জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
হিন্দু কাকে বলা হয়? সিন্ধুতীরে যারা বসবাস করত, তারাই ছিল হিন্দু। প্রাচীনকালে হিন্দুধর্ম বলে কোনো ধর্ম ছিল না। এ দেশের আদিম অধিবাসীরা কৌম ধর্ম পালন করত। পরে এসেছিল জৈনধর্ম, আজীবিকধর্ম, বৌদ্ধধর্ম। এরপর এসেছিল ব্রাহ্মণ্যধর্ম। তাহলে হিন্দুধর্মটা কী?
আগেই বলেছি, হিন্দু শব্দটি এসেছে সিন্ধু থেকে। এ দেশে যে মুসলমানরা এসেছিলেন, তাঁদের মাতৃভাষা যা-ই হোক না কেন, তাঁদের রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসি। ফারসি ভাষার একটা মজা আছে। এ ভাষায় ‘স’ নেই, আছে ‘হ’। তাই সিন্ধু শব্দটি তাঁদের ভাষায় হয়ে গেল হিন্দু। অহমিয়া ভাষায়ও কিন্তু একই নিয়ম খাটে। আমরা বাংলায় বলি ‘আসাম’, কিন্তু অহমিয়া ভাষায় তা ‘অহম’। আমরা যে ফারসি ভাষার কথা বলছি, সেটা কিন্তু পারস্যে ‘পারসি’ ভাষা। কিন্তু আরবদের উচ্চারণে ‘প’ নেই। তারা পারসিকে উচ্চারণ করে ‘ফারসি’।
তাহলে সিন্ধু নদের তীরে যারা বসবাস করত, তারা হলো হিন্দু; হিন্দুস্তান বলতে শুরুতে বোঝানো হতো উত্তর ভারতকে, পরে সমগ্র ভারতবর্ষই পরিচিত হয় এই নামে। আর ইন্ডিয়া শব্দটিরও সৃষ্টি এই উচ্চারণের ঘেরাটোপেই। ইন্ডিয়া শব্দটিও এসেছে সিন্ধু শব্দ থেকে। গ্রিক ভাষায় সিন্ধু হয়ে গেছে ইন্দু। ইন্দু থেকেই এসেছে ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান।
মজা আরও আছে। এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন মুসলমান হয়ে গেল, তখন হিন্দু বলতে এই মুসলমানদের বোঝানো হতো না। হিন্দু তখন একটি বিশেষ সংস্কৃতির ধারকদের পরিচয়। একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়। এ দেশের সব লোককে বোঝানো হতো হিন্দুস্তানি শব্দটি দিয়ে। অর্থাৎ মুসলমান ব্যক্তিটিও হিন্দুস্তানি মুসলমান। পরে হিন্দু-মুসলমান একেবারে রাজনৈতিকভাবে দুটি পরস্পর-বিবদমান সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে, যার আলোচনা এখানে নয়।
বিবাদের কথা বলার আগে সে সময়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বণ্টনের বিষয়টি বলা দরকার। নইলে বোঝা যাবে না, কেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা অগ্রসর মানুষ হিসেবে কোম্পানির শাসনামলেও এগিয়ে থাকল।
মধ্যযুগে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল—এমনটা বলা যাবে না। কিন্তু দীর্ঘদিন পাশাপাশি বসবাসের কারণে একধরনের সম্পর্ক তো গড়ে উঠেছিলই। হিন্দু অভিজাতেরা নিজ স্বার্থেই মুসলমান শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। মুসলমান শাসকেরাও নিজ স্বার্থে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত করেছিলেন। রাজকার্য পরিচালনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ, জালালুদ্দিন, রুকনদ্দিন বরবক শাহ, আলাউদ্দিন হোসেন শাহসহ বহু সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন।
শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের প্রধান উজির ছিলেন জগদানন্দ ভাদুড়ি। জালালুদ্দিনের মন্ত্রী ছিলেন বৃহস্পতি মিশ্র, যিনি ছিলেন লেখকও। ‘স্মৃতি রত্নাহার’সহ বেশ কয়েকটি বই লেখার জন্য সুলতান তাঁকে ‘রায়মুকুট’ উপাধি দেন। মালাধর বসু ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ লিখেছিলেন। সুলতান রুকনুদ্দিন বরবক শাহ তাতে খুশি হয়ে গুনরাজ খাঁ উপাধিতে ভূষিত করেন। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের উজির ছিলেন গোপীনাথ বসু ওরফে পুরন্দর খাঁ; দবীর খাস বা প্রধান সচিব ছিলেন সনাতন ও মাকর মল্লিক রূপ; ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন মুকুন্দ দাস। আরেকটু গভীরে গেলে দেখা যাবে, গোবিন্দ দাসের মাতামহ দামোদর যশোরাজ খাঁ ‘কৃষ্ণমঙ্গল’ কাব্যে এবং বিপ্রদাস পিলালাই ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে হোসেন শাহের নাম উল্লেখ করেছেন। হোসেন শাহের ছেলে নসরত শাহ ছিলেন কবিশেখর দেবকীনন্দন সিংহের পৃষ্ঠপোষক। নসরতপুত্র ফিরোজ শাহ ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য লিখিয়েছিলেন শ্রীধরকে দিয়ে। চট্টগ্রামে হোসেন শাহের সেনাপতি লস্কর পরাগল খাঁ মহাভারতের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করান কবীন্দ্র পরমেশ্বরকে দিয়ে। মুসলিম সুলতানদের রাজকার্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যোগ্যতামতো পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এসেছেন। মোগল শাসকদের সময়ে নবাবি আমলে মুর্শীদ কুলী খাঁ তাঁর দেওয়ানিতে সর্বাধিকসংখ্যক হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁর জামাতা সুজাউদ্দিনও এই পথ বেছে নেন। জগৎ শেঠ ফতেহচাঁদ ছিলেন তাঁর অর্থ উপদেষ্টা। সে সময়ই ঢাকার দেওয়ান ছিলেন যশোবন্ত সিংহ।
আরও পরে নবাব সিরাজুদ্দৌলার অন্যতম সেনাপতি ছিলেন মির মদন। তাঁর বিশ্বাসভাজন দেওয়ান ছিলেন মোহনলাল।
এতে মুসলিম শাসকেরা যেমন লাভবান হয়েছিলেন, সমাজে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কেও এসেছিল সৌহার্দ্য।
হিন্দু কাকে বলা হয়? সিন্ধুতীরে যারা বসবাস করত, তারাই ছিল হিন্দু। প্রাচীনকালে হিন্দুধর্ম বলে কোনো ধর্ম ছিল না। এ দেশের আদিম অধিবাসীরা কৌম ধর্ম পালন করত। পরে এসেছিল জৈনধর্ম, আজীবিকধর্ম, বৌদ্ধধর্ম। এরপর এসেছিল ব্রাহ্মণ্যধর্ম। তাহলে হিন্দুধর্মটা কী?
আগেই বলেছি, হিন্দু শব্দটি এসেছে সিন্ধু থেকে। এ দেশে যে মুসলমানরা এসেছিলেন, তাঁদের মাতৃভাষা যা-ই হোক না কেন, তাঁদের রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসি। ফারসি ভাষার একটা মজা আছে। এ ভাষায় ‘স’ নেই, আছে ‘হ’। তাই সিন্ধু শব্দটি তাঁদের ভাষায় হয়ে গেল হিন্দু। অহমিয়া ভাষায়ও কিন্তু একই নিয়ম খাটে। আমরা বাংলায় বলি ‘আসাম’, কিন্তু অহমিয়া ভাষায় তা ‘অহম’। আমরা যে ফারসি ভাষার কথা বলছি, সেটা কিন্তু পারস্যে ‘পারসি’ ভাষা। কিন্তু আরবদের উচ্চারণে ‘প’ নেই। তারা পারসিকে উচ্চারণ করে ‘ফারসি’।
তাহলে সিন্ধু নদের তীরে যারা বসবাস করত, তারা হলো হিন্দু; হিন্দুস্তান বলতে শুরুতে বোঝানো হতো উত্তর ভারতকে, পরে সমগ্র ভারতবর্ষই পরিচিত হয় এই নামে। আর ইন্ডিয়া শব্দটিরও সৃষ্টি এই উচ্চারণের ঘেরাটোপেই। ইন্ডিয়া শব্দটিও এসেছে সিন্ধু শব্দ থেকে। গ্রিক ভাষায় সিন্ধু হয়ে গেছে ইন্দু। ইন্দু থেকেই এসেছে ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান।
মজা আরও আছে। এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন মুসলমান হয়ে গেল, তখন হিন্দু বলতে এই মুসলমানদের বোঝানো হতো না। হিন্দু তখন একটি বিশেষ সংস্কৃতির ধারকদের পরিচয়। একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়। এ দেশের সব লোককে বোঝানো হতো হিন্দুস্তানি শব্দটি দিয়ে। অর্থাৎ মুসলমান ব্যক্তিটিও হিন্দুস্তানি মুসলমান। পরে হিন্দু-মুসলমান একেবারে রাজনৈতিকভাবে দুটি পরস্পর-বিবদমান সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে, যার আলোচনা এখানে নয়।
বিবাদের কথা বলার আগে সে সময়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বণ্টনের বিষয়টি বলা দরকার। নইলে বোঝা যাবে না, কেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা অগ্রসর মানুষ হিসেবে কোম্পানির শাসনামলেও এগিয়ে থাকল।
মধ্যযুগে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল—এমনটা বলা যাবে না। কিন্তু দীর্ঘদিন পাশাপাশি বসবাসের কারণে একধরনের সম্পর্ক তো গড়ে উঠেছিলই। হিন্দু অভিজাতেরা নিজ স্বার্থেই মুসলমান শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। মুসলমান শাসকেরাও নিজ স্বার্থে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত করেছিলেন। রাজকার্য পরিচালনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ, জালালুদ্দিন, রুকনদ্দিন বরবক শাহ, আলাউদ্দিন হোসেন শাহসহ বহু সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন।
শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের প্রধান উজির ছিলেন জগদানন্দ ভাদুড়ি। জালালুদ্দিনের মন্ত্রী ছিলেন বৃহস্পতি মিশ্র, যিনি ছিলেন লেখকও। ‘স্মৃতি রত্নাহার’সহ বেশ কয়েকটি বই লেখার জন্য সুলতান তাঁকে ‘রায়মুকুট’ উপাধি দেন। মালাধর বসু ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ লিখেছিলেন। সুলতান রুকনুদ্দিন বরবক শাহ তাতে খুশি হয়ে গুনরাজ খাঁ উপাধিতে ভূষিত করেন। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের উজির ছিলেন গোপীনাথ বসু ওরফে পুরন্দর খাঁ; দবীর খাস বা প্রধান সচিব ছিলেন সনাতন ও মাকর মল্লিক রূপ; ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন মুকুন্দ দাস। আরেকটু গভীরে গেলে দেখা যাবে, গোবিন্দ দাসের মাতামহ দামোদর যশোরাজ খাঁ ‘কৃষ্ণমঙ্গল’ কাব্যে এবং বিপ্রদাস পিলালাই ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে হোসেন শাহের নাম উল্লেখ করেছেন। হোসেন শাহের ছেলে নসরত শাহ ছিলেন কবিশেখর দেবকীনন্দন সিংহের পৃষ্ঠপোষক। নসরতপুত্র ফিরোজ শাহ ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য লিখিয়েছিলেন শ্রীধরকে দিয়ে। চট্টগ্রামে হোসেন শাহের সেনাপতি লস্কর পরাগল খাঁ মহাভারতের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করান কবীন্দ্র পরমেশ্বরকে দিয়ে। মুসলিম সুলতানদের রাজকার্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যোগ্যতামতো পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এসেছেন। মোগল শাসকদের সময়ে নবাবি আমলে মুর্শীদ কুলী খাঁ তাঁর দেওয়ানিতে সর্বাধিকসংখ্যক হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁর জামাতা সুজাউদ্দিনও এই পথ বেছে নেন। জগৎ শেঠ ফতেহচাঁদ ছিলেন তাঁর অর্থ উপদেষ্টা। সে সময়ই ঢাকার দেওয়ান ছিলেন যশোবন্ত সিংহ।
আরও পরে নবাব সিরাজুদ্দৌলার অন্যতম সেনাপতি ছিলেন মির মদন। তাঁর বিশ্বাসভাজন দেওয়ান ছিলেন মোহনলাল।
এতে মুসলিম শাসকেরা যেমন লাভবান হয়েছিলেন, সমাজে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কেও এসেছিল সৌহার্দ্য।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে