আলম শাইন
আমাদের দেশের ভারী শিল্প-কারখানাগুলো সাধারণত রাজধানী এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া দেশের বিভাগীয় শহর অথবা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভারী শিল্পকারখানাগুলো নজরে পড়ে। এতে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত বর্জ্যে শহরদূষণের পাশাপাশি নদী-খাল দূষণের শিকার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। শুধু তা-ই নয়, দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও পরিবেশের প্রধান উপাদানগুলো শিল্পদূষণের মারাত্মক শিকার হচ্ছে; বিশেষ করে কারখানার বর্জ্য পানি সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে বিষাক্ত রাসায়নিক, জৈব সংক্রামক ও ক্ষতিকর গ্যাসীয় পদার্থের মিশ্রণ ঘটছে। ফলে নদী-খালের পানি বিষাক্ত হয়ে যেমন বিবর্ণ হচ্ছে, তেমনি জলজ উদ্ভিদসহ মাছ, পোকামাকড় ও অণুজীব বাসস্থান হারাচ্ছে। এ ছাড়া এই পানি ব্যবহারের কারণে মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে; বিশেষ করে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণও করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৭ সালের এক প্রতিবেদনমতে, অনিরাপদ পানি সরবরাহের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৪ বিলিয়ন মানুষ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
সত্যি বলতে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হলেও শিল্পোন্নত দেশের তালিকায় এখনো স্থান করে নিতে সক্ষম হয়নি। তথাপিও দেশটি শিল্পদূষণের শিকার হচ্ছে মারাত্মকভাবে। স্বাধীনতার পর মাত্র ৩১৩টি শিল্পকারখানা নিয়ে শিল্প খাতের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। যে সংখ্যা বর্তমানে ৪৬ হাজার ১১০টিতে দাঁড়িয়েছে; অর্থাৎ গত ৫২ বছরে প্রায় দেড় শ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের শিল্পকারখানা। অথচ স্বাধীনতালগ্নে আমাদের প্রধান শিল্পের তালিকায় ছিল—পাট, সুতা, চিনি, চা, বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি। চামড়া কিংবা ওষুধশিল্পের তখনো এতটা প্রসার হয়নি। বস্ত্রশিল্পের যাত্রা আশির দশকে শুরু হলেও আজকের মতো তখন এতটা পরিচিতি পায়নি। অথচ বস্ত্রশিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার। শুধু বস্ত্র নয়, বিশ্ববাজারে এখন আমাদের চা, চামড়া, ওষুধের জয়জয়কার শোনা যায়। দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাজারেও পণ্যের তালিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে বৃহৎ শিল্প-কারখানার সংখ্যা তিন হাজারের ওপরে; যা এখন আমাদের শিল্প খাতের মেরুদণ্ড বলা যায়। যার কারণে আমাদের পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখিও হতে হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানার মাধ্যমেই শিল্পদূষণ ঘটছে। এর মধ্যে বেশি দূষণ হচ্ছে দক্ষিণ ঢাকায়। শ্যামপুর শিল্প এলাকায় কাপড় রং করার কারখানাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল, গ্রিজ ও অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয় এমন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ জলাশয়গুলোকে দূষিত করছে। এ ছাড়া অন্যান্য ভারী শিল্প-কারখানাগুলোর সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে শহরের পরিবেশ মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে।
ইতিপূর্বে রাজধানীর শিল্পদূষণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প। ওখানে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ১৯৪টি ট্যানারি ছিল ২০২১ সাল অবধি। যার প্রতিটিই থাকত রাত-দিন কর্মব্যস্ততায়। কাঁচা চামড়া এবং ট্যানারির বর্জ্যে এখানকার লোকজনদের হা-পিত্যেশ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল বহু বছর ধরেই। সাধারণ মানুষের পক্ষে হেঁটে যাওয়ারও উপায় থাকত না যখন ঠেলাগাড়িযোগে চামড়া এক ট্যানারি থেকে অন্য ট্যানারিতে স্থানান্তর করা হতো। সেই এক বিতিকিচ্ছির অবস্থা, যা নিজ চোখে না দেখলে মালুম করা বড়ই কঠিন। সোজা কথা, নাকে রুমাল বা টিস্যু পেপার চেপে ধরেও রক্ষা পাওয়া যেত না। এতটাই বিশ্রী অবস্থা ছিল।
হাজারীবাগের পরিবেশ বিপর্যয়ের হিসাব-নিকাশের খতিয়ান নতুন করে দাখিল করার মতো তেমন কিছু নেই। কারণ যা ক্ষতি হওয়ার কয়েক দশক ধরেই তা হয়েছিল। তারপরও জানাতে হচ্ছে, পরিবেশবিদদের সামান্য মতামত। তাঁদের মতে, ট্যানারি থেকে প্রতিদিন ২২ হাজার ঘনমিটার ক্রোমিয়াম, সালফার, অ্যামোনিয়াসহ ক্ষতিকর নানা বর্জ্য এলাকাকে বিষিয়ে তুলছিল। এ ছাড়া দূষণকারী রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ট্যানারির বিষাক্ত পানি সরাসরি বুড়িগঙ্গার নদীতে ফেলা হতো। এই দূষিত পানির প্রাত্যহিক পরিমাণ ১৫ হাজার ঘনমিটার। ফলে নদীর পানি বিবর্ণ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। যাতে শুধু হাজারীবাগই নয়, বুড়িগঙ্গার আশপাশের মানুষও ট্যানারির কারখানার দূষণের শিকার হয়েছিল।
জানা যায়, ট্যানারির বর্জ্য, চামড়া, চর্বি, গরু-ছাগল-মহিষের হাড়, দাঁত, পুড়িয়ে পোলট্রি ফিডসহ নানা জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। এ কাজটি প্রতিদিনই করা হতো। পোড়ানো মুহূর্তে আশপাশে থাকা তখন দারুণ কষ্ট হতো মানুষের। শুধু তা-ই নয়, ওই মুহূর্তে বাসা-বাড়িতে থাকাটাও কঠিন হয়ে পড়ত। ওই দূষিত বায়ু গ্রহণ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছিল মারাত্মকভাবে। হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো প্রতিদিন প্রায় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলত। ফলে বুড়িগঙ্গা ব্যাপক দূষণের কবলে পড়েছিল। অন্যদিকে পশুর চামড়ার উচ্ছিষ্ট অংশ বেড়িবাঁধের আশপাশে ফেলা হতো। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগের পাশাপাশি পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে তখন।
বিষয়টি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতেই আদালত ১৪-১৫ বছর আগেই হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ট্যানারি সরানোর নির্দেশ দেন আদালত। যে রায় কার্যকর হলেও হাজারীবাগ তথা বুড়িগঙ্গার ক্ষয়ক্ষতি ফিরিয়ে আনা যাবে না সহজে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই মূলত শিল্প মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প হাতে নেয়। ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৫৪টি ট্যানারিকে প্লট দেয়।
এর মধ্যে অনেকগুলো কারখানা উৎপাদন উপযোগীও করা হয়েছে, তথাপিও কিছু ট্যানারি হাজারীবাগের মতো আবাসিক এলাকা থেকে এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও মালিকেরা তাঁদের ট্যানারি স্থানান্তর করতে গড়িমসি করছেন। তবে বর্তমানে সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে ১৪১টি ট্যানারি রয়েছে। সেখানে কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে, ট্যানারিগুলো থেকে প্রতিনিয়ত ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য বেরোচ্ছে। কিন্তু ২৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা থাকলেও কঠিন বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নেই। সেখানে যথাযথ মান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত সমাধানের জন্য। না হলে হেমায়েতপুরের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে আরেক হাজারীবাগের সৃষ্টি হবে। এতে রাজধানী বিষমুক্ত হলেও হেমায়েতপুর ঝুঁকিতে পড়বে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
আমাদের দেশের ভারী শিল্প-কারখানাগুলো সাধারণত রাজধানী এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া দেশের বিভাগীয় শহর অথবা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভারী শিল্পকারখানাগুলো নজরে পড়ে। এতে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত বর্জ্যে শহরদূষণের পাশাপাশি নদী-খাল দূষণের শিকার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। শুধু তা-ই নয়, দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও পরিবেশের প্রধান উপাদানগুলো শিল্পদূষণের মারাত্মক শিকার হচ্ছে; বিশেষ করে কারখানার বর্জ্য পানি সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে বিষাক্ত রাসায়নিক, জৈব সংক্রামক ও ক্ষতিকর গ্যাসীয় পদার্থের মিশ্রণ ঘটছে। ফলে নদী-খালের পানি বিষাক্ত হয়ে যেমন বিবর্ণ হচ্ছে, তেমনি জলজ উদ্ভিদসহ মাছ, পোকামাকড় ও অণুজীব বাসস্থান হারাচ্ছে। এ ছাড়া এই পানি ব্যবহারের কারণে মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে; বিশেষ করে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণও করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৭ সালের এক প্রতিবেদনমতে, অনিরাপদ পানি সরবরাহের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৪ বিলিয়ন মানুষ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
সত্যি বলতে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হলেও শিল্পোন্নত দেশের তালিকায় এখনো স্থান করে নিতে সক্ষম হয়নি। তথাপিও দেশটি শিল্পদূষণের শিকার হচ্ছে মারাত্মকভাবে। স্বাধীনতার পর মাত্র ৩১৩টি শিল্পকারখানা নিয়ে শিল্প খাতের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। যে সংখ্যা বর্তমানে ৪৬ হাজার ১১০টিতে দাঁড়িয়েছে; অর্থাৎ গত ৫২ বছরে প্রায় দেড় শ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের শিল্পকারখানা। অথচ স্বাধীনতালগ্নে আমাদের প্রধান শিল্পের তালিকায় ছিল—পাট, সুতা, চিনি, চা, বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি। চামড়া কিংবা ওষুধশিল্পের তখনো এতটা প্রসার হয়নি। বস্ত্রশিল্পের যাত্রা আশির দশকে শুরু হলেও আজকের মতো তখন এতটা পরিচিতি পায়নি। অথচ বস্ত্রশিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার। শুধু বস্ত্র নয়, বিশ্ববাজারে এখন আমাদের চা, চামড়া, ওষুধের জয়জয়কার শোনা যায়। দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাজারেও পণ্যের তালিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে বৃহৎ শিল্প-কারখানার সংখ্যা তিন হাজারের ওপরে; যা এখন আমাদের শিল্প খাতের মেরুদণ্ড বলা যায়। যার কারণে আমাদের পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখিও হতে হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানার মাধ্যমেই শিল্পদূষণ ঘটছে। এর মধ্যে বেশি দূষণ হচ্ছে দক্ষিণ ঢাকায়। শ্যামপুর শিল্প এলাকায় কাপড় রং করার কারখানাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল, গ্রিজ ও অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয় এমন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ জলাশয়গুলোকে দূষিত করছে। এ ছাড়া অন্যান্য ভারী শিল্প-কারখানাগুলোর সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে শহরের পরিবেশ মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে।
ইতিপূর্বে রাজধানীর শিল্পদূষণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প। ওখানে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ১৯৪টি ট্যানারি ছিল ২০২১ সাল অবধি। যার প্রতিটিই থাকত রাত-দিন কর্মব্যস্ততায়। কাঁচা চামড়া এবং ট্যানারির বর্জ্যে এখানকার লোকজনদের হা-পিত্যেশ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল বহু বছর ধরেই। সাধারণ মানুষের পক্ষে হেঁটে যাওয়ারও উপায় থাকত না যখন ঠেলাগাড়িযোগে চামড়া এক ট্যানারি থেকে অন্য ট্যানারিতে স্থানান্তর করা হতো। সেই এক বিতিকিচ্ছির অবস্থা, যা নিজ চোখে না দেখলে মালুম করা বড়ই কঠিন। সোজা কথা, নাকে রুমাল বা টিস্যু পেপার চেপে ধরেও রক্ষা পাওয়া যেত না। এতটাই বিশ্রী অবস্থা ছিল।
হাজারীবাগের পরিবেশ বিপর্যয়ের হিসাব-নিকাশের খতিয়ান নতুন করে দাখিল করার মতো তেমন কিছু নেই। কারণ যা ক্ষতি হওয়ার কয়েক দশক ধরেই তা হয়েছিল। তারপরও জানাতে হচ্ছে, পরিবেশবিদদের সামান্য মতামত। তাঁদের মতে, ট্যানারি থেকে প্রতিদিন ২২ হাজার ঘনমিটার ক্রোমিয়াম, সালফার, অ্যামোনিয়াসহ ক্ষতিকর নানা বর্জ্য এলাকাকে বিষিয়ে তুলছিল। এ ছাড়া দূষণকারী রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ট্যানারির বিষাক্ত পানি সরাসরি বুড়িগঙ্গার নদীতে ফেলা হতো। এই দূষিত পানির প্রাত্যহিক পরিমাণ ১৫ হাজার ঘনমিটার। ফলে নদীর পানি বিবর্ণ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। যাতে শুধু হাজারীবাগই নয়, বুড়িগঙ্গার আশপাশের মানুষও ট্যানারির কারখানার দূষণের শিকার হয়েছিল।
জানা যায়, ট্যানারির বর্জ্য, চামড়া, চর্বি, গরু-ছাগল-মহিষের হাড়, দাঁত, পুড়িয়ে পোলট্রি ফিডসহ নানা জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। এ কাজটি প্রতিদিনই করা হতো। পোড়ানো মুহূর্তে আশপাশে থাকা তখন দারুণ কষ্ট হতো মানুষের। শুধু তা-ই নয়, ওই মুহূর্তে বাসা-বাড়িতে থাকাটাও কঠিন হয়ে পড়ত। ওই দূষিত বায়ু গ্রহণ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছিল মারাত্মকভাবে। হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো প্রতিদিন প্রায় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলত। ফলে বুড়িগঙ্গা ব্যাপক দূষণের কবলে পড়েছিল। অন্যদিকে পশুর চামড়ার উচ্ছিষ্ট অংশ বেড়িবাঁধের আশপাশে ফেলা হতো। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগের পাশাপাশি পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে তখন।
বিষয়টি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতেই আদালত ১৪-১৫ বছর আগেই হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ট্যানারি সরানোর নির্দেশ দেন আদালত। যে রায় কার্যকর হলেও হাজারীবাগ তথা বুড়িগঙ্গার ক্ষয়ক্ষতি ফিরিয়ে আনা যাবে না সহজে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই মূলত শিল্প মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে চামড়াশিল্প নগর প্রকল্প হাতে নেয়। ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৫৪টি ট্যানারিকে প্লট দেয়।
এর মধ্যে অনেকগুলো কারখানা উৎপাদন উপযোগীও করা হয়েছে, তথাপিও কিছু ট্যানারি হাজারীবাগের মতো আবাসিক এলাকা থেকে এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও মালিকেরা তাঁদের ট্যানারি স্থানান্তর করতে গড়িমসি করছেন। তবে বর্তমানে সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে ১৪১টি ট্যানারি রয়েছে। সেখানে কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে, ট্যানারিগুলো থেকে প্রতিনিয়ত ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য বেরোচ্ছে। কিন্তু ২৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা থাকলেও কঠিন বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নেই। সেখানে যথাযথ মান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত সমাধানের জন্য। না হলে হেমায়েতপুরের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে আরেক হাজারীবাগের সৃষ্টি হবে। এতে রাজধানী বিষমুক্ত হলেও হেমায়েতপুর ঝুঁকিতে পড়বে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে