মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
সম্প্রতি কোটাভিত্তিক আন্দোলনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে জনজীবন দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির হয়ে পড়ে। এমনিতেই রাজধানী শহর ঢাকা প্রবল যানজটে আক্রান্ত থাকে। সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই। গত রোববার আমি মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখেছি। সমস্ত পথঘাট বন্ধ, জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যাওয়ার জো নেই। নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনটি যেহেতু আপাতদৃষ্টিতে সরকারের বিরুদ্ধে, কিন্তু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আদালত সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।
পক্ষান্তরে, এই আন্দোলন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে। সংঘাতটা মূলত সরকার বনাম আদালত। সরকার এখানে নিরাপদ অবস্থানে থেকে বলছে, সর্বোচ্চ আদালতের রায় মান্য করা হবে। কিন্তু এখানে সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করতে পারত, যাতে জনসাধারণের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।
অতীতেও দেখেছি দীর্ঘ ধর্মঘট হয়েছে, হরতাল হয়েছে, অবরোধ হয়েছে। সেসবে সরকার নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এই সব হরতাল-ধর্মঘটে মন্ত্রী-আমলা, সরকারের কিছু ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় জনসাধারণের। কিন্তু দেখা গেছে, লাখ-কোটি টাকা মানুষের লোকসান হয়েছে। মানুষের যেমন লোকসান হয়েছে, তেমনি সরকারেরও লোকসান হয়েছে। কোনো সরকারই জনজীবনের দুর্দশার জন্য উদ্বিগ্ন নয়।
এখন দেখতে পাচ্ছি যে জনগণ এত দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তারাও এত সহনশীল হয়ে গেছে যে আন্দোলনের পক্ষে বা বিপক্ষে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
কোটাকে একটা যৌক্তিক জায়গায় নিয়ে আসা কি খুব কঠিন বিষয়? কোটা পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। কিন্তু ক্যাডার সার্ভিস সব জায়গায় নেই। আর এই ক্যাডার সার্ভিসের জন্য অতীতে কখনো এত বড় আন্দোলন দেখা যায়নি। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য মূলত এই আন্দোলন। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য কোনো উচ্চবাচ্য নেই, সেখানেও তো কোটাপদ্ধতি আছে। তবে হ্যাঁ, মেধার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় পরীক্ষাগুলো হয়, সেখানে কি মেধা বিচারের কোনো অবকাশ থাকে? সম্পূর্ণ মুখস্থবিদ্যার ওপর একটি পদ্ধতিতে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে এবং দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে এই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাও মুখ্য হয়ে পড়ে। দেখা যায় কোনো কোনো শাসনামলে ক্যাডার সার্ভিসও প্রভাবিত হয়ে যায়। কবির ভাষায়, ‘পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি’।
ঔপনিবেশিক আমলের প্রভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভাজনে আমাদের দেশে চাকরির বিধিমালা তৈরি হয়। উপমহাদেশে এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলোয় এখনো এই চাকরির বিধিমালা বলবৎ আছে। এসবকে প্রভাবিত করে থাকে উচ্চবর্গীয় আমলাতন্ত্র। যেহেতু রাজনীতিবিদেরা এখন পর্যন্ত জ্ঞানে-দক্ষতায় একটা উঁচুমাত্রা অর্জন করতে পারেননি, তাই তাঁদেরও আমলাতন্ত্রের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হয়। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন নন ও ক্ষমতা প্রয়োগ করতে গিয়ে স্বজনপ্রীতি এবং প্রকৃত বিচার করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যা-ই হোক, যেহেতু আন্দোলনটি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে, তাই সরকারের উচিত হবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটি যৌক্তিক মীমাংসায় পৌঁছানো এবং আদালতকে উপেক্ষা না করে আইনগতভাবে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই পথ খুঁজে বের করা।
এদিকে আবার সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের একটা বড় আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের কোনো ব্যাপার নেই, সম্পূর্ণ বিষয়টি সরকারের হাতে। সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টি অবশ্যই আমাদের কাছে নতুন এবং যাঁরা সরকারি কর্মচারী নন, তাঁদের কাছে অবশ্যই আকর্ষণীয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য। বিশুদ্ধ সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এই বৈষম্য আছে। যেখানে শিক্ষা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেখানে শিক্ষকেরা যদি অবহেলিত বা নিজেদের উপেক্ষিত মনে করেন, তাহলে তাঁদের আন্দোলন ন্যায়সংগত।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, যাঁরা ক্ষমতাবান, তাঁরা কখনো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। ছাত্রাবস্থায় শিক্ষকদের প্রতি তাঁদের যে আবেগ, সেটিও তৈরি হয়নি। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের ক্লাসরুমের শিক্ষায় অবহেলা, কোচিং সেন্টার ও পরীক্ষার চাপ, ভারী ভারী বইয়ের বোঝা বহন করে তাঁরা ক্লান্ত হয়েছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তনও সরকারের হাতে, সরকার সেই পরিবর্তন না করে কারিকুলাম ও শিক্ষাব্যবস্থাকে জটিল থেকে জটিলতর করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকেরা তাঁদের উপযুক্ত মর্যাদা থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছেন। প্রাইমারি শিক্ষকদের নিয়োগ-বাণিজ্য এবং অন্যান্য জটিলতায় তাঁরা নানাভাবে নিগৃহীত। সঠিক মানুষটি তাঁর সঠিক মর্যাদা পান না। কোনো বড় ধরনের সংস্কার শিক্ষার ক্ষেত্রে ঘটেনি। নানা অপ্রয়োজনীয় বিষয় এনে শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ দিন ধরে কারাবরণ করে আছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি সেখানে সহ্য করা হচ্ছে না। কিন্তু যাঁরা সত্যিকারের শিক্ষক, তাঁদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য একটা সামাজিক চাপ সব সময়ই থেকে যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা ছাত্র, বর্তমানের শিক্ষাপদ্ধতিতে নম্বরের বিচারে তারা মেধাবী এবং এ কথা অনস্বীকার্য যে তারাই সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব ক্ষেত্রে কোনো দায় নেই। বিপুল পরিমাণ অর্থ সেখানে লগ্নি হলেও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। শিক্ষকদের একটা প্রধান অংশ সরকারের অনুসারী, সরকারের যেকোনো উদ্যোগে তাঁরা সহযোগিতা করে থাকেন। বর্তমানে অবশ্য সব দলের অনুসারীরাই এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।
শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে প্রায়ই, কিন্তু কেনইবা এই অচল অবস্থা নিরসনে সরকার উদ্যোগী হচ্ছে না, তা কিন্তু আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। অনুমান করি, আমলাতন্ত্রের চাপের মুখে সরকার এ অবস্থায় বসতে চাইছে না। একদিকে কোটা আন্দোলনের জন্য অচলাবস্থা, অন্যদিকে শিক্ষাঙ্গনে একধরনের অনিশ্চিত অবস্থা। কোনোটাই সাধারণ মানুষের জীবনে কাঙ্ক্ষিত নয়।
একদিকে দ্রব্যমূল্যের উচ্চগতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং দুর্নীতি সারা দেশ গ্রাস করে ফেলেছে। অন্যদিকে জনজীবনের দুর্দশা আমাদের এক অসহায় অবস্থায় নিপতিত করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের সম্পূর্ণ দায় কি জনগণের? আগেই বলেছি, দুর্ভোগ হয় শুধু জনগণের, সরকারের হয় না। সবকিছু ঠিকঠাক চলে, চলে না শুধু কুড়িগ্রামের কোনো এক গ্রাম থেকে আসা ওই বেকার ছেলেটি যে চাকরির পরীক্ষা দিতে পারল না, চিকিৎসার জন্য যে মেয়েটি তার মুমূর্ষু পিতাকে নিয়ে ঢাকা শহরে এসেছে তার স্বাস্থ্যসেবা হলো না অথবা ঢাকার উপকণ্ঠ থেকে কোনো কৃষক তার জরুরি কৃষি উপকরণের প্রয়োজনে ঢাকায় এসেছে, তা সঠিক সময়ে সংগ্রহ করতে পারল না। হাজার হাজার মানুষ যানজটে স্থবির হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠরত কোনো তরুণ ছাত্র কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে পড়ালেখা করে একটা উপার্জনের প্রত্যাশী হওয়ার চেষ্টা করছে। আন্দোলনের সৃজনশীল পদ্ধতিও খুঁজে বের করা দরকার। জনগণ এমনি দুর্ভোগে আক্রান্ত, তার ওপর আন্দোলনের ফলে তারা যদি আরও আক্রান্ত হয়, এটা কি ঠিক হবে?
মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের বীর সন্তান। ১৯৭১ সালে তাঁদের ভূমিকার কথা জাতি বারবার স্মরণ করে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনদ বিতরণে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। ফলে সরকারের সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা এই কোটার অন্তর্ভুক্ত হলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়, কিন্তু যদি পরবর্তী প্রজন্মকে এখানে টেনে আনা হয়, তাহলে তা কতটা যৌক্তিক হবে, এটা বিবেচনার বিষয়।
আমি ২৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, আমার পুত্রের বয়স এখন প্রায় ৫০। কাজেই আমার পুত্রের চাকরিপ্রার্থী হওয়ার কোনো কারণ নেই। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরিপ্রার্থীদের কোনো সম্ভাবনা নেই। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে বিষয়টি যদি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধও কিন্তু আক্রান্ত হবে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং তার নানা সুফল আমরা ভোগ করছি। সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই—আন্দোলনের দ্বারা কি শুধু জনগণই আক্রান্ত হবে?
সম্প্রতি কোটাভিত্তিক আন্দোলনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে জনজীবন দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির হয়ে পড়ে। এমনিতেই রাজধানী শহর ঢাকা প্রবল যানজটে আক্রান্ত থাকে। সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই। গত রোববার আমি মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখেছি। সমস্ত পথঘাট বন্ধ, জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যাওয়ার জো নেই। নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনটি যেহেতু আপাতদৃষ্টিতে সরকারের বিরুদ্ধে, কিন্তু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আদালত সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।
পক্ষান্তরে, এই আন্দোলন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে। সংঘাতটা মূলত সরকার বনাম আদালত। সরকার এখানে নিরাপদ অবস্থানে থেকে বলছে, সর্বোচ্চ আদালতের রায় মান্য করা হবে। কিন্তু এখানে সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করতে পারত, যাতে জনসাধারণের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।
অতীতেও দেখেছি দীর্ঘ ধর্মঘট হয়েছে, হরতাল হয়েছে, অবরোধ হয়েছে। সেসবে সরকার নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এই সব হরতাল-ধর্মঘটে মন্ত্রী-আমলা, সরকারের কিছু ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় জনসাধারণের। কিন্তু দেখা গেছে, লাখ-কোটি টাকা মানুষের লোকসান হয়েছে। মানুষের যেমন লোকসান হয়েছে, তেমনি সরকারেরও লোকসান হয়েছে। কোনো সরকারই জনজীবনের দুর্দশার জন্য উদ্বিগ্ন নয়।
এখন দেখতে পাচ্ছি যে জনগণ এত দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তারাও এত সহনশীল হয়ে গেছে যে আন্দোলনের পক্ষে বা বিপক্ষে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
কোটাকে একটা যৌক্তিক জায়গায় নিয়ে আসা কি খুব কঠিন বিষয়? কোটা পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। কিন্তু ক্যাডার সার্ভিস সব জায়গায় নেই। আর এই ক্যাডার সার্ভিসের জন্য অতীতে কখনো এত বড় আন্দোলন দেখা যায়নি। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য মূলত এই আন্দোলন। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য কোনো উচ্চবাচ্য নেই, সেখানেও তো কোটাপদ্ধতি আছে। তবে হ্যাঁ, মেধার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় পরীক্ষাগুলো হয়, সেখানে কি মেধা বিচারের কোনো অবকাশ থাকে? সম্পূর্ণ মুখস্থবিদ্যার ওপর একটি পদ্ধতিতে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে এবং দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে এই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাও মুখ্য হয়ে পড়ে। দেখা যায় কোনো কোনো শাসনামলে ক্যাডার সার্ভিসও প্রভাবিত হয়ে যায়। কবির ভাষায়, ‘পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি’।
ঔপনিবেশিক আমলের প্রভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভাজনে আমাদের দেশে চাকরির বিধিমালা তৈরি হয়। উপমহাদেশে এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলোয় এখনো এই চাকরির বিধিমালা বলবৎ আছে। এসবকে প্রভাবিত করে থাকে উচ্চবর্গীয় আমলাতন্ত্র। যেহেতু রাজনীতিবিদেরা এখন পর্যন্ত জ্ঞানে-দক্ষতায় একটা উঁচুমাত্রা অর্জন করতে পারেননি, তাই তাঁদেরও আমলাতন্ত্রের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হয়। জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন নন ও ক্ষমতা প্রয়োগ করতে গিয়ে স্বজনপ্রীতি এবং প্রকৃত বিচার করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যা-ই হোক, যেহেতু আন্দোলনটি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে, তাই সরকারের উচিত হবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটি যৌক্তিক মীমাংসায় পৌঁছানো এবং আদালতকে উপেক্ষা না করে আইনগতভাবে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই পথ খুঁজে বের করা।
এদিকে আবার সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের একটা বড় আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের কোনো ব্যাপার নেই, সম্পূর্ণ বিষয়টি সরকারের হাতে। সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টি অবশ্যই আমাদের কাছে নতুন এবং যাঁরা সরকারি কর্মচারী নন, তাঁদের কাছে অবশ্যই আকর্ষণীয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য। বিশুদ্ধ সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এই বৈষম্য আছে। যেখানে শিক্ষা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেখানে শিক্ষকেরা যদি অবহেলিত বা নিজেদের উপেক্ষিত মনে করেন, তাহলে তাঁদের আন্দোলন ন্যায়সংগত।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, যাঁরা ক্ষমতাবান, তাঁরা কখনো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। ছাত্রাবস্থায় শিক্ষকদের প্রতি তাঁদের যে আবেগ, সেটিও তৈরি হয়নি। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের ক্লাসরুমের শিক্ষায় অবহেলা, কোচিং সেন্টার ও পরীক্ষার চাপ, ভারী ভারী বইয়ের বোঝা বহন করে তাঁরা ক্লান্ত হয়েছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তনও সরকারের হাতে, সরকার সেই পরিবর্তন না করে কারিকুলাম ও শিক্ষাব্যবস্থাকে জটিল থেকে জটিলতর করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকেরা তাঁদের উপযুক্ত মর্যাদা থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছেন। প্রাইমারি শিক্ষকদের নিয়োগ-বাণিজ্য এবং অন্যান্য জটিলতায় তাঁরা নানাভাবে নিগৃহীত। সঠিক মানুষটি তাঁর সঠিক মর্যাদা পান না। কোনো বড় ধরনের সংস্কার শিক্ষার ক্ষেত্রে ঘটেনি। নানা অপ্রয়োজনীয় বিষয় এনে শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ দিন ধরে কারাবরণ করে আছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি সেখানে সহ্য করা হচ্ছে না। কিন্তু যাঁরা সত্যিকারের শিক্ষক, তাঁদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য একটা সামাজিক চাপ সব সময়ই থেকে যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা ছাত্র, বর্তমানের শিক্ষাপদ্ধতিতে নম্বরের বিচারে তারা মেধাবী এবং এ কথা অনস্বীকার্য যে তারাই সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব ক্ষেত্রে কোনো দায় নেই। বিপুল পরিমাণ অর্থ সেখানে লগ্নি হলেও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। শিক্ষকদের একটা প্রধান অংশ সরকারের অনুসারী, সরকারের যেকোনো উদ্যোগে তাঁরা সহযোগিতা করে থাকেন। বর্তমানে অবশ্য সব দলের অনুসারীরাই এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।
শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে প্রায়ই, কিন্তু কেনইবা এই অচল অবস্থা নিরসনে সরকার উদ্যোগী হচ্ছে না, তা কিন্তু আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। অনুমান করি, আমলাতন্ত্রের চাপের মুখে সরকার এ অবস্থায় বসতে চাইছে না। একদিকে কোটা আন্দোলনের জন্য অচলাবস্থা, অন্যদিকে শিক্ষাঙ্গনে একধরনের অনিশ্চিত অবস্থা। কোনোটাই সাধারণ মানুষের জীবনে কাঙ্ক্ষিত নয়।
একদিকে দ্রব্যমূল্যের উচ্চগতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং দুর্নীতি সারা দেশ গ্রাস করে ফেলেছে। অন্যদিকে জনজীবনের দুর্দশা আমাদের এক অসহায় অবস্থায় নিপতিত করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের সম্পূর্ণ দায় কি জনগণের? আগেই বলেছি, দুর্ভোগ হয় শুধু জনগণের, সরকারের হয় না। সবকিছু ঠিকঠাক চলে, চলে না শুধু কুড়িগ্রামের কোনো এক গ্রাম থেকে আসা ওই বেকার ছেলেটি যে চাকরির পরীক্ষা দিতে পারল না, চিকিৎসার জন্য যে মেয়েটি তার মুমূর্ষু পিতাকে নিয়ে ঢাকা শহরে এসেছে তার স্বাস্থ্যসেবা হলো না অথবা ঢাকার উপকণ্ঠ থেকে কোনো কৃষক তার জরুরি কৃষি উপকরণের প্রয়োজনে ঢাকায় এসেছে, তা সঠিক সময়ে সংগ্রহ করতে পারল না। হাজার হাজার মানুষ যানজটে স্থবির হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠরত কোনো তরুণ ছাত্র কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে পড়ালেখা করে একটা উপার্জনের প্রত্যাশী হওয়ার চেষ্টা করছে। আন্দোলনের সৃজনশীল পদ্ধতিও খুঁজে বের করা দরকার। জনগণ এমনি দুর্ভোগে আক্রান্ত, তার ওপর আন্দোলনের ফলে তারা যদি আরও আক্রান্ত হয়, এটা কি ঠিক হবে?
মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের বীর সন্তান। ১৯৭১ সালে তাঁদের ভূমিকার কথা জাতি বারবার স্মরণ করে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনদ বিতরণে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। ফলে সরকারের সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা এই কোটার অন্তর্ভুক্ত হলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়, কিন্তু যদি পরবর্তী প্রজন্মকে এখানে টেনে আনা হয়, তাহলে তা কতটা যৌক্তিক হবে, এটা বিবেচনার বিষয়।
আমি ২৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, আমার পুত্রের বয়স এখন প্রায় ৫০। কাজেই আমার পুত্রের চাকরিপ্রার্থী হওয়ার কোনো কারণ নেই। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরিপ্রার্থীদের কোনো সম্ভাবনা নেই। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে বিষয়টি যদি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধও কিন্তু আক্রান্ত হবে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং তার নানা সুফল আমরা ভোগ করছি। সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই—আন্দোলনের দ্বারা কি শুধু জনগণই আক্রান্ত হবে?
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে