বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চাহিদামতো এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অপারগতা প্রকাশ করায় বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকেরা। গত মাসে ব্যাংক এলসির সংখ্যা কমালেও চলতি মাস থেকে বলতে গেলে তা একেবারে বন্ধ রেখেছে। এদিকে চলমান সংকট দ্রুত না কাটলে সামনের দিনে শিল্পকারখানার যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল, খাদ্যসহ অনেক পণ্যের আমদানি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম বিপর্যয়ের মুখে। খাদ্য দ্রবসহ শিল্প, কলকারখানার কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দ্রব্য আমদানি করতে চাহিদা ডলারের মেটাতে হয় বাংলাদেশকে।

কিন্তু বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দুই মাস ধরে এলসির সংখ্যা কমাতে থাকে। তবে এখন ডলার সংকট আরও বাড়ায় চলতি মাস থেকে কোনো এলসি গ্রহণ করছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এতে আমদানিকারকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। 
বর্তমানে ভারত থেকে ৮০ শতাংশ পুরোনো এলসি আর ২০ শতাংশ নতুন এলসির পণ্য আমদানি হচ্ছে। দ্রুত এ সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আমদানি বাণিজ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে খাদ্য ঘাটতিসহ আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আমদানিকারক নিপু হোসেন জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমদানি পণ্যের এলসি বন্ধ করে দেওয়ায় মারাত্মক সমস্যার মুখে ব্যবসায়ীরা। এভাবে আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে দেশের শিল্প কলকারখানা অচল হয়ে পড়বে। তাতে এমনকি খাদ্য সংকটও দেখা দেবে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান বলেন, ‘চলতি মাস থেকে সব ধরনের এলসি নেওয়া প্রায় বন্ধ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কোনো ধরনের এলসির অনুরোধ গ্রহণ করছে না ব্যাংক। তাতে সংকটে পড়েছি। দ্রুত এ সংকট না কাটলে সামনে ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়াতে পারে।’

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বর্তমান এলসির ক্ষেত্রে ব্যাংকে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৬ টাকা। যা দুই মাস আগেও ছিল ৯৬ টাকা। সবশেষ গত সোমবার ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ১৮৩ ট্রাক পণ্য। রপ্তানি হয়েছে ১১৭ ট্রাক। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে হঠাৎ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মনির হোসেন জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানির পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে। বন্দরের শেড ও ইয়ার্ড খালি পড়ে আছে। বেনাপোল আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকের ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম জানান, ডলার সংকটের কারণে তারা আমদানি কারকদের চাহিদামত এলসি গ্রহণ করতে পারছেন না। সংকট কাটলে এ সমস্যা থাকবে না।