপ্তাহেই ক্যান্ডেল লাইট পার্টির দুই কর্মীকে এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তাঁরা জনগণকে ভোট না দিতে ‘উসকে’ দিচ্ছিলেন। এরপর একই আইনে ক্যান্ডেল লাইট পার্টির আরও দুজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বিদেশে থাকা ১৭ জন বিরোধী রাজনীতিবিদকে এ আইনের আওতায় ২০ থেকে ২৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কেবল তাই নয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণের খড়্গ গিয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ওপরও। সরকার বেশ কয়েকটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং ডেটাবেইস সংস্থার ওয়েবসাইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছে এবং ‘সরকারের মর্যাদাকে’ আক্রমণ করছে।
সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, নির্বাচন নিয়ে নতুন আইন করার ফলে সাধারণ কম্বোডীয়রা ভাবছেন, তাঁদের সামনে এখন একটাই বিকল্প রয়েছে—তা হলো, ভোটের দিন চুপচাপ বাড়িতে বসে থাকা। এমন মনোভাবই দেখা গেল লি মিঙ নামে ২৩ বছর বয়সী এক তরুণের মধ্যে। তিনি দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মিঙ বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে, ৩০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ভোট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। কারণ আমি জানি, কী ঘটতে যাচ্ছে।’
তবে লি মিঙকে বেশ সতর্ক মনে হলো। তিনি জানালেন, তাঁর ভোট না দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানাতে চান না। পরিবার কিংবা বন্ধু-স্বজন; কাউকেই না। যদিও সরকারের সঙ্গে তাঁর পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সামান্যতম কোনো সংযোগ নেই, এরপরও তিনি বিষয়টি গোপন রাখতে চান। তাঁর কাছে, বর্তমান কম্বোডিয়ায় চুপ থাকা এবং ভোট দিতে না যাওয়াটাই নিরাপদ থাকার সবচেয়ে বড় উপায়।
কেবল সাধারণ জনগণ কিংবা বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই নয়, ক্ষমতাসীন দলেরও অনেকেই বিশ্বাস করেন যে—যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। তাঁদের মতে, এটি কম্বোডিয়ার সরকারব্যবস্থার জন্য ভালো তো নয়ই, এটি কম্বোডিয়ার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করবে।
এমনটাই জানালেন, পিসেই নামে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। ৩৫ বছর বয়সী এই কর্মকর্তার মতে, নির্বাচনে বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করার ফলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কম্বোডিয়ার নাম খারাপ হবে। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সব সময়ই বিরোধী দল থাকবে।’ তাঁর মতে, সরকার কী করছে, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারার জন্য বিরোধী দলের উপস্থিতি জরুরি। তবে পিসেই ভোট দেবেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমাকে মন্ত্রণালয় যা করতে বলবে আমি তা–ই করব।’
আইনের শিক্ষার্থী কুশল জানান, তাঁর বাবা-মা সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন এবং তাঁরা সব সময়ই সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করে থাকেন। কুশল জানালেন, ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। সে বছর নির্বাচনে বিরোধীরা হুন সেনের কাছ থেকে বিজয় প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক ধর-পাকড় এবং নানা কারণেই বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত আর সরকারি দলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ফলে দেশটির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তনও আসেনি। তাঁর মতে, বিরোধীদের ওপর নির্যাতন স্রেফ হাস্যকর। কুশলের মতে, এমন দমন-পীড়ন যতই চলতে থাকবে সমাজে এসব বিষয় ততই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
কুশল বলেন, ‘আপনি যখন প্রতিনিয়ত একই বিষয় বারবার ঘটতে দেখবেন তখন আপনি দ্রুত বিষয়টির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। তাই আসলে নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ আমি জানি, কোনো কিছুই বদলাবে না।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু ভোট দেওয়া এখন আইন করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাই আমি কেন্দ্রে যাব এবং ভোট দিয়ে বাড়িতে চলে আসব।’
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে, আদালতের আদেশে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পর দেশটির নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অধিকারকর্মীরা জনগণকে নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁরা ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান, যদি তাঁরা ভোট দিতে বাধ্য হন তবে যেন ভোট কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ব্যালট নষ্ট করে ফেলেন কিংবা খালি রেখে আসেন। এই আহ্বান বেশ কাজে দিয়েছিল। সে বছর কাস্ট হওয়া মোট ভোটের দশ ভাগের এক ভাগই বাতিল হয়েছিল।
২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে— এই আশঙ্কায় অগ্রিম হুমকি দিয়েছেন হুন সেন। তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কী করছেন তা আমার অজানা নয় এবং আপনারা কী বলছেন তাও আমার কানে পৌঁছায়।’
সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইস্ট অ্যান্ড সাউথ-ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার এবং কম্বোডিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাস্ট্রিড নরেন-নিলসেন বলেন, ‘সম্ভবত এবারের নির্বাচনে গতবারের চেয়ে প্রতিরোধ কমই হতে যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, এর পেছনে বড় কারণ হলো, সরকার ভিন্নমত দমন করার পরও ২০২২ সালে সাউথ-ইস্ট এশিয়ান গেমসের মতো বড় ইভেন্ট এবং একই বছরে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনসে (আসিয়ান) হুন সেন সভাপতিত্ব করেন। এটা তাঁর বড় বিজয়। এসব বিষয় নির্দেশ করে, সরকার দেশের বাইরে বেশ কিছু সমর্থন অর্জন করতে পেরেছে।
নিলসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগের তুলনায় বর্তমান নির্বাচন সরকারের জন্য অনেক কম বিপজ্জনক। তবে এর মানে এই নয় যে, মানুষ প্রধান বৈধ বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে মেনে নেবে। তবে আমি মনে করি, এর মাধ্যমে জনগণের মনোযোগ নির্বাচন থেকে অন্যদিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’
তবে বিরোধীরা জানেন, মানুষের ক্ষোভ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি বরং তা এক ধরনের ‘শীতনিদ্রা’ বা ‘শীতল পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছে। এ বিষয়ে, ক্যান্ডেল লাইট পার্টির নেতা ফন সোফিয়া বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, কম্বোডিয়ার তরুণেরা রাজনীতি সচেতন নয়। তারা অবশ্যই সচেতন, তবে আশা হারিয়ে ফেলেছে।’
সোফিয়ার মতে, ‘কম্বোডিয়ার তরুণেরা স্মার্ট। তারা জানে, কীভাবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কম্বোডিয়ার তরুণেরা যদি দেখে, কোনো একটি দল সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছে তবে তারা আবার ফিরে আসবে।’
আল-জাজিরা থেকে অনূদিত
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎ করেছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে তাঁরা সাক্ষাৎ করেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ইরানের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে
১ ঘণ্টা আগেইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ আছে সেগুলোর সার্বভৌম মালিকানা ফিলিস্তিনি জনগণের। এই বিষয়টির স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবটিতে পশ্চিমা বিশ্বের অনেকগুলো দেশ সমর্থন দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাব পাস হয়
২ ঘণ্টা আগেচিকিৎসার জন্য ২০০৭ সালে ভারতের আসামে গিয়েছিল বাংলাদেশের সিলেটের এক পরিবার। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে পরিবারের এক মেয়ে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমে পড়ে। শেষমেশ তাঁকে বিয়ে করে সেখানেই থেকে যান তিনি। তবে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কখনোই প্রশস্ত ছিল না। ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার হিন্দুস
৩ ঘণ্টা আগেউত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আত্মঘাতী ড্রোনের ব্যাপক উৎপাদন শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর মতে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এমন ড্রোনের ব্যবহার বাড়ার প্রেক্ষাপটে সামরিক মতবাদেও দ্রুত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আজ শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ—এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদ
৩ ঘণ্টা আগে