সুতপা বেদজ্ঞ
বাংলাদেশের শ্রম আইনে শ্রমিকদের শ্রেণিবিভাগ থাকলেও নারী ও পুরুষ শ্রমিক আলাদা করা হয়নি। ২০০৬ সালে শ্রম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে শ্রম আইনের সংশোধন করা হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০১৮ সালে আরেক দফা শ্রম আইন সংশোধন করা হয়। ২০২৩ সালে সংশোধিত শ্রম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতবার সংশোধনের পরেও বাংলাদেশ শ্রম আইন শুধু প্রাতিষ্ঠানিক খাত এবং সেই খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কারখানার শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য।
এ ছাড়া মজুরি কমিশন, চা-শ্রমিকদের জন্য চা-বোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মাঝেমধ্যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকদের একটি ব্যাপক অংশ দিনমজুরির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁদের অধিকার নিশ্চিতে গঠিত বিভিন্ন কমিশন, বোর্ড বা শ্রম আইন—এসবের কোথাও দিনমজুর শ্রমিকদের বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
শ্রম সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। গত দুই দশকজুড়ে সরকারি কলকারখানা ব্যাপক হারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের সংজ্ঞাও পাল্টেছে। বিভিন্ন তথ্যমতে, প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ১০-১৫ শতাংশের বেশি নয়। অধিকাংশ শ্রমজীবী এখন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কাজের সঙ্গে যুক্ত।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতরা যেখানে সাধারণত পাঁচজনের কম শ্রমিক কাজ করেন, তাঁরা শ্রম আইনের আওতার বাইরে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরা শ্রম আইন নির্ধারিত সুরক্ষা ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এঁদের মধ্যে নারী শ্রমিকেরা শ্রমিক হিসেবে বঞ্চিত এবং কেবল নারী হওয়ার কারণে বিশেষভাবে বঞ্চিত।
শ্রমিক বলতে নারী-পুরুষ উভয় শ্রমজীবীকে বোঝালেও মজুরির ক্ষেত্রে বিশেষ করে দিনমজুরিতে এখনো পুরুষের সমান মজুরি পান না নারী। অধিকাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের বিশেষ চাহিদা, অর্থাৎ পিরিয়ড বা শিশুদের দুধপান করানোকে নারীদের দুর্বলতা হিসেবে গণ্য করা হয়। ইট ভাঙা, ইট উত্তোলন, বহুতল ভবন নির্মাণ বা রাস্তা-ড্রেন-সেতু ইত্যাদি নির্মাণের মতো ভারী কাজের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান কাজ করলেও তাঁদের মজুরি পুরুষের তিন ভাগের দুই ভাগ। যেসব নারী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কঠিন গৃহস্থালির কাজ সমাধা করেন, তাঁদের জন্যও শ্রম আইনে কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। মজুরি বা কর্মঘণ্টার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। গৃহকর্মীদের মজুরি নির্ভর করে গৃহকর্তাদের মর্জির ওপর।
বাংলাদেশে মোট ২৪০টি (ফাঁড়ি বাগানসহ) চা-বাগানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এই শ্রমিকদের অধিকাংশই নারী। নারীর শ্রমে-ঘামেই আজ চা-শিল্প সুপ্রতিষ্ঠিত। অথচ এই শিল্পের শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে তাঁদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা। এই মজুরিও সব বাগানমালিক ঠিকমতো পরিশোধ করেন না। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বাগানে এখনো নারীদের ১২০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রের আইন ও বিধিমালা তৈরি হয় সংবিধানের আলোকে। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে—কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তিদান।’
শ্রমের অধিকার সম্পর্কে সংবিধানের ২০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’ এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।’ সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করার কথা বলা আছে।
জাতীয় শ্রম নীতিমালা ২০১২-এর ‘লক্ষ্য’ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল কর্মক্ষম নাগরিকের জন্য উৎপাদনমুখী, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, শোভন, নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার ও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।’
শ্রমবিধিমালা ২০১৫-এর ১০৩ ধারায় নারী শ্রমিকদের কাজের সময় নির্ধারণ করা আছে। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কাজ করাতে হলে নারীদের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। ৬৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক নারী শ্রমিক ৩০ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের দ্রব্য কারও সাহায্য ছাড়া হাতে বা মাথায় উত্তোলন, বহন, অপসারণ করার উদ্দেশ্যে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৪৫ ও ৪৬ ধারায় প্রসূতিকালীন ছুটি ও মাতৃত্বকালীন সুরক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে।
সংবিধানের উপরিউক্ত বিধানাবলি এবং বিভিন্ন বিধিমালা-নীতিমালার আলোকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, আমাদের দেশের বিদ্যমান শ্রম আইনে ওই সব বিধানাবলি ও নীতিমালার প্রতিফলন নেই। শ্রম আইন সব শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না।
জাতীয় নীতিমালার ঘোষণা কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও নারী শ্রমিকদের সুরক্ষার প্রশ্নে শ্রমবিধিমালা লঙ্ঘিত হয়েই চলেছে। শ্রম বিধিমালায় যা-ই থাকুক না কেন, মালিকেরা বিশেষ করে পোশাক খাতে কেবল বিদেশি ক্রেতাদের চাপে কিছু কিছু কর্মপরিবেশ উন্নত করার উদ্যোগ নিলেও তা এখনো যথেষ্ট নয়। এসব নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেমন তাগিদ নেই, তেমনি জনগণের দিক থেকেও কোনো চাপ নেই।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা কখনোই নিরাপদ ছিলেন না, আজও নেই। শিল্পবিপ্লবের পর শ্রমিক বলতে শুধু কলকারখানায় কাজ করা শ্রমজীবী মানুষকে বোঝানো হতো। এ কথা সত্য, একসময় পৃথিবীতে কোনো মালিক ছিল না, যখন শ্রমই ছিল সব মানুষের পেশা। ধীরে ধীরে দাসপ্রথা এল। মালিক-শ্রমিক তৈরি হলো। সামন্ত ও বর্তমান পুঁজিবাদ দাস ব্যবস্থারই ‘মোডিফায়েড’ রূপে শ্রমিককে মজুরি কম দিয়ে এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে উদ্বৃত্তমূল্যের পরিমাণ বাড়িয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে চলেছে।
দেশে দেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে আইন আছে। এমনকি শ্রমিকেরা অন্যায্যতার শিকার হলে তার জন্য আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত রয়েছে। তা সত্ত্বেও শ্রমিকেরা বঞ্চিত হয়েই চলেছেন। কারণ মুনাফা ও মজুরির দ্বন্দ্ব-বিরোধে শ্রমিকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অসংগঠিত, এ জন্য দুর্বল ও শোষিত। আগ্রাসী পুঁজিবাদ সমাজে ভোগের সংস্কৃতি ছড়িয়ে গেছে। শ্রমিকদের শোষণ করে অর্থবিত্ত তৈরি করে, সেই সংস্কৃতির একমাত্র ভোক্তা পুঁজিপতি। মালিকের অন্যায্য আচরণ রুখতে হলে, শোষণমুক্ত সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের অবশ্যই সংবিধানের মূল স্পিরিটের কাছে ফিরে যেতে হবে।
মেহনতি মানুষের রক্তে-ঘামে অর্জিত এ দেশে শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা যুগের পর যুগ বঞ্চিত হতেই থাকবেন, সমাজে মজুরিবৈষম্য টিকে থাকবে, অথচ সচেতন জনগণ নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাবে, এটি কোনো কাজের কথা নয়।
সুতপা বেদজ্ঞ, কলামিস্ট ও নারীমুক্তি আন্দোলনের নেত্রী
বাংলাদেশের শ্রম আইনে শ্রমিকদের শ্রেণিবিভাগ থাকলেও নারী ও পুরুষ শ্রমিক আলাদা করা হয়নি। ২০০৬ সালে শ্রম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে শ্রম আইনের সংশোধন করা হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০১৮ সালে আরেক দফা শ্রম আইন সংশোধন করা হয়। ২০২৩ সালে সংশোধিত শ্রম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতবার সংশোধনের পরেও বাংলাদেশ শ্রম আইন শুধু প্রাতিষ্ঠানিক খাত এবং সেই খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কারখানার শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য।
এ ছাড়া মজুরি কমিশন, চা-শ্রমিকদের জন্য চা-বোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মাঝেমধ্যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকদের একটি ব্যাপক অংশ দিনমজুরির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁদের অধিকার নিশ্চিতে গঠিত বিভিন্ন কমিশন, বোর্ড বা শ্রম আইন—এসবের কোথাও দিনমজুর শ্রমিকদের বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
শ্রম সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। গত দুই দশকজুড়ে সরকারি কলকারখানা ব্যাপক হারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের সংজ্ঞাও পাল্টেছে। বিভিন্ন তথ্যমতে, প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ১০-১৫ শতাংশের বেশি নয়। অধিকাংশ শ্রমজীবী এখন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কাজের সঙ্গে যুক্ত।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতরা যেখানে সাধারণত পাঁচজনের কম শ্রমিক কাজ করেন, তাঁরা শ্রম আইনের আওতার বাইরে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরা শ্রম আইন নির্ধারিত সুরক্ষা ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এঁদের মধ্যে নারী শ্রমিকেরা শ্রমিক হিসেবে বঞ্চিত এবং কেবল নারী হওয়ার কারণে বিশেষভাবে বঞ্চিত।
শ্রমিক বলতে নারী-পুরুষ উভয় শ্রমজীবীকে বোঝালেও মজুরির ক্ষেত্রে বিশেষ করে দিনমজুরিতে এখনো পুরুষের সমান মজুরি পান না নারী। অধিকাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের বিশেষ চাহিদা, অর্থাৎ পিরিয়ড বা শিশুদের দুধপান করানোকে নারীদের দুর্বলতা হিসেবে গণ্য করা হয়। ইট ভাঙা, ইট উত্তোলন, বহুতল ভবন নির্মাণ বা রাস্তা-ড্রেন-সেতু ইত্যাদি নির্মাণের মতো ভারী কাজের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান কাজ করলেও তাঁদের মজুরি পুরুষের তিন ভাগের দুই ভাগ। যেসব নারী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কঠিন গৃহস্থালির কাজ সমাধা করেন, তাঁদের জন্যও শ্রম আইনে কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। মজুরি বা কর্মঘণ্টার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। গৃহকর্মীদের মজুরি নির্ভর করে গৃহকর্তাদের মর্জির ওপর।
বাংলাদেশে মোট ২৪০টি (ফাঁড়ি বাগানসহ) চা-বাগানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এই শ্রমিকদের অধিকাংশই নারী। নারীর শ্রমে-ঘামেই আজ চা-শিল্প সুপ্রতিষ্ঠিত। অথচ এই শিল্পের শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে তাঁদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা। এই মজুরিও সব বাগানমালিক ঠিকমতো পরিশোধ করেন না। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বাগানে এখনো নারীদের ১২০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রের আইন ও বিধিমালা তৈরি হয় সংবিধানের আলোকে। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে—কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তিদান।’
শ্রমের অধিকার সম্পর্কে সংবিধানের ২০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী’ এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।’ সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করার কথা বলা আছে।
জাতীয় শ্রম নীতিমালা ২০১২-এর ‘লক্ষ্য’ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল কর্মক্ষম নাগরিকের জন্য উৎপাদনমুখী, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, শোভন, নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার ও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।’
শ্রমবিধিমালা ২০১৫-এর ১০৩ ধারায় নারী শ্রমিকদের কাজের সময় নির্ধারণ করা আছে। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কাজ করাতে হলে নারীদের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। ৬৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক নারী শ্রমিক ৩০ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের দ্রব্য কারও সাহায্য ছাড়া হাতে বা মাথায় উত্তোলন, বহন, অপসারণ করার উদ্দেশ্যে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৪৫ ও ৪৬ ধারায় প্রসূতিকালীন ছুটি ও মাতৃত্বকালীন সুরক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে।
সংবিধানের উপরিউক্ত বিধানাবলি এবং বিভিন্ন বিধিমালা-নীতিমালার আলোকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, আমাদের দেশের বিদ্যমান শ্রম আইনে ওই সব বিধানাবলি ও নীতিমালার প্রতিফলন নেই। শ্রম আইন সব শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না।
জাতীয় নীতিমালার ঘোষণা কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও নারী শ্রমিকদের সুরক্ষার প্রশ্নে শ্রমবিধিমালা লঙ্ঘিত হয়েই চলেছে। শ্রম বিধিমালায় যা-ই থাকুক না কেন, মালিকেরা বিশেষ করে পোশাক খাতে কেবল বিদেশি ক্রেতাদের চাপে কিছু কিছু কর্মপরিবেশ উন্নত করার উদ্যোগ নিলেও তা এখনো যথেষ্ট নয়। এসব নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেমন তাগিদ নেই, তেমনি জনগণের দিক থেকেও কোনো চাপ নেই।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা কখনোই নিরাপদ ছিলেন না, আজও নেই। শিল্পবিপ্লবের পর শ্রমিক বলতে শুধু কলকারখানায় কাজ করা শ্রমজীবী মানুষকে বোঝানো হতো। এ কথা সত্য, একসময় পৃথিবীতে কোনো মালিক ছিল না, যখন শ্রমই ছিল সব মানুষের পেশা। ধীরে ধীরে দাসপ্রথা এল। মালিক-শ্রমিক তৈরি হলো। সামন্ত ও বর্তমান পুঁজিবাদ দাস ব্যবস্থারই ‘মোডিফায়েড’ রূপে শ্রমিককে মজুরি কম দিয়ে এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে উদ্বৃত্তমূল্যের পরিমাণ বাড়িয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে চলেছে।
দেশে দেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে আইন আছে। এমনকি শ্রমিকেরা অন্যায্যতার শিকার হলে তার জন্য আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত রয়েছে। তা সত্ত্বেও শ্রমিকেরা বঞ্চিত হয়েই চলেছেন। কারণ মুনাফা ও মজুরির দ্বন্দ্ব-বিরোধে শ্রমিকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অসংগঠিত, এ জন্য দুর্বল ও শোষিত। আগ্রাসী পুঁজিবাদ সমাজে ভোগের সংস্কৃতি ছড়িয়ে গেছে। শ্রমিকদের শোষণ করে অর্থবিত্ত তৈরি করে, সেই সংস্কৃতির একমাত্র ভোক্তা পুঁজিপতি। মালিকের অন্যায্য আচরণ রুখতে হলে, শোষণমুক্ত সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের অবশ্যই সংবিধানের মূল স্পিরিটের কাছে ফিরে যেতে হবে।
মেহনতি মানুষের রক্তে-ঘামে অর্জিত এ দেশে শ্রমিক, বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা যুগের পর যুগ বঞ্চিত হতেই থাকবেন, সমাজে মজুরিবৈষম্য টিকে থাকবে, অথচ সচেতন জনগণ নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাবে, এটি কোনো কাজের কথা নয়।
সুতপা বেদজ্ঞ, কলামিস্ট ও নারীমুক্তি আন্দোলনের নেত্রী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে