মহিউদ্দিন খান মোহন
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ঘর্মাক্ত বিএনপি হঠাৎ জড়িয়ে গেছে এক উটকো বিতর্কে। সেই বিতর্কের মূলে রয়েছেন ‘মিয়ান আরেফী’ ওরফে মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী নামের জনৈক ব্যক্তি। এই ব্যক্তি গত ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর বিএনপির অফিসে গিয়ে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, সংঘটিত ঘটনার বিবরণ ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
আরেফী বলেন, ‘র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছি, এখন পুলিশ-আনসারের বিরুদ্ধেও সেটা দেওয়া হবে।’ তিনি জানান, বাইডেনের সঙ্গে প্রতিদিন তাঁর অন্তত ১৫টি ‘টেক্সট মেসেজ’ আদান-প্রদান হয়। ‘৩ নভেম্বরের’ পরে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলেও আরেফী উল্লেখ করেন। তাঁর এ বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে যায়। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় সবাই।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ততোধিক ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রপ্রধানের একজন উপদেষ্টা আমাদের রাজধানীতে অবস্থান করছিলেন, অথচ আমরা রইলাম বে-খবর! যেখানে মার্কিন সরকারের সিকি-আধুলি মাপের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশে তাশরিফ আনলে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়, সেখানে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আস্ত একজন উপদেষ্টা নীরবে-নিভৃতে এ নগরীতেই ছিলেন, অথচ কেউ কিছু জানল না! বিষয়টি রহস্যময় নয় কি? যোগাযোগ করলাম যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আমার এক সুহৃদ সাংবাদিকের সঙ্গে।
অধিকতর বিস্ময়ের সঙ্গেই তিনি জানালেন, এই নামে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো উপদেষ্টার নাম তিনি কস্মিনকালেও শোনেননি। একটু রসিকতা করে বললেন, ‘এ খবর বাইডেন শুনলে তিনি নিজেও হয়তো অবাক হবেন এটা জেনে যে মিয়ান আরেফী নামে তাঁর একজন উপদেষ্টা আছেন!’
না, বাইডেন সাহেবের কিছু বলার প্রয়োজন হয়নি। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকার দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, এই নামে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো উপদেষ্টা নেই। মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতি অবিশ্বাস করার উপায় নেই। কেননা, এ ধরনের পদবিওয়ালা কেউ যদি বাংলাদেশে আসতেন তাহলে দূতাবাসের তা জানা থাকার কথা। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিবৃতির পর জনমনে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কে এই ব্যক্তি? কী তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বিএনপি অফিসে গমন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথনে লিপ্ত হওয়ার পেছনে?
এসব নিয়ে গুঞ্জনের একপর্যায়ে জানা গেল, আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। এই সেনা কর্মাকর্তা নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত। সর্বত্র গুঞ্জন ছিল সেনপ্রধানের পদটি করায়ত্ত করার অভিলাষে তিনি নানাভাবে সরকারপ্রধানের কৃপাদৃষ্টি লাভের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি তাঁর। আর তারপরই তিনি নানা বিতর্কিত তৎপরতায় লিপ্ত হন, যেগুলো সেনাবাহিনীর জন্য ছিল বিব্রতকর। এর মধ্যে নারীবিষয়ক কেচ্ছাকাহিনিও শোনা গেছে।
একপর্যায়ে সেনাসদর থেকে তাঁকে ‘পারসন ননগ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জানা মতে, লে. জে. সারওয়ার্দীর জন্য বাংলাদেশের সব সেনানিবাসের দরজা এখন পর্যন্ত বন্ধ। সেনা সদর তথা সরকার কর্তৃক অবাঞ্ছিত ঘোষিত ব্যক্তিটি কোন জাদুমন্ত্রের বলে ২৮ অক্টোবর অপরাহ্ণে বিএনপির কাছে পরম বাঞ্ছিত ব্যক্তি হয়ে গেলেন, সে রহস্য উদ্ঘাটন বোধকরি শার্লক হোমসের পক্ষেও অসম্ভব।
কার সঙ্গে কথা বলে, কার অনুমতি নিয়ে সারওয়ার্দী আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন, সে রহস্য উদ্ঘাটন প্রয়োজন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ঢাকার মার্কিন কূটনীতিকের বক্তব্যের পর টনক নড়ে অনেকেরই। পরদিন দুপুরে চুপিসারে বাংলাদেশ থেকে সটকে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী ব্যক্তিটি। ধরা পড়লেন বিমানবন্দরে। গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে এনে জমা দেয় ঢাকার পল্টন থানায়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শ্রীঘরে।
অন্যদিকে আরেফীর রাহবার সারওয়ার্দীও এখন পুলিশ হেফাজতে। গত ৩০ অক্টোবর তাঁকে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করে ১ অক্টোবর আদালতে হাজির করলে পুলিশের আবেদনে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে আরেফী ও সারওয়ার্দীর গ্রেপ্তারের পর বিএনপি পড়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। যদিও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাদের অফিশিয়াল কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছেন। আরেফীর সংবাদ সম্মেলনের সময় তাঁর ডান পাশে বসা ছিলেন ওয়ান-ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়াকে দল ও রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকা বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতা। হাসান সারওয়ার্দীও ছিলেন। আর আরেফী বিদায় নেওয়ার আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের সঙ্গে উষ্ণ করমর্দন করে হাসিমুখেই বিদায় নিয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজ অন্তত তাই বলে। এমনকি রিজভীকে আরেফীর সঙ্গে কিছুক্ষণ আন্তরিক আলাপ করতেও দেখা যায়। এ সময় পাশে দাঁড়ানো বিএনপি নেতা-কর্মীদের চোখে-মুখে ছিল পরিতৃপ্তির ছাপ; যেন এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণের মতো একটা বিশাল অর্জন তাঁরা করে ফেলেছেন। তাঁদের এই প্রশান্তি অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তার বিবৃতি এবং আরেফীর গ্রেপ্তারের পরই তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পুলিশ আরেফীর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে, তাতে আসামি করা হয়েছে হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাককে।
এদিকে আরেফী বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হয়েছেন লাঠি হাতে ও হুইলচেয়ার বসা অবস্থায়। পরে তাঁর একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, তাকে ভুল বুঝিয়ে বিএনপি অফিসে নেওয়া হয়েছিল এবং তিনি যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কথা হলো, আরেফী তো নাবালক নন যে অন্যের শেখানো কথা গলগল করে উগরে দেবেন। তা ছাড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবেই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন।
বিএনপির নেতারা এখন বলার চেষ্টা করছেন, তাঁরা আরেফীকে চেনেন না। কিন্তু তাতে কি ঘটনার দায় তাঁরা এড়াতে পারবেন? অপরিচিত একজন লোক এসে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বলে পরিচয় দিলেন, তারপর সংবাদ সম্মেলন করলেন, অথচ তাঁরা যাচাই করে দেখলেন না লোকটি আসলে কে! যেহেতু আমাদের দেশটি এখন বিদেশিদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র, তাই বিদেশি কোনো নাগরিক একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে যেতেই পারেন।
তবে, তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে সেখানে তাঁকে প্রবেশ এবং সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়। ঘটনার সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর তো জানা থাকার কথা, বিদেশি কোনো নাগরিকের একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে বসে সংবাদ সম্মেলন করা আইনবিরুদ্ধ এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। তিনি কেন তা করতে নিষেধ করলেন না?
ইশরাক না হয় রাজনীতিতে নিতান্তই নাবালক। ক্যামেরার সামনে এসে জনপরিচিতি অর্জনের একটি নেশা তাঁর থাকতেই পারে। কিন্তু রিজভী আহমেদ? তিনি তো একজন সিনিয়র নেতা। তিনি অফিসে উপস্থিত থাকতে এমন একটি ঘটনা কীভাবে ঘটল? আর কেউ না হোক, রিজভী আহমেদ তো আরেফীকে বলতে পারতেন, ‘আপনি এসেছেন, আমরা কৃতার্থ। সংবাদ সম্মেলন যদি করতেই হয়, আপনাদের দূতাবাসে গিয়ে করাই শ্রেয়।’ কিন্তু তিনি সেটা বলেননি। এটা কি তাঁর অজ্ঞতাজনিত ভুল, নাকি পরিস্থিতির কারণে হতবুদ্ধিতার ফল?
মোদ্দাকথা হলো, এ ঘটনায় বিএনপির ভাবমূর্তি অনেকখানি ক্ষুণ্ন হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে, যাঁদের কারণে বিএনপি আজ বিব্রতকর অবস্থায় পতিত, তাঁদের বিরুদ্ধে দলটি কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ঘর্মাক্ত বিএনপি হঠাৎ জড়িয়ে গেছে এক উটকো বিতর্কে। সেই বিতর্কের মূলে রয়েছেন ‘মিয়ান আরেফী’ ওরফে মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী নামের জনৈক ব্যক্তি। এই ব্যক্তি গত ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর বিএনপির অফিসে গিয়ে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, সংঘটিত ঘটনার বিবরণ ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
আরেফী বলেন, ‘র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছি, এখন পুলিশ-আনসারের বিরুদ্ধেও সেটা দেওয়া হবে।’ তিনি জানান, বাইডেনের সঙ্গে প্রতিদিন তাঁর অন্তত ১৫টি ‘টেক্সট মেসেজ’ আদান-প্রদান হয়। ‘৩ নভেম্বরের’ পরে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলেও আরেফী উল্লেখ করেন। তাঁর এ বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে যায়। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় সবাই।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ততোধিক ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রপ্রধানের একজন উপদেষ্টা আমাদের রাজধানীতে অবস্থান করছিলেন, অথচ আমরা রইলাম বে-খবর! যেখানে মার্কিন সরকারের সিকি-আধুলি মাপের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশে তাশরিফ আনলে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়, সেখানে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আস্ত একজন উপদেষ্টা নীরবে-নিভৃতে এ নগরীতেই ছিলেন, অথচ কেউ কিছু জানল না! বিষয়টি রহস্যময় নয় কি? যোগাযোগ করলাম যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আমার এক সুহৃদ সাংবাদিকের সঙ্গে।
অধিকতর বিস্ময়ের সঙ্গেই তিনি জানালেন, এই নামে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো উপদেষ্টার নাম তিনি কস্মিনকালেও শোনেননি। একটু রসিকতা করে বললেন, ‘এ খবর বাইডেন শুনলে তিনি নিজেও হয়তো অবাক হবেন এটা জেনে যে মিয়ান আরেফী নামে তাঁর একজন উপদেষ্টা আছেন!’
না, বাইডেন সাহেবের কিছু বলার প্রয়োজন হয়নি। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকার দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, এই নামে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো উপদেষ্টা নেই। মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতি অবিশ্বাস করার উপায় নেই। কেননা, এ ধরনের পদবিওয়ালা কেউ যদি বাংলাদেশে আসতেন তাহলে দূতাবাসের তা জানা থাকার কথা। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিবৃতির পর জনমনে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কে এই ব্যক্তি? কী তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বিএনপি অফিসে গমন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথনে লিপ্ত হওয়ার পেছনে?
এসব নিয়ে গুঞ্জনের একপর্যায়ে জানা গেল, আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। এই সেনা কর্মাকর্তা নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত। সর্বত্র গুঞ্জন ছিল সেনপ্রধানের পদটি করায়ত্ত করার অভিলাষে তিনি নানাভাবে সরকারপ্রধানের কৃপাদৃষ্টি লাভের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি তাঁর। আর তারপরই তিনি নানা বিতর্কিত তৎপরতায় লিপ্ত হন, যেগুলো সেনাবাহিনীর জন্য ছিল বিব্রতকর। এর মধ্যে নারীবিষয়ক কেচ্ছাকাহিনিও শোনা গেছে।
একপর্যায়ে সেনাসদর থেকে তাঁকে ‘পারসন ননগ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জানা মতে, লে. জে. সারওয়ার্দীর জন্য বাংলাদেশের সব সেনানিবাসের দরজা এখন পর্যন্ত বন্ধ। সেনা সদর তথা সরকার কর্তৃক অবাঞ্ছিত ঘোষিত ব্যক্তিটি কোন জাদুমন্ত্রের বলে ২৮ অক্টোবর অপরাহ্ণে বিএনপির কাছে পরম বাঞ্ছিত ব্যক্তি হয়ে গেলেন, সে রহস্য উদ্ঘাটন বোধকরি শার্লক হোমসের পক্ষেও অসম্ভব।
কার সঙ্গে কথা বলে, কার অনুমতি নিয়ে সারওয়ার্দী আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন, সে রহস্য উদ্ঘাটন প্রয়োজন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ঢাকার মার্কিন কূটনীতিকের বক্তব্যের পর টনক নড়ে অনেকেরই। পরদিন দুপুরে চুপিসারে বাংলাদেশ থেকে সটকে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী ব্যক্তিটি। ধরা পড়লেন বিমানবন্দরে। গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে এনে জমা দেয় ঢাকার পল্টন থানায়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শ্রীঘরে।
অন্যদিকে আরেফীর রাহবার সারওয়ার্দীও এখন পুলিশ হেফাজতে। গত ৩০ অক্টোবর তাঁকে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করে ১ অক্টোবর আদালতে হাজির করলে পুলিশের আবেদনে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে আরেফী ও সারওয়ার্দীর গ্রেপ্তারের পর বিএনপি পড়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। যদিও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাদের অফিশিয়াল কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছেন। আরেফীর সংবাদ সম্মেলনের সময় তাঁর ডান পাশে বসা ছিলেন ওয়ান-ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়াকে দল ও রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকা বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতা। হাসান সারওয়ার্দীও ছিলেন। আর আরেফী বিদায় নেওয়ার আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের সঙ্গে উষ্ণ করমর্দন করে হাসিমুখেই বিদায় নিয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজ অন্তত তাই বলে। এমনকি রিজভীকে আরেফীর সঙ্গে কিছুক্ষণ আন্তরিক আলাপ করতেও দেখা যায়। এ সময় পাশে দাঁড়ানো বিএনপি নেতা-কর্মীদের চোখে-মুখে ছিল পরিতৃপ্তির ছাপ; যেন এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণের মতো একটা বিশাল অর্জন তাঁরা করে ফেলেছেন। তাঁদের এই প্রশান্তি অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তার বিবৃতি এবং আরেফীর গ্রেপ্তারের পরই তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পুলিশ আরেফীর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে, তাতে আসামি করা হয়েছে হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাককে।
এদিকে আরেফী বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হয়েছেন লাঠি হাতে ও হুইলচেয়ার বসা অবস্থায়। পরে তাঁর একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, তাকে ভুল বুঝিয়ে বিএনপি অফিসে নেওয়া হয়েছিল এবং তিনি যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কথা হলো, আরেফী তো নাবালক নন যে অন্যের শেখানো কথা গলগল করে উগরে দেবেন। তা ছাড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবেই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন।
বিএনপির নেতারা এখন বলার চেষ্টা করছেন, তাঁরা আরেফীকে চেনেন না। কিন্তু তাতে কি ঘটনার দায় তাঁরা এড়াতে পারবেন? অপরিচিত একজন লোক এসে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বলে পরিচয় দিলেন, তারপর সংবাদ সম্মেলন করলেন, অথচ তাঁরা যাচাই করে দেখলেন না লোকটি আসলে কে! যেহেতু আমাদের দেশটি এখন বিদেশিদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র, তাই বিদেশি কোনো নাগরিক একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে যেতেই পারেন।
তবে, তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে সেখানে তাঁকে প্রবেশ এবং সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়। ঘটনার সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর তো জানা থাকার কথা, বিদেশি কোনো নাগরিকের একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে বসে সংবাদ সম্মেলন করা আইনবিরুদ্ধ এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। তিনি কেন তা করতে নিষেধ করলেন না?
ইশরাক না হয় রাজনীতিতে নিতান্তই নাবালক। ক্যামেরার সামনে এসে জনপরিচিতি অর্জনের একটি নেশা তাঁর থাকতেই পারে। কিন্তু রিজভী আহমেদ? তিনি তো একজন সিনিয়র নেতা। তিনি অফিসে উপস্থিত থাকতে এমন একটি ঘটনা কীভাবে ঘটল? আর কেউ না হোক, রিজভী আহমেদ তো আরেফীকে বলতে পারতেন, ‘আপনি এসেছেন, আমরা কৃতার্থ। সংবাদ সম্মেলন যদি করতেই হয়, আপনাদের দূতাবাসে গিয়ে করাই শ্রেয়।’ কিন্তু তিনি সেটা বলেননি। এটা কি তাঁর অজ্ঞতাজনিত ভুল, নাকি পরিস্থিতির কারণে হতবুদ্ধিতার ফল?
মোদ্দাকথা হলো, এ ঘটনায় বিএনপির ভাবমূর্তি অনেকখানি ক্ষুণ্ন হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে, যাঁদের কারণে বিএনপি আজ বিব্রতকর অবস্থায় পতিত, তাঁদের বিরুদ্ধে দলটি কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
১১ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
১১ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
১১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১২ ঘণ্টা আগে