আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনায় ভারত ইস্যু হঠাৎ করে আরও জোরালো হয়ে উঠল। নয়াদিল্লির এক কূটনৈতিক বার্তার পর এ নিয়ে গতকাল শনিবার জোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি। দুই দলই বলছে, বাইরের কোনো শক্তি নয়, নির্বাচন বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা তাকিয়ে আছে দেশের মানুষের দিকে। তবে তাদের প্রত্যাশা, ভারত যথাযথ ভূমিকা রাখবে।

ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্প্রতি একটি কূটনৈতিক তারবার্তা দিয়েছে ভারত। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হলে যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত কারও জন্যই তা ভালো হবে না।

গত শুক্রবার ওই খবর সামনে এসেছে। এর পরদিন গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এক দফা নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে খাদের ভিতরে পড়ে গেছে বিএনপি। সেই এক দফা মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এখন সুদিনের আশা! ঠিক এ সময়ে ভারতের কূটনৈতিকের এ অঞ্চল সম্পর্কে একটা মন্তব্য, আজকে খবর নিয়ে দেখুন, বিএনপির নেতারা হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে পড়েছে। আন্দোলনের কী হবে?’

বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে ভারতের বক্তব্য অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা এই সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাই না। ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। পঁচাত্তরে আমরা ক্ষমতা হারিয়েছি, তখন তো ভারত আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়নি।’ এ সময় তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত বা কোনো বিদেশি শক্তি কাউকে ক্ষমতায় বসাবে? কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করবে? যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের এমন মন্তব্য করা অশোভন।’

জনগণই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবে বলে মনে করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাকিয়ে আছে শুধু আমেরিকার দিকে। কখন নিষেধাজ্ঞা আসবে, কখন ভিসা নীতি আসবে। ভিসা নীতি আর নিষেধাজ্ঞার কথা ভেবে ভেবে আটলান্টিকের ওপারে তাকিয়ে আছে, তাকাতে তাকাতে চোখের পাওয়ারও কমে গেছে। ওসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ মাথা ঘামায় না।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা জনগণের দিকে তাকিয়ে আছি। জনগণ ক্ষমতায় রাখলে আমরা থাকব। জনগণ না রাখলে আমরা চলে যাব।’ 

তবে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের জনগণের চাওয়ার বিপরীতে যাবে না বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষের ওপর আস্থা রাখি, তাদের শক্তির ওপর আস্থা রাখি। আমি মনে করি, ভারত দেখবে বাংলাদেশের মানুষ কী চায়? বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি তারা (ভারত) কোনো পদক্ষেপ নেয়, সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এই অঞ্চলের মানুষের জন্যও সেটা শুভ হবে না।’

প্রকাশিত খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যারা গণতন্ত্রের কথা বলে সব সময়, তাদের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত। যদি এই নিউজটা সত্যি হয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিশ্চয় এটা আশা করব, ভারত বাংলাদেশের মানুষের যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেবে।’