মামুনুর রশীদ
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ভারতের একটি রেল দুর্ঘটনার পর দায় স্বীকার করে সে সময়ের রেলমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও রেলের ব্যবস্থাপনায় যাঁরা থাকেন, তাঁরাও নিজেদের দায়িত্বহীন মনে করেন না; বরং যাঁদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অন্যদিকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী বা আমলাকে কোনো দুর্ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা দূরের কথা, মানুষের প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করতেও দেখা যায়নি।
সম্প্রতি মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনার পর মন্ত্রীকে টেলিফোনে পাওয়াই যায়নি। তিনি কোথায় ছিলেন, তা-ও জানা যায়নি। মন্ত্রীর ভয় পাওয়ার কথা নয়। কারণ, দেড়-দুই শ কোটি টাকা রেলগেট সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছে, সেটা তো তিনি আসার আগেই দফারফা হয়ে গেছে। রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকাদারদের সঙ্গে নিয়ে ভাগাভাগি করে ফেলেছেন। রেলের বিষয়ে বর্তমান সরকারের যতটা আগ্রহ, তার বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সব দক্ষতা নিয়ে বসে আছে।
আমাদের সরকারি আমলারা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাছে তাঁদের চাহিদা প্রকাশের ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ। এই চাহিদামতো অর্থ অনুমোদন করার ব্যাপারেও তাঁদের জুড়ি নেই। এক আমলাকে চিনতাম, যিনি প্ল্যানিং কমিশনের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পদ্মার ইলিশ, রাজশাহীর আম, রাজবাড়ীর মিষ্টি দিয়ে আসতেন। ওই সদস্য পরে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে আমেরিকায় প্রবাস জীবনে এত দিনে হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। রেলগেট সংস্কারের জন্য ২০০ কোটি টাকা কোথায় গেল, তার হিসাব কোনো দিন পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের রেলওয়ের একটা নিজস্ব ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থার ফলে লাইনের ত্রুটি বা জরুরি কোনো কাজ খুব দ্রুতই করা যায়। আর ইঞ্জিনের সমস্যা হলে তার জন্য বড় বড় কারখানা ছিল। সত্তরের দশকের শেষ থেকে এগুলো লোপাট শুরু হয়। নাট, বল্টু, স্ক্রু পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যায়। থাকে শুধু রেলওয়ের ডিজেল-বাণিজ্য এবং মাঝে মাঝে ঠিকাদারদের কাজ।
আশির দশকের মাঝামাঝি একজন সচিবের সদিচ্ছার কারণে কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়; কিন্তু রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার
ফলে লোকাল ট্রেনগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কারণ, লোকাল ট্রেনগুলো থেকেই উপরি পয়সাটা বেশি পাওয়া যায়। এ সময় রেলের আমলারা সুকৌশলে রেলের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং নিজেদের পদোন্নতির সুবিধার জন্য দক্ষতা বাড়ানোর নাম দিয়ে দুটি অঞ্চলে রেলকে ভাগ করা হয়। এই পর্যায়ে শুরু হয় রেলের জমি লুণ্ঠন। ছোট ছোট ভূমিদস্যুরা রেলের জমিতে স্থায়ী দোকানপাট ও বাড়িঘর নির্মাণ করে থাকে।
পরিবারের দুস্থ আত্মীয়টির মতো রেল বেঁচে থাকে, বিপরীতে বাড়তে থাকে দেশে বাস-ট্রাক ও ছোট মোটরযান নিয়ে পরিবহনব্যবস্থা। এই পরিবহনব্যবস্থার আবার প্রধান দাবি হচ্ছে যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের উচ্চহারে ভাড়া বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে প্রতিদিন বেশ কিছু মানুষের রক্ত চায়। নরবলি ছাড়া সে চলতে পারে না—এভাবেই চলছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করল, কিন্তু ডিজেল-বাণিজ্য ছাড়ল না। পৃথিবীর কোথাও এত বড় ডিজেল ইঞ্জিন চলে না। ইলেকট্রিক ট্রেন একমাত্র ব্যবস্থা। ভারতে একসময় বিদ্যুতের চরম ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ইলেকট্রিক ট্রেন চলেছে। কলকাতার রাস্তায় ট্রামও চলেছে। পৃথিবীর সব দেশেই বিপ্লব হওয়ার পর ট্রেন শক্তিশালী হয়েছে। কারণ, ট্রেন গণমানুষের পরিবহন। আমাদের দেশে শুরুও হয়েছিল, কিন্তু সেনাশাসনের সময় থেকেই তা মুখ থুবড়ে পড়ল। কারণ, বহু সুবিধাভোগী শ্রেণি সৃষ্টি করতে হবে—এই প্রত্যয় নিয়েই তাদের যাত্রা শুরু।
জাপান ও ভারতের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে গাড়ি, ট্রাক আমদানি হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অনেক হাজার কোটিপতির জন্ম হয়। আমদানিকারক এই কোটিপতিরা অত্যন্ত সুকৌশলে মধ্যবিত্তের দোরগোড়ায় একটি বিদেশি গাড়ি পৌঁছে দেয় প্রায় বিনা লগ্নিতে। ব্যাংক পাশে এসে দাঁড়ায় এবং মুনাফার এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়। সরকার উদারভাবে রুট পারমিট দিয়ে রাস্তাঘাট এমনই ভরে ফেলে যে ঢাকা শহরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। যানজট ক্রমাগতভাবে এক ভয়াবহ রূপ নেয়।
সরকার ইতিমধ্যেই রেল সম্প্রসারণের জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকা থেকে রেলমন্ত্রীর বাড়ি পঞ্চগড়ে একটি দ্রুতগামী ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে, ভালো কথা। রেলের সম্প্রসারণ উন্নতিও হয়েছে, কিন্তু রেল-সংস্কৃতির উন্নয়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থা হলো, কিন্তু দেখা গেল সব টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে। যাত্রার দিনে স্টেশনের আশপাশে ছয় শ টাকার টিকিট আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে রেল কর্মকর্তারা কোনো সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা নিতে পারেননি। খুব বেশি লেখালেখি হলে নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর অনেক বুদ্ধি আছে বাঙালির। সব দোষ শুধু জনগণের এবং সমাজব্যবস্থার। ভারতের সমাজব্যবস্থা কি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক উঁচু মানের? তারা কী করে রেলকে ঠিক রেখেছে? ভারত, চীন, জাপানে রেলের চাকা প্রতিদিন লাখ লাখ মাইল ঘোরে। কিন্তু ট্রেনের সময় এবং শৃঙ্খলা কী করে ঠিক থাকে? এসবই ব্যবস্থাপনার সংকট। বিদেশে কালেভদ্রে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, ট্রেনে ছোটখাটো বিলম্বও ঘটে, কিন্তু রেলগেটে এ ধরনের মৃত্যু সেসব দেশে খুবই অস্বাভাবিক। শুনলে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু রেলওয়েকে প্রাচীন ব্যবস্থাপনায় ফিরে যাওয়া উচিত। যার জন্য চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় হাসপাতাল না করে কেন্দ্রীয় অফিসটি চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়া উচিত। সেটি বোধ হয় সম্ভব না। কারণ কেন্দ্রে থাকলে নানা সুবিধা আছে।
ঢাকা শহরে কোনো সমুদ্র নেই। একটি মরা নদীর পাশে শহরটি গড়ে উঠেছে। অথচ নৌবাহিনীর সদর দপ্তরটিও ঢাকায়। তাই রেলের তার পুরোনো কেন্দ্রে ফিরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। একদা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরেও একটা শক্তিশালী রেলশ্রমিক সংগঠন ছিল। এই রেলশ্রমিকদের মধ্য থেকেই জ্যোতি বসু নির্বাচিত হয়েছিলেন। জসীমউদ্দিন মণ্ডলের মতো বড় নেতারা এই ইউনিয়নে কাজ করতেন। এখন রেলশ্রমিকের সেই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না।
রেলনিরাপত্তায়, ভ্রমণ-সংস্কৃতি এবং মানুষের সহজ চলাচলের জন্য একমাত্র উপায়। তাই রেলকে জাতির প্রয়োজনে শক্তিশালী হতেই হবে। রেল প্রশাসনকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে মানুষের জীবন সামনে রেখে কোনো দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। রেলস্টেশনগুলোকে সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বুক স্টল, যাত্রীদের বসার সুব্যবস্থা এবং সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখনো বড় বড় স্টেশনে রিটায়ারিং রুম আছে, সেখানে যাত্রীরা ন্যায্য ভাড়ার বিনিময়ে বিশ্রাম নিতে পারে, কোথাও কোথাও রাত্রি যাপন করতে পারে। রেলওয়ের বেহাত হওয়া জায়গাগুলো অতিদ্রুত উদ্ধার করে রেলের কাজে লাগাতে হবে। রেলের টয়লেট, স্নানাগার ইত্যাদি ব্যবস্থাকে আধুনিক করে জনসাধারণকে এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। রেলে যে পরিমাণে দুর্নীতি হয়, সেই দুর্নীতির মূল উৎপাটন প্রয়োজনে অধিকসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হবে। রেলগাড়ির কথা ভাবলেই একটা অপরিচ্ছন্ন এবং নোংরা চেহারা আমাদের চোখের সামনে ভাসে। এগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে জনশক্তি প্রয়োজন। রেলগেটগুলো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে সুরক্ষিত করা জরুরি। বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার প্রচলন হয়েছে। রেলওয়ের টিকিট কেনা, সিগন্যাল রুম থেকে শুরু করে সর্বত্র ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা উচিত।
বলাই বাহুল্য যে রেল আর ভারী ডিজেল ইঞ্জিনে চলবে না। এতে হয়তো ডিজেল-বাণিজ্যের লোকেরা ক্ষুব্ধ হবেন; তবু ইলেকট্রিক ট্রেন সর্বত্র চালু করা উচিত। রেলওয়ের জন্য আলাদা গ্যাসচালিত পাওয়ার হাউস নির্মাণ করতে হবে। অবিলম্বেই দেখতে চাই রেলের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দণ্ডপ্রাপ্ত হচ্ছেন এবং রেলের নবযাত্রা শুরু হচ্ছে।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ভারতের একটি রেল দুর্ঘটনার পর দায় স্বীকার করে সে সময়ের রেলমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও রেলের ব্যবস্থাপনায় যাঁরা থাকেন, তাঁরাও নিজেদের দায়িত্বহীন মনে করেন না; বরং যাঁদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অন্যদিকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী বা আমলাকে কোনো দুর্ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা দূরের কথা, মানুষের প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করতেও দেখা যায়নি।
সম্প্রতি মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনার পর মন্ত্রীকে টেলিফোনে পাওয়াই যায়নি। তিনি কোথায় ছিলেন, তা-ও জানা যায়নি। মন্ত্রীর ভয় পাওয়ার কথা নয়। কারণ, দেড়-দুই শ কোটি টাকা রেলগেট সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছে, সেটা তো তিনি আসার আগেই দফারফা হয়ে গেছে। রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকাদারদের সঙ্গে নিয়ে ভাগাভাগি করে ফেলেছেন। রেলের বিষয়ে বর্তমান সরকারের যতটা আগ্রহ, তার বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সব দক্ষতা নিয়ে বসে আছে।
আমাদের সরকারি আমলারা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাছে তাঁদের চাহিদা প্রকাশের ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ। এই চাহিদামতো অর্থ অনুমোদন করার ব্যাপারেও তাঁদের জুড়ি নেই। এক আমলাকে চিনতাম, যিনি প্ল্যানিং কমিশনের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পদ্মার ইলিশ, রাজশাহীর আম, রাজবাড়ীর মিষ্টি দিয়ে আসতেন। ওই সদস্য পরে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে আমেরিকায় প্রবাস জীবনে এত দিনে হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। রেলগেট সংস্কারের জন্য ২০০ কোটি টাকা কোথায় গেল, তার হিসাব কোনো দিন পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের রেলওয়ের একটা নিজস্ব ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থার ফলে লাইনের ত্রুটি বা জরুরি কোনো কাজ খুব দ্রুতই করা যায়। আর ইঞ্জিনের সমস্যা হলে তার জন্য বড় বড় কারখানা ছিল। সত্তরের দশকের শেষ থেকে এগুলো লোপাট শুরু হয়। নাট, বল্টু, স্ক্রু পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যায়। থাকে শুধু রেলওয়ের ডিজেল-বাণিজ্য এবং মাঝে মাঝে ঠিকাদারদের কাজ।
আশির দশকের মাঝামাঝি একজন সচিবের সদিচ্ছার কারণে কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়; কিন্তু রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার
ফলে লোকাল ট্রেনগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কারণ, লোকাল ট্রেনগুলো থেকেই উপরি পয়সাটা বেশি পাওয়া যায়। এ সময় রেলের আমলারা সুকৌশলে রেলের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং নিজেদের পদোন্নতির সুবিধার জন্য দক্ষতা বাড়ানোর নাম দিয়ে দুটি অঞ্চলে রেলকে ভাগ করা হয়। এই পর্যায়ে শুরু হয় রেলের জমি লুণ্ঠন। ছোট ছোট ভূমিদস্যুরা রেলের জমিতে স্থায়ী দোকানপাট ও বাড়িঘর নির্মাণ করে থাকে।
পরিবারের দুস্থ আত্মীয়টির মতো রেল বেঁচে থাকে, বিপরীতে বাড়তে থাকে দেশে বাস-ট্রাক ও ছোট মোটরযান নিয়ে পরিবহনব্যবস্থা। এই পরিবহনব্যবস্থার আবার প্রধান দাবি হচ্ছে যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের উচ্চহারে ভাড়া বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে প্রতিদিন বেশ কিছু মানুষের রক্ত চায়। নরবলি ছাড়া সে চলতে পারে না—এভাবেই চলছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করল, কিন্তু ডিজেল-বাণিজ্য ছাড়ল না। পৃথিবীর কোথাও এত বড় ডিজেল ইঞ্জিন চলে না। ইলেকট্রিক ট্রেন একমাত্র ব্যবস্থা। ভারতে একসময় বিদ্যুতের চরম ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ইলেকট্রিক ট্রেন চলেছে। কলকাতার রাস্তায় ট্রামও চলেছে। পৃথিবীর সব দেশেই বিপ্লব হওয়ার পর ট্রেন শক্তিশালী হয়েছে। কারণ, ট্রেন গণমানুষের পরিবহন। আমাদের দেশে শুরুও হয়েছিল, কিন্তু সেনাশাসনের সময় থেকেই তা মুখ থুবড়ে পড়ল। কারণ, বহু সুবিধাভোগী শ্রেণি সৃষ্টি করতে হবে—এই প্রত্যয় নিয়েই তাদের যাত্রা শুরু।
জাপান ও ভারতের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে গাড়ি, ট্রাক আমদানি হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অনেক হাজার কোটিপতির জন্ম হয়। আমদানিকারক এই কোটিপতিরা অত্যন্ত সুকৌশলে মধ্যবিত্তের দোরগোড়ায় একটি বিদেশি গাড়ি পৌঁছে দেয় প্রায় বিনা লগ্নিতে। ব্যাংক পাশে এসে দাঁড়ায় এবং মুনাফার এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়। সরকার উদারভাবে রুট পারমিট দিয়ে রাস্তাঘাট এমনই ভরে ফেলে যে ঢাকা শহরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। যানজট ক্রমাগতভাবে এক ভয়াবহ রূপ নেয়।
সরকার ইতিমধ্যেই রেল সম্প্রসারণের জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকা থেকে রেলমন্ত্রীর বাড়ি পঞ্চগড়ে একটি দ্রুতগামী ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে, ভালো কথা। রেলের সম্প্রসারণ উন্নতিও হয়েছে, কিন্তু রেল-সংস্কৃতির উন্নয়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থা হলো, কিন্তু দেখা গেল সব টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে। যাত্রার দিনে স্টেশনের আশপাশে ছয় শ টাকার টিকিট আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে রেল কর্মকর্তারা কোনো সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা নিতে পারেননি। খুব বেশি লেখালেখি হলে নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর অনেক বুদ্ধি আছে বাঙালির। সব দোষ শুধু জনগণের এবং সমাজব্যবস্থার। ভারতের সমাজব্যবস্থা কি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক উঁচু মানের? তারা কী করে রেলকে ঠিক রেখেছে? ভারত, চীন, জাপানে রেলের চাকা প্রতিদিন লাখ লাখ মাইল ঘোরে। কিন্তু ট্রেনের সময় এবং শৃঙ্খলা কী করে ঠিক থাকে? এসবই ব্যবস্থাপনার সংকট। বিদেশে কালেভদ্রে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়, ট্রেনে ছোটখাটো বিলম্বও ঘটে, কিন্তু রেলগেটে এ ধরনের মৃত্যু সেসব দেশে খুবই অস্বাভাবিক। শুনলে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু রেলওয়েকে প্রাচীন ব্যবস্থাপনায় ফিরে যাওয়া উচিত। যার জন্য চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় হাসপাতাল না করে কেন্দ্রীয় অফিসটি চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়া উচিত। সেটি বোধ হয় সম্ভব না। কারণ কেন্দ্রে থাকলে নানা সুবিধা আছে।
ঢাকা শহরে কোনো সমুদ্র নেই। একটি মরা নদীর পাশে শহরটি গড়ে উঠেছে। অথচ নৌবাহিনীর সদর দপ্তরটিও ঢাকায়। তাই রেলের তার পুরোনো কেন্দ্রে ফিরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। একদা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরেও একটা শক্তিশালী রেলশ্রমিক সংগঠন ছিল। এই রেলশ্রমিকদের মধ্য থেকেই জ্যোতি বসু নির্বাচিত হয়েছিলেন। জসীমউদ্দিন মণ্ডলের মতো বড় নেতারা এই ইউনিয়নে কাজ করতেন। এখন রেলশ্রমিকের সেই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না।
রেলনিরাপত্তায়, ভ্রমণ-সংস্কৃতি এবং মানুষের সহজ চলাচলের জন্য একমাত্র উপায়। তাই রেলকে জাতির প্রয়োজনে শক্তিশালী হতেই হবে। রেল প্রশাসনকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে মানুষের জীবন সামনে রেখে কোনো দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। রেলস্টেশনগুলোকে সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বুক স্টল, যাত্রীদের বসার সুব্যবস্থা এবং সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখনো বড় বড় স্টেশনে রিটায়ারিং রুম আছে, সেখানে যাত্রীরা ন্যায্য ভাড়ার বিনিময়ে বিশ্রাম নিতে পারে, কোথাও কোথাও রাত্রি যাপন করতে পারে। রেলওয়ের বেহাত হওয়া জায়গাগুলো অতিদ্রুত উদ্ধার করে রেলের কাজে লাগাতে হবে। রেলের টয়লেট, স্নানাগার ইত্যাদি ব্যবস্থাকে আধুনিক করে জনসাধারণকে এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। রেলে যে পরিমাণে দুর্নীতি হয়, সেই দুর্নীতির মূল উৎপাটন প্রয়োজনে অধিকসংখ্যক লোক নিয়োগ করতে হবে। রেলগাড়ির কথা ভাবলেই একটা অপরিচ্ছন্ন এবং নোংরা চেহারা আমাদের চোখের সামনে ভাসে। এগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে জনশক্তি প্রয়োজন। রেলগেটগুলো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে সুরক্ষিত করা জরুরি। বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার প্রচলন হয়েছে। রেলওয়ের টিকিট কেনা, সিগন্যাল রুম থেকে শুরু করে সর্বত্র ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা উচিত।
বলাই বাহুল্য যে রেল আর ভারী ডিজেল ইঞ্জিনে চলবে না। এতে হয়তো ডিজেল-বাণিজ্যের লোকেরা ক্ষুব্ধ হবেন; তবু ইলেকট্রিক ট্রেন সর্বত্র চালু করা উচিত। রেলওয়ের জন্য আলাদা গ্যাসচালিত পাওয়ার হাউস নির্মাণ করতে হবে। অবিলম্বেই দেখতে চাই রেলের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দণ্ডপ্রাপ্ত হচ্ছেন এবং রেলের নবযাত্রা শুরু হচ্ছে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে