সারা দেশে পাল তুলে এগিয়ে চলছে নৌকা। কিন্তু পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় নৌকার গতি কমে এসেছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতে, এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্যের কারণে নৌকার এ অবস্থা। আগামী নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করতে হলে বিকল্প নেতা লাগবে। নির্বাচনের আগে আরও একটি বিষয় নিয়ে ভোটের মাঠে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সেটি হলো পলাশবাড়ী। এ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর অনেক ‘সমর্থক’ রয়েছেন। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে বড় পার্থক্য গড়ে দেবেন এ উপজেলার ভোটাররা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে ডজনখানেক নেতা এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন। একসময় আসনটি জাতীয় পার্টির (জাপা) ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। দুই যুগের বেশি সময় তাদের দখলে ছিল আসনটি। এরপর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জোটে থাকায় দলটি এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এবারও প্রার্থী হতে চান। তবে তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন আরও বেশ কয়েকজন নেতা। আলোচনায় আছেন গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মো. আজিজুর রহমান সরকার, পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান বিপ্লব।
নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন জেলা কমিটির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান মাসুম ও রফিকুল ইসলাম। মাঠপর্যায়ে জাতীয় পার্টির ‘অস্তিত্ব’ খুঁজে না পাওয়া গেলেও মঈনুর রাব্বী ও ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পীর এ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মাওলানা নজরুল ইসলামকে চূড়ান্ত প্রার্থী (স্বতন্ত্র) হিসেবে ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী।
জাতীয় পার্টির নেতা ফজলে রাব্বী চৌধুরী দীর্ঘদিন এ আসনের এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-৩ আসনের নাম নিলে তাঁর কথাই আলোচনায় আসবে বেশি। এমনকি ২০০৮ সালেও এমপি হন তিনি। তবে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. ইউনুস আলী এমপি হন।
গত নির্বাচনে এমপি হন উম্মে কুলসুম স্মৃতি। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার এ আসনে নৌকার পাল তুলতে চাইলে শক্তিশালী প্রার্থী দরকার। এ ছাড়া জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। অপরদিকে এ আসনে লড়বেন হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির মইনুল হাসান সাদিক। জামায়াতে ইসলামীও ছাড় দিতে নারাজ।
দুই এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকদের। তাঁরা বলছেন, সব দল নির্বাচনে এলে এবার লড়াই জমবে। বর্তমান এমপির কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, এলাকায় বর্তমান এমপিকে নিয়ে কোনো আলোচনাই হচ্ছে না। এমনকি তাঁর মেয়াদকালে তেমন উন্নয়নও হয়নি। এবার বিএনপির মইনুল হাসান সাদিক এবং আওয়ামী লীগের মফিজুল হক সরকারের মধ্যে হবে মূল লড়াই। পলাশবাড়ীতে জামায়াতের ভোট নির্বাচনে বেশ প্রভাব ফেলবে।
নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মফিজুল হক সরকার বলেন, ‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বর্তমান এমপির প্রতি নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন। সারা দেশে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ হলেও এই আসনের দুই উপজেলায় তেমন কোনো কাজ হয়নি।’
মইনুল হাসান সাদিক বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। তবে দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে এ আসনে বিএনপি আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি।’
জামায়াতের পলাশবাড়ী উপজেলা আমির আবু বকর সিদ্দিক বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত পৃথকভাবে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আরও সময় আছে জাতীয় নির্বাচনের। সময়ই বলে দেবে রাজনীতি কোন দিকে যাবে।
জাতীয় পার্টির পলাশবাড়ী উপজেলার আহ্বায়ক আলমগীর মণ্ডল জানান, ‘দলের নীতিনির্ধারকেরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূলেও তা-ই কার্যকর হবে। তবে জাতীয় পার্টি সরকারি দলের সঙ্গে ছিল, এখনো আছে। আগামী দিনে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছি।’