ফ্যাক্টচেক /বাংলাদেশে নিজের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে আটকদের নিয়ে টুইট করেছেন ট্রাম্প—অ্যাকাউন্টটি আসলে কার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪৪
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪৬
বাংলাদেশে নিজের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে আটকদের নিয়ে টুইট করেছেন ট্রাম্প—অ্যাকাউন্টটি আসলে কার। ছবি: এক্স

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। কথিত এই ক্লিপে তিনি তাঁর দলের নেতা–কর্মীদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ছবি ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ব্যবহার করে মিছিল–সমাবেশের নির্দেশনা দেন। যদিও অডিওটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলিস্থান জিরো পয়েন্টে কর্মসূচিকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিজয়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ডসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।

এই ঘটনার একটি ভিডিও ও ছবি মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প আপডেট (Donald J. Trump Update)’ নামের একটি ভেরিফায়েড হ্যান্ডল থেকে গতকাল রোববার (১০ নভেম্বর) পোস্ট করা হয়। ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ডসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আরেকজন ব্যক্তি বস্তা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ড বের করছেন। টুইটটির ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা, ‘খুবই লজ্জাজনক, বাংলাদেশ পুলিশ ট্রাম্পের বিজয় উদ্‌যাপনের কারণে ট্রাম্প সমর্থকদের গ্রেপ্তার করেছে। কিছুদিন আগে এই পাপেটগুলোই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’

বাংলাদেশে নিজের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে আটকদের নিয়ে টুইট করেছেন ট্রাম্প—অ্যাকাউন্টটি আসলে কার। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশে নিজের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে আটকদের নিয়ে টুইট করেছেন ট্রাম্প—অ্যাকাউন্টটি আসলে কার। ছবি: ফেসবুক

ক্যাপশনে ‘রিয়েল ডোনাল্ড ট্রাম্প (Real Donald Trump)’ নামের একটি অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করে টুইটটি রিপোস্ট করতে বলা হয়েছে।

গতকালই ট্রাম্পের পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমান এবং নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ–আন্দোলনে নিহত নূর হোসেনের প্ল্যাকার্ডসহ আরেকটি ছবি এই হ্যান্ডল থেকে টুইট করে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশে শুধুমাত্র ট্রাম্পকে সমর্থন করার কারণে সাধারণ মানুষদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে?’

টুইটটির স্ক্রিনশট কবির চৌধুরী তন্ময় নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রাতে পোস্ট করা হয়। পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজকে মেনশন করে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইংরেজিতে লেখা হয়, ‘আপনি (ট্রাম্প) জানবেন যে, বাংলাদেশের জনগণ এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে নিরাপদ নয়। এখানে হিন্দুদের হত্যা, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও তাঁদের সম্পদ লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র তৈরি করার ষড়যন্ত্র করছেন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সংবাদমাধ্যমেরস্বাধীনতা আজ বাংলাদেশে শূন্য।’

ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকেও ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প আপডেট (Donald J. Trump Update)’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে করা টুইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে টুইট করা এই অ্যাকাউন্ট কী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকৃত অ্যাকাউন্ট?

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প আপডেট (Donald J. Trump Update)’ নামের এক্স অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। অ্যাকাউন্টটির লোকেশন দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র। ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার (আজ সোমবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত)। অ্যাকাউন্টটি ভেরিফাই করা হয়েছে গত অক্টোবরে।

অ্যাকাউন্টটির বিভিন্ন টুইটে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এসেছে। গত শনিবার (৯ নভেম্বর) অ্যাকাউন্টটি থেকে একটি টুইট করে জানানো হয়, অ্যাকাউন্টটি এক মাসে এক্স থেকে প্রায় ২ হাজার ডলার আয় করেছে। একইদিন করা আরেকটি টুইটে লেখা, ‘যদি আপনি ইউটিউব বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায় এক্স থেকে ভালো আয় করেন, তাহলে আপনার “সেন্স অব হিউমর” দারুণ!’ গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) করা একটি টুইটে ট্রাম্প সমর্থকদের উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘আপনার ইউজার নেম কমেন্ট করুন, আমি ফলো ব্যাক দিব।’ সবগুলো পোস্টটি ইংরেজিতে দেওয়া।

বাংলাদেশে নিজের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে আটকদের নিয়ে টুইট করেছেন ট্রাম্প—অ্যাকাউন্টটি আসলে কার। ছবি: এক্স
বাংলাদেশে নিজের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে আটকদের নিয়ে টুইট করেছেন ট্রাম্প—অ্যাকাউন্টটি আসলে কার। ছবি: এক্স

একইদিন ভারতে ‘এক্স এক নম্বর নিউজ অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে’ দাবি করে প্লাটফর্মটির মালিক ইলন মাস্ককে বাক স্বাধীনতা চর্চার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন (৫ নভেম্বর) করা একটি টুইটে লেখা, ‘হিন্দুজ ফর ট্রাম্প’। ৬ নভেম্বর করা একটি টুইটে ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের গেরুয়া রঙের জামা পরা একটি ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলে এই ছবি আমি একদিনের জন্য প্রোফাইল পিকচার দিব। আর কারা কারা দেবেন?’ ক্যাপশনে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার সঙ্গে ভারতের পতাকা জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া গতকাল বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও দুটি টুইট করা হয় অ্যাকাউন্টটি থেকে। একটি টুইটে লেখা হয়, ‘আমার ধারণা, আজ (গতকাল) বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ আমাকে ফলো দিয়েছে।’

আরেকটি টুইটে শেখ হাসিনা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে তুলনা করে লেখা হয়, ‘যদি ট্রাম্পশেখ হাসিনা ও মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে কাউকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়, আপনি কাকে বেছে নেবেন?’

এসব টুইট বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়, এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকৃত অ্যাকাউন্ট নয়। এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো ভক্তের মাধ্যমে বা শুধুই এক্স থেকে অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে পরিচালিত হয়ে থাকতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকৃত অ্যাকাউন্ট। ছবি: এক্স
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকৃত অ্যাকাউন্ট। ছবি: এক্স

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকৃত অ্যাকাউন্টটির নাম ‘রিয়েল ডোনাল্ড ট্রাম্প (Real Donald Trump)’। এটির অনুসারী ৯৪ লাখ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও এই অ্যাকাউন্টের লিংক রয়েছে।

সবশেষ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনের আগে এই অ্যাকাউন্ট থেকেই বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) গত ৩১ অক্টোবর টুইট করেছিলেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর টুইটটি শুরু করেছেন এভাবে—বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন। এসবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ “বিশৃঙ্খল” অবস্থার মাঝে রয়েছে।

এই অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পকে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো টুইট করতে দেখা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত