নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জ্বালানি-সংকটের কারণে দেশব্যাপী এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক স্থানে দিনে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। জেলা-উপজেলায় লোডশেডিং হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এর কারণ হিসেবে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জানিয়েছে, তাদের চাহিদার তুলনায় তিন হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবিএল) ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার গতকাল যে হিসাব দিয়েছে, তাতে লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘাটতি ও লোডশেডিং নিয়ে পিজিসিবিএল যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে রয়েছে নানা গরমিল। গতকাল সংস্থাটির অফিশিয়াল পেজে দেওয়া তথ্যমতে, সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৩৬৫ মেগাওয়াট। তবে পিজিসিবিএল থেকে বিভিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে দেওয়া তথ্য বলছে, গতকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৪১ মেগাওয়াট। আর দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি আছে ৩ হাজার ৩৫৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ ঘাটতি যে ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, সে তথ্য জানিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলোও। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমির আলী লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার এলাকায় এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পর গতকাল (বুধবার) বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ৭৮০ মেগাওয়াট। সে কারণে রাতে কোনো না কোনো এলাকায় লোডশেডিং করতেই হবে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে লোডশেডিংয়ের নিয়ম মানা কঠিন হয়ে পড়ছে।’
আরেক বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসির এলাকায়ও দুই দিন ধরে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পরও প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার হচ্ছে। কিন্তু গতকাল সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বিদ্যুৎ সরবরাহ ১০০ মেগাওয়াট কম ছিল।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট কম পাচ্ছি। এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পরও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে, সে কারণে অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’
৩ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড
দেশের মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের ৮৩ শতাংশই বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) অধীনে। তাঁরা চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছেন প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা আছে ৮ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট।’
বিআরইবি একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানান, বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তেরও অনেক আগেই দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো কোনো জায়গায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
লোডশেডিং পরিস্থিতি জানতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (বিতরণ ও পরিচালন) দেবাশীষ চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখন মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা নিষেধ আছে।’
দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের বেহাল চিত্র উঠে এসেছে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের তাঁদের পাঠানো প্রতিবেদনে। এতে দেখা গেছে, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোর শিল্পোৎপাদন, উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে বাড়তি খরচ, শঙ্কায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
খামখেয়ালির লোডশেডিং নারায়ণগঞ্জে
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নগরীতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের জন্য ডিপিডিসি থেকে সময়সূচি দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত এবং ঘোষিত সময়ের বদলে অন্য সময় লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। এতে করে পূর্বনির্ধারিত লোডশেডিংয়ের জন্য যে প্রস্তুতি নগরবাসী রেখেছিলেন, তা অনেকাংশেই পূরণ হচ্ছে না।
চাষাঢ়া রামবাবুর পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফারহানা বলেন, ডিপিডিসির সময়সূচিতে রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত লোডশেডিং করার কথা। কিন্তু গত দুই দিন দুপুর ২টা থেকে ৩টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই দফায় লোডশেডিং হয়েছে।
শিল্পকারখানার অবস্থা খারাপ গাজীপুরে
গাজীপুর স্প্যারো অ্যাপারেলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ফজলুল হক বলেন, শিডিউল অনুযায়ী তিনবার লোডশেডিং হওয়ার কথা। কিন্তু চারবার বা তার বেশি লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবার এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টার বেশি হয়ে যাচ্ছে।
‘কারখানা সকাল ৮টায় চালু হওয়ার পর ১০টায় লোডশেডিং দেওয়া হয়। তখন হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত থাকে। বিভিন্ন মেশিনারিজ চালু থাকে। এমন অবস্থায় কারখানার ভেতরে শ্রমিক রেখে আমি লোডশেডিংয়ে বসে থাকলে কোনোভাবেই শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ অথবা উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হবে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে ডিজেল দিয়ে বিকল্প উপায়ে উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে।’
এ কারণে দৈনিক প্রায় ৭ লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে, যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি।
৩-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং দিনাজপুরে
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে শহরে লোডশেডিং হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত। সুইহারী এলাকার গৃহিণী সুমি আক্তার বলেন, ‘এই গরমে বাচ্চাদের নিয়ে খুব মুশকিলে পড়েছি। দিন রাতে হুটহাট করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বাচ্চারা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছে না। রান্নাবান্নাসহ বাড়ির কাজকর্ম কোনো কিছুই ঠিকমতো করতে পারছি না।’
শহরের মুন্সিপাড়ার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক ইসলাম উদ্দীন আহমেদ জানান, একে তো রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ, তার ওপর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে খুব বিপাকে আছি।’
মনমতো চলছে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের গৃহিণী উম্মে কুলসুম বলেন, গ্রামগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে তাদের মনমতো লোডশেডিং করে চলছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে চলে যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য। এখন যে দাবদাহ, গরমের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে বড়-ছোট সবাই।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিরাজদিখান জোনাল অফিসের ডিজিএম খন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘যতটুকু বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাই, ততটুকুর মধ্যেই চালাতে হয়। চাহিদা আছে ১৮ মেগাওয়াট, ৯-১০ মেগাওয়াট দিয়ে কন্ট্রোল করতে বলে। কীভাবে সম্ভব?’
কিঞ্চিৎ ভিন্ন চিত্র
সারা দেশের লোডশেডিংয়ের মধ্যেও থেমে নেই ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শিল্পোৎপাদন। কারণ, তারা নিজেদের পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের উৎপাদিত চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করে থাকে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন বেপজার অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক শরিফুল ইসলাম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ডিইপিজেডে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা আছে। নিজেদের চাহিদা আছে ৪০-৫০ মেগাওয়াট। বাকিটা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এমনকি বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ জাতীয়ে গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে রাতে কিছু কারখানা খোলা থাকলে হয়তো ৮-১০ মেগাওয়াট নিজেদেরও প্রয়োজন হয়।
জ্বালানি-সংকটের কারণে দেশব্যাপী এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক স্থানে দিনে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। জেলা-উপজেলায় লোডশেডিং হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এর কারণ হিসেবে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জানিয়েছে, তাদের চাহিদার তুলনায় তিন হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবিএল) ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার গতকাল যে হিসাব দিয়েছে, তাতে লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘাটতি ও লোডশেডিং নিয়ে পিজিসিবিএল যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে রয়েছে নানা গরমিল। গতকাল সংস্থাটির অফিশিয়াল পেজে দেওয়া তথ্যমতে, সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৩৬৫ মেগাওয়াট। তবে পিজিসিবিএল থেকে বিভিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে দেওয়া তথ্য বলছে, গতকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৪১ মেগাওয়াট। আর দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি আছে ৩ হাজার ৩৫৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ ঘাটতি যে ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, সে তথ্য জানিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলোও। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমির আলী লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার এলাকায় এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পর গতকাল (বুধবার) বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ৭৮০ মেগাওয়াট। সে কারণে রাতে কোনো না কোনো এলাকায় লোডশেডিং করতেই হবে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে লোডশেডিংয়ের নিয়ম মানা কঠিন হয়ে পড়ছে।’
আরেক বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসির এলাকায়ও দুই দিন ধরে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পরও প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার হচ্ছে। কিন্তু গতকাল সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বিদ্যুৎ সরবরাহ ১০০ মেগাওয়াট কম ছিল।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট কম পাচ্ছি। এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পরও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে, সে কারণে অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’
৩ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড
দেশের মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের ৮৩ শতাংশই বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) অধীনে। তাঁরা চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছেন প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা আছে ৮ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট।’
বিআরইবি একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানান, বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তেরও অনেক আগেই দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো কোনো জায়গায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
লোডশেডিং পরিস্থিতি জানতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (বিতরণ ও পরিচালন) দেবাশীষ চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখন মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা নিষেধ আছে।’
দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের বেহাল চিত্র উঠে এসেছে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের তাঁদের পাঠানো প্রতিবেদনে। এতে দেখা গেছে, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় দিনে কমপক্ষে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোর শিল্পোৎপাদন, উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে বাড়তি খরচ, শঙ্কায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
খামখেয়ালির লোডশেডিং নারায়ণগঞ্জে
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নগরীতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের জন্য ডিপিডিসি থেকে সময়সূচি দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত এবং ঘোষিত সময়ের বদলে অন্য সময় লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। এতে করে পূর্বনির্ধারিত লোডশেডিংয়ের জন্য যে প্রস্তুতি নগরবাসী রেখেছিলেন, তা অনেকাংশেই পূরণ হচ্ছে না।
চাষাঢ়া রামবাবুর পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফারহানা বলেন, ডিপিডিসির সময়সূচিতে রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত লোডশেডিং করার কথা। কিন্তু গত দুই দিন দুপুর ২টা থেকে ৩টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই দফায় লোডশেডিং হয়েছে।
শিল্পকারখানার অবস্থা খারাপ গাজীপুরে
গাজীপুর স্প্যারো অ্যাপারেলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ফজলুল হক বলেন, শিডিউল অনুযায়ী তিনবার লোডশেডিং হওয়ার কথা। কিন্তু চারবার বা তার বেশি লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবার এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টার বেশি হয়ে যাচ্ছে।
‘কারখানা সকাল ৮টায় চালু হওয়ার পর ১০টায় লোডশেডিং দেওয়া হয়। তখন হাজার হাজার শ্রমিক কর্মরত থাকে। বিভিন্ন মেশিনারিজ চালু থাকে। এমন অবস্থায় কারখানার ভেতরে শ্রমিক রেখে আমি লোডশেডিংয়ে বসে থাকলে কোনোভাবেই শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ অথবা উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হবে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে ডিজেল দিয়ে বিকল্প উপায়ে উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে।’
এ কারণে দৈনিক প্রায় ৭ লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে, যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি।
৩-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং দিনাজপুরে
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে শহরে লোডশেডিং হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত। সুইহারী এলাকার গৃহিণী সুমি আক্তার বলেন, ‘এই গরমে বাচ্চাদের নিয়ে খুব মুশকিলে পড়েছি। দিন রাতে হুটহাট করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বাচ্চারা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছে না। রান্নাবান্নাসহ বাড়ির কাজকর্ম কোনো কিছুই ঠিকমতো করতে পারছি না।’
শহরের মুন্সিপাড়ার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক ইসলাম উদ্দীন আহমেদ জানান, একে তো রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ, তার ওপর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে খুব বিপাকে আছি।’
মনমতো চলছে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের গৃহিণী উম্মে কুলসুম বলেন, গ্রামগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে তাদের মনমতো লোডশেডিং করে চলছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে চলে যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য। এখন যে দাবদাহ, গরমের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে বড়-ছোট সবাই।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিরাজদিখান জোনাল অফিসের ডিজিএম খন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘যতটুকু বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাই, ততটুকুর মধ্যেই চালাতে হয়। চাহিদা আছে ১৮ মেগাওয়াট, ৯-১০ মেগাওয়াট দিয়ে কন্ট্রোল করতে বলে। কীভাবে সম্ভব?’
কিঞ্চিৎ ভিন্ন চিত্র
সারা দেশের লোডশেডিংয়ের মধ্যেও থেমে নেই ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শিল্পোৎপাদন। কারণ, তারা নিজেদের পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের উৎপাদিত চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করে থাকে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন বেপজার অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক শরিফুল ইসলাম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ডিইপিজেডে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা আছে। নিজেদের চাহিদা আছে ৪০-৫০ মেগাওয়াট। বাকিটা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এমনকি বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ জাতীয়ে গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে রাতে কিছু কারখানা খোলা থাকলে হয়তো ৮-১০ মেগাওয়াট নিজেদেরও প্রয়োজন হয়।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে