ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে সারা দেশে কিশোরীদের বিনামূল্যে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও এক ডোজ করে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে এ টিকা কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
এ টিকা কার্যক্রম ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা প্রচারণা। ফেসবুকের বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে নারীদেরএই টিকা নেওয়া থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলা হচ্ছে, ‘এই টিকা নেওয়ার ফলে নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হবে। ফলে বেশির ভাগ বাচ্চা গর্ভপাত হবে এবং নারী গর্ভধারণে অক্ষম হবে।’ আরেকটি পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ‘এই টিকা কমবয়সীদের দেওয়া হয়। কারণ তাদের ভেতরে শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়। যার ফলে টিকাটি দ্রুত বিস্তার করে বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ুতেসমস্যা সৃষ্টিকে জোরালো করার সুযোগ পায়।’
এমন প্রচারণার ফলে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক, নানা জিজ্ঞাসা। যেমন, ‘ডু সামথিং এক্সসেপশনাল (ডিএসই)’ নামের একটি প্রাইভেট ফেসবুক গ্রুপে এক নারী জানতে চেয়েছেন, তাঁর ভাগনি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার স্কুলে জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা দেবে। ‘ছোট মানুষ হিসেবে তার কি কোনো সমস্যা হবে?’
জরায়ুমুখ ক্যানসার কী?
জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় প্যাপিলোমা ভাইরাস নামে এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে। সাধারণত ভাইরাসটি ছড়ায় এটি বহন করছে (সুপ্ত অথবা সংক্রামিত) এমন কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। তবে ভাইরাস শরীরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার হয় না। ক্যানসার হতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের দেওয়া তথ্য মতে, জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দেশে বছরে প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। এর প্রতিকার হিসেবে কিশোরীদের এক ডোজ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া হয়, এই টিকা দেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে তাদের জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এইচপিভি টিকা সম্পর্কে দাবিগুলো কতটুকু সত্য?
এইচপিভি টিকা নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে এমন দাবিকে প্রচলিত ভুল ধারণা হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এইচপিভি টিকা গ্রহণের পর ইঞ্জেকশনের নেওয়ার স্থানে ব্যথা, ফোলা ভাব, লাল ভাব এবং সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এই টিকার সবচেয়ে সাধারণ গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। তবে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, এইচপিভি টিকার ফলে নারী বন্ধ্যাত্বের দিকে ধাবিত হয়।
মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা সৃষ্টির জন্য ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ভুল তথ্যকে দায়ী করে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ইউটিহেলথ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষক কল্যাণী সোনাওয়ানের বরাত দিয়ে ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এইচপিভি টিকা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ভুল ও নেতিবাচক তথ্যের প্রসার ঘটেছে। আর যেসব অভিভাবক এসব ভুল তথ্য বিশ্বাস করছেন, তাঁরা সন্তানদের টিকাটি দিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে এই সমস্যারও পরিবর্তন ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক অভিভাবকই ভুল ভেঙে সন্তানদের টিকাটি দিতে আগ্রহী হচ্ছেন।
টিকাটির সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের সম্পর্ক নিয়ে ইউনিসেফের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যখনই কোনো নতুন টিকা আসে, তা মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ, আতঙ্ক তৈরি করে, বিশেষ করে টিকাটি স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে। সত্য হলো, এইচপিভি টিকা খুবই নিরাপদ এবং এর সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং টিকাটি ক্যানসারসহ স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে নারীর প্রজনন ক্ষমতা রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
সংস্থাটি এইচপিভি টিকাকে খুবই নিরাপদ উল্লেখ করে জানায়, অন্যান্য ভ্যাকসিনের বা ওষুধের মতোই এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। টিকা গ্রহণকারীদের অধিকাংশই এটি বুঝতে পারে না বা কেউ পুরোপুরি বোঝে না।
ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট ২০২১ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রে এইচপিভি টিকার নিরাপত্তার বিষয়ে করা একটি গবেষণার বরাত দিয়ে জানায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এইচপিভি টিকা নেওয়ার পর গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছে এমন ঘটনা খুবই বিরল। দেশটিতে প্রতি ১ লাখ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে শতকরা ১ দশমিক ৮ জন টিকা নেওয়ার পর গুরুতর সমস্যায় ভুগেছেন। তবে এই সমস্যা যে টিকা গ্রহণের জন্যই ঘটেছে, এটি নিঃসন্দেহে বলার সুযোগ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এইচপিভি টিকা কেবল বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেই নয়, ইউরোপের ৫৩টি দেশের মধ্যে ৩৮টি দেশেই চালু রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে ৯৪ শতাংশ উচ্চ আয়ের, ২৯ শতাংশ মধ্যম আয়ের এবং ৫৭ শতাংশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। কোনো দেশে ছেলেদেরও এই টিকা দেওয়া হয়।
তবে এইচপিভি টিকা গ্রহণ নিয়ে এসব দেশের নাগরিকদের মধ্যেও দ্বিধা রয়েছে। এসব দ্বিধার কারণ, টিকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে টিকাটি বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে এমন আশঙ্কা। এমনকি স্কুলশিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও এই উদ্বেগ দেখা যায়। তবে এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব বা নারীর বয়স ৪০ পূরণের আগেই প্রজনন ক্ষমতা হারানোর (প্রাইমারি ওভারিয়ান ইনসাফিসিয়েন্সি) কোনো তথ্য নেই।
২০১৮ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রেরএইচপিভিসহ কৈশোরে বিভিন্ন টিকা নেওয়া প্রায় ২ লাখ নারীর ওপর করা এক গবেষণায়দেখা যায়, এইচপিভি টিকার সঙ্গে নারীর বয়স ৪০ পূরণের আগেই প্রজনন ক্ষমতা হারানোর কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। ডেনমার্কের ৯৫ হাজার নারী ও কিশোরীর ওপর করা গবেষণাতেও এইচপিভি বা অকাল বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এইচপিভি টিকা নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে এমন দাবির পক্ষে গবেষণালব্ধ কোনো প্রমাণ নেই।
আবার এই টিকা অল্প বয়সীদের দেওয়া নিয়েও যে দাবি করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনোকোলজিক্যাল জার্নালে ২০২২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচপিভি টিকাদানের বয়স ৯ থেকে ১২ বছর। এই বয়স নিয়ে আলোচনার সময় প্রায়ই এই প্রশ্নটি ওঠে যে, কেন অল্প শুধু কিশোরীদের এই টিকা দেওয়া হয়?
বাস্তবতা হলো, ১৫ বছরের নিচে টিকাপ্রাপ্ত কিশোরীদের মধ্যে অনেক বেশি এইচপিভি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কারণ এই বয়সে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। এই তথ্য এবং ট্রায়াল পর্যায়ে কম বয়সে দুই ডোজের পর ক্রমাগত উচ্চ অ্যান্টিবডি তৈরির ফলাফল দেখে ১৫ বছরের নিচে কিশোরীদের জন্য দুই ডোজ এইচপিভির সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে এক ডোজের কার্যকারিতাও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সব বিবেচনায় একজন মানুষের যৌবনপ্রাপ্তির আগেই টিকাদান সবচেয়ে কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। কিশোর–কিশোরীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, বিশেষ করে ৯ বছর বয়স থেকেই টিকাদান শুরু করলে ভালো।
ইউনিসেফ এইচপিভি টিকা গ্রহণের বয়স সম্পর্কে পরামর্শ দেয় যে, এইচপিভি ভ্যাকসিন ২৬ বছরের মধ্যে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্তও এ টিকা নেওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ দেশেই ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের এই টিকা নেওয়ার পরমার্শ দেওয়া হয়।
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে সারা দেশে কিশোরীদের বিনামূল্যে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও এক ডোজ করে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে এ টিকা কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
এ টিকা কার্যক্রম ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা প্রচারণা। ফেসবুকের বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে নারীদেরএই টিকা নেওয়া থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলা হচ্ছে, ‘এই টিকা নেওয়ার ফলে নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হবে। ফলে বেশির ভাগ বাচ্চা গর্ভপাত হবে এবং নারী গর্ভধারণে অক্ষম হবে।’ আরেকটি পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ‘এই টিকা কমবয়সীদের দেওয়া হয়। কারণ তাদের ভেতরে শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়। যার ফলে টিকাটি দ্রুত বিস্তার করে বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ুতেসমস্যা সৃষ্টিকে জোরালো করার সুযোগ পায়।’
এমন প্রচারণার ফলে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক, নানা জিজ্ঞাসা। যেমন, ‘ডু সামথিং এক্সসেপশনাল (ডিএসই)’ নামের একটি প্রাইভেট ফেসবুক গ্রুপে এক নারী জানতে চেয়েছেন, তাঁর ভাগনি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার স্কুলে জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা দেবে। ‘ছোট মানুষ হিসেবে তার কি কোনো সমস্যা হবে?’
জরায়ুমুখ ক্যানসার কী?
জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় প্যাপিলোমা ভাইরাস নামে এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে। সাধারণত ভাইরাসটি ছড়ায় এটি বহন করছে (সুপ্ত অথবা সংক্রামিত) এমন কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। তবে ভাইরাস শরীরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার হয় না। ক্যানসার হতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের দেওয়া তথ্য মতে, জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দেশে বছরে প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। এর প্রতিকার হিসেবে কিশোরীদের এক ডোজ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া হয়, এই টিকা দেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে তাদের জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এইচপিভি টিকা সম্পর্কে দাবিগুলো কতটুকু সত্য?
এইচপিভি টিকা নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে এমন দাবিকে প্রচলিত ভুল ধারণা হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এইচপিভি টিকা গ্রহণের পর ইঞ্জেকশনের নেওয়ার স্থানে ব্যথা, ফোলা ভাব, লাল ভাব এবং সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এই টিকার সবচেয়ে সাধারণ গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। তবে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, এইচপিভি টিকার ফলে নারী বন্ধ্যাত্বের দিকে ধাবিত হয়।
মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা সৃষ্টির জন্য ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ভুল তথ্যকে দায়ী করে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ইউটিহেলথ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষক কল্যাণী সোনাওয়ানের বরাত দিয়ে ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এইচপিভি টিকা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ভুল ও নেতিবাচক তথ্যের প্রসার ঘটেছে। আর যেসব অভিভাবক এসব ভুল তথ্য বিশ্বাস করছেন, তাঁরা সন্তানদের টিকাটি দিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে এই সমস্যারও পরিবর্তন ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক অভিভাবকই ভুল ভেঙে সন্তানদের টিকাটি দিতে আগ্রহী হচ্ছেন।
টিকাটির সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের সম্পর্ক নিয়ে ইউনিসেফের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যখনই কোনো নতুন টিকা আসে, তা মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ, আতঙ্ক তৈরি করে, বিশেষ করে টিকাটি স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে। সত্য হলো, এইচপিভি টিকা খুবই নিরাপদ এবং এর সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং টিকাটি ক্যানসারসহ স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে নারীর প্রজনন ক্ষমতা রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
সংস্থাটি এইচপিভি টিকাকে খুবই নিরাপদ উল্লেখ করে জানায়, অন্যান্য ভ্যাকসিনের বা ওষুধের মতোই এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। টিকা গ্রহণকারীদের অধিকাংশই এটি বুঝতে পারে না বা কেউ পুরোপুরি বোঝে না।
ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট ২০২১ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রে এইচপিভি টিকার নিরাপত্তার বিষয়ে করা একটি গবেষণার বরাত দিয়ে জানায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এইচপিভি টিকা নেওয়ার পর গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছে এমন ঘটনা খুবই বিরল। দেশটিতে প্রতি ১ লাখ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে শতকরা ১ দশমিক ৮ জন টিকা নেওয়ার পর গুরুতর সমস্যায় ভুগেছেন। তবে এই সমস্যা যে টিকা গ্রহণের জন্যই ঘটেছে, এটি নিঃসন্দেহে বলার সুযোগ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এইচপিভি টিকা কেবল বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেই নয়, ইউরোপের ৫৩টি দেশের মধ্যে ৩৮টি দেশেই চালু রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে ৯৪ শতাংশ উচ্চ আয়ের, ২৯ শতাংশ মধ্যম আয়ের এবং ৫৭ শতাংশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। কোনো দেশে ছেলেদেরও এই টিকা দেওয়া হয়।
তবে এইচপিভি টিকা গ্রহণ নিয়ে এসব দেশের নাগরিকদের মধ্যেও দ্বিধা রয়েছে। এসব দ্বিধার কারণ, টিকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে টিকাটি বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে এমন আশঙ্কা। এমনকি স্কুলশিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও এই উদ্বেগ দেখা যায়। তবে এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব বা নারীর বয়স ৪০ পূরণের আগেই প্রজনন ক্ষমতা হারানোর (প্রাইমারি ওভারিয়ান ইনসাফিসিয়েন্সি) কোনো তথ্য নেই।
২০১৮ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রেরএইচপিভিসহ কৈশোরে বিভিন্ন টিকা নেওয়া প্রায় ২ লাখ নারীর ওপর করা এক গবেষণায়দেখা যায়, এইচপিভি টিকার সঙ্গে নারীর বয়স ৪০ পূরণের আগেই প্রজনন ক্ষমতা হারানোর কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। ডেনমার্কের ৯৫ হাজার নারী ও কিশোরীর ওপর করা গবেষণাতেও এইচপিভি বা অকাল বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এইচপিভি টিকা নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে এমন দাবির পক্ষে গবেষণালব্ধ কোনো প্রমাণ নেই।
আবার এই টিকা অল্প বয়সীদের দেওয়া নিয়েও যে দাবি করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনোকোলজিক্যাল জার্নালে ২০২২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচপিভি টিকাদানের বয়স ৯ থেকে ১২ বছর। এই বয়স নিয়ে আলোচনার সময় প্রায়ই এই প্রশ্নটি ওঠে যে, কেন অল্প শুধু কিশোরীদের এই টিকা দেওয়া হয়?
বাস্তবতা হলো, ১৫ বছরের নিচে টিকাপ্রাপ্ত কিশোরীদের মধ্যে অনেক বেশি এইচপিভি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কারণ এই বয়সে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। এই তথ্য এবং ট্রায়াল পর্যায়ে কম বয়সে দুই ডোজের পর ক্রমাগত উচ্চ অ্যান্টিবডি তৈরির ফলাফল দেখে ১৫ বছরের নিচে কিশোরীদের জন্য দুই ডোজ এইচপিভির সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে এক ডোজের কার্যকারিতাও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সব বিবেচনায় একজন মানুষের যৌবনপ্রাপ্তির আগেই টিকাদান সবচেয়ে কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। কিশোর–কিশোরীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, বিশেষ করে ৯ বছর বয়স থেকেই টিকাদান শুরু করলে ভালো।
ইউনিসেফ এইচপিভি টিকা গ্রহণের বয়স সম্পর্কে পরামর্শ দেয় যে, এইচপিভি ভ্যাকসিন ২৬ বছরের মধ্যে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্তও এ টিকা নেওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ দেশেই ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের এই টিকা নেওয়ার পরমার্শ দেওয়া হয়।
ফ্যাক্টচেক, সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভাইরাল, ভুয়া পোস্ট, সংঘর্ষ, রাজধানী, সেনাবাহিনী, বিক্ষোভ, রিকশা
১০ ঘণ্টা আগেদীপ্তির বক্তব্য দাবিতে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
১৩ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
১ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকও। সম্প্রতি সারজিস শিশু মডেল অভিনেত্রী সিমরিন লুবাবাকে ফেসবুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
২ দিন আগে