মামুনুর রশীদ
ভারতবর্ষের অর্থনীতি ও কূটনীতির জনক চাণক্যকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘বিষ কী?’ একটু ভেবে তিনি জবাব দিয়েছিলেন—প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা, তা-ই বিষ। যদি তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হতো, প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে যা ফেলে দেওয়া হয় তার নাম কী, চাণক্য হয়তো সহজ উত্তরটাই দিতেন—তার নাম অপচয়!
আমাদের সমাজে অপচয় কত রকম? প্রথমেই বলি, ‘পানি’; খাওয়ার পানির বোতল। যেকোনো সভায় বক্তা ও শ্রোতাদের সামনে কেনা পানির বোতল রাখা হয়। কেউ দু-চার চুমুক হয়তো খান, তারপর হয় রেখে যান, নাহয় ফেলে দেন। এমনি করে লাখ লাখ লিটার পানি প্রতিদিন অপচয় হয়। সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় খাদ্যে। ভদ্রতার খাতিরে যেকোনো দাওয়াতে বেশি খাবার রাখা হয়। আজকাল কম খাওয়ার একটা রেওয়াজ চালু হয়েছে। তাতে দেখা যায় বিপুল খাবার বেঁচে গেল। ফকির-মিসকিনও খুঁজে পাওয়া গেল না। একটা অংশ হয়তো ফ্রিজে জায়গা পেল। বাকি অপচয়টা কোনো জায়গা না পেলে ডাস্টবিনে গেল। বিয়েবাড়িতে তো এটা অহরহ ঘটছে।
বাজারে সেল চলছে। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত বাড়ির গিন্নিরা ছুটলেন বাজারে। প্রয়োজন নেই, তবু বিস্তর কেনাকাটা হলো। সেগুলো রাখারও জায়গা নেই। দেখা গেল পড়ে রইল কোথাও। তারপর একসময় ক্রেতা-গিন্নিরা ওই দ্রব্যের ওপর আকর্ষণও হারিয়ে ফেললেন। এমনি করে হাজারো দ্রব্যের পাহাড় গড়ে উঠছে ওই সব বাড়িতে। জিনিসপত্রের এত চাহিদা যে বড় এবং ছোট শহরে এত এত দোকান হয়েছে; ভাবতে অবাকই লাগে! এত দোকানের মালপত্র কে কেনে? ঈদের বাজারে তো পা ফেলার জায়গা থাকে না। এখন জেলা শহরে বা যেকোনো শহরে আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ডের দোকানের কোনো অভাব নেই। শুধু তা-ই নয়, এসব দোকানে ক্রেতারও কোনো অভাব নেই।
ঢাকা শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দোকান হচ্ছে খাবারের দোকান। এগুলোকে দোকান বললে অনেকে তেড়ে আসতে পারেন! বলতে হবে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে বা কুইজিন। সেগুলোর অনেক জায়গায় বুফের ব্যবস্থা থাকে। যাঁরা সেখানে খেতে যান, তাঁরা জানেন একটা নির্দিষ্ট টাকায় অনেক ধরনের অঢেল খাবারের ব্যবস্থা থাকে। খাদকেরা প্লেট বোঝাই করে খাবার নিয়ে থাকেন। একটা সময় আর খেতে পারেন না। স্তূপীকৃত খাবারগুলো ডাস্টবিনে আশ্রয় নেয়। বেশ কিছুদিন হলো সাধারণ বিরিয়ানির জায়গা দখল করেছে কাচ্চি বিরিয়ানি আর তেহারি—প্রচুর তেল এবং খাসি-গরুর মাংসের সঙ্গে পোলাওয়ের চাল এবং বাসমতীর সমন্বয়ে একধরনের খাবার। প্রচুর খদ্দের। আমাদের আনন্দ-উৎসব বা পারিবারিক সম্মেলনে এ এক অবশ্য খাদ্য। এই কাচ্চির রস আস্বাদনে বেইলি রোডে কতগুলো প্রাণ গেল। তবু খাওয়া চাই। এখানেও অপচয়। এই অপচয়ের মাত্রা একটু বেশি।
এই রমজানে ইফতারির বুফে হয়, সাহ্রিরও বুফে হয়। সেই বুফেতে থাকে অপরিমিত খাবার। সেই সঙ্গে আছে ইফতারির প্যাকেজ। প্যাকেজের প্যাকেটটিও বেশ বড়। একবার ওই প্যাকেটের এক ইফতারে আমি উপস্থিত ছিলাম। সম্ভবত হাজার টাকার প্যাকেট। এক-পঞ্চমাংশও খেতে পারিনি। আমি অবশ্য অপচয় করিনি, বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। সবাই মিলে খেয়েছিলাম। এ তো গেল খাদ্যের কথা। খাদ্যের বহুমুখী অপচয়ের কথা অনেক বলা যাবে।
এরপর আসে কাপড়চোপড়ের কথা। নতুন নতুন ফ্যাশনের জন্ম হয়। অতএব নতুন ফ্যাশনের কাপড় কিনতেই হবে। কয়েক দিন আগেই হয়তো প্রয়োজনের কাপড়টা কেনা হয়েছে। এখন ঈদের, নববর্ষের বা পূজার কাপড়টা কিনতেই হবে। নতুন ফ্যাশন বলে কথা! কিনতেই হবে। এক দিন পরার পরেই মনে হলো এ তো পুরোনো হয়ে গেছে। তাই তার আশ্রয় হলো ওয়ার্ডরোব বা আলমারিতে। সেখানেও জায়গা নেই। ফ্ল্যাট বাড়িতে অত জায়গা থাকার কথা নয়। সেখানে পাঞ্জাবি-শাড়িতে বোঝাই হয়ে আছে।
সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় সরকারি অফিসে। কোনো এক বড় সাহেবের ইচ্ছেমতো কিছু কেনাকাটা হলো, কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে আসছে না। রাখারও কোনো জায়গা নেই। কিছুদিন পর ওই সাহেব বদলি হয়ে গেলেন, নতুন সাহেব এলেন। এগুলো কিছুই তাঁর পছন্দ নয়। তাই তিনিও আবার নতুন কিছু কিনলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেখেছি, অনেক কিছু কেনা হয়েছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র কেনা হয়েছে, কিন্তু বছরের পর বছর তা বাক্সবন্দী হয়ে আছে। নানা ছুতোয় সেগুলো খোলাও হচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ওই সব যন্ত্রে পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হলেও প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে করাতে হচ্ছে।
আরও আছে বিদেশে প্রশিক্ষণ। প্রায়ই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যেতে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা গেলেন নেদারল্যান্ডসে। তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ফিরলেন। পরদিনই তাঁর পদায়ন হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তাঁর প্রশিক্ষণ সেখানে কোন কাজে লাগবে? আমাদের অনেক প্রয়োজন আছে। যেমন শিক্ষায়। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রতিদিন পড়াতে হয়। কিন্তু দেখা গেল, নানা ধরনের সরকারি কাজে তাঁদের ছুটতে হয়। নির্বাচন এলে তো কথাই নেই। তাঁদের প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ ছাড়া থাকে নানা কাজ। আর তাই প্রধান শিক্ষকের পক্ষে ক্লাস নেওয়াই দুষ্কর।
কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের অপচয়ের শেষ নেই। তাঁদের বিলাসবহুল গাড়ি এক লিটার তেলে এক কিলোমিটার চলে। তারপর সরকারি গাড়ি সুনিশ্চিত জেনেও সরকার তাঁদের জন্য ঋণ দিয়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চালক ও তেলের ব্যবস্থা করে দেয়। এই অর্থ বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অপচয়। হিসাব করে দেখা গেছে, যে পরিমাণ অর্থ এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য ব্যয় হয় তা অনেক দেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। তার মানে এটাই প্রমাণিত হয়, আমরা আসলে অপচয়ী শুধু নই, দুর্নীতির মাধ্যমে এই অপচয়কে বৈধতাও দিয়ে থাকি।
অন্যদিকে যে পরিমাণ নিম্নবিত্ত মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরছে, তাদের খবর রাষ্ট্র নিতেও চায় না। দেশে প্রবল উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু তার সমান্তরালে এই সব মানুষ কি দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে? যে অপচয়ের কাহিনি বললাম, তা তো উচ্চবিত্তদেরই, যাঁরা একের অধিক গাড়ি কিনে শহরের যানজটের কারণ সৃষ্টি করছেন। যাঁর একটি গাড়িই প্রয়োজন তাঁর দুটি, তিনটি, চারটি, পাঁচটি, ছয়টি গাড়ি কেনার কেন প্রয়োজন? এ-ও দেখা যাচ্ছে, অনেক মন্ত্রী আছেন, যাঁরা তাঁদের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর, প্রজেক্টের গাড়ি নিয়ে নিজের শ্যালিকাদেরও সার্বক্ষণিক গাড়ি দিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্র জনগণের কাছ থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার একটা বড় অংশই চলে যায় অপচয়ের পথে। কারণ রাষ্ট্রের কর্মচারীরা মনে করেন এতে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
আবার ফিরে আসি চাণক্যের বার্তায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা কিছু, তা-ই হচ্ছে বিষ। এই বিষ আমরা গিলে চলেছি সর্বত্র—এ দেশের ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত শ্রেণি সবাই। কিন্তু দেশের নিম্নবিত্ত শ্রেণির পাড়ভাঙা মানুষ, অনাহারী মানুষ কোথায় যাবে? এই ব্যাপক জনসংখ্যার দেশে তাদের কথা তো ভাবা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু রাষ্ট্র কি ভাববে?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ভারতবর্ষের অর্থনীতি ও কূটনীতির জনক চাণক্যকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘বিষ কী?’ একটু ভেবে তিনি জবাব দিয়েছিলেন—প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা, তা-ই বিষ। যদি তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হতো, প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে যা ফেলে দেওয়া হয় তার নাম কী, চাণক্য হয়তো সহজ উত্তরটাই দিতেন—তার নাম অপচয়!
আমাদের সমাজে অপচয় কত রকম? প্রথমেই বলি, ‘পানি’; খাওয়ার পানির বোতল। যেকোনো সভায় বক্তা ও শ্রোতাদের সামনে কেনা পানির বোতল রাখা হয়। কেউ দু-চার চুমুক হয়তো খান, তারপর হয় রেখে যান, নাহয় ফেলে দেন। এমনি করে লাখ লাখ লিটার পানি প্রতিদিন অপচয় হয়। সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় খাদ্যে। ভদ্রতার খাতিরে যেকোনো দাওয়াতে বেশি খাবার রাখা হয়। আজকাল কম খাওয়ার একটা রেওয়াজ চালু হয়েছে। তাতে দেখা যায় বিপুল খাবার বেঁচে গেল। ফকির-মিসকিনও খুঁজে পাওয়া গেল না। একটা অংশ হয়তো ফ্রিজে জায়গা পেল। বাকি অপচয়টা কোনো জায়গা না পেলে ডাস্টবিনে গেল। বিয়েবাড়িতে তো এটা অহরহ ঘটছে।
বাজারে সেল চলছে। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত বাড়ির গিন্নিরা ছুটলেন বাজারে। প্রয়োজন নেই, তবু বিস্তর কেনাকাটা হলো। সেগুলো রাখারও জায়গা নেই। দেখা গেল পড়ে রইল কোথাও। তারপর একসময় ক্রেতা-গিন্নিরা ওই দ্রব্যের ওপর আকর্ষণও হারিয়ে ফেললেন। এমনি করে হাজারো দ্রব্যের পাহাড় গড়ে উঠছে ওই সব বাড়িতে। জিনিসপত্রের এত চাহিদা যে বড় এবং ছোট শহরে এত এত দোকান হয়েছে; ভাবতে অবাকই লাগে! এত দোকানের মালপত্র কে কেনে? ঈদের বাজারে তো পা ফেলার জায়গা থাকে না। এখন জেলা শহরে বা যেকোনো শহরে আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ডের দোকানের কোনো অভাব নেই। শুধু তা-ই নয়, এসব দোকানে ক্রেতারও কোনো অভাব নেই।
ঢাকা শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দোকান হচ্ছে খাবারের দোকান। এগুলোকে দোকান বললে অনেকে তেড়ে আসতে পারেন! বলতে হবে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে বা কুইজিন। সেগুলোর অনেক জায়গায় বুফের ব্যবস্থা থাকে। যাঁরা সেখানে খেতে যান, তাঁরা জানেন একটা নির্দিষ্ট টাকায় অনেক ধরনের অঢেল খাবারের ব্যবস্থা থাকে। খাদকেরা প্লেট বোঝাই করে খাবার নিয়ে থাকেন। একটা সময় আর খেতে পারেন না। স্তূপীকৃত খাবারগুলো ডাস্টবিনে আশ্রয় নেয়। বেশ কিছুদিন হলো সাধারণ বিরিয়ানির জায়গা দখল করেছে কাচ্চি বিরিয়ানি আর তেহারি—প্রচুর তেল এবং খাসি-গরুর মাংসের সঙ্গে পোলাওয়ের চাল এবং বাসমতীর সমন্বয়ে একধরনের খাবার। প্রচুর খদ্দের। আমাদের আনন্দ-উৎসব বা পারিবারিক সম্মেলনে এ এক অবশ্য খাদ্য। এই কাচ্চির রস আস্বাদনে বেইলি রোডে কতগুলো প্রাণ গেল। তবু খাওয়া চাই। এখানেও অপচয়। এই অপচয়ের মাত্রা একটু বেশি।
এই রমজানে ইফতারির বুফে হয়, সাহ্রিরও বুফে হয়। সেই বুফেতে থাকে অপরিমিত খাবার। সেই সঙ্গে আছে ইফতারির প্যাকেজ। প্যাকেজের প্যাকেটটিও বেশ বড়। একবার ওই প্যাকেটের এক ইফতারে আমি উপস্থিত ছিলাম। সম্ভবত হাজার টাকার প্যাকেট। এক-পঞ্চমাংশও খেতে পারিনি। আমি অবশ্য অপচয় করিনি, বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। সবাই মিলে খেয়েছিলাম। এ তো গেল খাদ্যের কথা। খাদ্যের বহুমুখী অপচয়ের কথা অনেক বলা যাবে।
এরপর আসে কাপড়চোপড়ের কথা। নতুন নতুন ফ্যাশনের জন্ম হয়। অতএব নতুন ফ্যাশনের কাপড় কিনতেই হবে। কয়েক দিন আগেই হয়তো প্রয়োজনের কাপড়টা কেনা হয়েছে। এখন ঈদের, নববর্ষের বা পূজার কাপড়টা কিনতেই হবে। নতুন ফ্যাশন বলে কথা! কিনতেই হবে। এক দিন পরার পরেই মনে হলো এ তো পুরোনো হয়ে গেছে। তাই তার আশ্রয় হলো ওয়ার্ডরোব বা আলমারিতে। সেখানেও জায়গা নেই। ফ্ল্যাট বাড়িতে অত জায়গা থাকার কথা নয়। সেখানে পাঞ্জাবি-শাড়িতে বোঝাই হয়ে আছে।
সবচেয়ে বেশি অপচয় হয় সরকারি অফিসে। কোনো এক বড় সাহেবের ইচ্ছেমতো কিছু কেনাকাটা হলো, কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে আসছে না। রাখারও কোনো জায়গা নেই। কিছুদিন পর ওই সাহেব বদলি হয়ে গেলেন, নতুন সাহেব এলেন। এগুলো কিছুই তাঁর পছন্দ নয়। তাই তিনিও আবার নতুন কিছু কিনলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেখেছি, অনেক কিছু কেনা হয়েছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র কেনা হয়েছে, কিন্তু বছরের পর বছর তা বাক্সবন্দী হয়ে আছে। নানা ছুতোয় সেগুলো খোলাও হচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ওই সব যন্ত্রে পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হলেও প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে করাতে হচ্ছে।
আরও আছে বিদেশে প্রশিক্ষণ। প্রায়ই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যেতে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা গেলেন নেদারল্যান্ডসে। তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ফিরলেন। পরদিনই তাঁর পদায়ন হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তাঁর প্রশিক্ষণ সেখানে কোন কাজে লাগবে? আমাদের অনেক প্রয়োজন আছে। যেমন শিক্ষায়। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রতিদিন পড়াতে হয়। কিন্তু দেখা গেল, নানা ধরনের সরকারি কাজে তাঁদের ছুটতে হয়। নির্বাচন এলে তো কথাই নেই। তাঁদের প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ ছাড়া থাকে নানা কাজ। আর তাই প্রধান শিক্ষকের পক্ষে ক্লাস নেওয়াই দুষ্কর।
কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের অপচয়ের শেষ নেই। তাঁদের বিলাসবহুল গাড়ি এক লিটার তেলে এক কিলোমিটার চলে। তারপর সরকারি গাড়ি সুনিশ্চিত জেনেও সরকার তাঁদের জন্য ঋণ দিয়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চালক ও তেলের ব্যবস্থা করে দেয়। এই অর্থ বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অপচয়। হিসাব করে দেখা গেছে, যে পরিমাণ অর্থ এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য ব্যয় হয় তা অনেক দেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। তার মানে এটাই প্রমাণিত হয়, আমরা আসলে অপচয়ী শুধু নই, দুর্নীতির মাধ্যমে এই অপচয়কে বৈধতাও দিয়ে থাকি।
অন্যদিকে যে পরিমাণ নিম্নবিত্ত মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরছে, তাদের খবর রাষ্ট্র নিতেও চায় না। দেশে প্রবল উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু তার সমান্তরালে এই সব মানুষ কি দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে? যে অপচয়ের কাহিনি বললাম, তা তো উচ্চবিত্তদেরই, যাঁরা একের অধিক গাড়ি কিনে শহরের যানজটের কারণ সৃষ্টি করছেন। যাঁর একটি গাড়িই প্রয়োজন তাঁর দুটি, তিনটি, চারটি, পাঁচটি, ছয়টি গাড়ি কেনার কেন প্রয়োজন? এ-ও দেখা যাচ্ছে, অনেক মন্ত্রী আছেন, যাঁরা তাঁদের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর, প্রজেক্টের গাড়ি নিয়ে নিজের শ্যালিকাদেরও সার্বক্ষণিক গাড়ি দিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্র জনগণের কাছ থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার একটা বড় অংশই চলে যায় অপচয়ের পথে। কারণ রাষ্ট্রের কর্মচারীরা মনে করেন এতে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
আবার ফিরে আসি চাণক্যের বার্তায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা কিছু, তা-ই হচ্ছে বিষ। এই বিষ আমরা গিলে চলেছি সর্বত্র—এ দেশের ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত শ্রেণি সবাই। কিন্তু দেশের নিম্নবিত্ত শ্রেণির পাড়ভাঙা মানুষ, অনাহারী মানুষ কোথায় যাবে? এই ব্যাপক জনসংখ্যার দেশে তাদের কথা তো ভাবা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু রাষ্ট্র কি ভাববে?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে