জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটতে থাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। সে সময় পাটের ব্যবসা লাভজনক হয়ে উঠেছে। কৃষকেরা বাড়তি কিছু অর্থের মুখ দেখেছেন। ফলে কৃষকের সন্তানেরা পড়াশোনার জন্য শহরাঞ্চলে আসতে থাকেন। শিক্ষিত মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
উদীয়মান বাঙালি মুসলমানের যে অংশটি সাহিত্য-সাংবাদিকতায় আসেন, মূলত তাঁদের মধ্যেই ভাষা নিয়ে উদ্বেগ ছিল তখন। মনে রাখতে হবে, সে সময় এই শিক্ষিত মুসলমানের বেশির ভাগই এসেছিলেন সাধারণ মুসলিম পরিবার থেকে, অভিজাত পরিবার থেকে নয়।
তখন থেকেই ভাষা-প্রশ্নটি নিয়ে ভাবতে থাকেন মানুষ। অভিজাতশ্রেণির উর্দুপ্রীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান সাধারণ মুসলিম পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায় হুমায়ুন আজাদের লেখা ‘বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র’ বইটি থেকে। এই আলোচনায় ভাষাবিষয়ক এমন কিছু দিক উঠে এসেছে, যা পরবর্তীকালে ভাষা নিয়ে লড়াই করা মানুষের মানসগঠনে সহায়ক হয়েছে। ভাষা-প্রশ্নটি যে হঠাৎ করে হাজির হয়নি, বরং বহুদিনের বিতর্কের নির্যাস, সে কথা বুঝতে পারলেই ভাষা আন্দোলনের মহত্ত্ব উপলব্ধি করা যাবে। কেন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে জড়িয়ে গেল আপামর বাঙালি জাতি, সে কথা বোঝা সহজ হবে।
বাংলা পত্রপত্রিকায় বাংলা ভাষার পক্ষে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছিল, আজ তাহলে সেগুলোই দেখা যাক:
ক. আমাদের বঙ্গীয় মুসলমানের কোনো ভাষা নাই। শরীফ সন্তানেরা ও তাহাদের খেদমতকারগণ উর্দু বলেন, বাঙ্গালা ভাষা ঘৃণা করেন। কিন্তু সেই উর্দু জবানে মনের ভাব প্রকাশ করা দূরে থাকুক, পশ্চিমা লোকের গিলিত, চর্বিত শব্দগুলিও অনেকে যথাস্থানে শুদ্ধ আকারে যথার্থ অর্থ প্রয়োগ করিতেও অপারগ। অথচ বাঙ্গালায় মনের ভাব প্রকাশ করিবার সুবিধা হইলেও ঘৃণা করিয়া তাহা হইতে বিরত হন। সতেজ স্বাভাবিক বাংলা ভাষা স্বাধীনতা পাইলে তৎসঙ্গে পল্লীবাসী মুসলমান সমাজের উন্নতির যুগান্তর উপস্থিত হইবে। (নূর আল ঈমান, ১: ৩. ১৩০৭)
খ. আমাদের পূর্ব পুরুষগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা তাতারের অধিবাসীই হোউন আর এতদ্দেশবাসী হিন্দুই হউন, আমরা এক্ষণে বাঙ্গালী, আমাদের মাতৃভাষা বাঙ্গালা। তাহারা (বাংলা ভাষার শত্রুরা) বাঙ্গালার বাঁশ বন ও আম্রকাননের মধ্যস্থিত পর্ণকুটিরে নিদ্রা যাইয়াও এখনো বোগদাদ, বোখারা, কাবুল, কান্দাহারের স্বপ্ন দেখিয়া থাকেন। কেহ কেহ আবার বাঙ্গালার পরিবর্তে উর্দুকে মাতৃভাষা করিবার মোহে বিভোর। দুর্বল ব্যক্তিরা যেমন অলৌকিক স্বপ্নদর্শন করে, অধঃপতিত জাতিও তেমনি অস্বাভাবিক খেয়াল আটিয়া থাকে। (হামেদ আলী, বাসনা, ২: ১, ১৩১৬)
গ. বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা বাঙ্গালা। ইহা দিনের আলোর মতো সত্য। ভারতব্যাপী জাতীয়তা সৃষ্টির অনুরোধে বঙ্গদেশে উর্দু চালাইবার প্রয়োজন যতোই অভিপ্রেত হউক না কেন, সে চেষ্টা আকাশে ঘর বাঁধিবার ন্যায় নিষ্ফল। (মো. ইয়াকুব আলী চৌধুরী, কোহিনুর, মাঘ, ১৩২২)
ঘ. উর্দু-ভাষীরা যে বাংলাদেশের মুসলমানদিগের মধ্যে বাংলার পরিবর্তে উর্দু ভাষা চালাইবার চেষ্টা করেন, এইটা তাহাদের বড় অন্যায়;—অনধিকারচর্চাও বটে। এইরূপ অন্যায়ের চেষ্টা যাহারা করিয়া থাকেন, তাহাদের সঙ্গে আবার একদল ‘ফেউ’ আছেন, এই ‘ফেউ’রা প্রায়ই খাঁটি বাঙালি। ইহারা কলিকাতায় পশ্চিমা নারীর পাণি গ্রহণ করিয়া স্ত্রীর খাতিরে মাকে ছাড়িয়া শাশুড়িকে মা বলিয়া ডাকেন। আর একদল আছেন, যাহারা বক্রাক্ষর দেখিলেই আত্মহারা হইয়া যায়। (মোজাফফর আহমেদ, আল এসলাম, ৩: ৪, ১৯২৪)
ঙ. কেহ কেহ উর্দুর স্বপ্নে বিভোর হইলেও বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা যে বাঙ্গালা, এ বিষয়ে কোনো মতদ্বৈধ থাকা উচিৎ নহে। … আমার স্বজাতির ভাইয়েরা কেবল এই কথাই মনে রাখিবেন যে বর্তমান বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃত মূলকই হউক আর যাহাই হউক, উহা আমাদেরই মাতৃভাষা। (সৈয়দ এমদাদ আলী, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, ১: ২, ১৩২৫)
ওপরের উদ্ধৃতিগুলো স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, তাঁরা কয়েকটি মিথ্যাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ত্যাগ করেছিলেন। উর্দু, আরবি, ফারসি, ইরান, তুরান, মরুভূমি ত্যাগ করে বাংলা ও বাংলাদেশে দীর্ঘ শিকড় প্রোথিত করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁরা যে কলহে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা নির্দেশ করে যে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। বাহান্নতে ঘটে তার বিস্ফোরণ। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সম্ভবত পৃথিবীর দীর্ঘতম সংগ্রাম।
বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটতে থাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। সে সময় পাটের ব্যবসা লাভজনক হয়ে উঠেছে। কৃষকেরা বাড়তি কিছু অর্থের মুখ দেখেছেন। ফলে কৃষকের সন্তানেরা পড়াশোনার জন্য শহরাঞ্চলে আসতে থাকেন। শিক্ষিত মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
উদীয়মান বাঙালি মুসলমানের যে অংশটি সাহিত্য-সাংবাদিকতায় আসেন, মূলত তাঁদের মধ্যেই ভাষা নিয়ে উদ্বেগ ছিল তখন। মনে রাখতে হবে, সে সময় এই শিক্ষিত মুসলমানের বেশির ভাগই এসেছিলেন সাধারণ মুসলিম পরিবার থেকে, অভিজাত পরিবার থেকে নয়।
তখন থেকেই ভাষা-প্রশ্নটি নিয়ে ভাবতে থাকেন মানুষ। অভিজাতশ্রেণির উর্দুপ্রীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান সাধারণ মুসলিম পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায় হুমায়ুন আজাদের লেখা ‘বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র’ বইটি থেকে। এই আলোচনায় ভাষাবিষয়ক এমন কিছু দিক উঠে এসেছে, যা পরবর্তীকালে ভাষা নিয়ে লড়াই করা মানুষের মানসগঠনে সহায়ক হয়েছে। ভাষা-প্রশ্নটি যে হঠাৎ করে হাজির হয়নি, বরং বহুদিনের বিতর্কের নির্যাস, সে কথা বুঝতে পারলেই ভাষা আন্দোলনের মহত্ত্ব উপলব্ধি করা যাবে। কেন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে জড়িয়ে গেল আপামর বাঙালি জাতি, সে কথা বোঝা সহজ হবে।
বাংলা পত্রপত্রিকায় বাংলা ভাষার পক্ষে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছিল, আজ তাহলে সেগুলোই দেখা যাক:
ক. আমাদের বঙ্গীয় মুসলমানের কোনো ভাষা নাই। শরীফ সন্তানেরা ও তাহাদের খেদমতকারগণ উর্দু বলেন, বাঙ্গালা ভাষা ঘৃণা করেন। কিন্তু সেই উর্দু জবানে মনের ভাব প্রকাশ করা দূরে থাকুক, পশ্চিমা লোকের গিলিত, চর্বিত শব্দগুলিও অনেকে যথাস্থানে শুদ্ধ আকারে যথার্থ অর্থ প্রয়োগ করিতেও অপারগ। অথচ বাঙ্গালায় মনের ভাব প্রকাশ করিবার সুবিধা হইলেও ঘৃণা করিয়া তাহা হইতে বিরত হন। সতেজ স্বাভাবিক বাংলা ভাষা স্বাধীনতা পাইলে তৎসঙ্গে পল্লীবাসী মুসলমান সমাজের উন্নতির যুগান্তর উপস্থিত হইবে। (নূর আল ঈমান, ১: ৩. ১৩০৭)
খ. আমাদের পূর্ব পুরুষগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা তাতারের অধিবাসীই হোউন আর এতদ্দেশবাসী হিন্দুই হউন, আমরা এক্ষণে বাঙ্গালী, আমাদের মাতৃভাষা বাঙ্গালা। তাহারা (বাংলা ভাষার শত্রুরা) বাঙ্গালার বাঁশ বন ও আম্রকাননের মধ্যস্থিত পর্ণকুটিরে নিদ্রা যাইয়াও এখনো বোগদাদ, বোখারা, কাবুল, কান্দাহারের স্বপ্ন দেখিয়া থাকেন। কেহ কেহ আবার বাঙ্গালার পরিবর্তে উর্দুকে মাতৃভাষা করিবার মোহে বিভোর। দুর্বল ব্যক্তিরা যেমন অলৌকিক স্বপ্নদর্শন করে, অধঃপতিত জাতিও তেমনি অস্বাভাবিক খেয়াল আটিয়া থাকে। (হামেদ আলী, বাসনা, ২: ১, ১৩১৬)
গ. বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা বাঙ্গালা। ইহা দিনের আলোর মতো সত্য। ভারতব্যাপী জাতীয়তা সৃষ্টির অনুরোধে বঙ্গদেশে উর্দু চালাইবার প্রয়োজন যতোই অভিপ্রেত হউক না কেন, সে চেষ্টা আকাশে ঘর বাঁধিবার ন্যায় নিষ্ফল। (মো. ইয়াকুব আলী চৌধুরী, কোহিনুর, মাঘ, ১৩২২)
ঘ. উর্দু-ভাষীরা যে বাংলাদেশের মুসলমানদিগের মধ্যে বাংলার পরিবর্তে উর্দু ভাষা চালাইবার চেষ্টা করেন, এইটা তাহাদের বড় অন্যায়;—অনধিকারচর্চাও বটে। এইরূপ অন্যায়ের চেষ্টা যাহারা করিয়া থাকেন, তাহাদের সঙ্গে আবার একদল ‘ফেউ’ আছেন, এই ‘ফেউ’রা প্রায়ই খাঁটি বাঙালি। ইহারা কলিকাতায় পশ্চিমা নারীর পাণি গ্রহণ করিয়া স্ত্রীর খাতিরে মাকে ছাড়িয়া শাশুড়িকে মা বলিয়া ডাকেন। আর একদল আছেন, যাহারা বক্রাক্ষর দেখিলেই আত্মহারা হইয়া যায়। (মোজাফফর আহমেদ, আল এসলাম, ৩: ৪, ১৯২৪)
ঙ. কেহ কেহ উর্দুর স্বপ্নে বিভোর হইলেও বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা যে বাঙ্গালা, এ বিষয়ে কোনো মতদ্বৈধ থাকা উচিৎ নহে। … আমার স্বজাতির ভাইয়েরা কেবল এই কথাই মনে রাখিবেন যে বর্তমান বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃত মূলকই হউক আর যাহাই হউক, উহা আমাদেরই মাতৃভাষা। (সৈয়দ এমদাদ আলী, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, ১: ২, ১৩২৫)
ওপরের উদ্ধৃতিগুলো স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, তাঁরা কয়েকটি মিথ্যাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ত্যাগ করেছিলেন। উর্দু, আরবি, ফারসি, ইরান, তুরান, মরুভূমি ত্যাগ করে বাংলা ও বাংলাদেশে দীর্ঘ শিকড় প্রোথিত করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁরা যে কলহে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা নির্দেশ করে যে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। বাহান্নতে ঘটে তার বিস্ফোরণ। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সম্ভবত পৃথিবীর দীর্ঘতম সংগ্রাম।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে