রজত কান্তি রায়
টাঙ্গাইল শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন (জিআই) ভারত নিয়ে নিয়েছে বলে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো? কিংবা আরেকটি প্রশ্ন করা যায়, টাঙ্গাইল শাড়ির ঘটনাই কি প্রথম? উত্তর হবে, না।
খেয়াল করলে দেখবেন, উপ্পাদা জামদানি শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনের জন্য ভারত ২০০৯ সালে আবেদন করেছিল (সিপিডি ডট ওআরজি ডট বিডি, ১৯ জুন, ২০১৪)। আর বাংলাদেশ সেই আবেদন করে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে (ডেইলি স্টার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬)। এর কারণ, আমাদের জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন এবং এ-সংক্রান্ত আইন পাস হয় ২০১৩ সালে। বাংলাদেশের পক্ষে জামদানি শাড়ি, ইলিশ মাছ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, ফজলি আম, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদামাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি এবং দিনাজপুরের কাটারিভোগ চালের যথেষ্ট প্রমাণ ও যুক্তি থাকায় সেগুলো মালিকানা পাওয়া সহজ হয়েছে। কিন্তু আমরা আটকে গিয়েছি টাঙ্গাইল শাড়িতে গিয়ে। এর কারণ কী? সোজা কথায়, বিষয়টি উদাসীনতার।
আজকের পত্রিকায় ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে সৌগত বসুর লেখা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের, কী ভাবছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয় পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে আবেদন করতে হয়। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ ভোরে (শনিবার) বিষয়টি জেনেছি। এর আগে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে তাঁদের অঞ্চলের ঐতিহ্যগত পণ্যগুলোর তালিকা চেয়েছিলাম। টাঙ্গাইলের ডিসিকেও এ নিয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত সেখান থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কোনো আবেদন আসেনি।’ মো. মুনিম হাসানের বক্তব্য খেয়াল করুন। তিনি দেশের সব জেলা প্রশাসক চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খুব একটা ‘কেয়ার’ করেননি সেই চিঠির বিষয়ে।
জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। এটি পেতে সময় লাগে। যাঁরা আগারগাঁও পেটেন্ট অফিসে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন, একটি বইয়ের কপিরাইট পেতে তিন মাসের বেশি দরকার হয়। আর জিআই একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। তাতে সময় আরও বেশি লাগে। এই পুরো সময় এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো জানতেই পারেনি, কী হচ্ছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের হস্তশিল্প বিভাগ টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিল (আজকের পত্রিকা, ফেব্রুয়ারি, ৪)। সেই স্বীকৃতি তারা পায় এ বছরের ২ জানুয়ারি। প্রায় ৪ বছর আমাদের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয় কিংবা তাঁত বোর্ডের মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুই জানতে পারেনি! ঘটনাটি তারা জানতে পারে ১ ফেব্রুয়ারির পর কিংবা তার কিছুদিন আগে।
এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক শেখ সাইফুর রহমানের একটি ফেসবুক পোস্টের কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি পোস্টটি দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘গত মাসে বিষয়টি নজরে আসলে আমি তাঁত বোর্ডের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এবং আমাকে নিয়ে যান তাঁর রুমে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, তিনি জানতেনই না এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি তখন তাঁত বোর্ডের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের আবেদন বিষয়ে কমিটির সদস্যদের ডাকেন। ওই কমিটির প্রধানসহ উপস্থিত তিনজনের বক্তব্যই ছিল অভিন্ন। তাঁরা জানেন না ভারত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পেয়ে গেছে।’ এই হলো আমাদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং তাঁদের কার্যালয়।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, আমাদের দেশে শিল্প, সংস্কৃতি কিংবা মননশীল বিভিন্ন বিষয়ে একই রকমের উদাসীনতা ও অবহেলা খেয়াল করা যায়। ভূমিকা না করে বলা চলে, যেসব কাজের সঙ্গে নগদ অর্থের সংযোগ আছে, আমাদের দেশের সব স্তরের মানুষের সে বিষয়গুলো নিয়ে যত্নের কোনো কমতি থাকে না। কিন্তু যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদের বিষয়, যেগুলোকে যত্ন করে তিলে তিলে গড়ে তুলতে হয় কিংবা যেগুলো থেকে শিগগিরই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় না, সরকারি কর্মকর্তা তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও সেসব বিষয়ে আগ্রহ থাকে না। এই উদাসীনতা ও অবহেলার প্রধান শিকার আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান। অথচ আমরা কথায় কথায় আমাদের ‘হাজার বছরের’ সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কথা বলি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের সমৃদ্ধ শখের হাঁড়ি, কাঠের কাজ, শোলার কাজসহ হস্তশিল্প কিংবা লোকশিল্প হিসেবে পরিচিত শত শত শিল্প উপাদান এখন বিলুপ্তির পথে কিংবা বিলুপ্ত। ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে ‘বিলুপ্তির পথে কিংবা বিলুপ্ত’ শব্দগুলোকে আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিয়ে ব্যবহার করতে পারি।
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব ভারত পেয়ে গেছে বলে তাদের ওপর দায় চাপানোর কোনো অধিকার কি আমাদের আছে? এই ব্যর্থতার জন্য ভারতের ওপর দায় চাপানো মানে হলো নিজেদের ব্যর্থতা ঢেকে বসে থাকা পরের আরেকটি ভুলের জন্য। যদি এখনই দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরব না হয়, নিজেদের কাজটুকু ঠিকভাবে না করে, তাহলে ভবিষ্যতে শিল্প, সংস্কৃতি কিংবা সাহিত্যের আরও অনেক কিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে আমাদের।
টাঙ্গাইল শাড়ি বিষয়ে কি কিছুই করার নেই আমাদের? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আছে। কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ এবং ‘টেকনিক্যালি’ যথেষ্ট কঠিন। কারণ, আগেই বলেছি, জিআই একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। আর ভারতের সঙ্গে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির বিভেদরেখা টানা ঐতিহাসিক কারণেই বেশ জটিল কাজ। দুই দেশের এই দুই অংশ এককালে একই সংস্কৃতি বলয়ের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালের পর অখণ্ড ও অভিন্ন সেই সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও তার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়নি। এখনো ভাওয়াইয়া গান ভারত ও বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ এবং আসামে গীত হয়। কালাই রুটি খাওয়া হয় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং মালদহ, মুর্শিদাবাদে। সাতকড়ার স্বাদ সিলেট কিংবা করিমগঞ্জে একই রকম। ফলে বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। বয়নশিল্পের বিষয়টি আরও বেশি স্পর্শকাতর।
কারণ বয়নশিল্প পৃথিবীর প্রাচীনতম শিল্পগুলোর একটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সময়ে এটি বিকশিত হয়েছে প্রায় একই রকমভাবে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে বা জনপদে এ শিল্প কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। যেমন টাঙ্গাইল শাড়ির কথাই ধরা যাক। এই শাড়ি তৈরি হয় গর্ত তাঁতে। তাতে অনেক পরে ডবি, তারও পরে জ্যাকার্ড যুক্ত করা হয়েছে নকশা তোলার জন্য। পরে তাঁতযন্ত্রের আরও উন্নয়ন হলে সেমি অটোমেটিক তাঁতযন্ত্রে এর বয়ন শুরু হয়, সেটা আবার এখনো গর্ত ছেড়ে ওপরে ওঠেনি। বুননের এই বিবর্তনও অনেক দিন আগের কথা। তবে টাঙ্গাইল শাড়ির বিশেষত্ব হলো ঘন বুনন, মাড়ি করার বিশেষ প্রক্রিয়া, স্থান নাম এবং টাঙ্গাইলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এর দীর্ঘ ইতিহাস।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা কত দিনে টাঙ্গাইল শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনের কাজ শুরু করতে পারেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
রজত কান্তি রায়, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
টাঙ্গাইল শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন (জিআই) ভারত নিয়ে নিয়েছে বলে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো? কিংবা আরেকটি প্রশ্ন করা যায়, টাঙ্গাইল শাড়ির ঘটনাই কি প্রথম? উত্তর হবে, না।
খেয়াল করলে দেখবেন, উপ্পাদা জামদানি শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনের জন্য ভারত ২০০৯ সালে আবেদন করেছিল (সিপিডি ডট ওআরজি ডট বিডি, ১৯ জুন, ২০১৪)। আর বাংলাদেশ সেই আবেদন করে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে (ডেইলি স্টার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬)। এর কারণ, আমাদের জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন এবং এ-সংক্রান্ত আইন পাস হয় ২০১৩ সালে। বাংলাদেশের পক্ষে জামদানি শাড়ি, ইলিশ মাছ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, ফজলি আম, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদামাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি এবং দিনাজপুরের কাটারিভোগ চালের যথেষ্ট প্রমাণ ও যুক্তি থাকায় সেগুলো মালিকানা পাওয়া সহজ হয়েছে। কিন্তু আমরা আটকে গিয়েছি টাঙ্গাইল শাড়িতে গিয়ে। এর কারণ কী? সোজা কথায়, বিষয়টি উদাসীনতার।
আজকের পত্রিকায় ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে সৌগত বসুর লেখা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের, কী ভাবছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয় পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে আবেদন করতে হয়। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ ভোরে (শনিবার) বিষয়টি জেনেছি। এর আগে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে তাঁদের অঞ্চলের ঐতিহ্যগত পণ্যগুলোর তালিকা চেয়েছিলাম। টাঙ্গাইলের ডিসিকেও এ নিয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত সেখান থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কোনো আবেদন আসেনি।’ মো. মুনিম হাসানের বক্তব্য খেয়াল করুন। তিনি দেশের সব জেলা প্রশাসক চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খুব একটা ‘কেয়ার’ করেননি সেই চিঠির বিষয়ে।
জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। এটি পেতে সময় লাগে। যাঁরা আগারগাঁও পেটেন্ট অফিসে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন, একটি বইয়ের কপিরাইট পেতে তিন মাসের বেশি দরকার হয়। আর জিআই একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। তাতে সময় আরও বেশি লাগে। এই পুরো সময় এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো জানতেই পারেনি, কী হচ্ছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের হস্তশিল্প বিভাগ টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিল (আজকের পত্রিকা, ফেব্রুয়ারি, ৪)। সেই স্বীকৃতি তারা পায় এ বছরের ২ জানুয়ারি। প্রায় ৪ বছর আমাদের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয় কিংবা তাঁত বোর্ডের মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুই জানতে পারেনি! ঘটনাটি তারা জানতে পারে ১ ফেব্রুয়ারির পর কিংবা তার কিছুদিন আগে।
এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক শেখ সাইফুর রহমানের একটি ফেসবুক পোস্টের কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি পোস্টটি দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘গত মাসে বিষয়টি নজরে আসলে আমি তাঁত বোর্ডের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এবং আমাকে নিয়ে যান তাঁর রুমে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, তিনি জানতেনই না এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি তখন তাঁত বোর্ডের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের আবেদন বিষয়ে কমিটির সদস্যদের ডাকেন। ওই কমিটির প্রধানসহ উপস্থিত তিনজনের বক্তব্যই ছিল অভিন্ন। তাঁরা জানেন না ভারত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পেয়ে গেছে।’ এই হলো আমাদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং তাঁদের কার্যালয়।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, আমাদের দেশে শিল্প, সংস্কৃতি কিংবা মননশীল বিভিন্ন বিষয়ে একই রকমের উদাসীনতা ও অবহেলা খেয়াল করা যায়। ভূমিকা না করে বলা চলে, যেসব কাজের সঙ্গে নগদ অর্থের সংযোগ আছে, আমাদের দেশের সব স্তরের মানুষের সে বিষয়গুলো নিয়ে যত্নের কোনো কমতি থাকে না। কিন্তু যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদের বিষয়, যেগুলোকে যত্ন করে তিলে তিলে গড়ে তুলতে হয় কিংবা যেগুলো থেকে শিগগিরই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় না, সরকারি কর্মকর্তা তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও সেসব বিষয়ে আগ্রহ থাকে না। এই উদাসীনতা ও অবহেলার প্রধান শিকার আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান। অথচ আমরা কথায় কথায় আমাদের ‘হাজার বছরের’ সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কথা বলি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের সমৃদ্ধ শখের হাঁড়ি, কাঠের কাজ, শোলার কাজসহ হস্তশিল্প কিংবা লোকশিল্প হিসেবে পরিচিত শত শত শিল্প উপাদান এখন বিলুপ্তির পথে কিংবা বিলুপ্ত। ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে ‘বিলুপ্তির পথে কিংবা বিলুপ্ত’ শব্দগুলোকে আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নিয়ে ব্যবহার করতে পারি।
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব ভারত পেয়ে গেছে বলে তাদের ওপর দায় চাপানোর কোনো অধিকার কি আমাদের আছে? এই ব্যর্থতার জন্য ভারতের ওপর দায় চাপানো মানে হলো নিজেদের ব্যর্থতা ঢেকে বসে থাকা পরের আরেকটি ভুলের জন্য। যদি এখনই দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরব না হয়, নিজেদের কাজটুকু ঠিকভাবে না করে, তাহলে ভবিষ্যতে শিল্প, সংস্কৃতি কিংবা সাহিত্যের আরও অনেক কিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে আমাদের।
টাঙ্গাইল শাড়ি বিষয়ে কি কিছুই করার নেই আমাদের? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আছে। কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ এবং ‘টেকনিক্যালি’ যথেষ্ট কঠিন। কারণ, আগেই বলেছি, জিআই একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। আর ভারতের সঙ্গে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির বিভেদরেখা টানা ঐতিহাসিক কারণেই বেশ জটিল কাজ। দুই দেশের এই দুই অংশ এককালে একই সংস্কৃতি বলয়ের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালের পর অখণ্ড ও অভিন্ন সেই সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও তার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়নি। এখনো ভাওয়াইয়া গান ভারত ও বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ এবং আসামে গীত হয়। কালাই রুটি খাওয়া হয় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং মালদহ, মুর্শিদাবাদে। সাতকড়ার স্বাদ সিলেট কিংবা করিমগঞ্জে একই রকম। ফলে বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। বয়নশিল্পের বিষয়টি আরও বেশি স্পর্শকাতর।
কারণ বয়নশিল্প পৃথিবীর প্রাচীনতম শিল্পগুলোর একটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সময়ে এটি বিকশিত হয়েছে প্রায় একই রকমভাবে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে বা জনপদে এ শিল্প কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। যেমন টাঙ্গাইল শাড়ির কথাই ধরা যাক। এই শাড়ি তৈরি হয় গর্ত তাঁতে। তাতে অনেক পরে ডবি, তারও পরে জ্যাকার্ড যুক্ত করা হয়েছে নকশা তোলার জন্য। পরে তাঁতযন্ত্রের আরও উন্নয়ন হলে সেমি অটোমেটিক তাঁতযন্ত্রে এর বয়ন শুরু হয়, সেটা আবার এখনো গর্ত ছেড়ে ওপরে ওঠেনি। বুননের এই বিবর্তনও অনেক দিন আগের কথা। তবে টাঙ্গাইল শাড়ির বিশেষত্ব হলো ঘন বুনন, মাড়ি করার বিশেষ প্রক্রিয়া, স্থান নাম এবং টাঙ্গাইলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এর দীর্ঘ ইতিহাস।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা কত দিনে টাঙ্গাইল শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনের কাজ শুরু করতে পারেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
রজত কান্তি রায়, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে