সাইফুল মাসুম, ঢাকা
দখলে অস্তিত্বহীন ঢাকা শহরের বেশির ভাগ খাল। যা আছে, তা-ও দূষণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিন বছর ধরে খাল উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযানসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বেশ ঘটা করে খাল উদ্ধারের আয়োজন করা হলেও বড় অংশ থেকে যাচ্ছে দখলদারদের কবজায়। অভিযোগ রয়েছে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে ক্ষমতাধরেরা।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাতমসজিদ হাউজিংয়ে রামচন্দ্রপুর খাল দখল করে গড়ে ওঠা গবাদিপশুর খামার সাদিক অ্যাগ্রোসহ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। উদ্ধার করা খালের জায়গায় পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে খননকাজও শুরু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়, সিএস দাগ ধরে দখল হওয়া খাল পুনরদ্ধার করা হবে। দখলদার যতই ক্ষমতাধর হোক, কোনো ছাড় পাবে না।
কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সাদিক অ্যাগ্রোর পেছনে খাল উদ্ধার থেমে গেছে। সেখানে খালের ওপর অনেক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠলেও তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই ডিএনসিসির কর্তাব্যক্তিদের। খাল খননেরও কোনো তোড়জোড় নেই।
নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, খাল উদ্ধারে দুর্বল দখলদারেরা উচ্ছেদের শিকার হয়। সম্প্রতি সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে নিম্ন আয়ের লোকজনের বসতিও উচ্ছেদ হয়েছে। অথচ আশপাশের বড় বড় ভবন স্পর্শ করা হয়নি। পাশে গড়ে ওঠা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আঁচড় লাগেনি। দেশের আইন সবার জন্য সমান, অথচ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যারা শক্তিশালী, তাদের জন্য বেঁকে যায়। বেঁকে যাওয়া আইনের শাসন দেশের জন্য প্রধান সমস্যা।
আইনের শাসন নিশ্চিত হলে খাল উদ্ধারের মাধ্যমে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন সহজ হবে। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী রামচন্দ্রপুর খালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। খালটি তুরাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে রামচন্দ্রপুর মৌজার রামচন্দ্রপুর, রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও সামরিক কবরস্থানের ভেতর দিয়ে গিয়ে পড়েছে বুড়িগঙ্গায়। বছিলা গার্ডেন সিটি থেকে খালের আরেকটি শাখা সাতমসজিদ হাউজিং, মোহাম্মদপুর-গাবতলী বেড়িবাঁধ ও খ্রিষ্টান কবরস্থান হয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রবেশ করেছে। সাদিক অ্যাগ্রো-সংলগ্ন রামচন্দ্রপুর খালের খালের ওই শাখা ছিল প্রায় ১০০ ফুট চওড়া। এখন সিএস দাগে দেখানো প্রবহমান খালের ঠিক ওপরে সম্প্রতি ‘সুরের ধারা’ গানের স্কুলের নামে একতলা স্থাপনা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সুরের ধারা থেকে জানানো হয়েছে, তারা জেলা প্রশাসন থেকে জায়গাটি বন্দোবস্ত নিয়েছে। অথচ জলাধার রক্ষা আইন অনুসারে খালের জায়গায় বন্দোবস্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্যার সম্পর্ক থাকায় খালের মধ্যে স্থায়ী স্থাপনা তৈরির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
সুরের ধারার উত্তর পাশে রয়েছে ইউল্যাবের (ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস) ক্যাম্পাস। দক্ষিণ পাশে রয়েছে কয়েকটি ছোট-বড় স্থাপনা। এর মধ্যে ‘দারোগা বাড়ি’ নামে একটি আটতলা ভবন রয়েছে। প্রায় চার বছর আগে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। সিএস নকশা যাচাই করে দেখা গেছে, সাতমসজিদ হাউজিংয়ের ডি ব্লকের ৪/বি, রোড নম্বর ১/এ, ঠিকানার ভবনটির বড় একটি অংশ খালের জায়গায় পড়েছে। তা ছাড়া ভবনটি তৈরিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, গত বছর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সিটি করপোরেশন খালের সীমানা পিলার বসানোর সময় দারোগা বাড়ি ভবনের একটি অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। তবে ভবনমালিকেরা পুনরায় তা মেরামত করে নিয়েছেন। আটতলা ভবনের ১০ জন মালিকের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাঁরা হলেন এসআই মো. ময়নুল ইসলাম (মনিরুল) ও পুলিশ পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান। ভবন তৈরির সময় এই দুই পুলিশ সদস্য মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত ছিলেন।
জানতে চাইলে এসআই মো. ময়নুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ভবন থেকে ডিসি পিলার অনেক দূরে রয়েছে। ভবনের যে অংশ বাইরে ছিল, সেটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। বন্যা চৌধুরী খালের মাঝখানে কীভাবে বিল্ডিং করে রেখেছেন। তিনি বেড়িবাঁধের ওপর পাতের বেড়া করে রেখেছেন, ওটা তো সরকারি জায়গা। ওটা সিটি করপোরেশন ভাঙে না কেন?’
ডিএনসিসির তথ্য অনুসারে, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ২৯টি খালের মধ্যে ২৪ খালের বেশির ভাগ অংশে সীমানা নির্ধারণ করে ৯৮০টি পিলার বসানো হয়েছে। প্রস্তাবনা রয়েছে আরও ৭৭৭টির। এগুলোর মধ্যে রামচন্দ্রপুর খালে ২০১টি পিলার বসানো হয়েছে। এই খালে আরও ৪২টি পিলার বসানোর প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে সাদিক অ্যাগ্রো, সুরের ধারা ও দারোগা বাড়ির আশপাশে সেনাবাহিনীর বসানো সীমানা পিলারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কাউন্সিলর (ডিএনসিসি-৩৩ নম্বর ওয়ার্ড) আসিফ আহমেদ বলেন, ‘খালকে সবাই বাপের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। ডানে-বামে সব দিকে দখল করে। অনেকে দেড় কাঠা জমির মালিক, কিন্তু দখল করে আছে তিন কাঠা। এত দিন ধরে খাল ভরাট করে দখল করা হয়েছে।’ খালের অনেক জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নব্বই দশকের আগে খালটি ১০০ ফুটের বেশি চওড়া ছিল। তখন এই খালে নৌকা ও মালবাহী জাহাজ চলাচল করত। ওই সময় মোহাম্মদপুর-গাবতলী বেড়িবাঁধ তৈরি করা হলে খালটির পানিপ্রবাহ থেমে যায়। এই তথ্যের সত্যতা মেলে বেড়িবাঁধের ভেতরে খ্রিষ্টান কবরস্থানের ঠিক মাঝখানে সেনাবাহিনীর বসানো একটি সীমানা পিলার দেখে। খ্রিষ্টান কবরস্থানের ইনচার্জ ভুট্টো মারিন্দা জানান, ৪০ বছর আগে যখন কবরস্থান তৈরি করা হয়, তখন এক পাশে খাল সচল ছিল।
বেড়িবাঁধ হওয়ার পর খালের বাকি অংশও কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এক বছর আগে সেনাবাহিনীর লোকজন কবরস্থানের মধ্যে সীমানা পিলার বসিয়ে গেছেন।
তবে সাদিক অ্যাগ্রোর পাশ থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে কোনো খালের অস্তিত্ব নেই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুরের ধারার সামনে বেড়িবাঁধের পাশে জাকের ডেইরি নামে একটি গরুর ফার্মসহ কিছু স্থাপনা খালের জায়গায় থাকায় উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। এখন সেসব জায়গায় খেলার মাঠের নির্ধারিত জায়গা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড বসিয়েছে সিটি করপোরেশন। খালের আরও কিছু খালি জায়গায় মোহাম্মদপুর নতুন থানার নির্ধারিত স্থান লেখা সাইনবোর্ড রয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রোর পেছনে কিছু জায়গা আছে, সেখানে আমরা পার্ক করব। আর সুরের ধারা আমার জানামতে সরকারের (জেলা প্রশাসক) কাছ থেকে স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে। তাই ওটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
এদিকে কয়েক মাস আগে রামচন্দ্রপুরের বছিলা গার্ডেন সিটির কিছু অংশে উচ্ছেদ অভিযান হলেও অন্য প্রায় এক কিলোমিটার খালের মধ্যে দেয়াল তুলে প্লট বানানো রয়েছে। আবাসন কোম্পানি বছিলা গার্ডেন সিটি প্লটের ভেতর বালু ভরাট করেছে। ঘেরাও করা প্লটের মধ্যে সেনাবাহিনীর বসানো খালের সীমানা পিলার দেখা গেছে। জানতে চাইলে বছিলা গার্ডেন সিটির এমডি শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমাকে বলেন কেন? সিটি করপোরেশন তো মাপজোখ করে দিছে।’
বুড়িগঙ্গা থেকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানের মধ্য দিয়ে লাউতলা খাল ও রামচন্দ্রপুর খালের সঙ্গে ১৫ বছর আগেও যুক্ত ছিল হাইক্কার খাল। কবরস্থানের উন্নয়ন প্রকল্প ও দখলদারদের কবলে পড়ে একসময়ের প্রবহমান খালটি এখন মৃতপ্রায়। খালের মধ্যে ৫ থেকে ১০ তলা অনেক অবৈধ ভবন তৈরি করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ডিএনসিসির দ্বিতীয় পরিষদের ২৬তম করপোরেশন সভায় হাইক্কার খাল থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তের চার মাসেও প্রভাবশালী দখলদারদের চাপে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দখলে অস্তিত্বহীন ঢাকা শহরের বেশির ভাগ খাল। যা আছে, তা-ও দূষণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিন বছর ধরে খাল উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযানসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বেশ ঘটা করে খাল উদ্ধারের আয়োজন করা হলেও বড় অংশ থেকে যাচ্ছে দখলদারদের কবজায়। অভিযোগ রয়েছে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে ক্ষমতাধরেরা।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাতমসজিদ হাউজিংয়ে রামচন্দ্রপুর খাল দখল করে গড়ে ওঠা গবাদিপশুর খামার সাদিক অ্যাগ্রোসহ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। উদ্ধার করা খালের জায়গায় পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে খননকাজও শুরু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়, সিএস দাগ ধরে দখল হওয়া খাল পুনরদ্ধার করা হবে। দখলদার যতই ক্ষমতাধর হোক, কোনো ছাড় পাবে না।
কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সাদিক অ্যাগ্রোর পেছনে খাল উদ্ধার থেমে গেছে। সেখানে খালের ওপর অনেক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠলেও তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই ডিএনসিসির কর্তাব্যক্তিদের। খাল খননেরও কোনো তোড়জোড় নেই।
নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, খাল উদ্ধারে দুর্বল দখলদারেরা উচ্ছেদের শিকার হয়। সম্প্রতি সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে নিম্ন আয়ের লোকজনের বসতিও উচ্ছেদ হয়েছে। অথচ আশপাশের বড় বড় ভবন স্পর্শ করা হয়নি। পাশে গড়ে ওঠা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আঁচড় লাগেনি। দেশের আইন সবার জন্য সমান, অথচ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যারা শক্তিশালী, তাদের জন্য বেঁকে যায়। বেঁকে যাওয়া আইনের শাসন দেশের জন্য প্রধান সমস্যা।
আইনের শাসন নিশ্চিত হলে খাল উদ্ধারের মাধ্যমে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন সহজ হবে। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী রামচন্দ্রপুর খালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। খালটি তুরাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে রামচন্দ্রপুর মৌজার রামচন্দ্রপুর, রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও সামরিক কবরস্থানের ভেতর দিয়ে গিয়ে পড়েছে বুড়িগঙ্গায়। বছিলা গার্ডেন সিটি থেকে খালের আরেকটি শাখা সাতমসজিদ হাউজিং, মোহাম্মদপুর-গাবতলী বেড়িবাঁধ ও খ্রিষ্টান কবরস্থান হয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রবেশ করেছে। সাদিক অ্যাগ্রো-সংলগ্ন রামচন্দ্রপুর খালের খালের ওই শাখা ছিল প্রায় ১০০ ফুট চওড়া। এখন সিএস দাগে দেখানো প্রবহমান খালের ঠিক ওপরে সম্প্রতি ‘সুরের ধারা’ গানের স্কুলের নামে একতলা স্থাপনা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সুরের ধারা থেকে জানানো হয়েছে, তারা জেলা প্রশাসন থেকে জায়গাটি বন্দোবস্ত নিয়েছে। অথচ জলাধার রক্ষা আইন অনুসারে খালের জায়গায় বন্দোবস্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্যার সম্পর্ক থাকায় খালের মধ্যে স্থায়ী স্থাপনা তৈরির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
সুরের ধারার উত্তর পাশে রয়েছে ইউল্যাবের (ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস) ক্যাম্পাস। দক্ষিণ পাশে রয়েছে কয়েকটি ছোট-বড় স্থাপনা। এর মধ্যে ‘দারোগা বাড়ি’ নামে একটি আটতলা ভবন রয়েছে। প্রায় চার বছর আগে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। সিএস নকশা যাচাই করে দেখা গেছে, সাতমসজিদ হাউজিংয়ের ডি ব্লকের ৪/বি, রোড নম্বর ১/এ, ঠিকানার ভবনটির বড় একটি অংশ খালের জায়গায় পড়েছে। তা ছাড়া ভবনটি তৈরিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, গত বছর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সিটি করপোরেশন খালের সীমানা পিলার বসানোর সময় দারোগা বাড়ি ভবনের একটি অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। তবে ভবনমালিকেরা পুনরায় তা মেরামত করে নিয়েছেন। আটতলা ভবনের ১০ জন মালিকের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাঁরা হলেন এসআই মো. ময়নুল ইসলাম (মনিরুল) ও পুলিশ পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান। ভবন তৈরির সময় এই দুই পুলিশ সদস্য মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত ছিলেন।
জানতে চাইলে এসআই মো. ময়নুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ভবন থেকে ডিসি পিলার অনেক দূরে রয়েছে। ভবনের যে অংশ বাইরে ছিল, সেটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। বন্যা চৌধুরী খালের মাঝখানে কীভাবে বিল্ডিং করে রেখেছেন। তিনি বেড়িবাঁধের ওপর পাতের বেড়া করে রেখেছেন, ওটা তো সরকারি জায়গা। ওটা সিটি করপোরেশন ভাঙে না কেন?’
ডিএনসিসির তথ্য অনুসারে, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ২৯টি খালের মধ্যে ২৪ খালের বেশির ভাগ অংশে সীমানা নির্ধারণ করে ৯৮০টি পিলার বসানো হয়েছে। প্রস্তাবনা রয়েছে আরও ৭৭৭টির। এগুলোর মধ্যে রামচন্দ্রপুর খালে ২০১টি পিলার বসানো হয়েছে। এই খালে আরও ৪২টি পিলার বসানোর প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে সাদিক অ্যাগ্রো, সুরের ধারা ও দারোগা বাড়ির আশপাশে সেনাবাহিনীর বসানো সীমানা পিলারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় কাউন্সিলর (ডিএনসিসি-৩৩ নম্বর ওয়ার্ড) আসিফ আহমেদ বলেন, ‘খালকে সবাই বাপের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। ডানে-বামে সব দিকে দখল করে। অনেকে দেড় কাঠা জমির মালিক, কিন্তু দখল করে আছে তিন কাঠা। এত দিন ধরে খাল ভরাট করে দখল করা হয়েছে।’ খালের অনেক জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নব্বই দশকের আগে খালটি ১০০ ফুটের বেশি চওড়া ছিল। তখন এই খালে নৌকা ও মালবাহী জাহাজ চলাচল করত। ওই সময় মোহাম্মদপুর-গাবতলী বেড়িবাঁধ তৈরি করা হলে খালটির পানিপ্রবাহ থেমে যায়। এই তথ্যের সত্যতা মেলে বেড়িবাঁধের ভেতরে খ্রিষ্টান কবরস্থানের ঠিক মাঝখানে সেনাবাহিনীর বসানো একটি সীমানা পিলার দেখে। খ্রিষ্টান কবরস্থানের ইনচার্জ ভুট্টো মারিন্দা জানান, ৪০ বছর আগে যখন কবরস্থান তৈরি করা হয়, তখন এক পাশে খাল সচল ছিল।
বেড়িবাঁধ হওয়ার পর খালের বাকি অংশও কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এক বছর আগে সেনাবাহিনীর লোকজন কবরস্থানের মধ্যে সীমানা পিলার বসিয়ে গেছেন।
তবে সাদিক অ্যাগ্রোর পাশ থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে কোনো খালের অস্তিত্ব নেই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুরের ধারার সামনে বেড়িবাঁধের পাশে জাকের ডেইরি নামে একটি গরুর ফার্মসহ কিছু স্থাপনা খালের জায়গায় থাকায় উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। এখন সেসব জায়গায় খেলার মাঠের নির্ধারিত জায়গা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড বসিয়েছে সিটি করপোরেশন। খালের আরও কিছু খালি জায়গায় মোহাম্মদপুর নতুন থানার নির্ধারিত স্থান লেখা সাইনবোর্ড রয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রোর পেছনে কিছু জায়গা আছে, সেখানে আমরা পার্ক করব। আর সুরের ধারা আমার জানামতে সরকারের (জেলা প্রশাসক) কাছ থেকে স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে। তাই ওটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
এদিকে কয়েক মাস আগে রামচন্দ্রপুরের বছিলা গার্ডেন সিটির কিছু অংশে উচ্ছেদ অভিযান হলেও অন্য প্রায় এক কিলোমিটার খালের মধ্যে দেয়াল তুলে প্লট বানানো রয়েছে। আবাসন কোম্পানি বছিলা গার্ডেন সিটি প্লটের ভেতর বালু ভরাট করেছে। ঘেরাও করা প্লটের মধ্যে সেনাবাহিনীর বসানো খালের সীমানা পিলার দেখা গেছে। জানতে চাইলে বছিলা গার্ডেন সিটির এমডি শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমাকে বলেন কেন? সিটি করপোরেশন তো মাপজোখ করে দিছে।’
বুড়িগঙ্গা থেকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানের মধ্য দিয়ে লাউতলা খাল ও রামচন্দ্রপুর খালের সঙ্গে ১৫ বছর আগেও যুক্ত ছিল হাইক্কার খাল। কবরস্থানের উন্নয়ন প্রকল্প ও দখলদারদের কবলে পড়ে একসময়ের প্রবহমান খালটি এখন মৃতপ্রায়। খালের মধ্যে ৫ থেকে ১০ তলা অনেক অবৈধ ভবন তৈরি করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ডিএনসিসির দ্বিতীয় পরিষদের ২৬তম করপোরেশন সভায় হাইক্কার খাল থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তের চার মাসেও প্রভাবশালী দখলদারদের চাপে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে