সেলিম জাহান, অর্থনীতিবিদ
সংখ্যার প্রতি আমার আগ্রহ এবং অনুরাগ সেই ছোটবেলা থেকেই। অঙ্ক আমি ভালোবাসতাম। সেই আসক্তি আর ভালোবাসা বাড়িয়ে দিলেন বাবার বন্ধু ও বরিশাল বিএম কলেজে বাবার সহকর্মী অঙ্কশাস্ত্রের অধ্যাপক, অঙ্কের জাদুকর সুখেন্দু সোম। আমার বয়স তখন ১০-১২ বছর হবে। আমাদের বাড়িতে এলেই সুখেন্দুবাবু অঙ্ক আর আমাকে নিয়ে পড়তেন। অঙ্কের নানান খেলা আর ধাঁধা শেখাতেন।
এই যেমন প্রমাণ করে দিতেন যে, ১ আর ২ সমান কিংবা ৯-এর নামতা দিয়ে দেখিয়ে দিতেন যে প্রতিটি সংখ্যার গুণের ফলাফল যোগ করলে ৯ই হবে। এই যেমন ৯×৪ = ৩৬। ৩ আর ৬ যোগ করলে ৯ হয়। কিংবা ৯×৮ = ৭২। ৭ আর ২ যোগ করলে ৯ হয়। আমি হতবাক হয়ে যেতাম দশমবর্ষীয় একটি বালকের জন্য এ এক বিস্ময়! কবুল করি, বহু বছর বাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে ওইসব ধাঁধা দেখিয়ে আমার শিক্ষার্থীদের আমি হতবাক করেছি।
বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে কলেজজীবনে অধ্যাপক সুখেন্দু সোমকে আমি আমার অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম। ঝড়ের বেগে অঙ্ক করাতেন, সংখ্যারা যেন দৌড়ে চলত কালো বোর্ডের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে—আমরা টুকবার আগেই তারা উধাও হয়ে যেত। ‘অঙ্ক কষানো’ কথাটি তাঁর ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে প্রযোজ্য—ঘোড়াকে যেমন চাবুক কষানো হয়, তেমনি অঙ্ককে তিনি কষাতেন তাঁর জ্ঞানের চাবুকে।
সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে আমার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আসা, অর্থনীতিতে অনার্স—সুতরাং খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার ঐচ্ছিক বিষয় দুটো হলো অঙ্ক ও সংখ্যাতত্ত্ব। শহীদ মিনারের উল্টো দিকে অ্যানেক্স ভবনে আমাদের ক্লাস হয়—কলাভবনে অর্থনীতির ক্লাস করেই ছুটতাম অঙ্ক আর পরিসংখ্যানের ক্লাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, শিববাড়ীকে কাটিয়ে।
সংখ্যাতত্ত্বের ক্লাসে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি বিভাগীয় প্রধান শহীদ অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক মাহবুব আহমেদ ও অধ্যাপক আবদুল্লাহকে—অসাধারণ সব শিক্ষক। খুব নমিত হয়ে বলি, ১৯৭২ সালে পুরো কলা ও বাণিজ্য অনুষদে একমাত্র আমিই অঙ্ক ও সংখ্যাতত্ত্বে ৮৯ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে ডিস্টিংশন পেয়েছিলাম। এমএ ক্লাসেও আমার একটি বিষয় ছিল অঙ্কমিতি (Econometrics)।
সত্তরের দশকে উচ্চশিক্ষার্থে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলে সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে আমার সখ্য আরও নিবিড় হয়ে ওঠে। আমার গবেষণার ও অভিসন্দর্ভের জন্য আমি যে বিষয় ও কাঠামো বেছে নিই, সেটা ছিল সম্পূর্ণভাবেই অঙ্কমিতিভিত্তিক একটি সামষ্টিক মডেল। প্রায় তিন বছর ধরে সংখ্যার সঙ্গে আমার ছিল নিত্য বসবাস। মডেল, উপাত্ত, কম্পিউটার আমার জীবনের বিরাট অংশ হয়ে ওঠে।
আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতার কালে গবেষণাকাজের জন্য সংখ্যা, উপাত্ত পরিসংখ্যানের সঙ্গে আমার নিবিড়তা আরও গভীর হয়। এ প্রসঙ্গে দুটো কথা বলা প্রয়োজন। প্রথমত, সে সময়টাতে প্রায়ই আমি নিউমার্কেটের বইয়ের দোকান মহীউদ্দীন ও সন্সে যেতাম। আমার কাজই ছিল বাংলাদেশের নানান উপাত্ত ও পরিসংখ্যানের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নানান প্রকাশনা কেনা। সেসব প্রকাশনা ঘাঁটতে ঘাঁটতে উপাত্ত ও নানান সংখ্যাকে আমি চিনতে শুরু করি, তাদের নানান মাত্রিকতাও আমার সামনে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, আশির দশকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও আমি জড়িয়ে পড়ি। তাদের নানান পর্ষদে আমি উপদেষ্টা ও সদস্য হই। আশির দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের উপদেষ্টা নিযুক্ত হলে ব্যুরোর সঙ্গে আমার যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়।
সে সময়কালে তাত্ত্বিক গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নানান উন্নয়ন সমস্যার প্রায়োগিক গবেষণার দিকেও ঝুঁকে পড়ি। ফলে দেশি-বিদেশি নানান গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার সংযোগ গড়ে ওঠে। গবেষণার কাজে গবেষণা দল নিয়ে বাংলাদেশের নানান অঞ্চলে আমাকে যেতে হয়—হাতেনাতে, একেবারে মাঠপর্যায়ের সমীক্ষা-তথ্য থেকে গড়ে নিতে হয় বিশ্বাসযোগ্য উপাত্ত এ পরিসংখ্যান। নতুন করে পরিচয় ঘটে সংখ্যা ও উপাত্তের বাস্তবতা।
তবে প্রায়োগিক গবেষণার খোলনলচে আমাকে শিখিয়েছিলেন আমার প্রয়াত শিক্ষক ও সহকর্মী অধ্যাপক মুশাররফ হোসেন। গ্রামীণ বাংলার দারিদ্র্য, পুষ্টি বিষয়ে তাঁর অগাধ জ্ঞানে যেমন বিমোহিত হতাম, তেমনি সেসব বিষয়ে নানান পরিসংখ্যানের ব্যাপারে অনুভবের ক্ষমতায় হতবাক হতাম। সংখ্যা ও উপাত্তেরা যেন তাঁর সঙ্গে কথা কইতো। আঙুল দিয়ে দিয়ে তিনি আমাকে উপাত্তের ভাষা শেখাতেন, সেসব সংখ্যা কী বলছে, তার দিকে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করতেন। তাঁর কাছ থেকেই আমি সংখ্যাকে ব্যাখ্যা করতে শিখেছি, উপসংহার টানতে শিখেছি এবং সংখ্যাকে নীতিমালার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে শিখেছি।
সংখ্যার সঙ্গে আমার সখ্য চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেল, যখন নব্বইয়ের দশকে আমি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরে যোগদান করি। ড. মাহবুবুল হকের নেতৃত্বে গঠিত লেখক ও গবেষক দলের সদস্য হিসেবে প্রতিবেদনের জন্য তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, উপাত্তকাঠামো গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নই ছিল আমার কাজ। সে কাজের অংশ হিসেবে প্রায় ১৮৮ দেশের জন্য উপাত্ত সারণি গঠন ও মানব উন্নয়ন সূচকের মতো একটি সমন্বিত সূচক তৈরিতে আমরা ব্যাপৃত ছিলাম।
এসব কাজ করতে গিয়ে আমি ক্রমান্বয়ে বুঝতে পারছিলাম যে পরিসংখ্যান ও উপাত্ত ব্যাপারটি শুধু তাত্ত্বিক বা প্রায়োগিক ব্যাপার নয়, এটি একটি উচ্চস্তরের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যাপারও। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের উপাত্তগুলোকে নানান দেশ রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখত। তারা নানান সংখ্যাকে পরিবর্তনের জন্য চাপ দিত, যাতে তাদের চালচিত্র আরও ভালো দেখা যায়। এ ব্যাপারে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানব উন্নয়ন সূচক এবং সে সূচক মাত্রায় তাদের অবস্থান উন্নীত করার জন্য দেশগুলো তাদের পরিসংখ্যান কৃত্রিমভাবে স্ফীত করত। এসব ক্ষেত্রে দেশগুলোর স্পর্শকাতরতা ছিল উচ্চাঙ্গের।
প্রায় ১৯০ দেশের এতসব কাণ্ডকীর্তি ধারণ করা বড় একটা সহজ কাজ ছিল না। এসব ক্ষেত্রে ড. মাহবুবুল হককে আমার সংখ্যার জাদুকর বলে মনে হতো। তাঁর সামনে উপস্থাপিত তাড়া তাড়া পরিসংখ্যান ও উপাত্তমালার দিকে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। তারপর হঠাৎ করে একটি উপাত্তের ওপর আঙুল রেখে তিনি বলতেন, ‘এ সংখ্যাটি ঠিক নয়’, কিংবা ‘এ উপাত্তটি রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে’। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তিনি সর্বদাই সঠিক ছিলেন।
অত্যন্ত নমিত হয়ে বলি, মাহবুবুল হকের এ নৈপুণ্যটি আমি কিছুটা হলেও আয়ত্ত করতে পেরেছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সংখ্যার প্রতি ভালেবাসা ও অঙ্গীকার এবং বহুকাল ধরে উপাত্ত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে এ-জাতীয় দক্ষতা অর্জন করা যায়। তাই পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের মানব উন্নয়নের কর্ণধার হয়ে এ কাজটি আমি করতাম। কখনো-সখনো আমার সহকর্মীরা আমাকে পরীক্ষা করার জন্য বহু সংখ্যার মাঝে দু-একটি ভুল উপাত্ত ঢুকিয়ে দিতেন। কিন্তু আমি সেই বিভ্রান্তকারী উপাত্তগুলো চিহ্নিত করতে পারতাম। আমার সহকর্মীরা অবাক হতেন।
সংখ্যার ক্ষেত্রে দুই রকমের শিক্ষা আমি পেয়েছিলাম অধ্যাপক অমর্ত্য সেন এবং মাহবুবুল হকের কাছ থেকে। অধ্যাপক সেন উপাত্তের তাত্ত্বিক শুদ্ধতার ওপরে গুরুত্ব দিতেন আর মাহবুবুল হক জোর দিতেন উপাত্তের প্রায়োগিক ব্যবহারের দিকে। দুটো দিকই গুরুত্বপূর্ণ এবং দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই বড় কথা।
পেশাগত জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পরেও সংখ্যার সঙ্গে আমার সখ্য মোটেও কমেনি। গত পাঁচ বছরে তিনটি জাতীয় মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন রচনা করেছি—নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাংলাদেশের জন্য। দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচিপত্র রচনা করেছি মোজাম্বিক ও সোমালিয়ার জন্য। ১৫ বছরের জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করেছি সেইন্ট কিটস ও নেভিসের জন্য।
এসব কর্মকাণ্ডে পরিচিত হয়েছি বিভিন্ন পরিসংখ্যান কাঠামোর সঙ্গে—সেগুলো জোগানের প্রক্রিয়ার সঙ্গে, সেগুলোর উপস্থাপনের সঙ্গে, সেগুলোর বিশ্লেষণের সঙ্গে। নানান দেশের পরিসংখ্যানবিদদের সঙ্গে সংযোগ গড় তুলেছি, ঋদ্ধ হয়েছি তাঁদের সঙ্গে আলোচনায়, বুঝতে পেরেছি তাঁদের পরিসংখানের পরিপ্রেক্ষিত। সেসবের তুলনামূলক বিচার করে বহু কিছু আত্মস্থ করতে পেরেছি।
আমার দীর্ঘ পেশাগত জীবনে নানান পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যার সঙ্গে সখ্যের কারণে কটি উপলব্ধি আমার হয়েছে পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিষয়ে। প্রথমত, সব উপাত্তকাঠামোরই একটি শক্ত তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। উপাত্ত শুধু সংখ্যা নয়, তার পেছনে তত্ত্বও থাকে।
দ্বিতীয়ত, উপাত্তের শুদ্ধতা ও সত্যতা অশেষ গুরুত্বপূর্ণ দুটো কারণে—এক, সঠিক উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য এবং দুই, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য। জনগণের কাছে যে উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, তার উপযোগিতাও নেই। উপাত্তকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং সব উপাত্তকেই সবার কাছে লভ্য করে দিতে হবে। এ জন্য একটি ‘উপাত্ত লভ্যতা ও দৃশ্যমানতা’ আইন থাকা দরকার।
তৃতীয়ত, উপাত্ত দুইভাবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত—গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এবং নীতিমালা প্রণয়নের জন্য। উভয় ক্ষেত্রেই ঐতিহাসিক উপাত্তের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিমালা প্রণয়নের জন্য দেশের নীতিনির্ধারকদের ‘উপাত্ত স্বাক্ষরতা’ প্রয়োজন, সে সঙ্গে প্রয়োজন উপাত্তের গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁদের সম্যক উপলব্ধি।
চতুর্থত, রাজনীতিকেরা তাঁদের রাজনৈতিক বক্তব্য ও অবস্থান শক্ত করার জন্য অবশ্যই উপাত্ত ব্যবহার করবেন, কিন্তু উপাত্ত গঠন ও দেশের পরিসংখ্যান সংস্থাকে রাজনীতির বাইরে রাখা দরকার। সেই সঙ্গে এমন একটি সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসিত সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া উচিত, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সেই সঙ্গে এ রকম সংস্থার প্রয়োজনীয় বিকেন্দ্রীয়করণ দরকার।
পঞ্চমত, যতটা সম্ভব, বিভাজিত উপাত্ত সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক উপাত্তে অসাম্য বা বৈষম্য প্রতিফলিত হয় না। একমাত্র বিভাজিত উপাত্তেই এটা ধরা পড়ে। এই প্রসঙ্গে নারী-পুরুষের মধ্যকার অসমতা আর বৈষম্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
ষষ্ঠত, বর্তমান সময়ের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণকে যতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো গঠনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। পরিসংখ্যান বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
সপ্তমত, একটি পরিসংখ্যানকাঠামো বা সংস্থা স্থবির হতে পারে না, তাকে গতিময় হতে হবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণা, নতুন জ্ঞান ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিতি, অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান অত্যন্ত জরুরি। একটি পরিসংখ্যান সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ অপরিহার্য।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন যে, সংখ্যা হচ্ছে একটি শক্তি। সেই সঙ্গে সংখ্যারা কথা বলে। তবে সে কথা সত্য কথা না মিথ্যা কথন, তা নির্ভর করে উপস্থাপিত উপাত্ত সঠিকভাবে, সৎভাবে এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে তৈরি হয়েছে কি না। অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনায়, রাজনৈতিক চাপে কিংবা রাজনৈতিক কাঠামোকে তুষ্ট করার জন্য উপাত্তকে প্রভাবিত করা হয়। কিন্তু এটা করা হলে পরিসংখ্যানের যে একটি সৎ উদ্দেশ্য থাকে, তা বিনষ্ট হয়।
সংখ্যার সঙ্গে আমার দীর্ঘ সখ্যে সেই সত্যটিই আমি বারবার উপলব্ধি করেছি।
সংখ্যার প্রতি আমার আগ্রহ এবং অনুরাগ সেই ছোটবেলা থেকেই। অঙ্ক আমি ভালোবাসতাম। সেই আসক্তি আর ভালোবাসা বাড়িয়ে দিলেন বাবার বন্ধু ও বরিশাল বিএম কলেজে বাবার সহকর্মী অঙ্কশাস্ত্রের অধ্যাপক, অঙ্কের জাদুকর সুখেন্দু সোম। আমার বয়স তখন ১০-১২ বছর হবে। আমাদের বাড়িতে এলেই সুখেন্দুবাবু অঙ্ক আর আমাকে নিয়ে পড়তেন। অঙ্কের নানান খেলা আর ধাঁধা শেখাতেন।
এই যেমন প্রমাণ করে দিতেন যে, ১ আর ২ সমান কিংবা ৯-এর নামতা দিয়ে দেখিয়ে দিতেন যে প্রতিটি সংখ্যার গুণের ফলাফল যোগ করলে ৯ই হবে। এই যেমন ৯×৪ = ৩৬। ৩ আর ৬ যোগ করলে ৯ হয়। কিংবা ৯×৮ = ৭২। ৭ আর ২ যোগ করলে ৯ হয়। আমি হতবাক হয়ে যেতাম দশমবর্ষীয় একটি বালকের জন্য এ এক বিস্ময়! কবুল করি, বহু বছর বাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে ওইসব ধাঁধা দেখিয়ে আমার শিক্ষার্থীদের আমি হতবাক করেছি।
বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে কলেজজীবনে অধ্যাপক সুখেন্দু সোমকে আমি আমার অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম। ঝড়ের বেগে অঙ্ক করাতেন, সংখ্যারা যেন দৌড়ে চলত কালো বোর্ডের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে—আমরা টুকবার আগেই তারা উধাও হয়ে যেত। ‘অঙ্ক কষানো’ কথাটি তাঁর ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে প্রযোজ্য—ঘোড়াকে যেমন চাবুক কষানো হয়, তেমনি অঙ্ককে তিনি কষাতেন তাঁর জ্ঞানের চাবুকে।
সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে আমার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আসা, অর্থনীতিতে অনার্স—সুতরাং খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার ঐচ্ছিক বিষয় দুটো হলো অঙ্ক ও সংখ্যাতত্ত্ব। শহীদ মিনারের উল্টো দিকে অ্যানেক্স ভবনে আমাদের ক্লাস হয়—কলাভবনে অর্থনীতির ক্লাস করেই ছুটতাম অঙ্ক আর পরিসংখ্যানের ক্লাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, শিববাড়ীকে কাটিয়ে।
সংখ্যাতত্ত্বের ক্লাসে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি বিভাগীয় প্রধান শহীদ অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক মাহবুব আহমেদ ও অধ্যাপক আবদুল্লাহকে—অসাধারণ সব শিক্ষক। খুব নমিত হয়ে বলি, ১৯৭২ সালে পুরো কলা ও বাণিজ্য অনুষদে একমাত্র আমিই অঙ্ক ও সংখ্যাতত্ত্বে ৮৯ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে ডিস্টিংশন পেয়েছিলাম। এমএ ক্লাসেও আমার একটি বিষয় ছিল অঙ্কমিতি (Econometrics)।
সত্তরের দশকে উচ্চশিক্ষার্থে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলে সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে আমার সখ্য আরও নিবিড় হয়ে ওঠে। আমার গবেষণার ও অভিসন্দর্ভের জন্য আমি যে বিষয় ও কাঠামো বেছে নিই, সেটা ছিল সম্পূর্ণভাবেই অঙ্কমিতিভিত্তিক একটি সামষ্টিক মডেল। প্রায় তিন বছর ধরে সংখ্যার সঙ্গে আমার ছিল নিত্য বসবাস। মডেল, উপাত্ত, কম্পিউটার আমার জীবনের বিরাট অংশ হয়ে ওঠে।
আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতার কালে গবেষণাকাজের জন্য সংখ্যা, উপাত্ত পরিসংখ্যানের সঙ্গে আমার নিবিড়তা আরও গভীর হয়। এ প্রসঙ্গে দুটো কথা বলা প্রয়োজন। প্রথমত, সে সময়টাতে প্রায়ই আমি নিউমার্কেটের বইয়ের দোকান মহীউদ্দীন ও সন্সে যেতাম। আমার কাজই ছিল বাংলাদেশের নানান উপাত্ত ও পরিসংখ্যানের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নানান প্রকাশনা কেনা। সেসব প্রকাশনা ঘাঁটতে ঘাঁটতে উপাত্ত ও নানান সংখ্যাকে আমি চিনতে শুরু করি, তাদের নানান মাত্রিকতাও আমার সামনে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, আশির দশকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও আমি জড়িয়ে পড়ি। তাদের নানান পর্ষদে আমি উপদেষ্টা ও সদস্য হই। আশির দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের উপদেষ্টা নিযুক্ত হলে ব্যুরোর সঙ্গে আমার যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়।
সে সময়কালে তাত্ত্বিক গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নানান উন্নয়ন সমস্যার প্রায়োগিক গবেষণার দিকেও ঝুঁকে পড়ি। ফলে দেশি-বিদেশি নানান গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার সংযোগ গড়ে ওঠে। গবেষণার কাজে গবেষণা দল নিয়ে বাংলাদেশের নানান অঞ্চলে আমাকে যেতে হয়—হাতেনাতে, একেবারে মাঠপর্যায়ের সমীক্ষা-তথ্য থেকে গড়ে নিতে হয় বিশ্বাসযোগ্য উপাত্ত এ পরিসংখ্যান। নতুন করে পরিচয় ঘটে সংখ্যা ও উপাত্তের বাস্তবতা।
তবে প্রায়োগিক গবেষণার খোলনলচে আমাকে শিখিয়েছিলেন আমার প্রয়াত শিক্ষক ও সহকর্মী অধ্যাপক মুশাররফ হোসেন। গ্রামীণ বাংলার দারিদ্র্য, পুষ্টি বিষয়ে তাঁর অগাধ জ্ঞানে যেমন বিমোহিত হতাম, তেমনি সেসব বিষয়ে নানান পরিসংখ্যানের ব্যাপারে অনুভবের ক্ষমতায় হতবাক হতাম। সংখ্যা ও উপাত্তেরা যেন তাঁর সঙ্গে কথা কইতো। আঙুল দিয়ে দিয়ে তিনি আমাকে উপাত্তের ভাষা শেখাতেন, সেসব সংখ্যা কী বলছে, তার দিকে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করতেন। তাঁর কাছ থেকেই আমি সংখ্যাকে ব্যাখ্যা করতে শিখেছি, উপসংহার টানতে শিখেছি এবং সংখ্যাকে নীতিমালার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে শিখেছি।
সংখ্যার সঙ্গে আমার সখ্য চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেল, যখন নব্বইয়ের দশকে আমি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরে যোগদান করি। ড. মাহবুবুল হকের নেতৃত্বে গঠিত লেখক ও গবেষক দলের সদস্য হিসেবে প্রতিবেদনের জন্য তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, উপাত্তকাঠামো গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নই ছিল আমার কাজ। সে কাজের অংশ হিসেবে প্রায় ১৮৮ দেশের জন্য উপাত্ত সারণি গঠন ও মানব উন্নয়ন সূচকের মতো একটি সমন্বিত সূচক তৈরিতে আমরা ব্যাপৃত ছিলাম।
এসব কাজ করতে গিয়ে আমি ক্রমান্বয়ে বুঝতে পারছিলাম যে পরিসংখ্যান ও উপাত্ত ব্যাপারটি শুধু তাত্ত্বিক বা প্রায়োগিক ব্যাপার নয়, এটি একটি উচ্চস্তরের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যাপারও। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের উপাত্তগুলোকে নানান দেশ রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখত। তারা নানান সংখ্যাকে পরিবর্তনের জন্য চাপ দিত, যাতে তাদের চালচিত্র আরও ভালো দেখা যায়। এ ব্যাপারে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মানব উন্নয়ন সূচক এবং সে সূচক মাত্রায় তাদের অবস্থান উন্নীত করার জন্য দেশগুলো তাদের পরিসংখ্যান কৃত্রিমভাবে স্ফীত করত। এসব ক্ষেত্রে দেশগুলোর স্পর্শকাতরতা ছিল উচ্চাঙ্গের।
প্রায় ১৯০ দেশের এতসব কাণ্ডকীর্তি ধারণ করা বড় একটা সহজ কাজ ছিল না। এসব ক্ষেত্রে ড. মাহবুবুল হককে আমার সংখ্যার জাদুকর বলে মনে হতো। তাঁর সামনে উপস্থাপিত তাড়া তাড়া পরিসংখ্যান ও উপাত্তমালার দিকে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। তারপর হঠাৎ করে একটি উপাত্তের ওপর আঙুল রেখে তিনি বলতেন, ‘এ সংখ্যাটি ঠিক নয়’, কিংবা ‘এ উপাত্তটি রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে’। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তিনি সর্বদাই সঠিক ছিলেন।
অত্যন্ত নমিত হয়ে বলি, মাহবুবুল হকের এ নৈপুণ্যটি আমি কিছুটা হলেও আয়ত্ত করতে পেরেছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সংখ্যার প্রতি ভালেবাসা ও অঙ্গীকার এবং বহুকাল ধরে উপাত্ত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে এ-জাতীয় দক্ষতা অর্জন করা যায়। তাই পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের মানব উন্নয়নের কর্ণধার হয়ে এ কাজটি আমি করতাম। কখনো-সখনো আমার সহকর্মীরা আমাকে পরীক্ষা করার জন্য বহু সংখ্যার মাঝে দু-একটি ভুল উপাত্ত ঢুকিয়ে দিতেন। কিন্তু আমি সেই বিভ্রান্তকারী উপাত্তগুলো চিহ্নিত করতে পারতাম। আমার সহকর্মীরা অবাক হতেন।
সংখ্যার ক্ষেত্রে দুই রকমের শিক্ষা আমি পেয়েছিলাম অধ্যাপক অমর্ত্য সেন এবং মাহবুবুল হকের কাছ থেকে। অধ্যাপক সেন উপাত্তের তাত্ত্বিক শুদ্ধতার ওপরে গুরুত্ব দিতেন আর মাহবুবুল হক জোর দিতেন উপাত্তের প্রায়োগিক ব্যবহারের দিকে। দুটো দিকই গুরুত্বপূর্ণ এবং দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই বড় কথা।
পেশাগত জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পরেও সংখ্যার সঙ্গে আমার সখ্য মোটেও কমেনি। গত পাঁচ বছরে তিনটি জাতীয় মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন রচনা করেছি—নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাংলাদেশের জন্য। দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচিপত্র রচনা করেছি মোজাম্বিক ও সোমালিয়ার জন্য। ১৫ বছরের জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করেছি সেইন্ট কিটস ও নেভিসের জন্য।
এসব কর্মকাণ্ডে পরিচিত হয়েছি বিভিন্ন পরিসংখ্যান কাঠামোর সঙ্গে—সেগুলো জোগানের প্রক্রিয়ার সঙ্গে, সেগুলোর উপস্থাপনের সঙ্গে, সেগুলোর বিশ্লেষণের সঙ্গে। নানান দেশের পরিসংখ্যানবিদদের সঙ্গে সংযোগ গড় তুলেছি, ঋদ্ধ হয়েছি তাঁদের সঙ্গে আলোচনায়, বুঝতে পেরেছি তাঁদের পরিসংখানের পরিপ্রেক্ষিত। সেসবের তুলনামূলক বিচার করে বহু কিছু আত্মস্থ করতে পেরেছি।
আমার দীর্ঘ পেশাগত জীবনে নানান পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যার সঙ্গে সখ্যের কারণে কটি উপলব্ধি আমার হয়েছে পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিষয়ে। প্রথমত, সব উপাত্তকাঠামোরই একটি শক্ত তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। উপাত্ত শুধু সংখ্যা নয়, তার পেছনে তত্ত্বও থাকে।
দ্বিতীয়ত, উপাত্তের শুদ্ধতা ও সত্যতা অশেষ গুরুত্বপূর্ণ দুটো কারণে—এক, সঠিক উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য এবং দুই, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য। জনগণের কাছে যে উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, তার উপযোগিতাও নেই। উপাত্তকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং সব উপাত্তকেই সবার কাছে লভ্য করে দিতে হবে। এ জন্য একটি ‘উপাত্ত লভ্যতা ও দৃশ্যমানতা’ আইন থাকা দরকার।
তৃতীয়ত, উপাত্ত দুইভাবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত—গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এবং নীতিমালা প্রণয়নের জন্য। উভয় ক্ষেত্রেই ঐতিহাসিক উপাত্তের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিমালা প্রণয়নের জন্য দেশের নীতিনির্ধারকদের ‘উপাত্ত স্বাক্ষরতা’ প্রয়োজন, সে সঙ্গে প্রয়োজন উপাত্তের গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁদের সম্যক উপলব্ধি।
চতুর্থত, রাজনীতিকেরা তাঁদের রাজনৈতিক বক্তব্য ও অবস্থান শক্ত করার জন্য অবশ্যই উপাত্ত ব্যবহার করবেন, কিন্তু উপাত্ত গঠন ও দেশের পরিসংখ্যান সংস্থাকে রাজনীতির বাইরে রাখা দরকার। সেই সঙ্গে এমন একটি সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসিত সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া উচিত, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সেই সঙ্গে এ রকম সংস্থার প্রয়োজনীয় বিকেন্দ্রীয়করণ দরকার।
পঞ্চমত, যতটা সম্ভব, বিভাজিত উপাত্ত সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক উপাত্তে অসাম্য বা বৈষম্য প্রতিফলিত হয় না। একমাত্র বিভাজিত উপাত্তেই এটা ধরা পড়ে। এই প্রসঙ্গে নারী-পুরুষের মধ্যকার অসমতা আর বৈষম্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
ষষ্ঠত, বর্তমান সময়ের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণকে যতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো গঠনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। পরিসংখ্যান বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
সপ্তমত, একটি পরিসংখ্যানকাঠামো বা সংস্থা স্থবির হতে পারে না, তাকে গতিময় হতে হবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণা, নতুন জ্ঞান ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিতি, অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান অত্যন্ত জরুরি। একটি পরিসংখ্যান সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ অপরিহার্য।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন যে, সংখ্যা হচ্ছে একটি শক্তি। সেই সঙ্গে সংখ্যারা কথা বলে। তবে সে কথা সত্য কথা না মিথ্যা কথন, তা নির্ভর করে উপস্থাপিত উপাত্ত সঠিকভাবে, সৎভাবে এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে তৈরি হয়েছে কি না। অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনায়, রাজনৈতিক চাপে কিংবা রাজনৈতিক কাঠামোকে তুষ্ট করার জন্য উপাত্তকে প্রভাবিত করা হয়। কিন্তু এটা করা হলে পরিসংখ্যানের যে একটি সৎ উদ্দেশ্য থাকে, তা বিনষ্ট হয়।
সংখ্যার সঙ্গে আমার দীর্ঘ সখ্যে সেই সত্যটিই আমি বারবার উপলব্ধি করেছি।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে