আমরা বাড়াব কার ভাড়া?

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৩
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৩৬

‘এক একটা ট্রিপে যেতে আমাদের ট্রলারে ছয় ব্যারেল বা ৬০০ লিটার ডিজেলের দরকার হয়। এরপর যদি খালি হাতে ফিরতে হয় তবে পুরোটাই লোকসান। জ্বালানি তেলের দাম দফায় দফায় বেড়েই চলছে। ডিজেলের দাম বাড়লেই বাস–ট্রাক, লঞ্চের ভাড়া বাড়ে। তাঁরা যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিয়ে সমন্বয় করেন, আমরা কার ভাড়া বাড়াব?’ ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় বাংলাদেশ ট্রলার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে এ কথা বলেন।

মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘এবার এমনিতেই দক্ষিণাঞ্চলের সিংহভাগ ট্রলার মালিকেরা লাখ লাখ টাকা লোকসানে আছেন। এখন এ সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সাগরে মাছ শিকারের জন্য কত ট্রলার বা ফিশ বোট রয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সমুদ্র সীমানায় দুই ধরনের ট্রলার বা বোট মাছ শিকার করে। একটি কাঠের তৈরি সাধারণ ট্রলার এবং অন্যটি আধুনিক বাণিজ্যিক বোট। ২০০৯–১০ সালে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর, নৌ–পরিবহন অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের নিয়ে একটি জরিপ করা হয়েছিল। প্রায় ১১ বছর আগের করা ওই জরিপে সাগরে সাধারণ কাঠের তৈরি ৬৭ হাজার ফিশ বোট গণনা করা হয়।

স্থানীয় ট্রলার মালিকদের সংগঠনের কাছে পাওয়া তথ্য মতে, মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১০ হাজারের মতো ট্রলার ইলিশ শিকার করে। এ ছাড়া নদ–নদীতে ডিজেল চালিত শ্যালো ইঞ্জিনের নৌকা এবং অগভীর সমুদ্র ও মোহনায় ছোট ট্রলারে জেলেরা মাছ শিকার করেন। এর সংখ্যাও প্রায় ২ লাখের মতো। অর্থাৎ প্রতিদিন সাগর ও নদীতে মাছ শিকারে যাওয়া ট্রলার ও নৌকায় হাজার হাজার লিটার জ্বালানি তেলের দরকার হয়।

হঠাৎ ডিজেলের দাম বাড়ায় এসব জেলেরা হতাশ। জেলেরা জানান, এমনিতেই এবার তাঁরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে লোকসানে আছেন। এর ওপর দাম বাড়ায় এখন মাছ শিকার বন্ধ রাখতে হবে। বাংলাদেশের বৃহত্তম মৎস্য বন্দর পাথরঘাটার ট্রলার মালিক আব্বাস মিয়া বলেন, ‘আমার ছয়টি ট্রলার সাগরে মাছ শিকার করে। প্রতি ট্রিপে ছয় ব্যারেল ডিজেল নিয়ে সাগরে যেতে হয়, যার দাম আগে ছিল ৩৯ হাজার টাকা। এখন বাড়তি মূল্যে আরও ৯ হাজার টাকা গুনতে হবে। মৌসুমে একের পর এক ট্রিপে লসে আছি, এখন আবার ডিজেলের দাম বেড়েছে। ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসা ছাড়া আমাদের আর উপায় নেই।’ একই বক্তব্য দেশের অন্যতম বৃহত্তম আলীপুর মৎস্য বন্দরের ট্রলার মালিকদের।

কুয়াকাটা–আলীপুর মৎস্য বন্দরের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস কাজী জানান, নিষেধাজ্ঞার পর ব্যবসায়ী ও জেলেদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আড়তে মাছ নেই।

ট্রলার মালিকদের সংগঠন আলীপুর ফিশিং বোট মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনসার জোমাদ্দার বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে আর আমাদের কষ্ট বাড়ে। লসের ওপর তেলের দাম বাড়তি এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর।’

বাংলাদেশ ট্রলার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘কৃষিসহ অন্য অনেক ব্যবসার খাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। আমরা দেশের মাছের চাহিদা পূরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সহায়তা করে থাকি। অথচ, আমাদের জন্য সরকারের তেমন কোনো ভর্তুকির ব্যবস্থা নেই। আমরা সরকারের কাছে ভর্তুকি দাবি করছি। আশা করি সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব

৮ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড’

শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জাবিতে এক দিনের শোক, উপ-রেজিস্ট্রারসহ ৪ জন বরখাস্ত

এস আলম সংশ্লিষ্টতা: ৪৫৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ইউনিয়ন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক

ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাজারে বাংলাদেশ-চীনের জায়গা দখলের আশা ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত