৯ মাসেও পরিচয় মেলেনি শিশুটির

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২১, ০৭: ৪০
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১৮: ০৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক কোনায় বিছানায় ৯ মাস ধরে শুয়ে আছে অজ্ঞাত পরিচয় এক শিশু (১১)। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি দুপুরে জেলার আশুগঞ্জে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় শিশুটি। এরপর ২৫ দিন হাসপাতাল কোমায় থেকে চোখ মেলে শিশুটি। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ করেনি কেউ।

এখনো কথা বলতে না পারায় নাম-ঠিকানাও জানা সম্ভব হয়নি। গত ৯ মাসে তার শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এর পেছনে অবদান হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পরিচ্ছন্নতাকর্মী উজ্জ্বল মিয়ার। নাম না জানা শিশুটিকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করছেন তিনি। উজ্জ্বল মিয়া অজ্ঞাত এই শিশুটির নাম দিয়েছেন শরিফ মিয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর থেকেই সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। ২৫ দিন পর সে চোখ মেলতে শুরু করে। শিশুটির পরিবারের কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ।

ফলে জানা যায়নি তার নাম-পরিচয়। হাসপাতালে আনার পর থেকে শিশুটির সেবাযত্ন করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী উজ্জ্বল মিয়া। প্রথম দিকে শিশুটি খাবার খেতে পারত না। তাই তাকে বিভিন্ন ফলের রস সিরিঞ্জ দিয়ে খাওয়াতেন উজ্জ্বল মিয়া। এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে সে। বিছানা থেকে উঠে বসতে না পারলেও, মুখে কথা বলার চেষ্টা করে। এখন ভাত ও ফলমূল চিবিয়ে খেতে পারছে।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী উজ্জ্বল মিয়া জানান, শিশুটিকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশি সেবাযত্ন করেছেন তিনি। প্রতিদিন তার মলমূত্র পরিষ্কার, গোসল করানো, তেল মালিশ করাসহ তার সেবাযত্ন করতে হয়। তার নাম না জানায় শরিফ মিয়া বলে ডাকা হয়। মাঝেমধ্যে লোকজন আসে শিশুটি দেখতে। তখন অনেকেই কিছু টাকা দিয়ে যান। তা না হলে নিজের টাকা দিয়ে শিশুটিকে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘তার প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এর মাঝে লাভক্ষতি খুঁজি না।’

শিশুটির চিকিৎসায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন জানান, শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। দিন দিন আরও উন্নতির দিকে যাবে বলে প্রত্যাশা।

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, তিনি যোগদানের পর কেউ ছেলেটিকে খোঁজ করেনি। ছেলেটির পরিবারের যাতে সন্ধান পাওয়া যায়, চেষ্টা করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত