আমীন আল রশীদ
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের পেছনে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ যে অনেকখানি দায়ী, সে বিষয়ে দ্বিমতের সুযোগ কম। কেননা এই অনুচ্ছেদ সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে এতটাই ক্ষমতাবান করেছে যে দৃশ্যত ‘রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাঁহাকে প্রদত্ত ও তাঁহার উপর অর্পিত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করিবেন’ বলা হলেও কার্যত প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিরঙ্কুশ। উপরন্তু, অর্থাৎ একটানা হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য কোনো মেয়াদের সীমারেখা নেই; অর্থাৎ নির্বাচিত হলে তিনি আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন।
বস্তুত সংবিধানের এ ধারাগুলোই একজন সরকারপ্রধানকে একনায়ক ও স্বৈরাচারী হতে সহায়তা করে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রপতি পদের মতোই প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া তথা একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না—এমন বিধান যুক্ত করার দাবি আছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরে সংসদীয় পদ্ধতি চালুর প্রাক্কালে সংবিধানের যে ১২তম সংশোধনী আনা হয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এতটাই নিরঙ্কুশ করা হয় যে পুরো রাষ্ট্র ও সরকারকাঠামোয় রাষ্ট্রপতিকে মূলত একটি আলংকারিক পদে পরিণত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার বাইরে কোনো নীতি-নির্ধারণে আদতে তাঁর করার কিছুই নেই। অথচ ওই সময়ে যদি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য রাখার একটি বিধান যুক্ত করা হতো, তাহলে পরবর্তীকালে দেশে যেসব রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল, তার অনেকগুলোই এড়ানো যেত বলে মনে করা হয়।
সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ বলছে, কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁর অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। এই বিধান পড়ে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। কেননা নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানই যে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটিই স্বীকৃত। রাষ্ট্রপতির পক্ষে এখানে অন্যথা করার সুযোগ নেই। প্রধান বিচারপতি কে হবেন, কার্যত সেটিও রাষ্ট্রপতি ঠিক করেন না। কারণ প্রধান বিচারপতি কে হবেন, সেটি নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার না হলেও এটি অনেক বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। উচ্চ আদালতের বিচারকেরা যে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান, সেটিও ওপেন সিক্রেট।
কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করা বা কারও সাজা মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে, সেখানেও তিনি স্বাধীন নন; বরং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই তিনি কাউকে ক্ষমা করেন।
জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেন, সেটিও মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হতে হয়; অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগ তাঁকে যেরূপ কথা বলার অনুমতি দেবেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কেবল ততটুকুই বলবেন।
সাধারণ বিলের ব্যাপারে মতামত দিতে পারলেও অর্থবিলে রাষ্ট্রপতি কোনো ধরনের মতামত বা পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করে সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন না। সংসদ যা পাস করবে, রাষ্ট্রপতি তাতেই সই দিতে বাধ্য। এমনকি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করতে হলেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হয়।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কারণে বিগত দিনে কোনো সংসদই সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কমানো, তাঁর পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ করা এবং একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয়প্রধান না হওয়ার পথ বন্ধ করেনি। এ রকম বিধান থাকলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারতেন না। আর যখন কোনো ব্যক্তি বুঝতে পারেন যে তাঁর পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ; তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না বা সংসদ নেতাও হতে পারবেন না—তখন তাঁর মধ্যে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার মানসিকতা তৈরি হয় না। পদ্ধতিগত কারণেও তাঁর পক্ষে স্বেচ্ছাচারী হওয়া সম্ভব নয়।
কারণ ক্ষমতা একজনের হাতে থাকে না। এখন যেমন একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা, দলীয় প্রধান এবং কার্যত রাষ্ট্রপতিও—ফলে তাঁর পক্ষে যা খুশি করা সম্ভব। তিনি চাইলে সংসদে যেকোনো বিল পাস করতে পারেন। যেকোনো আইন বাতিল করতে পারেন। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে খবরদারি করতে পারেন। কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান আলাদা ব্যক্তি—তখন আর একজনের হাতে সব ক্ষমতা নেই। তখন প্রধানমন্ত্রী চাইলেও যেকোনো বিল পাস করাতে পারবেন না। দলীয় প্রধান চাইলেও সংসদে বা প্রশাসনের যেকোনো স্তরে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারবেন না।
সুতরাং এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেই বোঝা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তির অনির্ধারিত কালের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকা এবং একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হলে; রাষ্ট্রপতিকে একটি আলংকারিক পদ হিসেবে রেখে তাঁর ক্ষমতাটিও প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে কোনো শাসকের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার পথ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
অতএব জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধনের ক্ষমতা তাদের হাতে না থাকলেও যেহেতু এই অভ্যুত্থানের নায়ক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেই রাষ্ট্র সংস্কারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে; যেহেতু তাঁরা মনে করেন যে বিদ্যমান ব্যবস্থায় একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন দেশ গঠন করা সম্ভব নয়—অতএব রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তনের এটিই বিরাট সুযোগ; অর্থাৎ নির্বাচন ও সংবিধান ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যখন আলোচনা বা সংলাপ শুরু করবে, তখন সেখানে অবশ্যই সংবিধানের এই বিধান পরিবর্তন করে রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের বিষয়গুলো তুলতে হবে।
নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের কাছ থেকে এই পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহারেও এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ঘোষণা থাকতে হবে যে, তারা ক্ষমতায় গেলে একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হওয়ার পথ বন্ধ করবে এবং পরপর হোক বা না হোক, একজন ব্যক্তি কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রপতি পদের মতো দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এটি নিশ্চিত করা গেলে ক্ষমতার প্রতি মানুষের মোহ কমবে এবং রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ক্ষমতার রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে। ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার রাশ টেনে ধরতে না পারলে জনগণের পক্ষে সত্যিকার অর্থে ‘রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক’ হওয়া সম্ভব নয়।
আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও লেখক
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের পেছনে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ যে অনেকখানি দায়ী, সে বিষয়ে দ্বিমতের সুযোগ কম। কেননা এই অনুচ্ছেদ সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে এতটাই ক্ষমতাবান করেছে যে দৃশ্যত ‘রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাঁহাকে প্রদত্ত ও তাঁহার উপর অর্পিত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করিবেন’ বলা হলেও কার্যত প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিরঙ্কুশ। উপরন্তু, অর্থাৎ একটানা হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য কোনো মেয়াদের সীমারেখা নেই; অর্থাৎ নির্বাচিত হলে তিনি আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন।
বস্তুত সংবিধানের এ ধারাগুলোই একজন সরকারপ্রধানকে একনায়ক ও স্বৈরাচারী হতে সহায়তা করে। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রপতি পদের মতোই প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া তথা একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না—এমন বিধান যুক্ত করার দাবি আছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরে সংসদীয় পদ্ধতি চালুর প্রাক্কালে সংবিধানের যে ১২তম সংশোধনী আনা হয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এতটাই নিরঙ্কুশ করা হয় যে পুরো রাষ্ট্র ও সরকারকাঠামোয় রাষ্ট্রপতিকে মূলত একটি আলংকারিক পদে পরিণত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার বাইরে কোনো নীতি-নির্ধারণে আদতে তাঁর করার কিছুই নেই। অথচ ওই সময়ে যদি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য রাখার একটি বিধান যুক্ত করা হতো, তাহলে পরবর্তীকালে দেশে যেসব রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল, তার অনেকগুলোই এড়ানো যেত বলে মনে করা হয়।
সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ বলছে, কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁর অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। এই বিধান পড়ে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। কেননা নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানই যে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটিই স্বীকৃত। রাষ্ট্রপতির পক্ষে এখানে অন্যথা করার সুযোগ নেই। প্রধান বিচারপতি কে হবেন, কার্যত সেটিও রাষ্ট্রপতি ঠিক করেন না। কারণ প্রধান বিচারপতি কে হবেন, সেটি নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার না হলেও এটি অনেক বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। উচ্চ আদালতের বিচারকেরা যে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান, সেটিও ওপেন সিক্রেট।
কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করা বা কারও সাজা মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে, সেখানেও তিনি স্বাধীন নন; বরং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই তিনি কাউকে ক্ষমা করেন।
জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেন, সেটিও মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হতে হয়; অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগ তাঁকে যেরূপ কথা বলার অনুমতি দেবেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কেবল ততটুকুই বলবেন।
সাধারণ বিলের ব্যাপারে মতামত দিতে পারলেও অর্থবিলে রাষ্ট্রপতি কোনো ধরনের মতামত বা পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করে সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন না। সংসদ যা পাস করবে, রাষ্ট্রপতি তাতেই সই দিতে বাধ্য। এমনকি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করতে হলেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হয়।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কারণে বিগত দিনে কোনো সংসদই সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কমানো, তাঁর পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ করা এবং একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয়প্রধান না হওয়ার পথ বন্ধ করেনি। এ রকম বিধান থাকলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারতেন না। আর যখন কোনো ব্যক্তি বুঝতে পারেন যে তাঁর পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ; তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না বা সংসদ নেতাও হতে পারবেন না—তখন তাঁর মধ্যে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার মানসিকতা তৈরি হয় না। পদ্ধতিগত কারণেও তাঁর পক্ষে স্বেচ্ছাচারী হওয়া সম্ভব নয়।
কারণ ক্ষমতা একজনের হাতে থাকে না। এখন যেমন একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা, দলীয় প্রধান এবং কার্যত রাষ্ট্রপতিও—ফলে তাঁর পক্ষে যা খুশি করা সম্ভব। তিনি চাইলে সংসদে যেকোনো বিল পাস করতে পারেন। যেকোনো আইন বাতিল করতে পারেন। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে খবরদারি করতে পারেন। কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান আলাদা ব্যক্তি—তখন আর একজনের হাতে সব ক্ষমতা নেই। তখন প্রধানমন্ত্রী চাইলেও যেকোনো বিল পাস করাতে পারবেন না। দলীয় প্রধান চাইলেও সংসদে বা প্রশাসনের যেকোনো স্তরে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারবেন না।
সুতরাং এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেই বোঝা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তির অনির্ধারিত কালের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকা এবং একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হলে; রাষ্ট্রপতিকে একটি আলংকারিক পদ হিসেবে রেখে তাঁর ক্ষমতাটিও প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে কোনো শাসকের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার পথ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
অতএব জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধনের ক্ষমতা তাদের হাতে না থাকলেও যেহেতু এই অভ্যুত্থানের নায়ক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেই রাষ্ট্র সংস্কারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে; যেহেতু তাঁরা মনে করেন যে বিদ্যমান ব্যবস্থায় একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন দেশ গঠন করা সম্ভব নয়—অতএব রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তনের এটিই বিরাট সুযোগ; অর্থাৎ নির্বাচন ও সংবিধান ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যখন আলোচনা বা সংলাপ শুরু করবে, তখন সেখানে অবশ্যই সংবিধানের এই বিধান পরিবর্তন করে রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের বিষয়গুলো তুলতে হবে।
নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের কাছ থেকে এই পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহারেও এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ঘোষণা থাকতে হবে যে, তারা ক্ষমতায় গেলে একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হওয়ার পথ বন্ধ করবে এবং পরপর হোক বা না হোক, একজন ব্যক্তি কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রপতি পদের মতো দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এটি নিশ্চিত করা গেলে ক্ষমতার প্রতি মানুষের মোহ কমবে এবং রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ক্ষমতার রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে। ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার রাশ টেনে ধরতে না পারলে জনগণের পক্ষে সত্যিকার অর্থে ‘রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক’ হওয়া সম্ভব নয়।
আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে