গৌতম রায়
সাম্প্রদায়িকতার পথ ধরে ফ্যাসিবাদ ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই নখদন্ত বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই চেষ্টা যে এখন একটা উচ্চপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তা তিস্তা শীতলবাদ থেকে মহম্মদ জুবাইয়েরকে গ্রেপ্তারের ঘটনাবলির ভেতর দিয়ে আমাদের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। ভারতে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি কোনো অবস্থাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষে দাঁড়ানো কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে তাঁর নিজের মত প্রকাশ করতে দেবে না। সংখ্যালঘুর পক্ষে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে দেবে না।
সংখ্যালঘুর জানমালের নিরাপত্তার দাবিতে কোনো ধরনের কর্মসূচিও পালন করতে দেবে না।আরএসএসের ঘোষিত কর্মসূচি হলো মুসলমানমুক্ত ভারত। ফ্যাসিবাদী সংগঠন আরএসএসের এই ঘোষিত কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করাই হলো তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রশক্তি করায়ত্ত করার পর থেকে বিজেপি ও তার বিভিন্ন ধরনের সহযোগী সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করে চলেছে।
রাষ্ট্রশক্তির কাছে তিস্তা শীতলবাদের অপরাধ হলো—তিনি সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজের ওপর রাষ্ট্রশক্তির সংঘবদ্ধ আক্রমণের স্বরূপ জাতীয় স্তরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও উন্মোচন করছেন। ভারতের রাষ্ট্রশক্তি কীভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর প্রতি চরম নেতিবাচক আচরণ করে চলেছে, তথ্য-প্রমাণসহ তার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করছেন। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির তথা বিজেপির চরম ফ্যাসিবাদী আচরণ তুলে ধরার দায়ে আজ ভারতের যেকোনো ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা ব্যক্তি রাষ্ট্রশক্তির আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
আরএসএসের তাত্ত্বিক ভিত্তির অন্যতম প্রধান নির্মাতা এম এস গোলওয়ালকার তাঁর ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ তত্ত্বের ভিত নির্মাণ করেছিলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব না থাকা বা থাকলেও তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার কথা বলে। আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি ২০১৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ভারতের রাষ্ট্রশক্তি দখল করার পর থেকে ধীরে ধীরে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে। তাদের লক্ষ্য মুসলমান সমাজকে বিভিন্ন আইনের মারপ্যাঁচে অধীন করে রাখা।
গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শিবিরের ঘোষিত রাজনৈতিক অবস্থান হলো, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব ধরনের মানবিক অধিকার হরণ করা। তারা সংখ্যালঘুদের সামাজিক অধিকার হরণ করতে সব ধরনের আর্থসামাজিক-প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত করছে। একইভাবে তারা সংখ্যালঘু সমাজের সাংস্কৃতিক অধিকার হরণ করার জন্য সব ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই সংখ্যালঘুদের মধ্যে আছে মুসলমান, খ্রিষ্টান, দলিত—সবাই। তাদের অর্থনৈতিক অধিকার মৌলবাদীরা ইতিমধ্যেই হরণ করেছে। যেমন গোটা দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চাকরিবাকরির ক্ষেত্রে মুসলমান সম্প্রদায়ের নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে জারি হয়েছে।
সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অধিকার হরণ করার ক্ষেত্রেও আরএসএস বা তার সহযোগী সংগঠনগুলো প্রত্যক্ষভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে-পরে পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ফেলা হয়েছে, তাতে মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অধিকার হরণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ভারতে ধর্মান্ধ ফ্যাসিবাদী শক্তির এই ভয়ংকর পদচারণের ভেতরে দেশের আইনি পরিকাঠামো সংখ্যালঘু সমাজের অধিকার নিয়ে অত্যন্ত বৈষম্যমূলক আচরণ করে চলেছে। আদালতের কাছে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যথার্থ বিচার পাচ্ছে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়নের শিকার হওয়া সত্ত্বেও আদালত নিগৃহীত মানুষদের পক্ষ অবলম্বন করছেন না। নিগ্রহকারীদের পক্ষ অবলম্বন করছেন। নিগ্রহকারীদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে গোটা সংখ্যালঘু সমাজের কাছে দেশের আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কেও একটা ভয়ংকর হতাশাজনক মানসিকতা তৈরি করা হচ্ছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গুজরাট গণহত্যা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ভারতে সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী শক্তি সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর যে ভয়াবহ অত্যাচার করে চলেছে, সে সম্পর্কে বামপন্থী আর কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মানুষই (যেমন তিস্তা শীতলবাদ, হর্ষ মান্দার, মহম্মদ জুবেইয়ের প্রমুখ) শুধু মুখর। তাঁরা প্রতিরোধের সংকল্পে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টাও করে চলেছেন।
এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে আইনসভার পেছনের দরজা দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের এক বীভৎস ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তিস্তা ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের সময়কালেই প্রায় সমান্তরালভাবে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের দুটি শিবিরের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলেছে। সেখানে শিবসেনার একদা সুপ্রিমো বাল ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা, কংগ্রেস, এনসিপি জোট সরকার মুখে একধরনের ধর্মনিরপেক্ষ আচরণের কথা বললেও, সেই সরকারের সঙ্গে নীতি নিয়ন্ত্রক হিসেবে এমন মানুষজন রয়েছেন, যাঁরা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা বা পরবর্তীকালে মুম্বাই দাঙ্গার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সেই সব মানুষের বিরুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ কমিশন ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও কোনো সরকারই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের নেতৃত্ব দেওয়া বিজেপির একমাত্র আদর্শগত রাজনৈতিক বন্ধু শিবসেনার কোনো কর্মী-সমর্থক নেতার প্রতি আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়নি।
অতীতে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি-শিবসেনা সরকার ঠিক যেভাবে সেই রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলোতে বামপন্থীদের ট্রেড ইউনিয়নকে ধ্বংস করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিল, একইভাবে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা-কংগ্রেসের সরকারও মহারাষ্ট্রের সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলোতে বামপন্থীদের ট্রেড ইউনিয়নকে ধ্বংস করাকেই সবচেয়ে বড় কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘিরে উত্তর প্রদেশে যে ধরনের ঘৃণার রাজনীতি আরএসএস-বিজেপি পরিচালনা করে, ঠিক সেভাবে কিন্তু মহারাষ্ট্র পরিযায়ী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতি পরিচালনা করে। কংগ্রেসের সঙ্গে একসঙ্গে সরকার পরিচালনাকারী শিবসেনা একবারের জন্যও বিজেপির তুলনায় ব্যতিক্রমী মানসিকতার পরিচয় দেয়নি।
এ রকম একটি পরিস্থিতির ভেতরে গোটা ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিচালিত হচ্ছে। ভারতের এই রাজনৈতিক পরিবেশটি পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলমানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর জানমালের নিরাপত্তার জন্য যাঁরাই যখন সোচ্চার হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রশক্তিকে সব রকমভাবে ব্যবহার করেছে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি। তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারতের একমাত্র বামপন্থীরাই সোচ্চার হয়েছেন। তিস্তা ও জুবেইয়ের গ্রেপ্তার হওয়ার বেশ কয়েক দিন কেটে যাওয়ার পর, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা মামুলি প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তিস্তাদের ওপরে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ, সামাজিক ব্যবস্থার প্রচেষ্টা আজ পর্যন্ত মমতা বা তাঁর সহযোগী কোনো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি করেননি।
তিস্তার গ্রেপ্তারের ঘটনা আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক একটা মানসিকতার জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা, কমিটি ইত্যাদির পক্ষ থেকে তিস্তার গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক স্তরে তিস্তার অন্যায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে যে আলোড়ন উঠেছে, সেটির প্রতিও ন্যূনতম মর্যাদা প্রদর্শনের চেষ্টা করছে না ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্র!
গৌতম রায়, লেখক ও ভারতীয় ইতিহাসবিদ
সাম্প্রদায়িকতার পথ ধরে ফ্যাসিবাদ ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই নখদন্ত বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই চেষ্টা যে এখন একটা উচ্চপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তা তিস্তা শীতলবাদ থেকে মহম্মদ জুবাইয়েরকে গ্রেপ্তারের ঘটনাবলির ভেতর দিয়ে আমাদের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। ভারতে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি কোনো অবস্থাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষে দাঁড়ানো কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে তাঁর নিজের মত প্রকাশ করতে দেবে না। সংখ্যালঘুর পক্ষে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে দেবে না।
সংখ্যালঘুর জানমালের নিরাপত্তার দাবিতে কোনো ধরনের কর্মসূচিও পালন করতে দেবে না।আরএসএসের ঘোষিত কর্মসূচি হলো মুসলমানমুক্ত ভারত। ফ্যাসিবাদী সংগঠন আরএসএসের এই ঘোষিত কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করাই হলো তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রশক্তি করায়ত্ত করার পর থেকে বিজেপি ও তার বিভিন্ন ধরনের সহযোগী সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করে চলেছে।
রাষ্ট্রশক্তির কাছে তিস্তা শীতলবাদের অপরাধ হলো—তিনি সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজের ওপর রাষ্ট্রশক্তির সংঘবদ্ধ আক্রমণের স্বরূপ জাতীয় স্তরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও উন্মোচন করছেন। ভারতের রাষ্ট্রশক্তি কীভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর প্রতি চরম নেতিবাচক আচরণ করে চলেছে, তথ্য-প্রমাণসহ তার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করছেন। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির তথা বিজেপির চরম ফ্যাসিবাদী আচরণ তুলে ধরার দায়ে আজ ভারতের যেকোনো ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা ব্যক্তি রাষ্ট্রশক্তির আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
আরএসএসের তাত্ত্বিক ভিত্তির অন্যতম প্রধান নির্মাতা এম এস গোলওয়ালকার তাঁর ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ তত্ত্বের ভিত নির্মাণ করেছিলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব না থাকা বা থাকলেও তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার কথা বলে। আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি ২০১৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ভারতের রাষ্ট্রশক্তি দখল করার পর থেকে ধীরে ধীরে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে। তাদের লক্ষ্য মুসলমান সমাজকে বিভিন্ন আইনের মারপ্যাঁচে অধীন করে রাখা।
গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শিবিরের ঘোষিত রাজনৈতিক অবস্থান হলো, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব ধরনের মানবিক অধিকার হরণ করা। তারা সংখ্যালঘুদের সামাজিক অধিকার হরণ করতে সব ধরনের আর্থসামাজিক-প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত করছে। একইভাবে তারা সংখ্যালঘু সমাজের সাংস্কৃতিক অধিকার হরণ করার জন্য সব ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই সংখ্যালঘুদের মধ্যে আছে মুসলমান, খ্রিষ্টান, দলিত—সবাই। তাদের অর্থনৈতিক অধিকার মৌলবাদীরা ইতিমধ্যেই হরণ করেছে। যেমন গোটা দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চাকরিবাকরির ক্ষেত্রে মুসলমান সম্প্রদায়ের নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে জারি হয়েছে।
সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অধিকার হরণ করার ক্ষেত্রেও আরএসএস বা তার সহযোগী সংগঠনগুলো প্রত্যক্ষভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে-পরে পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ফেলা হয়েছে, তাতে মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অধিকার হরণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ভারতে ধর্মান্ধ ফ্যাসিবাদী শক্তির এই ভয়ংকর পদচারণের ভেতরে দেশের আইনি পরিকাঠামো সংখ্যালঘু সমাজের অধিকার নিয়ে অত্যন্ত বৈষম্যমূলক আচরণ করে চলেছে। আদালতের কাছে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যথার্থ বিচার পাচ্ছে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়নের শিকার হওয়া সত্ত্বেও আদালত নিগৃহীত মানুষদের পক্ষ অবলম্বন করছেন না। নিগ্রহকারীদের পক্ষ অবলম্বন করছেন। নিগ্রহকারীদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে গোটা সংখ্যালঘু সমাজের কাছে দেশের আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কেও একটা ভয়ংকর হতাশাজনক মানসিকতা তৈরি করা হচ্ছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গুজরাট গণহত্যা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ভারতে সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী শক্তি সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর যে ভয়াবহ অত্যাচার করে চলেছে, সে সম্পর্কে বামপন্থী আর কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মানুষই (যেমন তিস্তা শীতলবাদ, হর্ষ মান্দার, মহম্মদ জুবেইয়ের প্রমুখ) শুধু মুখর। তাঁরা প্রতিরোধের সংকল্পে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টাও করে চলেছেন।
এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে আইনসভার পেছনের দরজা দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের এক বীভৎস ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তিস্তা ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের সময়কালেই প্রায় সমান্তরালভাবে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের দুটি শিবিরের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলেছে। সেখানে শিবসেনার একদা সুপ্রিমো বাল ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা, কংগ্রেস, এনসিপি জোট সরকার মুখে একধরনের ধর্মনিরপেক্ষ আচরণের কথা বললেও, সেই সরকারের সঙ্গে নীতি নিয়ন্ত্রক হিসেবে এমন মানুষজন রয়েছেন, যাঁরা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা বা পরবর্তীকালে মুম্বাই দাঙ্গার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সেই সব মানুষের বিরুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ কমিশন ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও কোনো সরকারই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের নেতৃত্ব দেওয়া বিজেপির একমাত্র আদর্শগত রাজনৈতিক বন্ধু শিবসেনার কোনো কর্মী-সমর্থক নেতার প্রতি আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়নি।
অতীতে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি-শিবসেনা সরকার ঠিক যেভাবে সেই রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলোতে বামপন্থীদের ট্রেড ইউনিয়নকে ধ্বংস করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিল, একইভাবে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা-কংগ্রেসের সরকারও মহারাষ্ট্রের সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলোতে বামপন্থীদের ট্রেড ইউনিয়নকে ধ্বংস করাকেই সবচেয়ে বড় কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘিরে উত্তর প্রদেশে যে ধরনের ঘৃণার রাজনীতি আরএসএস-বিজেপি পরিচালনা করে, ঠিক সেভাবে কিন্তু মহারাষ্ট্র পরিযায়ী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতি পরিচালনা করে। কংগ্রেসের সঙ্গে একসঙ্গে সরকার পরিচালনাকারী শিবসেনা একবারের জন্যও বিজেপির তুলনায় ব্যতিক্রমী মানসিকতার পরিচয় দেয়নি।
এ রকম একটি পরিস্থিতির ভেতরে গোটা ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিচালিত হচ্ছে। ভারতের এই রাজনৈতিক পরিবেশটি পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলমানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর জানমালের নিরাপত্তার জন্য যাঁরাই যখন সোচ্চার হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রশক্তিকে সব রকমভাবে ব্যবহার করেছে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি। তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারতের একমাত্র বামপন্থীরাই সোচ্চার হয়েছেন। তিস্তা ও জুবেইয়ের গ্রেপ্তার হওয়ার বেশ কয়েক দিন কেটে যাওয়ার পর, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা মামুলি প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তিস্তাদের ওপরে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ, সামাজিক ব্যবস্থার প্রচেষ্টা আজ পর্যন্ত মমতা বা তাঁর সহযোগী কোনো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি করেননি।
তিস্তার গ্রেপ্তারের ঘটনা আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক একটা মানসিকতার জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা, কমিটি ইত্যাদির পক্ষ থেকে তিস্তার গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক স্তরে তিস্তার অন্যায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে যে আলোড়ন উঠেছে, সেটির প্রতিও ন্যূনতম মর্যাদা প্রদর্শনের চেষ্টা করছে না ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্র!
গৌতম রায়, লেখক ও ভারতীয় ইতিহাসবিদ
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে