নাটোরের সিংড়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন কাল রোববার। ৯টি ইউপিতেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের লড়তে হচ্ছে বিদ্রোহী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ও ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। তাই জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা উৎকণ্ঠায় আছেন। সাধারণ ভোটারদের মতে, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এবার আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভোটাররা স্বতন্ত্র বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোট দিলে নৌকার ভরাডুবি হবে।

সদ্য বিলুপ্ত সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, তৃণমূলে জনপ্রিয় প্রার্থীদের নাম চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করা হলেও, মনোনয়ন পেয়েছেন অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয়রা। তাই নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যানরা। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকায় তাঁদের রয়েছে জনসমর্থন।

গত বুধবার সন্ধ্যায় চামারী ইউনিয়নের বাহাদুরপুরে গণসংযোগ করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম মৃধা। এ সময় তাঁর সঙ্গে স্থানীয় নেতারা ছিলেন না। তিনি তরুণ ভোটারদের নিয়ে প্রচার চালান। একই সময় দলের বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। লালোর ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। তাঁর পাশেও নেই আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় কর্মীরা আজাদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। কলম ইউপিতে নৌকা পেয়েছেন নাসির উদ্দীন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। অথচ কয়েকজন দলীয় নেতা ছাড়া বাকি সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মইনুল হক চুনুর পক্ষে কাজ করেন।

ডাহিয়ায় নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মামুন সিরাজুল মজিদ। অথচ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এম এম আবুল কালামের পক্ষে কাজ করেছেন। ছাতারদিঘীতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রউফ সরদার। বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন আকন্দের সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীরা। শুধু ব্যতিক্রম চিত্র চৌগ্রাম ইউপিতে। এখানে নৌকা প্রতীকের জাহেদুল ইসলাম ভোলার প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনারস প্রতীকের আলতাফ হোসেন। প্রচারে আলতাফ হোসেন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় এবং তৃতীয় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এখানে নৌকা প্রতীকের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।

সিংড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব দাউদার মাহমুদ বলেন, বিএনপি এখানে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও মানুষের হৃদয় থেকে হারিয়ে যায়নি। তাই বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভোট ‘ফ্যাক্টর’ হওয়া স্বাভাবিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলে বিদ্রোহ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের অপারগতার কথা কেন্দ্রকে অবহিত করেছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এক দশকের বেশি সময়ে সিংড়ায় যে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন হয়েছে, তার জন্যই মানুষ নৌকাকে ভোট দেবে। তাই বিএনপির ভোটে আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারিত হবে, এমনটা ভাবা হাস্যকর।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়ার শেরকোল ও ইটালি ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের লুৎফুল হাবিব রুবেল ও আরিফুল ইসলাম। তাই চেয়ারম্যান পদে আগামীকাল ভোট হবে ১০টি ইউপিতে।