চিররঞ্জন সরকার
আমাদের দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই ‘তলে তলে’ হয়। এই ‘তলে তলে’ হওয়া আলাপ-আলোচনা-শর্ত-চুক্তির আলোকে শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, এমন একটা প্রত্যাশা অনেকের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সেই আশা ক্রমেই উবে যেতে বসেছে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করবে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। নির্বাচন বর্জন করে সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে দলটি কি আদৌ টিকবে, এ প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসছে।
বিএনপিকে বাদ দিয়ে কীভাবে নির্বাচন করা যায়, সেই নির্বাচনে জেতা যায়, ক্ষমতায় থাকা যায়, সেই ক্ষমতাকে কীভাবে জায়েজ করা যায়? এসব ব্যাপার আওয়ামী লীগের মতো অভিজ্ঞ আর কোনো দল দুনিয়ায় আছে বলে মনে হয় না। ১৫ বছর ধরে তারা সেই চর্চা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছে। কাজেই বলা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘ভালোভাবেই’ হবে, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই নির্বাচনে জিতে আবার আওয়ামী লীগই যে ক্ষমতায় আসবে, এটা প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে ভিড়িয়ে নির্বাচনকে যথাসম্ভব ‘অংশগ্রহণমূলক’ করার জন্য আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যারা নির্বাচনে আসতে চায়, তাদের নির্বাচনে আনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উৎসাহের কোনো ঘাটতি নেই। নতুন নতুন দল ও জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। নির্বাচনের বাগানে নতুন নতুন ‘ফুল’ ফুটছে। ইতিমধ্যে বিএনপির কিছু নিষ্ক্রিয় ও সাবেক নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। আরও কিছু নেতাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য জোর চেষ্টা-তদবির চলছে।
আওয়ামী লীগের বাইরে মোটামুটি ৫০-৬০ জনকে যদি এমপি বানানো যায়, তাহলে সেটা হবে আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় সাফল্য। এই ব্যক্তিরা বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে থাকবেন। তাঁরা সংসদে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করবেন। আবার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের গুণগান গাইবেন। যাঁরা হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেবেন না। আবার মোলায়েম ভাষায় সরকারের সমালোচনাও করবেন। বেশ ‘মধু’র একটা ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’ নির্মাণের প্রয়াস চলছে।
অনেকে অবশ্য আওয়ামী লীগের মুণ্ডুপাত করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা গায়ে মাখছে না। মাখবেই বা কেন? একটি রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্যই তো থাকে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের নীতি-আদর্শ-কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। আওয়ামী লীগ সে কাজটিই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছে। তাদের কৌশলের কাছে আর কেউ বা কোনো দল সুবিধা করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন তোলা অবান্তর। প্রেমে আর রণে নীতি চলে না—এটা পুরোনো প্রবাদ। রাজনীতিতেও এখন আর ‘নীতি’ চলে না। নীতি নিয়ে চললে ক্ষমতা থাকে না এবং দলও টেকে না। তাই যেকোনো উপায়ে ও মূল্যে ক্ষমতায় যেতে হবে। ক্ষমতায় থাকার আরাধনা করতে হবে।
বিএনপির শাসনামলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তা-ই করেছিলেন। তখন শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামের মতো জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে বিএনপি চরম অনাগ্রহ দেখিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিঃশেষ করার জন্য এই দলের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ভাগ্যগুণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
গ্রেনেড হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার করার ব্যাপারে খালেদা জিয়া কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনি দেখাবেন কীভাবে? শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা খুন হয়ে যান, তাহলে যে তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের পোয়াবারো হতো। যুগ যুগ ধরে তাঁরা বিনা প্রতিযোগিতায় বাধাবিঘ্ন ছাড়া নির্বাচনে জিততে পারবেন। পরম সুখে ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন!
কিন্তু মানুষের সব ভাবনা তো আর সব সময় বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। যে হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টায় খোদ তারেক রহমানের নাম জড়িয়ে আছে। তারেক রহমানকে বাঁচাতে খালেদা জিয়া পুরো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা-মামলাটাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই দুজনকে বাগে পেয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমা করে দেবেন, তা কি আর হয়?
এখন ‘নির্বাচনবিরোধী’ নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বলে বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের যে সত্যতা নেই, তা কেউ বলবে না। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য পরিচালিত গ্রেনেড হামলার ঘটনার সময় বিএনপির ভূমিকাকে তিনি কীভাবে দেখেন? ইট মারলে তো পাটকেল খেতেই হবে। রাজনীতি তো ফেরেশতাদের কায়কারবার নয়। মানুষ হলে তো প্রতিশোধের ব্যাপার থাকবেই। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রীকে মেরে ফেলতে চাইবেন, আর সেই নেত্রী সুযোগ পেয়ে ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর,আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’ জসীমউদ্দীনের এই ঔদার্যের পদ্য পাঠ করবেন, তা কি আশা করা যায়?
দুর্নীতি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অভিযোগে আদালতের দণ্ড নিয়ে তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে বসে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর পরামর্শে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। তারেক রহমান বিএনপির কোনো নেতাকে বিশ্বাস করেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাক, ভালো করুক, তা তিনি চান না। কারণ তাঁর মধ্যে সংশয় আছে। যদি নির্বাচিত এমপিরা তাঁর কথা না শোনেন!
তারেক রহমান চান দেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। এমন একটা নির্বাচনের আয়োজন করতে, যাতে বিএনপির শতভাগ জয়ের গ্যারান্টির নিশ্চয়তা থাকে। কারণ পূর্ণ শক্তি নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় না গেলে তারেক রহমানের দেশে আসা এবং রাজনীতি করা হবে না। বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, নির্বাহী আদেশে যদি তারেক রহমানের মামলা ও দণ্ড বাতিল বা মওকুফ না করা হয়, তাহলে তাঁর রাজনীতি করা ইহকালে আর সম্ভব হবে না।
আর বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি যদি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে শতাধিক আসনও পায়, তাতে দলের লাভ হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরও লাভ হবে। তিনি বিরোধী দলের নেতা হবেন। কিন্তু তাতে তারেক রহমানের কোনো লাভ হবে না; বরং জিয়া পরিবারের হাত থেকে বিএনপির নেতৃত্ব স্থায়ীভাবে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কাজেই তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি আওয়ামী লীগের বর্তমান মেকানিজমে নির্বাচনে যাবে না।
এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো নির্বাচন করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের এখন ভাত ছিটানোর সামর্থ্যের অনেক উন্নতি হয়েছে। কাজেই নির্বাচনে ‘কাক’-এর পরিমাণও একেবারে কম হবে বলে মনে হয় না।
পক্ষান্তরে তারেকের বিএনপি হরতাল-অবরোধের পথ ছেড়ে আসবে বলেও মনে হয় না। কারণ আওয়ামী শর্তের নির্বাচনে অংশ নিলে ব্যক্তিগতভাবে তারেকের তেমন কোনো লাভ নেই। এর আগে হরতাল-অবরোধের নামে ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করায় বিএনপির চরিত্রে একটা অমোচনীয় দাগ তৈরি হয়েছিল। গত দুই-তিন বছরের অহিংস ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পর বিএনপির ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হচ্ছিল। কিন্তু তারা সেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেনি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে তারা ঠিকই পুরোনো চরিত্রে ফিরে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশকে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করার পর বিএনপির পক্ষে কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। সহিংস কর্মসূচি দিলে পুলিশ অ্যাকশন নেবেই। ২৮ অক্টোবরও তাই হয়েছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে।
অথচ ক্ষমতাসীনদের উসকানিকে উপেক্ষা করে বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে ওই সমাবেশ শেষ করত। সমাবেশে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে বলতে পারত, নির্বাচনে যেখানে অনিয়ম ও কারচুপি হবে, সেখানেই অবরোধ হবে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এই সরকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার আহ্বান জানাত, তাহলে হয়তো দেশের রাজনীতি ভিন্ন হতে পারত। এখন বিএনপি নির্বাচনমুখী নেতা-কর্মীদের ঠেকাবে, না নির্বাচন প্রতিরোধের কর্মসূচি সফল করবে?
আসলে তারেক রহমানের কাছে বিএনপি নামের দলটি জিম্মি হয়ে গেছে। তাঁর ইচ্ছাতেই সবকিছু হচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও হবে। তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কিছু বলার বা করার মতো হিম্মত রাখেন না। তাহলে অবশ্য পদও থাকবে না। এই বাস্তবতায় বিএনপির কাছে সহিংসতা, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না।
বিএনপি সহিংস কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। আওয়ামী লীগ এই সহিংসতার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে, দ্রুত বিচার আইনে দণ্ড দিয়ে জেলখানায় ভরে রাখবে। খুচরা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কিছু ‘কেক-পরোটা’ দিয়ে একটা নির্বাচনও করে ফেলবে। দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রসাতলে যাবে। এর বাইরে রাজনীতিতে ভিন্ন কোনো দৃশ্যপট আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
আমাদের দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই ‘তলে তলে’ হয়। এই ‘তলে তলে’ হওয়া আলাপ-আলোচনা-শর্ত-চুক্তির আলোকে শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, এমন একটা প্রত্যাশা অনেকের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সেই আশা ক্রমেই উবে যেতে বসেছে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করবে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। নির্বাচন বর্জন করে সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে দলটি কি আদৌ টিকবে, এ প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসছে।
বিএনপিকে বাদ দিয়ে কীভাবে নির্বাচন করা যায়, সেই নির্বাচনে জেতা যায়, ক্ষমতায় থাকা যায়, সেই ক্ষমতাকে কীভাবে জায়েজ করা যায়? এসব ব্যাপার আওয়ামী লীগের মতো অভিজ্ঞ আর কোনো দল দুনিয়ায় আছে বলে মনে হয় না। ১৫ বছর ধরে তারা সেই চর্চা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছে। কাজেই বলা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘ভালোভাবেই’ হবে, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই নির্বাচনে জিতে আবার আওয়ামী লীগই যে ক্ষমতায় আসবে, এটা প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে ভিড়িয়ে নির্বাচনকে যথাসম্ভব ‘অংশগ্রহণমূলক’ করার জন্য আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যারা নির্বাচনে আসতে চায়, তাদের নির্বাচনে আনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উৎসাহের কোনো ঘাটতি নেই। নতুন নতুন দল ও জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। নির্বাচনের বাগানে নতুন নতুন ‘ফুল’ ফুটছে। ইতিমধ্যে বিএনপির কিছু নিষ্ক্রিয় ও সাবেক নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। আরও কিছু নেতাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য জোর চেষ্টা-তদবির চলছে।
আওয়ামী লীগের বাইরে মোটামুটি ৫০-৬০ জনকে যদি এমপি বানানো যায়, তাহলে সেটা হবে আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় সাফল্য। এই ব্যক্তিরা বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে থাকবেন। তাঁরা সংসদে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করবেন। আবার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের গুণগান গাইবেন। যাঁরা হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেবেন না। আবার মোলায়েম ভাষায় সরকারের সমালোচনাও করবেন। বেশ ‘মধু’র একটা ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’ নির্মাণের প্রয়াস চলছে।
অনেকে অবশ্য আওয়ামী লীগের মুণ্ডুপাত করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা গায়ে মাখছে না। মাখবেই বা কেন? একটি রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্যই তো থাকে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের নীতি-আদর্শ-কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। আওয়ামী লীগ সে কাজটিই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছে। তাদের কৌশলের কাছে আর কেউ বা কোনো দল সুবিধা করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন তোলা অবান্তর। প্রেমে আর রণে নীতি চলে না—এটা পুরোনো প্রবাদ। রাজনীতিতেও এখন আর ‘নীতি’ চলে না। নীতি নিয়ে চললে ক্ষমতা থাকে না এবং দলও টেকে না। তাই যেকোনো উপায়ে ও মূল্যে ক্ষমতায় যেতে হবে। ক্ষমতায় থাকার আরাধনা করতে হবে।
বিএনপির শাসনামলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তা-ই করেছিলেন। তখন শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামের মতো জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে বিএনপি চরম অনাগ্রহ দেখিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিঃশেষ করার জন্য এই দলের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ভাগ্যগুণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
গ্রেনেড হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার করার ব্যাপারে খালেদা জিয়া কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনি দেখাবেন কীভাবে? শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা খুন হয়ে যান, তাহলে যে তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের পোয়াবারো হতো। যুগ যুগ ধরে তাঁরা বিনা প্রতিযোগিতায় বাধাবিঘ্ন ছাড়া নির্বাচনে জিততে পারবেন। পরম সুখে ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন!
কিন্তু মানুষের সব ভাবনা তো আর সব সময় বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। যে হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টায় খোদ তারেক রহমানের নাম জড়িয়ে আছে। তারেক রহমানকে বাঁচাতে খালেদা জিয়া পুরো ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা-মামলাটাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই দুজনকে বাগে পেয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমা করে দেবেন, তা কি আর হয়?
এখন ‘নির্বাচনবিরোধী’ নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বলে বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের যে সত্যতা নেই, তা কেউ বলবে না। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য পরিচালিত গ্রেনেড হামলার ঘটনার সময় বিএনপির ভূমিকাকে তিনি কীভাবে দেখেন? ইট মারলে তো পাটকেল খেতেই হবে। রাজনীতি তো ফেরেশতাদের কায়কারবার নয়। মানুষ হলে তো প্রতিশোধের ব্যাপার থাকবেই। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রীকে মেরে ফেলতে চাইবেন, আর সেই নেত্রী সুযোগ পেয়ে ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর,আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’ জসীমউদ্দীনের এই ঔদার্যের পদ্য পাঠ করবেন, তা কি আশা করা যায়?
দুর্নীতি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অভিযোগে আদালতের দণ্ড নিয়ে তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে বসে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর পরামর্শে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। তারেক রহমান বিএনপির কোনো নেতাকে বিশ্বাস করেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাক, ভালো করুক, তা তিনি চান না। কারণ তাঁর মধ্যে সংশয় আছে। যদি নির্বাচিত এমপিরা তাঁর কথা না শোনেন!
তারেক রহমান চান দেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। এমন একটা নির্বাচনের আয়োজন করতে, যাতে বিএনপির শতভাগ জয়ের গ্যারান্টির নিশ্চয়তা থাকে। কারণ পূর্ণ শক্তি নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় না গেলে তারেক রহমানের দেশে আসা এবং রাজনীতি করা হবে না। বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, নির্বাহী আদেশে যদি তারেক রহমানের মামলা ও দণ্ড বাতিল বা মওকুফ না করা হয়, তাহলে তাঁর রাজনীতি করা ইহকালে আর সম্ভব হবে না।
আর বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি যদি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে শতাধিক আসনও পায়, তাতে দলের লাভ হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরও লাভ হবে। তিনি বিরোধী দলের নেতা হবেন। কিন্তু তাতে তারেক রহমানের কোনো লাভ হবে না; বরং জিয়া পরিবারের হাত থেকে বিএনপির নেতৃত্ব স্থায়ীভাবে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কাজেই তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি আওয়ামী লীগের বর্তমান মেকানিজমে নির্বাচনে যাবে না।
এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো নির্বাচন করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের এখন ভাত ছিটানোর সামর্থ্যের অনেক উন্নতি হয়েছে। কাজেই নির্বাচনে ‘কাক’-এর পরিমাণও একেবারে কম হবে বলে মনে হয় না।
পক্ষান্তরে তারেকের বিএনপি হরতাল-অবরোধের পথ ছেড়ে আসবে বলেও মনে হয় না। কারণ আওয়ামী শর্তের নির্বাচনে অংশ নিলে ব্যক্তিগতভাবে তারেকের তেমন কোনো লাভ নেই। এর আগে হরতাল-অবরোধের নামে ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করায় বিএনপির চরিত্রে একটা অমোচনীয় দাগ তৈরি হয়েছিল। গত দুই-তিন বছরের অহিংস ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পর বিএনপির ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হচ্ছিল। কিন্তু তারা সেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেনি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে তারা ঠিকই পুরোনো চরিত্রে ফিরে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশকে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করার পর বিএনপির পক্ষে কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। সহিংস কর্মসূচি দিলে পুলিশ অ্যাকশন নেবেই। ২৮ অক্টোবরও তাই হয়েছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে।
অথচ ক্ষমতাসীনদের উসকানিকে উপেক্ষা করে বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে ওই সমাবেশ শেষ করত। সমাবেশে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে বলতে পারত, নির্বাচনে যেখানে অনিয়ম ও কারচুপি হবে, সেখানেই অবরোধ হবে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এই সরকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার আহ্বান জানাত, তাহলে হয়তো দেশের রাজনীতি ভিন্ন হতে পারত। এখন বিএনপি নির্বাচনমুখী নেতা-কর্মীদের ঠেকাবে, না নির্বাচন প্রতিরোধের কর্মসূচি সফল করবে?
আসলে তারেক রহমানের কাছে বিএনপি নামের দলটি জিম্মি হয়ে গেছে। তাঁর ইচ্ছাতেই সবকিছু হচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও হবে। তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কিছু বলার বা করার মতো হিম্মত রাখেন না। তাহলে অবশ্য পদও থাকবে না। এই বাস্তবতায় বিএনপির কাছে সহিংসতা, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না।
বিএনপি সহিংস কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। আওয়ামী লীগ এই সহিংসতার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে, দ্রুত বিচার আইনে দণ্ড দিয়ে জেলখানায় ভরে রাখবে। খুচরা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কিছু ‘কেক-পরোটা’ দিয়ে একটা নির্বাচনও করে ফেলবে। দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রসাতলে যাবে। এর বাইরে রাজনীতিতে ভিন্ন কোনো দৃশ্যপট আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৬ ঘণ্টা আগে