রেজা করিম ও তানিম আহমেদ, ঢাকা
দীর্ঘ এক দশক পর রাজধানীতে প্রকাশ্যে সমাবেশ করল জামায়াতে ইসলামী। মাঝের সময়টাতে বদলে গেছে অনেক কিছু। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনে অনিবন্ধিত ও ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন দলটির সমাবেশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা দিক দিয়ে চাপে থাকা সরকার কি বাধ্য হয়েই জামায়াতের প্রতি নমনীয় হয়েছে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো সমীকরণ আছে—বড় হয়ে সামনে আসছে সেই প্রশ্ন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাগম ঘটিয়েছে দলটি। যদিও শুরুতে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ধারণা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি পাবে না জামায়াত। তবে শুক্রবার মধ্যরাতে শর্ত সাপেক্ষে জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ডিএমপি। এর আগে সবশেষ ২০১৩ সালের ৪ মার্চ মতিঝিলে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধেরও দাবি আছে বিভিন্ন মহলের।
জামায়াতের বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে নিয়ে একটা কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। প্রথমত হতে পারে, নির্বাচনে অধিকসংখ্যক দলকে আনার পরিকল্পনা থেকে দলটিকে হাতে রাখা। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে জামায়াত যাতে সহিংস পথ বেছে না নেয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করা। এসব বিবেচনায় নিয়েই জামায়াতের বিষয়ে ভাবছে সরকার। সবকিছুই রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকলে ভোটের মাঠে এবং রাজপথে—দুই জায়গাতেই আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। ১৯৯৬ ও ২০০১ এর ভোটই এর প্রমাণ। এই অবস্থায় জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গ ছাড়াতে পারলে লাভ হবে আওয়ামী লীগের।’ যদিও জামায়াতকে বিশ্বাস করা কঠিন বলেও মানেন এই নেতা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও যাতে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়, সেই পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগ এগোচ্ছে। যে কারণে দলটির প্রতি শক্ত অবস্থান থেকে সরে আসা হয়েছে। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিলে জামায়াতকে আরও ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ছাড়া আটক দলটির নেতাদের মুক্তিও দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও এর ইঙ্গিত মিলতে পারে। গত সোমবার রাজধানীর নবাবগঞ্জে দলের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে কথা আছে, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট (আসন) দেবে। আমাদেরও কিছু সিট দেবে। আমাদের বলা হয়, আপনারা আরও সংগঠিত হোন, আরও বেশি সিট দেব।’
রাজনীতির মাঠের অনেক হিসাব বদলে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে। গত ২৪ মে এই ভিসা নীতি ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের তারা ভিসা দেবে না।
একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কূটনৈতিক চ্যানেলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি পালনে সুযোগ দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কথার লড়াই চলছে নিয়মিত। সরকার সংবিধানের আলোকে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চাইলেও তাতে বাদ সেধেছে বিএনপিসহ বিরোধীরা। তাদের কথা, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। দাবি আদায়ে সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি; পাশাপাশি বিদেশিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছে তারা।
মাঝে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর প্রেক্ষাপট বদলে গেছে অনেকটাই। ভিসা নীতি ঘোষণার পরে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে বেশ খানিকটা নমনীয় হয়েছে সরকার। আবার একইভাবে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সাবধানী হয়েছে সরকারবিরোধীরাও।
জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার এমনিতেই নানা চাপে আছে। অনুমতি না দিলে সংঘাতময় পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারত। সেটা এড়াতেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই বলে জানান দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি না পেলেও আমরা হাল ছাড়তাম না। আমাদের অনড় অবস্থানের কারণে তারা (সরকার) অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে।’ সরকারের সঙ্গে জামায়াতের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান আবদুল হালিম।
বিএনপিও অবশ্য বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বেশ কিছুদিন ধরেই দুই দলের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সম্প্রতি সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামায়াতের দায়িত্বশীলেরা বলছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন করবে দলটি। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনা চলছে বলেও জানান দলটির নেতারা। যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না বিএনপির নেতারা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার কেন তাদের (জামায়াত) প্রতি নরম হলো, সেটা সরকারই জানে। সরকার এটা বলবে।’ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের পথে আছে, আমরা আমাদের পথে আছি।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, সরকার কেন জামায়াতের প্রতি নমনীয় হচ্ছে, সেটা এখন সবাই বুঝতে পারছে। তারা তাদের প্রয়োজনেই জামায়াতকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। তেমন হলেও বিএনপির জন্য কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি দাবি আদায়ে আন্দোলন করে যাবে। সেখানে কেউ থাকলে থাকবে, নয়তো থাকবে না।’
জামায়াতকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। এখানে কে কোন দল, এত কিছু দেখি না। আমরা সকলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন চাই।’
নির্বাচন কমিশন তো জামায়াতের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। বিষয়টি উল্লেখ করলে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বা অনুমোদন থাকতে হবে। এটা করতে সময় লাগে না।’
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, জামায়াতের প্রতি সরকার নরম হওয়ায় তাদের সভা-সমাবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘এ রকম কোনো তথ্য আমার কাছে নাই। এটা ঠিক না।’
জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জামায়াতের
জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে গতকাল প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, ‘২০১৪ গিয়েছে যাক, ১৮ গিয়েছে যাক, ২০২৩ সাল এভাবে আর যাবে না। এবার নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। বেশি কিছু ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু বলব-এবারের নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক, তত্ত্বাবধায়ক, তত্ত্বাবধায়ক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে দাবি আদায় করার জন্য যা করা দরকার, আন্দোলন করা দরকার, সেই আন্দোলন আমরা করব।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে মো. তাহের বলেন, ‘যদি আওয়ামী লীগ এটা বোঝে, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, তাহলে আসুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে, সে নিয়ে আমরা আলোচনা করি। আমার বিশ্বাস তাতে সমস্যার সমাধান হবে।’
জামায়াতের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তাহের বলেন, ‘আমরা নেতাদের মুক্তির দাবি করতে চাই না, আমরা চাই তাঁদের মুক্ত করে নিতে। তাই বলছি অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দিন। না হলে পরিস্থিতি আরও বেশি উত্তপ্ত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ বিরাজমান সংকট নিরসনে দলমত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ারও আহ্বান জানান তাহের।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, নেতাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত। আয়োজক সংগঠনের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
দীর্ঘ এক দশক পর রাজধানীতে প্রকাশ্যে সমাবেশ করল জামায়াতে ইসলামী। মাঝের সময়টাতে বদলে গেছে অনেক কিছু। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনে অনিবন্ধিত ও ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন দলটির সমাবেশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা দিক দিয়ে চাপে থাকা সরকার কি বাধ্য হয়েই জামায়াতের প্রতি নমনীয় হয়েছে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো সমীকরণ আছে—বড় হয়ে সামনে আসছে সেই প্রশ্ন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাগম ঘটিয়েছে দলটি। যদিও শুরুতে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ধারণা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি পাবে না জামায়াত। তবে শুক্রবার মধ্যরাতে শর্ত সাপেক্ষে জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ডিএমপি। এর আগে সবশেষ ২০১৩ সালের ৪ মার্চ মতিঝিলে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধেরও দাবি আছে বিভিন্ন মহলের।
জামায়াতের বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে নিয়ে একটা কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। প্রথমত হতে পারে, নির্বাচনে অধিকসংখ্যক দলকে আনার পরিকল্পনা থেকে দলটিকে হাতে রাখা। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে জামায়াত যাতে সহিংস পথ বেছে না নেয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করা। এসব বিবেচনায় নিয়েই জামায়াতের বিষয়ে ভাবছে সরকার। সবকিছুই রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকলে ভোটের মাঠে এবং রাজপথে—দুই জায়গাতেই আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। ১৯৯৬ ও ২০০১ এর ভোটই এর প্রমাণ। এই অবস্থায় জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গ ছাড়াতে পারলে লাভ হবে আওয়ামী লীগের।’ যদিও জামায়াতকে বিশ্বাস করা কঠিন বলেও মানেন এই নেতা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও যাতে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়, সেই পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগ এগোচ্ছে। যে কারণে দলটির প্রতি শক্ত অবস্থান থেকে সরে আসা হয়েছে। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিলে জামায়াতকে আরও ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ছাড়া আটক দলটির নেতাদের মুক্তিও দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও এর ইঙ্গিত মিলতে পারে। গত সোমবার রাজধানীর নবাবগঞ্জে দলের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে কথা আছে, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট (আসন) দেবে। আমাদেরও কিছু সিট দেবে। আমাদের বলা হয়, আপনারা আরও সংগঠিত হোন, আরও বেশি সিট দেব।’
রাজনীতির মাঠের অনেক হিসাব বদলে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে। গত ২৪ মে এই ভিসা নীতি ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের তারা ভিসা দেবে না।
একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কূটনৈতিক চ্যানেলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি পালনে সুযোগ দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কথার লড়াই চলছে নিয়মিত। সরকার সংবিধানের আলোকে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চাইলেও তাতে বাদ সেধেছে বিএনপিসহ বিরোধীরা। তাদের কথা, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। দাবি আদায়ে সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি; পাশাপাশি বিদেশিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছে তারা।
মাঝে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর প্রেক্ষাপট বদলে গেছে অনেকটাই। ভিসা নীতি ঘোষণার পরে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে বেশ খানিকটা নমনীয় হয়েছে সরকার। আবার একইভাবে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সাবধানী হয়েছে সরকারবিরোধীরাও।
জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার এমনিতেই নানা চাপে আছে। অনুমতি না দিলে সংঘাতময় পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারত। সেটা এড়াতেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই বলে জানান দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি না পেলেও আমরা হাল ছাড়তাম না। আমাদের অনড় অবস্থানের কারণে তারা (সরকার) অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে।’ সরকারের সঙ্গে জামায়াতের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান আবদুল হালিম।
বিএনপিও অবশ্য বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বেশ কিছুদিন ধরেই দুই দলের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সম্প্রতি সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জামায়াতের দায়িত্বশীলেরা বলছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন করবে দলটি। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনা চলছে বলেও জানান দলটির নেতারা। যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না বিএনপির নেতারা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার কেন তাদের (জামায়াত) প্রতি নরম হলো, সেটা সরকারই জানে। সরকার এটা বলবে।’ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের পথে আছে, আমরা আমাদের পথে আছি।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, সরকার কেন জামায়াতের প্রতি নমনীয় হচ্ছে, সেটা এখন সবাই বুঝতে পারছে। তারা তাদের প্রয়োজনেই জামায়াতকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। তেমন হলেও বিএনপির জন্য কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি দাবি আদায়ে আন্দোলন করে যাবে। সেখানে কেউ থাকলে থাকবে, নয়তো থাকবে না।’
জামায়াতকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। এখানে কে কোন দল, এত কিছু দেখি না। আমরা সকলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন চাই।’
নির্বাচন কমিশন তো জামায়াতের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। বিষয়টি উল্লেখ করলে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বা অনুমোদন থাকতে হবে। এটা করতে সময় লাগে না।’
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, জামায়াতের প্রতি সরকার নরম হওয়ায় তাদের সভা-সমাবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘এ রকম কোনো তথ্য আমার কাছে নাই। এটা ঠিক না।’
জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জামায়াতের
জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে গতকাল প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, ‘২০১৪ গিয়েছে যাক, ১৮ গিয়েছে যাক, ২০২৩ সাল এভাবে আর যাবে না। এবার নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। বেশি কিছু ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু বলব-এবারের নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক, তত্ত্বাবধায়ক, তত্ত্বাবধায়ক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে দাবি আদায় করার জন্য যা করা দরকার, আন্দোলন করা দরকার, সেই আন্দোলন আমরা করব।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে মো. তাহের বলেন, ‘যদি আওয়ামী লীগ এটা বোঝে, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, তাহলে আসুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে, সে নিয়ে আমরা আলোচনা করি। আমার বিশ্বাস তাতে সমস্যার সমাধান হবে।’
জামায়াতের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তাহের বলেন, ‘আমরা নেতাদের মুক্তির দাবি করতে চাই না, আমরা চাই তাঁদের মুক্ত করে নিতে। তাই বলছি অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দিন। না হলে পরিস্থিতি আরও বেশি উত্তপ্ত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ বিরাজমান সংকট নিরসনে দলমত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ারও আহ্বান জানান তাহের।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, নেতাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত। আয়োজক সংগঠনের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে