মো. গোলাম রহমান
আজকের লেখাটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করছি। ওষুধ কিনতে গিয়ে যা হয়, তাই আমার এক গুণগ্রাহী মেডিকেল শিক্ষার্থীর সঙ্গে শেয়ার করছিলাম। তার কাছ থেকে ওষুধসংক্রান্ত কিছু তথ্যও পেলাম, সেই সঙ্গে যুক্তি-তর্ক, ন্যায়-অন্যায়, ব্যবসা-বাণিজ্য, লাভ-লোকসান–এই সব আলোচনা।
প্রথমেই ধরা যাক, ওষুধের পরিমাণ নির্ধারণ করা। আমি এক সপ্তাহের ওষুধ কিনব, নাকি মাসের? আমার কি দৈবকালীন কোনো সমস্যার কারণে ওষুধ কিনতে হচ্ছে, নাকি প্রতিদিনকার শারীরিক ব্যবস্থাপনার জন্য? ধরা যাক, সাময়িক সমস্যা। যেমন জ্বর, কাশি, মাথাব্যথার জন্য অল্প কিছু ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ নিতে হচ্ছে। বিষয়টা সহজ। অপরদিকে, যাদের লম্বা সময় ধরে শরীর সুস্থ রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হয়, তাদের ওষুধ ব্যবস্থাপনার দিকটা মাথায় রাখতে হয়।
ওষুধের স্ট্রিপ কিংবা প্যাকেট বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একই জেনেরিকের ওষুধ একেক কোম্পানি একেক রকম স্ট্রিপ কিংবা প্যাকেট করে থাকে। কোনোটা ১০টার, কোনোটা ১৪টার, কোনোটা আবার ৩০টার কিংবা ৪২টার। আপনি যে কোম্পানির ওষুধ যে কয় দিনের জন্য নিতে চাইছেন তা দোকানদার পুরো স্ট্রিপ কিংবা প্যাকেট নিতে বলছেন, স্ট্রিপ বা প্যাকেট ভেঙে দিতে চাইছেন না। বিপত্তিটা হয় তখন। যাদের দীর্ঘকাল ধরে ওষুধ খেতে হয়, তাদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট গুরুত্বের একটি বিষয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো তা কতটা বিবেচনা করে, তাদের মার্কেট রিসার্চ কতটা কার্যকর, সেটাও খতিয়ে দেখার বিষয়।
ভোক্তাসাধারণের অর্থনৈতিক ও আচরণগত অবস্থাও একই সঙ্গে বিবেচনাযোগ্য। একজন ক্রেতা অর্থনৈতিক দিক থেকে নানা টানাপোড়েনের মধ্যে জীবনযাপন করছেন এই দুর্মূল্যের বাজারে। তিনি কয়েক রকম ওষুধ কিনতে গেলে দেখা যায় তাঁর বিড়ম্বনা আরও বেশি। সাধারণভাবে সপ্তাহের বা মাসের ওষুধ কেনার প্রবণতা থাকে বেশি। কারও কারও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পুরো মাসের সব ওষুধ হয়তো তিনি না-ও কিনতে পারেন।
একজন ভোক্তা যখন রোগী, তখন তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে কি আমরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করি? যারা ওষুধ সরবরাহ করে, সেই কোম্পানিগুলোর চিন্তাভাবনা কী? তারা কতটা সেবা দিয়ে থাকে, আর কতটা ব্যবসা করে, তা-ও প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অর্থ বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করবে, পুঁজিঘন সমাজে এর বাইরে আমরা কতটা ভাবতে পারি? ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গীকার বলে যে কথাটা প্রচলিত রয়েছে, তার প্রতি আমরা দৃষ্টি দিই না কেন? সব ব্যবসাই তো সমান না। মেডিকেল বা চিকিৎসাসংক্রান্ত পেশাগত নীতিমালা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
খুচরা ওষুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয়ভাবে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে বলে জানা যায়। কোথাও কোথাও কোনো কোনো ওষুধ স্ট্রিপ কেটে বা প্যাকেট ভেঙে বিক্রি করা হয়। তাতে ক্রেতাসাধারণ নিজেদের পছন্দমতো এবং প্রয়োজনমতো ওষুধ কিনতে পারেন। কেউ সাত দিনের কেউবা আবার দুই সপ্তাহ বা পুরো মাসের ওষুধ কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কেনার পর ওষুধের মান বজায় রাখাটা তাঁর মাথায় রাখতে হবে। ওষুধ বিপণনকরণসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট মহল এসব নিয়ে কাজ করতে পারে।
এ ব্যাপারে সার্বিক একটা ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিজিডিএ) ওষুধ প্রস্তুতকরণ, এর কাঁচামাল আমদানি, লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স নবায়ন, নতুন ওষুধের রেসিপি অনুমোদন, লেবেল ও কার্টন অনুমোদন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য অনুমোদন করা, খুচরা ও পাইকারি ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন ইত্যাদি নানা রকম কাজ করে থাকে। ডিজিডিএর সিটিজেন চার্টারে এগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়।
ওষুধের বাজারদর নিয়ে নানা ধরনের মতামত চালু আছে। একই ওষুধের বিভিন্ন কোম্পানির মূল্যের তারতম্য উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ করা যায়। যদি ওষুধের মান ঠিক থাকে, তাহলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ভিন্নতার কারণে মূল্যের পার্থক্য এত বেশি হবে কেন? এ নিয়ে ভোক্তামহলে চরম অসন্তোষ বিদ্যমান। তাহলে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে ওষুধগুলোর প্রস্তুতকরণে এগুলোর মান কি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না, যে কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান স্বল্পমূল্যে ওষুধ বাজারে ছাড়ছে আবার কোনো প্রস্তুতকারক অতি উচ্চমূল্য দাবি করছে? ওষুধ প্রস্তুতিতে কাঁচামালের মূল্যের বড় ধরনের প্রভাব আছে। কিন্তু শুধু কাঁচামালের দামের ওঠানামার কারণে ওষুধের মূল্য এত বেশি বা কম হওয়ার কথা নয়।
সাম্প্রতিক বাজারদর জেনে কিছুদিন আগের একটি টিভি রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলাম, ১০০ টাকার ১০০ ‘ডিজাইড’ ট্যাবলেটের দাম ৫০০ টাকা হয়েছে, তেমনি ৬০ টাকা দামের ‘ইলেকট্রো-কে’ ওষুধের দাম হয়েছে ২০০ টাকা। একই জেনেরিকের ওষুধ কোম্পানিভেদে দামের ভিন্নতা ব্যাপক। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, ‘বনোভা’ রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধের মূল্য ২ হাজার ৫০৭ টাকা, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ‘বনড্রোভা’ ১ হাজার ৮০৮ টাকা, ‘বনএইড’ ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালের ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ‘ইভানা’ রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালের ৮৯৯ টাকা, ‘বোন-গার্ড’ ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের ৫১০ টাকা, ‘ম্যাক্সবোন’ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ৪৬০ টাকা। ওষুধের মূল্যের এই ভিন্নতা প্রায় ৫ গুণ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মূল্যের এই বল্গাহীন স্থিতিস্থাপকতা আমরা কতটা সহ্য করতে পারি?
আমাদের দেশে যেকোনো পণ্য এবং সেবার মূল্য নির্ধারণে কী ধরনের কৌশল এবং কী পরিমাণ মুনাফা হবে তার যৌক্তিক কোনো মাপকাঠি নেই। যেকোনো ধরনের পণ্যের চাহিদা এবং বাজারে তার সরবরাহ আদর্শিকভাবে কতটা হওয়া উচিত এবং পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তার নিয়োজিত মূলধনের ওপর কতটা মুনাফা করবে, এর কোনো সঠিক পদ্ধতিও নেই। যদি সঠিক পদ্ধতি না থাকে এবং মুনাফা হিসাবের কোনো ফর্মুলা বা নিয়মাবলি না থাকে, সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীমহল অনায়াসে তাঁদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেন কিংবা এড়িয়ে যেতে পারেন। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিজিডিএ ২৪ প্রকার ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। গত বছরের জুলাইয়ে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করেছিল।
ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ১৯৮২-এর ধারা ১১ অনুযায়ী, প্রতিটি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য অফিশিয়াল গেজেটে প্রকাশ সাপেক্ষে নির্ধারণের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধের মূল্যের আকাশ-পাতাল পার্থক্য কেন বিদ্যমান? আমাদের দেশের মতো আর্থসামাজিক অবস্থায় জনগণের ভোক্তাস্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হবে? একটি দৈনিক পত্রিকার গত ১০ মের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ১১৭ প্রকার ওষুধ, যার মধ্যে ৭০টি অতিপ্রয়োজনীয় এবং ৪৭টি ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সরকার আর ১ হাজার ৭০০ বিভিন্ন ধরনের ওষুধের দাম নির্ধারণ করে থাকে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। ভারতে প্রায় ৮০০ প্রকার ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে সেই দেশের সরকার। ১৯৯৪ সালে অবশ্য ডিজিডিএ ২১৯টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের কথা বলেছিল।
মোদ্দাকথা হচ্ছে, ওষুধ খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে একজন ভোক্তার সুবিধা-অসুবিধা, আর্থিক অবস্থা, তাঁর আচরণগত বিষয়গুলো ওষুধের একজন দোকানদার কতটা গুরুত্ব দেবেন, যেখানে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার কোনো কার্যকর রূপরেখাই পাওয়া যায় না? সংশ্লিষ্ট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান, যেমন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), প্রাইস ফিক্সেশন কমিটি—এরা কতটা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম?
অভিযোগ আছে, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর ভূমিকাই প্রধান এবং চূড়ান্ত। এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ব্যাপক অভাব যেকোনো নাগরিক অনুমান করতে পারেন। তাহলে জনগণ ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে নিজের প্রয়োজন ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে? ভোক্তা হিসেবে তাঁর অধিকারের কোনো মূল্য প্রস্তুতকারী ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়? একজন ক্রেতা ৭ বা ১৪ দিনের ওষুধ কিনতে গিয়ে ভোগান্তি পোহানো কি তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক? ওষুধের ভোক্তা আর বিপণন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একধরনের শীতল যুদ্ধ চলতেই থাকবে? সংশ্লিষ্ট মহল দ্রুত নজর দিন।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজকের লেখাটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করছি। ওষুধ কিনতে গিয়ে যা হয়, তাই আমার এক গুণগ্রাহী মেডিকেল শিক্ষার্থীর সঙ্গে শেয়ার করছিলাম। তার কাছ থেকে ওষুধসংক্রান্ত কিছু তথ্যও পেলাম, সেই সঙ্গে যুক্তি-তর্ক, ন্যায়-অন্যায়, ব্যবসা-বাণিজ্য, লাভ-লোকসান–এই সব আলোচনা।
প্রথমেই ধরা যাক, ওষুধের পরিমাণ নির্ধারণ করা। আমি এক সপ্তাহের ওষুধ কিনব, নাকি মাসের? আমার কি দৈবকালীন কোনো সমস্যার কারণে ওষুধ কিনতে হচ্ছে, নাকি প্রতিদিনকার শারীরিক ব্যবস্থাপনার জন্য? ধরা যাক, সাময়িক সমস্যা। যেমন জ্বর, কাশি, মাথাব্যথার জন্য অল্প কিছু ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ নিতে হচ্ছে। বিষয়টা সহজ। অপরদিকে, যাদের লম্বা সময় ধরে শরীর সুস্থ রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হয়, তাদের ওষুধ ব্যবস্থাপনার দিকটা মাথায় রাখতে হয়।
ওষুধের স্ট্রিপ কিংবা প্যাকেট বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একই জেনেরিকের ওষুধ একেক কোম্পানি একেক রকম স্ট্রিপ কিংবা প্যাকেট করে থাকে। কোনোটা ১০টার, কোনোটা ১৪টার, কোনোটা আবার ৩০টার কিংবা ৪২টার। আপনি যে কোম্পানির ওষুধ যে কয় দিনের জন্য নিতে চাইছেন তা দোকানদার পুরো স্ট্রিপ কিংবা প্যাকেট নিতে বলছেন, স্ট্রিপ বা প্যাকেট ভেঙে দিতে চাইছেন না। বিপত্তিটা হয় তখন। যাদের দীর্ঘকাল ধরে ওষুধ খেতে হয়, তাদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট গুরুত্বের একটি বিষয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো তা কতটা বিবেচনা করে, তাদের মার্কেট রিসার্চ কতটা কার্যকর, সেটাও খতিয়ে দেখার বিষয়।
ভোক্তাসাধারণের অর্থনৈতিক ও আচরণগত অবস্থাও একই সঙ্গে বিবেচনাযোগ্য। একজন ক্রেতা অর্থনৈতিক দিক থেকে নানা টানাপোড়েনের মধ্যে জীবনযাপন করছেন এই দুর্মূল্যের বাজারে। তিনি কয়েক রকম ওষুধ কিনতে গেলে দেখা যায় তাঁর বিড়ম্বনা আরও বেশি। সাধারণভাবে সপ্তাহের বা মাসের ওষুধ কেনার প্রবণতা থাকে বেশি। কারও কারও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পুরো মাসের সব ওষুধ হয়তো তিনি না-ও কিনতে পারেন।
একজন ভোক্তা যখন রোগী, তখন তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে কি আমরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করি? যারা ওষুধ সরবরাহ করে, সেই কোম্পানিগুলোর চিন্তাভাবনা কী? তারা কতটা সেবা দিয়ে থাকে, আর কতটা ব্যবসা করে, তা-ও প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অর্থ বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করবে, পুঁজিঘন সমাজে এর বাইরে আমরা কতটা ভাবতে পারি? ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গীকার বলে যে কথাটা প্রচলিত রয়েছে, তার প্রতি আমরা দৃষ্টি দিই না কেন? সব ব্যবসাই তো সমান না। মেডিকেল বা চিকিৎসাসংক্রান্ত পেশাগত নীতিমালা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
খুচরা ওষুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয়ভাবে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে বলে জানা যায়। কোথাও কোথাও কোনো কোনো ওষুধ স্ট্রিপ কেটে বা প্যাকেট ভেঙে বিক্রি করা হয়। তাতে ক্রেতাসাধারণ নিজেদের পছন্দমতো এবং প্রয়োজনমতো ওষুধ কিনতে পারেন। কেউ সাত দিনের কেউবা আবার দুই সপ্তাহ বা পুরো মাসের ওষুধ কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কেনার পর ওষুধের মান বজায় রাখাটা তাঁর মাথায় রাখতে হবে। ওষুধ বিপণনকরণসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট মহল এসব নিয়ে কাজ করতে পারে।
এ ব্যাপারে সার্বিক একটা ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিজিডিএ) ওষুধ প্রস্তুতকরণ, এর কাঁচামাল আমদানি, লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স নবায়ন, নতুন ওষুধের রেসিপি অনুমোদন, লেবেল ও কার্টন অনুমোদন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য অনুমোদন করা, খুচরা ও পাইকারি ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন ইত্যাদি নানা রকম কাজ করে থাকে। ডিজিডিএর সিটিজেন চার্টারে এগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়।
ওষুধের বাজারদর নিয়ে নানা ধরনের মতামত চালু আছে। একই ওষুধের বিভিন্ন কোম্পানির মূল্যের তারতম্য উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ করা যায়। যদি ওষুধের মান ঠিক থাকে, তাহলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ভিন্নতার কারণে মূল্যের পার্থক্য এত বেশি হবে কেন? এ নিয়ে ভোক্তামহলে চরম অসন্তোষ বিদ্যমান। তাহলে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে ওষুধগুলোর প্রস্তুতকরণে এগুলোর মান কি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না, যে কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান স্বল্পমূল্যে ওষুধ বাজারে ছাড়ছে আবার কোনো প্রস্তুতকারক অতি উচ্চমূল্য দাবি করছে? ওষুধ প্রস্তুতিতে কাঁচামালের মূল্যের বড় ধরনের প্রভাব আছে। কিন্তু শুধু কাঁচামালের দামের ওঠানামার কারণে ওষুধের মূল্য এত বেশি বা কম হওয়ার কথা নয়।
সাম্প্রতিক বাজারদর জেনে কিছুদিন আগের একটি টিভি রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলাম, ১০০ টাকার ১০০ ‘ডিজাইড’ ট্যাবলেটের দাম ৫০০ টাকা হয়েছে, তেমনি ৬০ টাকা দামের ‘ইলেকট্রো-কে’ ওষুধের দাম হয়েছে ২০০ টাকা। একই জেনেরিকের ওষুধ কোম্পানিভেদে দামের ভিন্নতা ব্যাপক। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, ‘বনোভা’ রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধের মূল্য ২ হাজার ৫০৭ টাকা, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ‘বনড্রোভা’ ১ হাজার ৮০৮ টাকা, ‘বনএইড’ ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালের ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ‘ইভানা’ রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালের ৮৯৯ টাকা, ‘বোন-গার্ড’ ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের ৫১০ টাকা, ‘ম্যাক্সবোন’ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ৪৬০ টাকা। ওষুধের মূল্যের এই ভিন্নতা প্রায় ৫ গুণ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মূল্যের এই বল্গাহীন স্থিতিস্থাপকতা আমরা কতটা সহ্য করতে পারি?
আমাদের দেশে যেকোনো পণ্য এবং সেবার মূল্য নির্ধারণে কী ধরনের কৌশল এবং কী পরিমাণ মুনাফা হবে তার যৌক্তিক কোনো মাপকাঠি নেই। যেকোনো ধরনের পণ্যের চাহিদা এবং বাজারে তার সরবরাহ আদর্শিকভাবে কতটা হওয়া উচিত এবং পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তার নিয়োজিত মূলধনের ওপর কতটা মুনাফা করবে, এর কোনো সঠিক পদ্ধতিও নেই। যদি সঠিক পদ্ধতি না থাকে এবং মুনাফা হিসাবের কোনো ফর্মুলা বা নিয়মাবলি না থাকে, সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীমহল অনায়াসে তাঁদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেন কিংবা এড়িয়ে যেতে পারেন। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিজিডিএ ২৪ প্রকার ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। গত বছরের জুলাইয়ে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করেছিল।
ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ১৯৮২-এর ধারা ১১ অনুযায়ী, প্রতিটি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য অফিশিয়াল গেজেটে প্রকাশ সাপেক্ষে নির্ধারণের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধের মূল্যের আকাশ-পাতাল পার্থক্য কেন বিদ্যমান? আমাদের দেশের মতো আর্থসামাজিক অবস্থায় জনগণের ভোক্তাস্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হবে? একটি দৈনিক পত্রিকার গত ১০ মের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ১১৭ প্রকার ওষুধ, যার মধ্যে ৭০টি অতিপ্রয়োজনীয় এবং ৪৭টি ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সরকার আর ১ হাজার ৭০০ বিভিন্ন ধরনের ওষুধের দাম নির্ধারণ করে থাকে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। ভারতে প্রায় ৮০০ প্রকার ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে সেই দেশের সরকার। ১৯৯৪ সালে অবশ্য ডিজিডিএ ২১৯টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের কথা বলেছিল।
মোদ্দাকথা হচ্ছে, ওষুধ খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে একজন ভোক্তার সুবিধা-অসুবিধা, আর্থিক অবস্থা, তাঁর আচরণগত বিষয়গুলো ওষুধের একজন দোকানদার কতটা গুরুত্ব দেবেন, যেখানে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার কোনো কার্যকর রূপরেখাই পাওয়া যায় না? সংশ্লিষ্ট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান, যেমন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), প্রাইস ফিক্সেশন কমিটি—এরা কতটা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম?
অভিযোগ আছে, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর ভূমিকাই প্রধান এবং চূড়ান্ত। এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ব্যাপক অভাব যেকোনো নাগরিক অনুমান করতে পারেন। তাহলে জনগণ ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে নিজের প্রয়োজন ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে? ভোক্তা হিসেবে তাঁর অধিকারের কোনো মূল্য প্রস্তুতকারী ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়? একজন ক্রেতা ৭ বা ১৪ দিনের ওষুধ কিনতে গিয়ে ভোগান্তি পোহানো কি তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক? ওষুধের ভোক্তা আর বিপণন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একধরনের শীতল যুদ্ধ চলতেই থাকবে? সংশ্লিষ্ট মহল দ্রুত নজর দিন।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে