অনলাইন ডেস্ক
উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিমের নামেই তাঁর নাম। চলতি বছরের শুরুর দিকে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও ভাইয়ের পরিবার সহ দেশ থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছেন তিনি। তবে এমন একটি পথ ব্যবহার করে পরিবারটি পালিয়েছিল—স্বাভাবিক চিন্তায় যা অসম্ভব মনে হবে যে কারও কাছে।
পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা কিমের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছিলেন বিবিসির সিউল প্রতিনিধি জিন ম্যাকিঞ্জি। পরে তাঁর কাছে পালানোর রুদ্ধশ্বাস ঘটনাটি বর্ণনা করেন কিম। এ বিষয়ে বুধবার ম্যাকিঞ্জির লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর কিমের পরিবারই প্রথম উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছে। দুর্যোগময় এক রাতে পালিয়েছিল পরিবারটি। দক্ষিণ দিক থেকে ধেয়ে আসছিল প্রচণ্ড বাতাস; এক সময় তা ঝড়ে রূপ নেয়। তবে ঝড়ো এমন রাতই কিমের পরিকল্পনার অংশ ছিল। তিনি আশা করেছিলেন, সমুদ্র উত্তাল থাকলে নজরদারি জাহাজগুলোও কিছুটা এলোমেলো থাকবে। আর এই সুযোগটিকেই কাজে লাগাতে হবে।
পালানোর সেই দিনটির জন্য কিম বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিলেন, আর কয়েক মাস ধরে এর পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।
পালানোর দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কিমের ভাইয়ের সন্তানেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। কারণ তাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন কিম, যেন পথে শিশুরা কোনো আওয়াজ না করে। অন্ধকারে সবাইকে নিয়ে কিম ও তাঁর ভাই এমন একটি পথ দিয়ে সমুদ্রের দিকে যাচ্ছিলেন যেখানে পুঁতে রাখা ছিল অসংখ্য মাইন। এ ছাড়াও ঘুরে ঘুরে তাঁদের দিকে আসছিল রক্ষীদের সার্চলাইটের আলো। ফলে খুব সাবধানে মাইন আর সার্চ লাইটের আলোকে পাশ কাটিয়ে পরিবার নিয়ে এগিয়ে চলেন তাঁরা। সমুদ্রের পাড়েই একটি আড়ালে তাঁদের ছোট্ট একটি কাঠের নৌকা বাঁধা ছিল।
নৌকায় পৌঁছেই বাচ্চাদেরকে তাঁরা শস্য রাখার কয়েকটি বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, বস্তাগুলোর ভেতরে কোনো মালামাল রাখা আছে। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য কিম ও তাঁর ভাইয়ের কাছে ছিল দুটি তলোয়ার। আর তাঁদের স্ত্রী ও মায়ের কাছে ছিল বিষ। এ ছাড়াও ডিমের কয়েকটি ফাঁকা খোসার ভেতরে তাঁরা মরিচের গুঁড়া ভরে নিয়েছিলেন এই ভেবে যে—রক্ষীদের কাছে ধরা পড়ে গেলে তাঁদের মুখে এগুলো ছুড়ে দিয়ে আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা চালানো হবে।
বয়স ত্রিশের কোঠায় এসে পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেও অন্তত এক দশক আগে থেকেই এই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন কিম। খুব অল্প বয়সেই নিজের দেশকে তাঁর কারাগারের মতো মনে হয়েছিল। তাই এই কারাগার ছেড়ে দক্ষিণে পালানোর স্বপ্ন দেখতেন তিনি। জীবিত অবস্থায় তাঁর বাবা তাঁকে নিয়ে প্রায় সময়ই লুকিয়ে লুকিয়ে টেলিভিশনে দক্ষিণ কোরিয়ার চ্যানেলগুলো দেখতেন। তাঁরা সীমান্তের এত কাছাকাছি থাকতেন যে-দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কিছু চ্যানেল টিভিতে দেখা যেত। টিভিতে দেখা দক্ষিণের মানুষগুলোকে মুক্ত মানুষ মনে হতো। যদিও দক্ষিণের চ্যানেল দেখার বিষয়টি ধরা পড়লে তাঁরা নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতেন। গত বছরের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার গান শোনা ও সিনেমা দেখার অপরাধে একজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে দেখেছেন কিম।
বছরের পর বছর ধরে উত্তর কোরিয়া থেকে পালানোর চিন্তা করলেও কিম কখনোই তাঁর পরিবারকে ফেলে রেখে যাওয়ার চিন্তা করেননি। তবে এই বিষয়টি পরিবারের কারও কাছেই তিনি প্রকাশ করেননি। ২০২২ সালেই প্রথম পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় পরিবারের সদস্যদের রাজি করানোর কথা ভাবেন তিনি। এ জন্য প্রথমেই তিনি তাঁর ভাইকে টার্গেট করেন। স্ত্রীকে নিয়ে ভাই অবৈধ সামুদ্রিক খাবারের একটি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরে এই ধরনের ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় কড়াকড়ি শুরু হলে তাঁর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় তাঁকে সহজেই রাজি করাতে সক্ষম হয় কিম।
পরবর্তী সাত মাস ধরে তাঁরা তাঁদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য খুব সাবধানে কাজ শুরু করেন। কাছাকাছি এলাকায় যেসব কোস্টগার্ড ও নিরাপত্তারক্ষী টহল দেয় কিম তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে শুরু করেন। গোপনে তাদের গতিবিধি, কাজের ধরন এবং শিফট বদলের বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে থাকেন। এভাবে একসময় তাঁরা পালিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
তবে এই পর্যায়ে এসে কিমের কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজটি ছিল তাঁর বৃদ্ধ মা এবং স্ত্রীকে রাজি করানো। জানানোর পর দুজনই এর বিরোধিতা করেছিলেন। বিশেষ করে মা। পরে অবশ্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে মাকে রাজি করান দুই ভাই।
আরেকটি বিষয় হলো—তত দিনে গর্ভধারণ করেছিলেন কিমের স্ত্রী। ফলে পালানোর ক্ষেত্রে এটি একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল। যদিও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা বলেই শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে রাজি করান কিম।
তারপর থেকেই একটি ঝড়ো রাতের জন্য অপেক্ষা করছিল পরিবারটি। গত ৬ মে ছিল তেমনই একটি রাত। সেই রাতে মাইনভূমি পেরিয়ে নৌকা নিয়ে তাঁরা উত্তাল সমুদ্রে রওনা করেন দক্ষিণ কোরিয়া অভিমুখে। উত্তর কোরিয়ার সীমানায় থাকা অবস্থায় নৌকার ইঞ্জিনের কোনো শব্দই পাচ্ছিলেন না কিম। এর বদলে থর থর করা হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনছিলেন শুধু। কারণ সামনেই দেখা যাচ্ছে মুক্তি। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগে ধরা পড়ে গেলেই পরিবারের সবার নিশ্চিত মৃত্যু। ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন কিম।
ভয়ংকর বিষয় হলো—শেষ মুহূর্তে তাঁদের নৌকাটির দিকে একটি জাহাজ এগিয়ে আসতে দেখেছিল কিম। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত তাঁদের আর ধরতে পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উত্তর পেরিয়ে দক্ষিণের জলসীমায় পৌঁছে যান। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নপিয়ং দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে তাঁরা নৌকার আলো জ্বালিয়ে দেন। দেশটির নৌবাহিনী তাঁদের উদ্ধার করে। পরে অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দাদের জেরার মুখে পড়েন তারা। একপর্যায়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে—কিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর নন।
উত্তর কোরিয়া থেকে কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে গেলে তাঁকে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়। মূলত দক্ষিণের জীবন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই কেন্দ্রে। কিমের পরিবারটি গত অক্টোবরে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিমের স্ত্রী ইতিমধ্যে একটি সন্তান প্রসব করেছেন। তিনি এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন। তবে কিমের মা সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যস্ত রাস্তা, পাতাল রেল এসবের মাঝে প্রায় সময়ই তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে উত্তর কোরিয়ার জীবনই তাঁর কাছে সহজ মনে হয়।
এদিকে টেলিভিশন দেখে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন বলে কিম সহজেই সবকিছু মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁর কাছে এখন মনে হয়—তিনি যে পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন সেই পৃথিবীতেই এখন তিনি বাস্তবে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিমের নামেই তাঁর নাম। চলতি বছরের শুরুর দিকে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও ভাইয়ের পরিবার সহ দেশ থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছেন তিনি। তবে এমন একটি পথ ব্যবহার করে পরিবারটি পালিয়েছিল—স্বাভাবিক চিন্তায় যা অসম্ভব মনে হবে যে কারও কাছে।
পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা কিমের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছিলেন বিবিসির সিউল প্রতিনিধি জিন ম্যাকিঞ্জি। পরে তাঁর কাছে পালানোর রুদ্ধশ্বাস ঘটনাটি বর্ণনা করেন কিম। এ বিষয়ে বুধবার ম্যাকিঞ্জির লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর কিমের পরিবারই প্রথম উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছে। দুর্যোগময় এক রাতে পালিয়েছিল পরিবারটি। দক্ষিণ দিক থেকে ধেয়ে আসছিল প্রচণ্ড বাতাস; এক সময় তা ঝড়ে রূপ নেয়। তবে ঝড়ো এমন রাতই কিমের পরিকল্পনার অংশ ছিল। তিনি আশা করেছিলেন, সমুদ্র উত্তাল থাকলে নজরদারি জাহাজগুলোও কিছুটা এলোমেলো থাকবে। আর এই সুযোগটিকেই কাজে লাগাতে হবে।
পালানোর সেই দিনটির জন্য কিম বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিলেন, আর কয়েক মাস ধরে এর পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।
পালানোর দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কিমের ভাইয়ের সন্তানেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। কারণ তাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন কিম, যেন পথে শিশুরা কোনো আওয়াজ না করে। অন্ধকারে সবাইকে নিয়ে কিম ও তাঁর ভাই এমন একটি পথ দিয়ে সমুদ্রের দিকে যাচ্ছিলেন যেখানে পুঁতে রাখা ছিল অসংখ্য মাইন। এ ছাড়াও ঘুরে ঘুরে তাঁদের দিকে আসছিল রক্ষীদের সার্চলাইটের আলো। ফলে খুব সাবধানে মাইন আর সার্চ লাইটের আলোকে পাশ কাটিয়ে পরিবার নিয়ে এগিয়ে চলেন তাঁরা। সমুদ্রের পাড়েই একটি আড়ালে তাঁদের ছোট্ট একটি কাঠের নৌকা বাঁধা ছিল।
নৌকায় পৌঁছেই বাচ্চাদেরকে তাঁরা শস্য রাখার কয়েকটি বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, বস্তাগুলোর ভেতরে কোনো মালামাল রাখা আছে। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য কিম ও তাঁর ভাইয়ের কাছে ছিল দুটি তলোয়ার। আর তাঁদের স্ত্রী ও মায়ের কাছে ছিল বিষ। এ ছাড়াও ডিমের কয়েকটি ফাঁকা খোসার ভেতরে তাঁরা মরিচের গুঁড়া ভরে নিয়েছিলেন এই ভেবে যে—রক্ষীদের কাছে ধরা পড়ে গেলে তাঁদের মুখে এগুলো ছুড়ে দিয়ে আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা চালানো হবে।
বয়স ত্রিশের কোঠায় এসে পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেও অন্তত এক দশক আগে থেকেই এই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন কিম। খুব অল্প বয়সেই নিজের দেশকে তাঁর কারাগারের মতো মনে হয়েছিল। তাই এই কারাগার ছেড়ে দক্ষিণে পালানোর স্বপ্ন দেখতেন তিনি। জীবিত অবস্থায় তাঁর বাবা তাঁকে নিয়ে প্রায় সময়ই লুকিয়ে লুকিয়ে টেলিভিশনে দক্ষিণ কোরিয়ার চ্যানেলগুলো দেখতেন। তাঁরা সীমান্তের এত কাছাকাছি থাকতেন যে-দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কিছু চ্যানেল টিভিতে দেখা যেত। টিভিতে দেখা দক্ষিণের মানুষগুলোকে মুক্ত মানুষ মনে হতো। যদিও দক্ষিণের চ্যানেল দেখার বিষয়টি ধরা পড়লে তাঁরা নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতেন। গত বছরের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার গান শোনা ও সিনেমা দেখার অপরাধে একজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে দেখেছেন কিম।
বছরের পর বছর ধরে উত্তর কোরিয়া থেকে পালানোর চিন্তা করলেও কিম কখনোই তাঁর পরিবারকে ফেলে রেখে যাওয়ার চিন্তা করেননি। তবে এই বিষয়টি পরিবারের কারও কাছেই তিনি প্রকাশ করেননি। ২০২২ সালেই প্রথম পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় পরিবারের সদস্যদের রাজি করানোর কথা ভাবেন তিনি। এ জন্য প্রথমেই তিনি তাঁর ভাইকে টার্গেট করেন। স্ত্রীকে নিয়ে ভাই অবৈধ সামুদ্রিক খাবারের একটি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরে এই ধরনের ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় কড়াকড়ি শুরু হলে তাঁর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় তাঁকে সহজেই রাজি করাতে সক্ষম হয় কিম।
পরবর্তী সাত মাস ধরে তাঁরা তাঁদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য খুব সাবধানে কাজ শুরু করেন। কাছাকাছি এলাকায় যেসব কোস্টগার্ড ও নিরাপত্তারক্ষী টহল দেয় কিম তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে শুরু করেন। গোপনে তাদের গতিবিধি, কাজের ধরন এবং শিফট বদলের বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে থাকেন। এভাবে একসময় তাঁরা পালিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
তবে এই পর্যায়ে এসে কিমের কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজটি ছিল তাঁর বৃদ্ধ মা এবং স্ত্রীকে রাজি করানো। জানানোর পর দুজনই এর বিরোধিতা করেছিলেন। বিশেষ করে মা। পরে অবশ্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে মাকে রাজি করান দুই ভাই।
আরেকটি বিষয় হলো—তত দিনে গর্ভধারণ করেছিলেন কিমের স্ত্রী। ফলে পালানোর ক্ষেত্রে এটি একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল। যদিও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা বলেই শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে রাজি করান কিম।
তারপর থেকেই একটি ঝড়ো রাতের জন্য অপেক্ষা করছিল পরিবারটি। গত ৬ মে ছিল তেমনই একটি রাত। সেই রাতে মাইনভূমি পেরিয়ে নৌকা নিয়ে তাঁরা উত্তাল সমুদ্রে রওনা করেন দক্ষিণ কোরিয়া অভিমুখে। উত্তর কোরিয়ার সীমানায় থাকা অবস্থায় নৌকার ইঞ্জিনের কোনো শব্দই পাচ্ছিলেন না কিম। এর বদলে থর থর করা হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনছিলেন শুধু। কারণ সামনেই দেখা যাচ্ছে মুক্তি। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগে ধরা পড়ে গেলেই পরিবারের সবার নিশ্চিত মৃত্যু। ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন কিম।
ভয়ংকর বিষয় হলো—শেষ মুহূর্তে তাঁদের নৌকাটির দিকে একটি জাহাজ এগিয়ে আসতে দেখেছিল কিম। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত তাঁদের আর ধরতে পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উত্তর পেরিয়ে দক্ষিণের জলসীমায় পৌঁছে যান। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নপিয়ং দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে তাঁরা নৌকার আলো জ্বালিয়ে দেন। দেশটির নৌবাহিনী তাঁদের উদ্ধার করে। পরে অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দাদের জেরার মুখে পড়েন তারা। একপর্যায়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে—কিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর নন।
উত্তর কোরিয়া থেকে কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে গেলে তাঁকে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়। মূলত দক্ষিণের জীবন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই কেন্দ্রে। কিমের পরিবারটি গত অক্টোবরে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিমের স্ত্রী ইতিমধ্যে একটি সন্তান প্রসব করেছেন। তিনি এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন। তবে কিমের মা সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যস্ত রাস্তা, পাতাল রেল এসবের মাঝে প্রায় সময়ই তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে উত্তর কোরিয়ার জীবনই তাঁর কাছে সহজ মনে হয়।
এদিকে টেলিভিশন দেখে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন বলে কিম সহজেই সবকিছু মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁর কাছে এখন মনে হয়—তিনি যে পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন সেই পৃথিবীতেই এখন তিনি বাস্তবে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কুখ্যাত ৯ / ১১ এর মতো আরেকটি ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছিল এক মার্কিন যুবক। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের বাসিন্দা আনাস সাইদের (২৮) বিরুদ্ধে ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস) সন্ত্রাসীদের
২৬ মিনিট আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রকে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয়ের (এইচএইচএস) প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেবেন। তিনি বলেছেন, সাবেক এই ডেমোক্র্যাট নেতা (কেনেডি জুনিয়র) এই পদে থেকে ‘ক্ষতিকর রাসায়নিক ও দূষণ থেকে সবার সুরক্ষা নিশ্চিত ক
২ ঘণ্টা আগেস্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়েছে। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। নানা কারণেই পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজটির বাংলাদেশের বন্দরে ভেড়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। আর এই ঐতিহাসিক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্
২ ঘণ্টা আগেতুলসী গ্যাবার্ডকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। তুলসী গ্যাবার্ড কে? নিয়োগ পেলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হওয়া প্রথম হিন্দু নারী। সাবেক এই মার্কিন সেনা একসময় রাজনীতি করেছ
১১ ঘণ্টা আগে