ফ্যাক্টচেক /চুইংগাম গিলে ফেললেই বিপদ, পেটে থাকে ৭ বছর! আসলেই কি তাই

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ১৬
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪২
গিলে ফেলা চুইংগাম পেটে থেকে যায় টানা ৭ বছর! আসলেই কি তাই? ছবি: সংগৃহীত

চুইংগাম খেতে ভালোবাসেন অনেকে। অনেককে দেখা যায়, সারা দিন মুখে চুইংগাম রাখেন। কিন্তু ভুল করে চুইংগাম গিলে ফেললে কী করবেন? অনেকেই হয়তো শুনেছেন, চুইংগাম গিলে ফেললে ঘটবে বিপত্তি, হজম হবে না, পেটে থেকে যাবে টানা সাত বছর!

আসলেই কি তাই? কোনোক্রমে চুইংগাম গিলে ফেললে সেটি হজম হতে কত সময় লাগে?

এসব প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন এক প্রতিবেদনে জানায়, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ ধরনের গালগল্পের উৎপত্তি সম্ভবত চুইংগাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। একসময় তারা চুইংগামের প্যাকেটের লেবেলে লিখে দিত, এটি হজমযোগ্য নয়। তবে এই কল্পকাহিনি শিশুদের—এমনকি কখনো প্রাপ্তবয়স্কদেরও—চুইংগাম গিলে ফেলা থেকে বিরত রাখতে বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও চুইংগাম পেটে সাত বছর থেকে যাবে, এমন ধারণা কীভাবে, কোত্থেকে এসেছে তা এখনো অজানা। চুইংগামের অধিকাংশ উপাদান সহজেই হজম প্রক্রিয়ায় ভেঙে যায়। তবে চুইংগামের মূল উপাদান পাকস্থলীতে আসলেই হজম হয় না।

একসময় চুইংগাম তৈরি করা হতো সাপডিলা বা সফেদা গাছের নির্যাস থেকে। পরে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুইংগাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিনথেটিক পলিমার বা কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) চুইংগাম প্রস্তুতে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহারের অনুমতি দেয় এবং সেগুলোর জন্য কিছু বিধিনিষেধ এবং মান পূরণের শর্ত থাকে। তবে সিনথেটিক পলিমার থাকা সত্ত্বেও চুইংগাম পাকস্থলীতে কয়েক দিনের বেশি থাকে না। তাই কেউ চুইংগাম গিলে ফেললে চিন্তার কিছু নেই—কারণ, এটি হজম হতে সাত বছর লাগবে না। মানবদেহ সাধারণত চুইংগাম কয়েক দিনের মধ্যেই বের করে দিতে পারে।

তবে তাই বলে চুইংগাম গিলে ফেলা ঠিক নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘন ঘন চুইংগাম গিলে ফেললে পাকস্থলীতে ব্লকেজ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। এটি তখন ঘটে যখন একসঙ্গে কেউ অনেক চুইংগাম গিলে ফেলে বা কেউ যদি বারবার চুইংগাম গিলে ফেলে। তাই সব বয়সের মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের, চুইংগাম গিলে খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। চুইংগাম গিলে ফেললে শ্বাসরোধের ঝুঁকিও থাকে। এ ছাড়া বারবার চুইংগাম গিলে ফেললে হতে পারে—পেট ব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, ডায়রিয়া, মুখের ঘা।

চুইংগাম, অন্যান্য অ–হজমযোগ্য খাবারের মতোই ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। ছবি: সংগৃহীত
চুইংগাম, অন্যান্য অ–হজমযোগ্য খাবারের মতোই ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর হিউম্যান নিউট্রিশনের নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান জুলিয়া জাম্পানোর বরাত দিয়ে জানায়, চুইংগাম শরীর থেকে বের হতে সাত বছর তো দূরের কথা, এটি অন্যান্য খাবারের মতোই ৪০ ঘণ্টার মধ্যে হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে মলের সঙ্গে বের হয়ে যায়।

জাম্পানো জানিয়েছেন, চুইংগাম গিলে ফেলার সমস্যা হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল, বিশেষ করে যদি কেউ একসঙ্গে অনেক চুইংগাম খেয়ে ফেলে। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত পেডিয়াট্রিকস জার্নালের একটি গবেষণায় তিনটি শিশুর ক্ষেত্রে চুইংগাম গিলে ফেলার পর খাদ্যনালি বা অন্ত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গ্যাস্ট্রো–আন্টারোলজিস্ট ড. ন্যান্সি ম্যাকগ্রিয়েল বলেন, ‘চুইংগামে যেসব উপাদান রয়েছে, তা হজম করার মতো এনজাইম আমাদের শরীরে নেই। তাই চুইংগাম গিলে ফেললে অক্ষত অবস্থায় মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।’

এর মানে হলো, কেউ চুইংগাম গিলে ফেললে সেটি হজম না হওয়া ভুট্টার দানার মতো মলের সঙ্গে বের হয়। ভুট্টার আস্ত দানা হজম হয় না। কারণ, এর খোসায় উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং সেলুলোজ থাকে, যা ভাঙার জন্য আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় এনজাইম নেই।

ড. ম্যাকগ্রিয়েল বলেন, ‘আমি কিছু ক্ষেত্রে যেমন কোলনোস্কোপি করার সময় রোগীর গিলে ফেলা চুইংগামের কিছু অংশ পেয়েছি। তবে সেটি সম্ভবত শেষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গিলে ফেলা হয়েছিল, সাত বছর আগের কিছু নয়।’

চুইংগাম গিলে ফেললে সেটি বছরের পর বছর পাকস্থলীতে থেকে যাবে—এমন ধারণা ভিত্তিহীন বলে জানায় কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী সংগঠন ম্যাকগিল অফিস ফরসায়েন্স অ্যান্ড সোসাইটি।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চুইংগাম, অন্যান্য হজম অযোগ্য খাবারের মতোই ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো, যদি কেউ অনেকগুলো চুইংগাম গিলে ফেলে এবং সেগুলো একত্রিত হয়ে জমাট বাঁধে, সে ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা হতে পারে। যদিও এটি খুব বিরল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত