ফ্যাক্টচেক /অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে পাচার ৩ বিলিয়ন ডলার—টিআইবির বরাতে ভুয়া দাবি

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬: ১৩

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিনদিন পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় ৮ আগস্ট। এরপর ১০০ দিন পার করেছে এই সরকার। এই ১০০ দিনে দেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার একটি দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাত ৯টায় ‘কবির চৌধুরী তন্ময় (Kabir Chowdhury Tanmoy)’ নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বরাত দিয়ে এমন দাবিতে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। অন্যান্য ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ থেকেও দাবিটিপ্রচার করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে পাচার ৩ বিলিয়ন ডলার–টিআইবির বরাতে ভুয়া দাবি। ছবি: ফেসবুক
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে পাচার ৩ বিলিয়ন ডলার–টিআইবির বরাতে ভুয়া দাবি। ছবি: ফেসবুক

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে বাংলাদেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচারের দাবিতে টিআইবির কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

পরে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে “‘নতুন বাংলাদেশ’: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন–পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর পর্যবেক্ষণ’’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনপাওয়া যায়। যেখানে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ১০০ দিনের ঘটনাপ্রবাহের ওপর পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই গবেষণায় অন্তবর্তী সরকারের গৃহীত রাষ্ট্র সংস্কার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কার্যক্রম পর্যালোচনার পাশাপাশিই বিভিন্ন অংশীজনের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে পাচার ৩ বিলিয়ন ডলার–টিআইবির বরাতে ভুয়া দাবি। ছবি: ফেসবুক
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে পাচার ৩ বিলিয়ন ডলার–টিআইবির বরাতে ভুয়া দাবি। ছবি: ফেসবুক

প্রতিবেদনটির অনিয়ম–দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থপাচার রোধ অংশে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সালমান এফ রহমানসহ ২৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি। দেখা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে গত ১২ বছরে তিনটি দেশে পোশাক রপ্তানি দেখিয়ে এ টাকা পাচার করা হয়েছে। এ ছাড়া এস আলম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি।

অর্থপাচার, ঋণ এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরে অর্থপাচারের পরিমাণ ও প্রভাব সম্পর্কে গবেষণায় বলা হয়েছে, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময়ে বাংলাদেশ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কত পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা নির্ধারণ করা কঠিন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বরাত দিয়ে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিক চ্যানেল, যেমন ব্যাংকের মাধ্যমে, ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। ব্যাংকগুলো অধিগ্রহণের সময় নতুন অংশীদারদের ঋণ এবং আমদানি ব্যয় বেশি দেখিয়ে দুই লাখ কোটি টাকা (প্রায় ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হয়, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১২–১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

অর্থপাচার, ঋণ এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিত্র। ছবি: টিআইবির গবেষণা
অর্থপাচার, ঋণ এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিত্র। ছবি: টিআইবির গবেষণা

প্রতিবেদনটি থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে বাংলাদেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচারের দাবিটির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

গবেষণা প্রতিবেদনটি ছাড়াও এ মাসের শুরুতেই টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২–১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

টিআইবির বরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে বাংলাদেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচারের দাবিটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ প্রতিষ্ঠানটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

দাবিটি প্রসঙ্গে মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভুয়া খবর।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত