ফ্যাক্টচেক /বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের ভাইরাল ভিডিওটি আওয়ামী লীগ আমলের

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ৫০

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক হিসাবে বেছে নিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ডকে। দেশটিতে হিন্দুদের বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার হতে দেখা গেছে এই সাবেক ডেমোক্র্যাটকে। ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ত্যাগ করে সম্প্রতি রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে তুলসী গ্যাবার্ডকে বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় প্রস্তাব উত্থাপন করতে দেখা গেছে। ভিডিওতে তুলসী বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নতুন কিছু নয়। এটি শুরু হয়েছে আরও ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। ওই সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।’ এখানে তুলসী দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট জগন্নাথ হলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পরও এ নির্যাতন, হত্যা চলছেই।

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী আমলের। ছবি: এক্স
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী আমলের। ছবি: এক্স

তুলসী গ্যাবার্ড আরও দাবি করেন, উনিশ শতকের শুরুতে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩৩ শতাংশ, বর্তমানে এটি ৮ শতাংশে নেমেছে। কদিন আগেই কট্টর ইসলামি মৌলবাদীরা হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালিয়েছে, ট্রেনে আগুন দিয়েছে।

এ ছাড়া ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের মতো দেশে সংখ্যালঘুর অনুপাত কমছে বলেও ভিডিওতে উল্লেখ করেন তুলসী।

মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প আপডেট (Donald J. Trump Update)’ নামের একটি ভেরিফায়েড হ্যান্ডল থেকে গত রোববার (১৭ নভেম্বর) তুলসী গ্যাবার্ডের ভিডিওটি টুইট করা হয়। টুইটে লেখা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর টুইটটি সাড়ে ৯ শতাধিক রিপোস্ট করা হয়েছে, দেখা হয়েছে ৮৩ হাজারের বেশি।’

আবার গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ব্যারিস্টার জহিরুল ইসলাম নামের একটি পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘আজকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত Director of National Intelligence Ms Tulsi Gabbard ভারতীয় বংশোদ্ভূত তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশের বিষয়ে এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে তিনি যে বার্তা দিলেন...।’

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী আমলের। ছবি: ফেসবুক
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী আমলের। ছবি: ফেসবুক

ভিডিওটি কি সাম্প্রতিক সময়ের?

ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তুলসী গ্যাবার্ডের সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ভিডিওটি বছর তিনেকের পুরোনো।

প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে তুলসী গ্যাবার্ডের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ২ এপ্রিলে পোস্ট করা একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে তুলসী গ্যাবার্ড লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, যেমনটি ১৯৭১ সালে ঘটেছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়ের কারণে লাখ লাখ বাঙালি হিন্দুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছিল।’

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী আমলের। ছবি: এক্স
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প মনোনীত মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের প্রচারিত ভিডিওটি আওয়ামী আমলের। ছবি: এক্স

ভিডিওটি তুলসী গ্যাবার্ড একই ক্যাপশনে একই দিনে তাঁর ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টেও পোস্ট করেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনো টুইট করেননি।

অর্থাৎ, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচারিত তুলসী গ্যাবার্ডের ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। তাঁর ২০২১ সালের ভিডিও বার্তা নতুন করে প্রচার করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক হিসেবে বেছে নেওয়ার পর ভিডিওটি প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে।

তুলসী গ্যাবার্ড কি ভারতীয় বংশোদ্ভূত?

ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে তুলসী গ্যাবার্ডকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে দাবি করা হলেও, তিনি নিজেই তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে ২০১২ সালে একটি টুইটে জানান, তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন।

বিবিসি বাংলায় গত শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  নাম এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের কারণে অনেকেই তুলসী গ্যাবার্ডকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে অনুমান করেন। আসলে তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন। যদিও নিজেকে হিন্দু বলেই পরিচয় দিয়ে থাকেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন তুলসী গ্যাবার্ড। ছবি: এক্স
ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন তুলসী গ্যাবার্ড। ছবি: এক্স

১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তুলসী গ্যাবার্ড। তাঁর বাবা মাইক গ্যাবার্ড এবং মা ক্যারল গ্যাবার্ড। গ্যাবার্ড দম্পতির পাঁচ সন্তানের একজন তুলসী। ১৯৮৩ সালে তুলসী গ্যাবার্ডের বয়স যখন দুই বছর, তখন তাঁর পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। হাওয়াইতে আসার পর, তাঁর মা ক্যারল হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস থেকেই ক্যারল গ্যাবার্ড তাঁর সন্তানদের হিন্দু নাম রেখেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত