আফ্রিকায় ৩৪ হাজার বছর আগের উইপোকার ঢিবিতে লুকিয়ে আছে জলবায়ু সুরক্ষার সূত্র

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮: ৩৩
উইপোকার বিশাল একটি ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে আছেন এক গবেষক। ছবি: আল-জাজিরা

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে প্রায় ৫৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত নামাকুয়াল্যান্ডের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা নিয়ে তদন্ত করছিলেন স্টেলেনবোশ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। এটি করতে গিয়েই তাঁরা ৩৪ হাজার বছরের পুরোনো একটি উইপোকার ঢিবি আবিষ্কার করেছেন। স্টেলেনবোশ ইউনিভার্সিটির স্নাতক শিক্ষার্থীদের নিয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ক্যাথি ক্লার্ক এবং মিশেল ফ্রান্সিস মূলত বিশাল ওই ঢিবির মধ্য দিয়েই একটি পরিখা খনন করেছিলেন।

রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পরে নিশ্চিত হয়েছেন উইপোকার ওই ঢিবির জৈব উপাদানগুলো কমপক্ষে ১৯ হাজার বছরের পুরোনো। আর এর খনিজ উপাদানগুলো ৩৪ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো, যা শেষ বরফ যুগের পূর্ববর্তী সময়কে নির্দেশ করে।

এই আবিষ্কারটি ওই অঞ্চলে উইপোকার কার্যকলাপের একটি দীর্ঘ ইতিহাসের ধারণা দেয় এবং ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে তাদের ভূমিকা তুলে ধরে। কৃষিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কারণে উইপোকাকে প্রায় সময়ই শুধু কীটপতঙ্গ হিসাবে দেখা হয়। তবে তাঁরা মাটির গঠন এবং উর্বরতায়ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জৈব পদার্থের পুনঃবণ্টন করে উইপোকা একই বায়োমের মধ্যে বিভিন্ন বাসস্থান তৈরি করে, যা বিশ্বের সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যময় মরুভূমি অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত রাসালো কারু-এর অবিশ্বাস্য জীববৈচিত্র্যে অবদান রেখেছে।

মজার বিষয় হলো—বিজ্ঞানীরা এবার দেখতে পেয়েছেন, উইপোকার কার্যকলাপ ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততাকেও প্রভাবিত করে। তাদের ঢিবিগুলোতে হাজার বছর ধরে জমে থাকা খনিজ এবং লবণ বৃষ্টিপাতের সময় ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রবাহিত হয় এবং মিশে যায়। ফলে ওই অঞ্চলটির ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চ লবণাক্ততায় উইপোকাও অবদান রেখেছে।

গবেষকেরা উইপোকার কার্যকলাপকে একটি প্রাকৃতিক কার্বন শোষক হিসেবে বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা। জৈব পদার্থকে কবর দিয়ে মাটির গভীরে কার্বন সঞ্চয় করতে এটি ভূমিকা রাখে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে উইপোকারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

ক্লার্ক এবং ফ্রান্সিস কার্বন মডেলের মধ্যে উইপোকার কার্যকলাপকে একীভূত করার জন্য চেষ্টা করছেন। তাদের অনুসন্ধানগুলো এটাই ইঙ্গিত করছে যে, ছোট এই পোকাগুলো কার্বন চক্র এবং বাস্তুতন্ত্রের অবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে। তাঁদের প্রকল্পটি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বিজ্ঞানীরা কার্বন শোষণে উইপোকার ভূমিকা খতিয়ে দেখতে এ বিষয়ে আরও অন্বেষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।

যুগান্তকারী এই গবেষণাটি শুধু উইপোকার পরিবেশগত গুরুত্বকেই আলোকিত করে না বরং এই প্রাণীদের ধারণাকে নিছক কীটপতঙ্গ থেকে পরিবেশগত সুরক্ষা এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত