ফ্যাক্টচেক /বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে অস্ত্রধারী আ.লীগ কর্মীদের পরিচয় মুছে ফেলার অপচেষ্টা

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ৫৯
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ১৬
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি ছোড়া আওয়ামী কর্মীদের ভিন্ন পরিচয় জুড়ে দিয়ে প্রচার। ছবি: ফেসবুক

গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে এ আন্দোলন অহিংস থাকলেও ধীরে ধীরে এটি সহিংস হয়ে ওঠে। এ আন্দোলন চলাকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতার ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে শুরু থেকেই এ আন্দোলনের পেছনে জামায়াত–শিবিরের ইন্ধন থাকার অভিযোগ করে আসছিল গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দলটি।

এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দৈনিক প্রথম আলোর একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, আন্দোলনে জামায়াত–শিবিরের নেতা-কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতরে ঢুকে গুলি করেছে। প্রথম আলোর ফটোকার্ডটিতে তিনজন অস্ত্রধারীর ছবি রয়েছে। এর মধ্যে দুজন হেলমেট পরা। ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি, ১২৬ জন অস্ত্রধারী শনাক্ত, গ্রেপ্তার ১৯।’

অস্ত্রধারী এ ব্যক্তিদের পরিচয় কী? যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১৩ অক্টোবর পত্রিকাটি ফটোকার্ডটি পোস্ট করে। পোস্টটির কমেন্টবক্সে প্রথম আলোর এ-সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনের লিংক পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র–জনতার অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১২ জেলায়। ছাত্র–জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া এসব ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মী। পত্রিকাটির সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকেরা এসব ঘটনায় ১২৬ জন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তার মধ্যে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি ছোড়া ব্যক্তিরা জামায়াত–শিবিরের নয়, আওয়ামী কর্মী। ছবি: প্রথম আলো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি ছোড়া ব্যক্তিরা জামায়াত–শিবিরের নয়, আওয়ামী কর্মী। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিবেদনে ফটোকার্ডটিতে থাকা শটগান হাতে তিন অস্ত্রধারীর পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। হেলমেট ছাড়া ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ। গত ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাট থেকে অস্ত্র হাতে তাঁর ছবিটি তোলা হয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি ও মাথায় হেলমেট পরিহিত ব্যক্তির পরিচয়ে বলা হয়েছে, ছবির ব্যক্তি রাজধানীর তুরাগ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুরতাফা বিন ওমর। উত্তরার আজমপুর এলাকা থেকে গত ৪ আগস্ট ছবিটি তোলা হয়।

আর সবুজ, কালো রঙের হেলমেট পরিহিত অপর ব্যক্তির পরিচয়ে বলা হয়েছে, তিনি ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। আসিফ আন্দোলনের সময় অস্ত্র হাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলকারীদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন।

অর্থাৎ অস্ত্রধারী তিনজনই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। এ অস্ত্রধারীদেরই জামায়াত–শিবিরের কর্মী দাবিতে মিথ্যা পরিচয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত