নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতেও সারা দেশে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ছিল বন্ধ। সব সরকারি ভবন, হাটবাজার এমনকি পাড়া-মহল্লায়ও উড়ছিল প্রতিবাদের কালো পতাকা। কোথাও কোথাও বাংলাদেশের নতুন পতাকাও উড়তে থাকে। মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠছিল সংগ্রাম কমিটি। সব বয়স, পেশা ও শ্রেণির মানুষ বেরিয়ে আসছিল রাজপথে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করতে ১৫ মার্চ বিকেলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান নবনিযুক্ত সামরিক গভর্নর ‘বাংলার কসাই’ নামে কুখ্যাত লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান। ইয়াহিয়ার সফরে এতটাই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল যে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেরও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মূল খবরের শিরোনাম ছিল ‘আজ মুজিব-ইয়াহিয়া সাক্ষাৎকার’। পূর্বদেশের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘ঢাকায় প্রেসিডেন্ট: এখনো বৈঠক হয়নি’। দৈনিক সংবাদেরও প্রধান শিরোনাম ছিল ‘আজ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক’। ইত্তেফাকের প্রধান প্রতিবেদনের নিচে তিন কলাম ছবি ছিল স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলের। আগের দিন ঢাকায় ওই বিক্ষোভ হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলটি কাকরাইল, বেইলি রোড হয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। ইয়াহিয়া খান তখন ওই ভবনেই অবস্থান করছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
১৫ মার্চ রাতে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের এই আহ্বানে জনগণের নিরঙ্কুশ সাড়া পাওয়া গেছে। পরদিন দৈনিক সংবাদে প্রধান প্রতিবেদনের নিচে দুই কলাম শিরোনাম ছিল ‘গণআন্দোলনে নতুন অধ্যায় সূচিত হইয়াছে: তাজুদ্দীন’। পাশে আরেকটি খবরে বলা হয়, ‘দেশরক্ষা খাত হইতে বেতন গ্রহণকারী বেসামরিক কর্মচারীরা কাজে যোগ দেন নাই’।
এদিন কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে নারীদের এক সভা হয়। চিকিৎসকেরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সভা থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে প্রস্তুত হওয়ার জন্য জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
করাচিতে আগের দিন এক সভায় পিপিপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো দুই দলের কাছে দেশের দুই অংশের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার সেই প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ হয় ১৫ মার্চ। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানেও জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তান, ন্যাপ (ওয়ালী), মুসলীম লীগ (কাউন্সিল) এবং পিডিপির নেতারা এক বিবৃতিতে ভুট্টোর ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তাকেই দায়ী করেন।
একাত্তরের উত্তাল মার্চের এই দিনে টাইম ম্যাগাজিন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল ‘পাকিস্তান—জিন্নাহর বিলীয়মান স্বপ্ন’ শিরোনামে। পাকিস্তানের ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৯৪৮ সালের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়, ‘১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত উপমহাদেশের বিভক্তির পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্ত যখন বইছিল, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহর কণ্ঠে তখনই শোনা গেছে এ আশঙ্কার কথা। গত সপ্তাহেও রক্ত ঝরেছে বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল এই দেশে, যার একদিকে আছে পশ্চিমাংশের গম উৎপাদনকারী দীর্ঘদেহী, ফরসা জনসাধারণ; অন্যদিকে পূর্বাংশের কালো রঙের খাটো মানুষেরা, যাদের প্রধান শস্য ধান। বর্তমানে এ দুই অংশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিচ্ছিন্নতা বা গৃহযুদ্ধের দিকে।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর শেখ মুজিব দুবার ইসলামাবাদে বৈঠকে যোগ দিতে ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় গেছেন এবং ভুট্টোও এখন সেখানে। তাঁরা শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শেখ মুজিব তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সংখ্যালঘুরা আর কখনোই সংখ্যাগুরুদের শাসন করতে পারবে না।’ নিবন্ধের শেষাংশে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার বিষয়ে ইয়াহিয়ার একটি কঠোর হুঁশিয়ারির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, “তা সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খানের সাংবিধানিক পরিষদের অধিবেশন ডাকার সিদ্ধান্ত শেখ মুজিবকে শান্ত করবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।” দুই দিন আগেই পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে বলেছেন, “আমি তাদের জোটবদ্ধতা ভেঙে দেব এবং তাদের নতজানু করিয়েই ছাড়ব।” এমন একটি বিবৃতির পর সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণাও নেহাতই তুচ্ছ বলে গণ্য হতে পারে।’
১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতেও সারা দেশে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ছিল বন্ধ। সব সরকারি ভবন, হাটবাজার এমনকি পাড়া-মহল্লায়ও উড়ছিল প্রতিবাদের কালো পতাকা। কোথাও কোথাও বাংলাদেশের নতুন পতাকাও উড়তে থাকে। মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠছিল সংগ্রাম কমিটি। সব বয়স, পেশা ও শ্রেণির মানুষ বেরিয়ে আসছিল রাজপথে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করতে ১৫ মার্চ বিকেলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান নবনিযুক্ত সামরিক গভর্নর ‘বাংলার কসাই’ নামে কুখ্যাত লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান। ইয়াহিয়ার সফরে এতটাই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল যে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেরও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মূল খবরের শিরোনাম ছিল ‘আজ মুজিব-ইয়াহিয়া সাক্ষাৎকার’। পূর্বদেশের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘ঢাকায় প্রেসিডেন্ট: এখনো বৈঠক হয়নি’। দৈনিক সংবাদেরও প্রধান শিরোনাম ছিল ‘আজ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক’। ইত্তেফাকের প্রধান প্রতিবেদনের নিচে তিন কলাম ছবি ছিল স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলের। আগের দিন ঢাকায় ওই বিক্ষোভ হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলটি কাকরাইল, বেইলি রোড হয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। ইয়াহিয়া খান তখন ওই ভবনেই অবস্থান করছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
১৫ মার্চ রাতে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের এই আহ্বানে জনগণের নিরঙ্কুশ সাড়া পাওয়া গেছে। পরদিন দৈনিক সংবাদে প্রধান প্রতিবেদনের নিচে দুই কলাম শিরোনাম ছিল ‘গণআন্দোলনে নতুন অধ্যায় সূচিত হইয়াছে: তাজুদ্দীন’। পাশে আরেকটি খবরে বলা হয়, ‘দেশরক্ষা খাত হইতে বেতন গ্রহণকারী বেসামরিক কর্মচারীরা কাজে যোগ দেন নাই’।
এদিন কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে নারীদের এক সভা হয়। চিকিৎসকেরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সভা থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে প্রস্তুত হওয়ার জন্য জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
করাচিতে আগের দিন এক সভায় পিপিপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো দুই দলের কাছে দেশের দুই অংশের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার সেই প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ হয় ১৫ মার্চ। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানেও জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তান, ন্যাপ (ওয়ালী), মুসলীম লীগ (কাউন্সিল) এবং পিডিপির নেতারা এক বিবৃতিতে ভুট্টোর ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তাকেই দায়ী করেন।
একাত্তরের উত্তাল মার্চের এই দিনে টাইম ম্যাগাজিন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল ‘পাকিস্তান—জিন্নাহর বিলীয়মান স্বপ্ন’ শিরোনামে। পাকিস্তানের ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৯৪৮ সালের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়, ‘১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত উপমহাদেশের বিভক্তির পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্ত যখন বইছিল, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহর কণ্ঠে তখনই শোনা গেছে এ আশঙ্কার কথা। গত সপ্তাহেও রক্ত ঝরেছে বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল এই দেশে, যার একদিকে আছে পশ্চিমাংশের গম উৎপাদনকারী দীর্ঘদেহী, ফরসা জনসাধারণ; অন্যদিকে পূর্বাংশের কালো রঙের খাটো মানুষেরা, যাদের প্রধান শস্য ধান। বর্তমানে এ দুই অংশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিচ্ছিন্নতা বা গৃহযুদ্ধের দিকে।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর শেখ মুজিব দুবার ইসলামাবাদে বৈঠকে যোগ দিতে ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় গেছেন এবং ভুট্টোও এখন সেখানে। তাঁরা শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শেখ মুজিব তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সংখ্যালঘুরা আর কখনোই সংখ্যাগুরুদের শাসন করতে পারবে না।’ নিবন্ধের শেষাংশে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার বিষয়ে ইয়াহিয়ার একটি কঠোর হুঁশিয়ারির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, “তা সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খানের সাংবিধানিক পরিষদের অধিবেশন ডাকার সিদ্ধান্ত শেখ মুজিবকে শান্ত করবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।” দুই দিন আগেই পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে বলেছেন, “আমি তাদের জোটবদ্ধতা ভেঙে দেব এবং তাদের নতজানু করিয়েই ছাড়ব।” এমন একটি বিবৃতির পর সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণাও নেহাতই তুচ্ছ বলে গণ্য হতে পারে।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে