আজকের পত্রিকা: আপনি কেন অনুবাদক হলেন? এর প্রস্তুতিটা কী রকম ছিল?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: কেন অনুবাদ করি? ভালো লাগে বলে করি। আসলে অনুবাদ তো সবকিছুই। মানুষ কি মৌলিক কিছু সৃষ্টি করতে পারে? মৌলিক স্রষ্টা হলো প্রকৃতি। প্রকৃতি প্রদত্ত নানা উপকরণ নিয়েই ‘মৌলিক’ লেখক কাজ করেন। তাঁর সামনে খোলা থাকে নানা পুস্তক—মানুষ, পশুপাখি, জল-জঙ্গলের জন্তু-জানোয়ার, নিসর্গ। এই সব বই থেকেই উপকরণ সংগ্রহ করে তিনি একটা বই লেখেন।
সে ক্ষেত্রে অনুবাদকের সামনে প্রধানত থাকে মাত্র একটি বই, যার লেখক সরাসরি প্রকৃতি নয়; বরং একজন মানুষ। এই একটি বইয়েরই তিনি যখন আরেকটি ভাষায়, আরেকটি সংস্কৃতিতে রূপান্তর ঘটান, সেটাকেই আমরা বলি অনুবাদ গ্রন্থ। এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় নানা পরিবর্তন ঘটে। ফলে মূল বইয়ের অনেক কিছুই পাল্টে গিয়ে একটা নতুন সাহিত্যকর্মই জন্মলাভ করে। এ জন্য একটি ‘সৃজনশীল’ লেখা এবং এর অনুবাদকর্মের সৃষ্টি-প্রক্রিয়ায় আমি আকাশ-পাতাল তফাত দেখি না। মূল লেখাটি অনুবাদের মাধ্যমে নবজীবন লাভ করে এবং এর পুনর্জন্ম হয়।
কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আটঘাট বেঁধে আমি অনুবাদে আসিনি। সহজাত প্রবণতা থেকেই মানুষ কোনো একটি শিল্পকর্মের দিকে ঝোঁকে। অন্য ভাষায় কিছু পড়ে ভালো লাগলে তা নিজের ভাষায় প্রকাশ করতে তো ইচ্ছে হতেই পারে। সেভাবেই মনে হয় আমার অনুবাদকাজের শুরু। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলাম বগুড়া শহরে। সেখানে এপ্রিল মাসে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গোলাবর্ষণ শুরু করলে শহর ছেড়ে লোকে গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে যায়। আমিও সে রকম পালিয়ে শহরের ৭ মাইল পূর্বে আমাদের এক পারিবারিক বন্ধুর বাসায় গিয়ে উঠি। সঙ্গে কী মনে করে যেন মিখাইল শলোখভের ‘আর্লি স্টোরিজ’ বইটা নিয়েছিলাম। পোড়াদহ গ্রামের এই আশ্রয়দাতার বাসার বাইরের বৈঠকখানায় বসে সম্ভবত ওই বই থেকে দু-একটা গল্প অনুবাদ করেছিলাম। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১৯৭০ সালে গ্রিক কবি কাভাফির ‘ইথাকা’ কবিতাটি অনুবাদ করেছিলাম বলে মনে পড়ে। এভাবে কোনো ঘটা না করে, বিশেষ প্রস্তুতি না নিয়েই অনুবাদের জগতে আমার প্রবেশ।
আজকের পত্রিকা: আমাদের দেশের অনুবাদের বর্তমান অবস্থাটা কেমন?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: আমাদের দেশে দুই দশক আগেও অনুবাদের তেমন মর্যাদা ছিল না। সামান্য যে দু-চারজন সৃজনশীল লেখক ছিলেন, তাঁরা নিজেদের লেখা অন্য ভাষায় অনূদিত হয়ে বিদেশি পাঠকদের কাছে পৌঁছাক, সেই প্রয়োজনীয়তা সেভাবে অনুভব করেননি। একধরনের অজ্ঞতা এবং আত্মম্ভরিতার বশেই তাঁরা অনুবাদশিল্পকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেননি। ফলে অনুবাদকেরাও একধরনের হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। কদর না থাকলে সে দেশে গুণীজন জন্মাবেন কী করে? কিন্তু দুই দশকে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বৃহত্তর পাঠক পেতে যে অনুবাদের বিকল্প নেই, দেরিতে হলেও এ কথা এখন সবাই বুঝতে পারছেন; বিশেষ করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যখন অনুবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন, তাতে সৃজনশীল লেখক, প্রকাশক সবাই এখন অনুবাদকর্মকে কিছুটা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন।
অবশ্যই একটা বাজে মৌলিক রচনার চেয়ে একটা ভালো অনুবাদ অনেক বেশি কাম্য। এখন প্রচুর বই বাংলায় অনূদিত হচ্ছে। তবে সমস্যা হলো, বাংলা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদের সংখ্যা কম। আমরা মূলত এক ভাষাভাষী বা দোভাষী জাতি। বাংলা ছাড়া ইংরেজিটা হয়তো কিছু লোকে জানে বা লিখতে পারে। কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনো ভাষার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা নেই বললেই চলে।
তবে আশার কথা, ইদানীং কিছু ইউরোপীয় ভাষা, যেমন ফরাসি, স্প্যানিশ, রুশ ইত্যাদি ভাষায় কেউ কেউ বাংলা সাহিত্য অনুবাদ করছেন। ওই সব ভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় অনুবাদও হচ্ছে। এ ছাড়া উর্দু, ফারসি, হিন্দি থেকেও সরাসরি অনুবাদ হচ্ছে এবং বাংলা সাহিত্যও সরাসরি ওই সব ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। অনুবাদ করছেন অনেকেই। বেশ ঝরঝরে, সাবলীল অনুবাদও চোখে পড়ে। তবে তাদের সংখ্যা কম। এভাবে একটি ঐতিহ্য যখন সৃষ্টির পথে, তখন তো আশা করাই যায় যে আগামী কয়েক দশকে সংখ্যায় যেমন বাড়বে, তেমনি শিল্পগুণেও মিলবে উন্নত অনুবাদের সাক্ষাৎ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে অনুবাদের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে কী বলবেন?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: ভালো জিনিস সব সময়ই কম। এখানেও সৃষ্ট সাহিত্যের মতো অনুবাদের মান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ।বইমেলায় যে হাজার হাজার বই আসে তার কয়টি মানসম্মত? আগাছা, পরগাছা যেমন দ্রুত আগ্রাসী বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে ওঠে, সে রকম আমাদের সাহিত্য ও অনুবাদ সাহিত্য এবং সমাজ, রাজনীতি সবখানেই মানের চেয়ে সংখ্যার গুরুত্বই বেশি।
অনুবাদের নিম্নমান ছাড়াও যে ব্যাপারটি জঘন্যতর—অনেক ভারতীয় অনুবাদকের কাজ এ দেশের কিছু প্রকাশক এখানকার দু-চারজনের নামে দিব্যি চালিয়ে প্রকাশ করছেন। তাঁদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দু-একজন শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি প্রমুখের ধ্রুপদি সাহিত্য পশ্চিমবঙ্গে অনূদিত হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু কিছু অসাধু প্রকাশক সেগুলো বেমালুম এখানকার কারও কারও নাম ব্যবহার করে প্রকাশ করছেন। এমনকি আশির দশকে আমার অনূদিত ‘গালিভারের ভ্রমণকাহিনি’ও কয়েক বছর আগে দেখি মোহাম্মদ জিয়া নামে একজনের নাম ব্যবহার করে বাংলা বাজারের এক অজ্ঞাত প্রকাশক দিব্যি ছাপিয়ে বিক্রি করছেন। এখানকার অনুবাদের জগতে এ ব্যাপারটিও এক গর্হিত, দণ্ডনীয় অপরাধ।
আজকের পত্রিকা: ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে কোন সমস্যার মুখোমুখি হন? সমস্যাটা কী রকম?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো হয় তা মূলত ভাষাগত। ইংরেজি সিনট্যাক্স যেহেতু বাংলার মতো নয়, সে জন্য ইংরেজির অনেক দীর্ঘ বাক্য বাংলায় আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। সর্বনাম বা ‘প্রোনাউন’ ব্যবহার করে ইংরেজিতে বড় বড় বাক্য রচনা করা যায়, কিন্তু বাংলায় তা অনুবাদ করতে গেলে দীর্ঘ বাক্য ভেঙে দুটো কি তিনটি বাক্যে লিখতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে বাংলায় ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দের অভাব। বাংলার তুলনায় ইংরেজি সমৃদ্ধতর। ইংরেজিতে একটি শব্দে যা বোঝানো সম্ভব, বহু ক্ষেত্রে বাংলায় তা ব্যাখ্যা করে বলতে হয়।
এ ছাড়া একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন জনগোষ্ঠীর আচার-আচরণ, সংস্কার, বিশ্বাস-অবিশ্বাস ইত্যাদি বাংলা পাঠকের বোধগম্যতার কথা মাথায় রেখে অনুবাদ করতে হয়। লাখো ভাষার পাঠকের বোধগম্যতা নিশ্চিত করতে উৎস ভাষার সংস্কৃতির প্রতি সব সময় একনিষ্ঠ থাকা সম্ভব হয় না। যেকোনো ভাষার অনুবাদককে এই শ্যাম রাখি না কুল রাখির দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করেই কাজ করতে হয়।
আজকের পত্রিকা: বাংলা ভাষার কোন গ্রন্থগুলো অন্য ভাষায় অনুবাদ হওয়া দরকার বলে মনে করেন?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: বাংলা ভাষায় যত ধ্রুপদি সাহিত্যকর্ম আছে, সবই অন্য ভাষায় অনূদিত হওয়া প্রয়োজন। আমরা বহু ভাষাভাষী জাতি নই। বাংলা থেকে সরাসরি অন্য প্রধান ভাষাগুলোয় অনুবাদ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। ইদানীং স্প্যানিশ, হিন্দি, উর্দু, রুশ, ফরাসি ইত্যাদি ভাষায় দু-চারজন বাঙালি অনুবাদক কাজ করছেন। বহুভাষী লোকের সংখ্যা যত বাড়বে, তত বিভিন্ন বিদেশি ভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় কিংবা বাংলা থেকে সরাসরি বিদেশি ভাষায় অনুবাদের সংখ্যা বাড়বে।
উপন্যাস যেহেতু একটি জাতির সমাজ-সংস্কৃতি, নিত্যদিনের আচার-আচরণ, ব্যক্তি ও সমষ্টিকে সবচেয়ে বিশদভাবে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, সত্যনিষ্ঠভাবে প্রকাশ করে, সে জন্য আমাদের দেশে সব মহৎ উপন্যাসই বিদেশি ভাষায় অনূদিত হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের সাহিত্য ধরলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ থেকে শুরু করে হরিশংকর জলদাস, শহীদুল জহির, মামুন হুসাইন, জাকির তালুকদারসহ অপেক্ষাকৃত তরুণ ঔপন্যাসিকের রচনা অনূদিত হওয়া প্রয়োজন।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে অনেক বই অনূদিত হচ্ছে। এরপরও বিষয়ওয়ারি পরিমাণের দিক থেকে তা অপ্রতুল। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: আসলে বিষয়ওয়ারি আরও বেশি অনুবাদ করতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন। সোভিয়েত আমলে সোভিয়েত ইউনিয়নে যেমন প্রোগ্রেস পাবলিশার্সে একদল বেতনভোগী অনুবাদক রাশিয়ার সাহিত্য বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় নিয়মিত অনুবাদ করতেন, সে রকম আমাদের এখানেও বাংলা একাডেমি, মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুবাদ-সেল গঠন করে বিভিন্ন জনকে নিয়মিত অনুবাদের কাজে লাগালে হয়তো বেশিসংখ্যক অনূদিত পুস্তক পাওয়া যাবে—এসবের গুণগত মান যেন একেবারে যাচ্ছেতাই না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। যদিও যেকোনো সৃজনশীল লেখার মতো অনুবাদও মাসওয়ারি বেতনভোগী অনুবাদকের কলম থেকে বেরোলে তার মান সব সময় ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থার বিকল্প নেই, যদি অনুবাদের সংখ্যা বাড়াতে চাই। অনেক আবর্জনার মধ্য থেকেই মাঝে মাঝে দুর্লভ মণিমুক্তা পাওয়া যায়।
সম্প্রতি অনুবাদ বিষয়ে অনেক ধরনের সেমিনার হচ্ছে, পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, বর্ষসেরা অনূদিত বইয়ের নামও ঘোষণা করা হচ্ছে বাংলা অনুবাদ ফাউন্ডেশন ও পাঞ্জেরী প্রকাশনীর যৌথ প্রচেষ্টায়। দেশে প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক অনুবাদক সম্মেলনও হয়ে গেল ১০ ফেব্রুয়ারি। অনুবাদের কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশিত হচ্ছে। আজীবন সম্মাননা ইত্যাদি প্রবর্তন করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী হলে আমার বিশ্বাস, অনুবাদ সাহিত্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের মুখ দেখবে। বাংলা একাডেমি দীর্ঘদিন থেকেই অনুবাদ সাহিত্যে পুরস্কার দেওয়ার প্রথা চালু রেখেছে। এখন বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী অনুবাদ প্রকল্পও হাতে নিয়েছে, অনুবাদ কর্মশালার আয়োজন করছে। দেশে এখন অন্তত দুটো বেশ মানসম্মত অনুবাদ পত্রিকা বের হচ্ছে।
বাংলা একাডেমি স্বতন্ত্রভাবে ‘অনুবাদ পত্রিকা’ শীর্ষক জার্নাল বের করছে। বাংলা ট্রান্সলেশন আর পাঞ্জেরীর উদ্যোগে বের হচ্ছে ‘যুক্তস্বর’।এ ছাড়া আফ্রিকি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে বের হচ্ছে ‘আফ্রিকার আলো’, যা কেবল আফ্রিকার সাহিত্যিকদের লেখা অনুবাদ ও তাঁদের সম্পর্কে লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। অনুবাদের ইংরেজি পত্রিকা রয়েছে ‘বাংলা একাডেমি জার্নাল’ নামে। যদিও এসব পত্রিকার প্রকাশ বছরে একটি বা দুটি, তবু এগুলো মোটামুটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে আমি তো দেশে অনুবাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলই দেখি।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: আপনি কেন অনুবাদক হলেন? এর প্রস্তুতিটা কী রকম ছিল?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: কেন অনুবাদ করি? ভালো লাগে বলে করি। আসলে অনুবাদ তো সবকিছুই। মানুষ কি মৌলিক কিছু সৃষ্টি করতে পারে? মৌলিক স্রষ্টা হলো প্রকৃতি। প্রকৃতি প্রদত্ত নানা উপকরণ নিয়েই ‘মৌলিক’ লেখক কাজ করেন। তাঁর সামনে খোলা থাকে নানা পুস্তক—মানুষ, পশুপাখি, জল-জঙ্গলের জন্তু-জানোয়ার, নিসর্গ। এই সব বই থেকেই উপকরণ সংগ্রহ করে তিনি একটা বই লেখেন।
সে ক্ষেত্রে অনুবাদকের সামনে প্রধানত থাকে মাত্র একটি বই, যার লেখক সরাসরি প্রকৃতি নয়; বরং একজন মানুষ। এই একটি বইয়েরই তিনি যখন আরেকটি ভাষায়, আরেকটি সংস্কৃতিতে রূপান্তর ঘটান, সেটাকেই আমরা বলি অনুবাদ গ্রন্থ। এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় নানা পরিবর্তন ঘটে। ফলে মূল বইয়ের অনেক কিছুই পাল্টে গিয়ে একটা নতুন সাহিত্যকর্মই জন্মলাভ করে। এ জন্য একটি ‘সৃজনশীল’ লেখা এবং এর অনুবাদকর্মের সৃষ্টি-প্রক্রিয়ায় আমি আকাশ-পাতাল তফাত দেখি না। মূল লেখাটি অনুবাদের মাধ্যমে নবজীবন লাভ করে এবং এর পুনর্জন্ম হয়।
কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আটঘাট বেঁধে আমি অনুবাদে আসিনি। সহজাত প্রবণতা থেকেই মানুষ কোনো একটি শিল্পকর্মের দিকে ঝোঁকে। অন্য ভাষায় কিছু পড়ে ভালো লাগলে তা নিজের ভাষায় প্রকাশ করতে তো ইচ্ছে হতেই পারে। সেভাবেই মনে হয় আমার অনুবাদকাজের শুরু। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলাম বগুড়া শহরে। সেখানে এপ্রিল মাসে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গোলাবর্ষণ শুরু করলে শহর ছেড়ে লোকে গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে যায়। আমিও সে রকম পালিয়ে শহরের ৭ মাইল পূর্বে আমাদের এক পারিবারিক বন্ধুর বাসায় গিয়ে উঠি। সঙ্গে কী মনে করে যেন মিখাইল শলোখভের ‘আর্লি স্টোরিজ’ বইটা নিয়েছিলাম। পোড়াদহ গ্রামের এই আশ্রয়দাতার বাসার বাইরের বৈঠকখানায় বসে সম্ভবত ওই বই থেকে দু-একটা গল্প অনুবাদ করেছিলাম। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১৯৭০ সালে গ্রিক কবি কাভাফির ‘ইথাকা’ কবিতাটি অনুবাদ করেছিলাম বলে মনে পড়ে। এভাবে কোনো ঘটা না করে, বিশেষ প্রস্তুতি না নিয়েই অনুবাদের জগতে আমার প্রবেশ।
আজকের পত্রিকা: আমাদের দেশের অনুবাদের বর্তমান অবস্থাটা কেমন?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: আমাদের দেশে দুই দশক আগেও অনুবাদের তেমন মর্যাদা ছিল না। সামান্য যে দু-চারজন সৃজনশীল লেখক ছিলেন, তাঁরা নিজেদের লেখা অন্য ভাষায় অনূদিত হয়ে বিদেশি পাঠকদের কাছে পৌঁছাক, সেই প্রয়োজনীয়তা সেভাবে অনুভব করেননি। একধরনের অজ্ঞতা এবং আত্মম্ভরিতার বশেই তাঁরা অনুবাদশিল্পকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেননি। ফলে অনুবাদকেরাও একধরনের হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। কদর না থাকলে সে দেশে গুণীজন জন্মাবেন কী করে? কিন্তু দুই দশকে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বৃহত্তর পাঠক পেতে যে অনুবাদের বিকল্প নেই, দেরিতে হলেও এ কথা এখন সবাই বুঝতে পারছেন; বিশেষ করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যখন অনুবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন, তাতে সৃজনশীল লেখক, প্রকাশক সবাই এখন অনুবাদকর্মকে কিছুটা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন।
অবশ্যই একটা বাজে মৌলিক রচনার চেয়ে একটা ভালো অনুবাদ অনেক বেশি কাম্য। এখন প্রচুর বই বাংলায় অনূদিত হচ্ছে। তবে সমস্যা হলো, বাংলা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদের সংখ্যা কম। আমরা মূলত এক ভাষাভাষী বা দোভাষী জাতি। বাংলা ছাড়া ইংরেজিটা হয়তো কিছু লোকে জানে বা লিখতে পারে। কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনো ভাষার প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা নেই বললেই চলে।
তবে আশার কথা, ইদানীং কিছু ইউরোপীয় ভাষা, যেমন ফরাসি, স্প্যানিশ, রুশ ইত্যাদি ভাষায় কেউ কেউ বাংলা সাহিত্য অনুবাদ করছেন। ওই সব ভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় অনুবাদও হচ্ছে। এ ছাড়া উর্দু, ফারসি, হিন্দি থেকেও সরাসরি অনুবাদ হচ্ছে এবং বাংলা সাহিত্যও সরাসরি ওই সব ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। অনুবাদ করছেন অনেকেই। বেশ ঝরঝরে, সাবলীল অনুবাদও চোখে পড়ে। তবে তাদের সংখ্যা কম। এভাবে একটি ঐতিহ্য যখন সৃষ্টির পথে, তখন তো আশা করাই যায় যে আগামী কয়েক দশকে সংখ্যায় যেমন বাড়বে, তেমনি শিল্পগুণেও মিলবে উন্নত অনুবাদের সাক্ষাৎ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে অনুবাদের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে কী বলবেন?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: ভালো জিনিস সব সময়ই কম। এখানেও সৃষ্ট সাহিত্যের মতো অনুবাদের মান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ।বইমেলায় যে হাজার হাজার বই আসে তার কয়টি মানসম্মত? আগাছা, পরগাছা যেমন দ্রুত আগ্রাসী বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে ওঠে, সে রকম আমাদের সাহিত্য ও অনুবাদ সাহিত্য এবং সমাজ, রাজনীতি সবখানেই মানের চেয়ে সংখ্যার গুরুত্বই বেশি।
অনুবাদের নিম্নমান ছাড়াও যে ব্যাপারটি জঘন্যতর—অনেক ভারতীয় অনুবাদকের কাজ এ দেশের কিছু প্রকাশক এখানকার দু-চারজনের নামে দিব্যি চালিয়ে প্রকাশ করছেন। তাঁদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দু-একজন শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি প্রমুখের ধ্রুপদি সাহিত্য পশ্চিমবঙ্গে অনূদিত হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু কিছু অসাধু প্রকাশক সেগুলো বেমালুম এখানকার কারও কারও নাম ব্যবহার করে প্রকাশ করছেন। এমনকি আশির দশকে আমার অনূদিত ‘গালিভারের ভ্রমণকাহিনি’ও কয়েক বছর আগে দেখি মোহাম্মদ জিয়া নামে একজনের নাম ব্যবহার করে বাংলা বাজারের এক অজ্ঞাত প্রকাশক দিব্যি ছাপিয়ে বিক্রি করছেন। এখানকার অনুবাদের জগতে এ ব্যাপারটিও এক গর্হিত, দণ্ডনীয় অপরাধ।
আজকের পত্রিকা: ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে কোন সমস্যার মুখোমুখি হন? সমস্যাটা কী রকম?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো হয় তা মূলত ভাষাগত। ইংরেজি সিনট্যাক্স যেহেতু বাংলার মতো নয়, সে জন্য ইংরেজির অনেক দীর্ঘ বাক্য বাংলায় আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। সর্বনাম বা ‘প্রোনাউন’ ব্যবহার করে ইংরেজিতে বড় বড় বাক্য রচনা করা যায়, কিন্তু বাংলায় তা অনুবাদ করতে গেলে দীর্ঘ বাক্য ভেঙে দুটো কি তিনটি বাক্যে লিখতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে বাংলায় ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দের অভাব। বাংলার তুলনায় ইংরেজি সমৃদ্ধতর। ইংরেজিতে একটি শব্দে যা বোঝানো সম্ভব, বহু ক্ষেত্রে বাংলায় তা ব্যাখ্যা করে বলতে হয়।
এ ছাড়া একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন জনগোষ্ঠীর আচার-আচরণ, সংস্কার, বিশ্বাস-অবিশ্বাস ইত্যাদি বাংলা পাঠকের বোধগম্যতার কথা মাথায় রেখে অনুবাদ করতে হয়। লাখো ভাষার পাঠকের বোধগম্যতা নিশ্চিত করতে উৎস ভাষার সংস্কৃতির প্রতি সব সময় একনিষ্ঠ থাকা সম্ভব হয় না। যেকোনো ভাষার অনুবাদককে এই শ্যাম রাখি না কুল রাখির দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করেই কাজ করতে হয়।
আজকের পত্রিকা: বাংলা ভাষার কোন গ্রন্থগুলো অন্য ভাষায় অনুবাদ হওয়া দরকার বলে মনে করেন?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: বাংলা ভাষায় যত ধ্রুপদি সাহিত্যকর্ম আছে, সবই অন্য ভাষায় অনূদিত হওয়া প্রয়োজন। আমরা বহু ভাষাভাষী জাতি নই। বাংলা থেকে সরাসরি অন্য প্রধান ভাষাগুলোয় অনুবাদ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। ইদানীং স্প্যানিশ, হিন্দি, উর্দু, রুশ, ফরাসি ইত্যাদি ভাষায় দু-চারজন বাঙালি অনুবাদক কাজ করছেন। বহুভাষী লোকের সংখ্যা যত বাড়বে, তত বিভিন্ন বিদেশি ভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় কিংবা বাংলা থেকে সরাসরি বিদেশি ভাষায় অনুবাদের সংখ্যা বাড়বে।
উপন্যাস যেহেতু একটি জাতির সমাজ-সংস্কৃতি, নিত্যদিনের আচার-আচরণ, ব্যক্তি ও সমষ্টিকে সবচেয়ে বিশদভাবে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, সত্যনিষ্ঠভাবে প্রকাশ করে, সে জন্য আমাদের দেশে সব মহৎ উপন্যাসই বিদেশি ভাষায় অনূদিত হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের সাহিত্য ধরলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ থেকে শুরু করে হরিশংকর জলদাস, শহীদুল জহির, মামুন হুসাইন, জাকির তালুকদারসহ অপেক্ষাকৃত তরুণ ঔপন্যাসিকের রচনা অনূদিত হওয়া প্রয়োজন।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে অনেক বই অনূদিত হচ্ছে। এরপরও বিষয়ওয়ারি পরিমাণের দিক থেকে তা অপ্রতুল। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: আসলে বিষয়ওয়ারি আরও বেশি অনুবাদ করতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন। সোভিয়েত আমলে সোভিয়েত ইউনিয়নে যেমন প্রোগ্রেস পাবলিশার্সে একদল বেতনভোগী অনুবাদক রাশিয়ার সাহিত্য বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় নিয়মিত অনুবাদ করতেন, সে রকম আমাদের এখানেও বাংলা একাডেমি, মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুবাদ-সেল গঠন করে বিভিন্ন জনকে নিয়মিত অনুবাদের কাজে লাগালে হয়তো বেশিসংখ্যক অনূদিত পুস্তক পাওয়া যাবে—এসবের গুণগত মান যেন একেবারে যাচ্ছেতাই না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। যদিও যেকোনো সৃজনশীল লেখার মতো অনুবাদও মাসওয়ারি বেতনভোগী অনুবাদকের কলম থেকে বেরোলে তার মান সব সময় ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থার বিকল্প নেই, যদি অনুবাদের সংখ্যা বাড়াতে চাই। অনেক আবর্জনার মধ্য থেকেই মাঝে মাঝে দুর্লভ মণিমুক্তা পাওয়া যায়।
সম্প্রতি অনুবাদ বিষয়ে অনেক ধরনের সেমিনার হচ্ছে, পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, বর্ষসেরা অনূদিত বইয়ের নামও ঘোষণা করা হচ্ছে বাংলা অনুবাদ ফাউন্ডেশন ও পাঞ্জেরী প্রকাশনীর যৌথ প্রচেষ্টায়। দেশে প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক অনুবাদক সম্মেলনও হয়ে গেল ১০ ফেব্রুয়ারি। অনুবাদের কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশিত হচ্ছে। আজীবন সম্মাননা ইত্যাদি প্রবর্তন করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী হলে আমার বিশ্বাস, অনুবাদ সাহিত্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের মুখ দেখবে। বাংলা একাডেমি দীর্ঘদিন থেকেই অনুবাদ সাহিত্যে পুরস্কার দেওয়ার প্রথা চালু রেখেছে। এখন বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী অনুবাদ প্রকল্পও হাতে নিয়েছে, অনুবাদ কর্মশালার আয়োজন করছে। দেশে এখন অন্তত দুটো বেশ মানসম্মত অনুবাদ পত্রিকা বের হচ্ছে।
বাংলা একাডেমি স্বতন্ত্রভাবে ‘অনুবাদ পত্রিকা’ শীর্ষক জার্নাল বের করছে। বাংলা ট্রান্সলেশন আর পাঞ্জেরীর উদ্যোগে বের হচ্ছে ‘যুক্তস্বর’।এ ছাড়া আফ্রিকি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে বের হচ্ছে ‘আফ্রিকার আলো’, যা কেবল আফ্রিকার সাহিত্যিকদের লেখা অনুবাদ ও তাঁদের সম্পর্কে লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। অনুবাদের ইংরেজি পত্রিকা রয়েছে ‘বাংলা একাডেমি জার্নাল’ নামে। যদিও এসব পত্রিকার প্রকাশ বছরে একটি বা দুটি, তবু এগুলো মোটামুটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে আমি তো দেশে অনুবাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলই দেখি।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে