তরুণ চক্রবর্তী
আভাস মিলছিল বহু আগে থেকেই। তবে কংগ্রেসের জয়ের ব্যবধান এত বড় হবে, সেটা অতি বড় রাহুল-ভক্তও স্বপ্ন দেখেছেন বলে মনে হয় না! কর্ণাটক বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফলে তাই উল্লসিত কংগ্রেস। ফিনিক্স পাখির মতো কংগ্রেসকর্মীরা ফের ক্ষমতায় ফেরার গন্ধ পেতে শুরু করেছেন।
সামনেই আরও পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ভোট। সেখানে বিজেপির খুব ভালো ফল করাটা নির্ভর করছে শুধু কংগ্রেসের গোষ্ঠীকোন্দলের ওপর। কংগ্রেস যদি নিজের দলের নেতাদের সামলাতে পারে, তবে অন্তত তিন রাজ্যে ভালো ফল করতে পারে দলটি। এর মধ্যে দুটি রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার রয়েছে। একটিতে সরকার গড়েও হারতে হয়েছে দলের ভাঙনে। তাই বিজেপি শিবিরে শুরু হয়েছে আতঙ্ক।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে ড. মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করে প্রথম ইউপিএ সরকার টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখে বিজেপির জোট সরকারে আসে। ২০২৪ সালে রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপিবিরোধীদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে সেই সম্ভাবনা বোধ হয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না, কর্ণাটকের ভোটের ফল তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এতেই নতুন করে আশার আলো দেখছেন শুধু কংগ্রেস-সমর্থকেরাই নন, বিজেপিবিরোধী সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, মোদিকে হারানো যেতেই পারে। ভারতীয় রাজনীতিতে কর্ণাটকের ফলাফল সেদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন বা চরম হিন্দুত্ববাদী স্লোগান ফের পরাস্ত হলো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায়ও। বিজেপি কর্ণাটকে ভোটের অনেক আগে থেকেই স্কুলপড়ুয়াদের হিজাব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের মন জয়ের চেষ্টা করেছিল। মুসলিম সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল তারা। ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের হয়ে স্লোগান দেন। সব মিলিয়ে বিজেপির প্রচারে হিন্দুত্বই ছিল বড় হাতিয়ার। সেই সঙ্গে মুসলিমবিদ্বেষ। অন্যদিকে, কংগ্রেস ভোটের প্রচারে দুর্নীতিকে প্রধান হাতিয়ার করে। তাদের বক্তব্যে বারবার উঠে আসে ৪০ শতাংশ কমিশন-বাণিজ্যের কথা। তবে প্রচারে দলের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধী বারবার ঘৃণার বিরুদ্ধে মহব্বত বা ভালোবাসার কথাই প্রচার করেন।
ভোটের ফল প্রকাশের পরও সেই ভালোবাসার কথাই শোনা গেল তাঁর প্রতিক্রিয়ায়। তিনি বলেন, ঘৃণার বাজারে গরিব মানুষ ভালোবাসার দোকানকেই সমর্থন করেছেন। তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ধমকানি-চমকানির রাজনীতি এবার বন্ধ করতে হবে। বিজেপিও অবশ্য ভোটে হার মেনে নিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনৈতিক সৌজন্য দেখিয়ে কংগ্রেসকে জয়ের জন্য টুইটারে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন। আর এর থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা, ফের কি ভারতীয় রাজনীতিতে দেখা যাবে রাজনৈতিক সৌজন্য?
ভারতীয় রাজনীতি থেকে বেশ কিছুকাল ধরে রাজনৈতিক সৌজন্য বিষয়টিই উধাও হতে বসেছিল। বেলাগাম ভাষণ আর সরকারি প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিরোধীদের শায়েস্তা করাটাই হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ২০১৯ সালে ভোটের প্রচারে ‘মোদি পদবি’ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় রাহুল গান্ধীকেও দেওয়া হয় দুই বছরের কারাদণ্ড। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর সংসদ সদস্য পদ। এমনকি সরকারি আবাসও ছাড়তে হয় তাঁকে। একাধিক বিরোধী নেতা বর্তমানে জেলে। মন্ত্রী বা সাবেক মন্ত্রীদেরও জেলে ভরা হয়। বিজেপির বিরোধিতা করলেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে জেলে ভরার অভিযোগ উঠছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। সঙ্গে রয়েছে জাতপাতের রাজনীতিরও অভিযোগ। বিরোধীদের তোলা বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রচারে বড় হাতিয়ার উন্নয়ন আর স্বচ্ছ প্রশাসন নিয়ে ঢালাও প্রচার। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগেই ঘায়েল হতে হলো তাঁদের কর্ণাটকে। ২০১৪ সালে এই দুর্নীতির অভিযোগই ছিল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ। তাই ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিজেপির নেতাদের চিন্তা বাড়ছে।
বিজেপির ভোটের প্রচারে বড় ভরসা নরেন্দ্র মোদি। মোদি-ম্যাজিকই তাঁরা প্রতিটি রাজ্যে ব্যবহার করে এসেছে এতকাল। কিন্তু কর্ণাটকে ব্যাপক প্রচার চালিয়েও দলীয় কর্মীদের মুখে হাসি ফোটাতে তিনি ব্যর্থ। অন্যদিকে, যে রাহুলকে এতকাল ‘পাপ্পু’ বলে বিজেপি কটাক্ষ করে এসেছে, দীর্ঘ পদযাত্রার পর সেই রাহুলই এখন কংগ্রেসকে সাফল্য এনে দিতে শুরু করেছেন। তাই প্রিয়াঙ্কা কর্ণাটকের ভোটের ফল প্রকাশ হতেই মন্তব্য করেছেন, রাহুল প্রধানমন্ত্রী হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে দেশবাসীর ওপর। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের সরকার গঠনের পর কর্ণাটকের সাফল্যও রাহুলকে কিন্তু এখন অনেকটাই শক্তিশালী জমির ওপর দাঁড় করিয়েছে। বিজেপিবিরোধী রাজনীতিতে কংগ্রেস ছাডা় কোনো গতি নেই, এই উপলব্ধি আরও তীব্র হচ্ছে ভারতীয় রাজনীতিতে। তাই বিজেপিবিরোধী শিবিরের তৃণমূল, আম আদমি পার্টি থেকে শুরু করে অনেকেই এখন বাধ্য হবে কংগ্রেসের পাশে থাকতে।
তবে কর্ণাটকের ভোটের ফল কংগ্রেসকেও একটি চরম শিক্ষা দিল। দলের কোন্দল থামাতে পারলে জয় সম্ভব, এই বার্তাও প্রকট হলো দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যটিতে।এটা প্রমাণিত সত্য, ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় বিভাজনের তেমন একটা প্রভাব নেই; অর্থাৎ এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাস করে।
তাই রাজ্যে রাজ্যে বিজেপিবিরোধীরাই শক্তিশালী। হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যে বিজেপির সরকার থাকলেও তার পেছনে রয়েছেন কংগ্রেস বা অন্য আঞ্চলিক দলছুট নেতারা। এমনকি উত্তর প্রদেশেও অন্য দল ভাঙিয়ে দাগিদের নিয়ে এসেই ভোটে জিততে হয় বিজেপিকে। আবার দেখা গেছে, ভোটে পরাস্ত হয়েও বিরোধী দলকে ভাঙিয়ে এনে সরকার গড়ায় বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্নাতীত দক্ষতা। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া বা মণিপুরের মানুষ এ ধরনের ঘটনার সাক্ষী। তাই রাহুল কর্ণাটকের মানুষের কাছে আগেই বলেছিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে বেশি আসনে কংগ্রেসকে জয়ী করতে। তাঁরা সেই কথা রেখেছেন। এখন দেখার বিষয়, গোটা দেশ রাহুলের ডাকে সাড়া দেয় কি না।
কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজস্থানে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মরুরাজ্যে ভোট। দলীয় মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শচিন পাইলটের লড়াই থামার কোনো ইঙ্গিত নেই। পাঞ্জাবে ঘরোয়া বিবাদই ছিল কংগ্রেসের পরাজয়ের সবচেয়ে বড় কারণ। একই রোগ রাজস্থানে, দলকে চিন্তায় রেখেছে। কর্ণাটক থেকে রাজস্থান শিক্ষা নেয় কি না, সেটা দেখার। মধ্যপ্রদেশে গতবার কংগ্রেস জিতেও সরকার ধরে রাখতে পারেনি। এবার কর্ণাটকের জয় কংগ্রেসকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ছত্তিশগড়েও একই কথা প্রযোজ্য। তেলেঙ্গানায় বিজেপি বা কংগ্রেসের কোনো সম্ভাবনাই নেই। মিজোরামে অবশ্য বিজেপির সম্ভাবনা না থাকলেও কংগ্রেস লড়াইয়ে রয়েছে। দেখার ব্যাপার, কর্ণাটকের বড় জয় ২০২৪-এর রাস্তা প্রশস্ত করতে চলতি বছরে বাকি বিধানসভা ভোটেও ধরে রাখতে পারে কি না কংগ্রেস। পারলে এক দশক পর মোদি সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী। ফের প্রমাণ হবে, ভারতের মানুষ বিভাজন নয়, বিবিধের মাঝে মিলনেই বিশ্বাসী।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা
আভাস মিলছিল বহু আগে থেকেই। তবে কংগ্রেসের জয়ের ব্যবধান এত বড় হবে, সেটা অতি বড় রাহুল-ভক্তও স্বপ্ন দেখেছেন বলে মনে হয় না! কর্ণাটক বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফলে তাই উল্লসিত কংগ্রেস। ফিনিক্স পাখির মতো কংগ্রেসকর্মীরা ফের ক্ষমতায় ফেরার গন্ধ পেতে শুরু করেছেন।
সামনেই আরও পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ভোট। সেখানে বিজেপির খুব ভালো ফল করাটা নির্ভর করছে শুধু কংগ্রেসের গোষ্ঠীকোন্দলের ওপর। কংগ্রেস যদি নিজের দলের নেতাদের সামলাতে পারে, তবে অন্তত তিন রাজ্যে ভালো ফল করতে পারে দলটি। এর মধ্যে দুটি রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার রয়েছে। একটিতে সরকার গড়েও হারতে হয়েছে দলের ভাঙনে। তাই বিজেপি শিবিরে শুরু হয়েছে আতঙ্ক।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে ড. মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করে প্রথম ইউপিএ সরকার টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখে বিজেপির জোট সরকারে আসে। ২০২৪ সালে রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপিবিরোধীদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে সেই সম্ভাবনা বোধ হয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না, কর্ণাটকের ভোটের ফল তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এতেই নতুন করে আশার আলো দেখছেন শুধু কংগ্রেস-সমর্থকেরাই নন, বিজেপিবিরোধী সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, মোদিকে হারানো যেতেই পারে। ভারতীয় রাজনীতিতে কর্ণাটকের ফলাফল সেদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন বা চরম হিন্দুত্ববাদী স্লোগান ফের পরাস্ত হলো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায়ও। বিজেপি কর্ণাটকে ভোটের অনেক আগে থেকেই স্কুলপড়ুয়াদের হিজাব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের মন জয়ের চেষ্টা করেছিল। মুসলিম সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল তারা। ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের হয়ে স্লোগান দেন। সব মিলিয়ে বিজেপির প্রচারে হিন্দুত্বই ছিল বড় হাতিয়ার। সেই সঙ্গে মুসলিমবিদ্বেষ। অন্যদিকে, কংগ্রেস ভোটের প্রচারে দুর্নীতিকে প্রধান হাতিয়ার করে। তাদের বক্তব্যে বারবার উঠে আসে ৪০ শতাংশ কমিশন-বাণিজ্যের কথা। তবে প্রচারে দলের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধী বারবার ঘৃণার বিরুদ্ধে মহব্বত বা ভালোবাসার কথাই প্রচার করেন।
ভোটের ফল প্রকাশের পরও সেই ভালোবাসার কথাই শোনা গেল তাঁর প্রতিক্রিয়ায়। তিনি বলেন, ঘৃণার বাজারে গরিব মানুষ ভালোবাসার দোকানকেই সমর্থন করেছেন। তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ধমকানি-চমকানির রাজনীতি এবার বন্ধ করতে হবে। বিজেপিও অবশ্য ভোটে হার মেনে নিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনৈতিক সৌজন্য দেখিয়ে কংগ্রেসকে জয়ের জন্য টুইটারে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন। আর এর থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা, ফের কি ভারতীয় রাজনীতিতে দেখা যাবে রাজনৈতিক সৌজন্য?
ভারতীয় রাজনীতি থেকে বেশ কিছুকাল ধরে রাজনৈতিক সৌজন্য বিষয়টিই উধাও হতে বসেছিল। বেলাগাম ভাষণ আর সরকারি প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিরোধীদের শায়েস্তা করাটাই হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ২০১৯ সালে ভোটের প্রচারে ‘মোদি পদবি’ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় রাহুল গান্ধীকেও দেওয়া হয় দুই বছরের কারাদণ্ড। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর সংসদ সদস্য পদ। এমনকি সরকারি আবাসও ছাড়তে হয় তাঁকে। একাধিক বিরোধী নেতা বর্তমানে জেলে। মন্ত্রী বা সাবেক মন্ত্রীদেরও জেলে ভরা হয়। বিজেপির বিরোধিতা করলেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে জেলে ভরার অভিযোগ উঠছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। সঙ্গে রয়েছে জাতপাতের রাজনীতিরও অভিযোগ। বিরোধীদের তোলা বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রচারে বড় হাতিয়ার উন্নয়ন আর স্বচ্ছ প্রশাসন নিয়ে ঢালাও প্রচার। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগেই ঘায়েল হতে হলো তাঁদের কর্ণাটকে। ২০১৪ সালে এই দুর্নীতির অভিযোগই ছিল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ। তাই ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিজেপির নেতাদের চিন্তা বাড়ছে।
বিজেপির ভোটের প্রচারে বড় ভরসা নরেন্দ্র মোদি। মোদি-ম্যাজিকই তাঁরা প্রতিটি রাজ্যে ব্যবহার করে এসেছে এতকাল। কিন্তু কর্ণাটকে ব্যাপক প্রচার চালিয়েও দলীয় কর্মীদের মুখে হাসি ফোটাতে তিনি ব্যর্থ। অন্যদিকে, যে রাহুলকে এতকাল ‘পাপ্পু’ বলে বিজেপি কটাক্ষ করে এসেছে, দীর্ঘ পদযাত্রার পর সেই রাহুলই এখন কংগ্রেসকে সাফল্য এনে দিতে শুরু করেছেন। তাই প্রিয়াঙ্কা কর্ণাটকের ভোটের ফল প্রকাশ হতেই মন্তব্য করেছেন, রাহুল প্রধানমন্ত্রী হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে দেশবাসীর ওপর। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের সরকার গঠনের পর কর্ণাটকের সাফল্যও রাহুলকে কিন্তু এখন অনেকটাই শক্তিশালী জমির ওপর দাঁড় করিয়েছে। বিজেপিবিরোধী রাজনীতিতে কংগ্রেস ছাডা় কোনো গতি নেই, এই উপলব্ধি আরও তীব্র হচ্ছে ভারতীয় রাজনীতিতে। তাই বিজেপিবিরোধী শিবিরের তৃণমূল, আম আদমি পার্টি থেকে শুরু করে অনেকেই এখন বাধ্য হবে কংগ্রেসের পাশে থাকতে।
তবে কর্ণাটকের ভোটের ফল কংগ্রেসকেও একটি চরম শিক্ষা দিল। দলের কোন্দল থামাতে পারলে জয় সম্ভব, এই বার্তাও প্রকট হলো দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যটিতে।এটা প্রমাণিত সত্য, ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় বিভাজনের তেমন একটা প্রভাব নেই; অর্থাৎ এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাস করে।
তাই রাজ্যে রাজ্যে বিজেপিবিরোধীরাই শক্তিশালী। হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যে বিজেপির সরকার থাকলেও তার পেছনে রয়েছেন কংগ্রেস বা অন্য আঞ্চলিক দলছুট নেতারা। এমনকি উত্তর প্রদেশেও অন্য দল ভাঙিয়ে দাগিদের নিয়ে এসেই ভোটে জিততে হয় বিজেপিকে। আবার দেখা গেছে, ভোটে পরাস্ত হয়েও বিরোধী দলকে ভাঙিয়ে এনে সরকার গড়ায় বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্নাতীত দক্ষতা। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া বা মণিপুরের মানুষ এ ধরনের ঘটনার সাক্ষী। তাই রাহুল কর্ণাটকের মানুষের কাছে আগেই বলেছিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে বেশি আসনে কংগ্রেসকে জয়ী করতে। তাঁরা সেই কথা রেখেছেন। এখন দেখার বিষয়, গোটা দেশ রাহুলের ডাকে সাড়া দেয় কি না।
কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজস্থানে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মরুরাজ্যে ভোট। দলীয় মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শচিন পাইলটের লড়াই থামার কোনো ইঙ্গিত নেই। পাঞ্জাবে ঘরোয়া বিবাদই ছিল কংগ্রেসের পরাজয়ের সবচেয়ে বড় কারণ। একই রোগ রাজস্থানে, দলকে চিন্তায় রেখেছে। কর্ণাটক থেকে রাজস্থান শিক্ষা নেয় কি না, সেটা দেখার। মধ্যপ্রদেশে গতবার কংগ্রেস জিতেও সরকার ধরে রাখতে পারেনি। এবার কর্ণাটকের জয় কংগ্রেসকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ছত্তিশগড়েও একই কথা প্রযোজ্য। তেলেঙ্গানায় বিজেপি বা কংগ্রেসের কোনো সম্ভাবনাই নেই। মিজোরামে অবশ্য বিজেপির সম্ভাবনা না থাকলেও কংগ্রেস লড়াইয়ে রয়েছে। দেখার ব্যাপার, কর্ণাটকের বড় জয় ২০২৪-এর রাস্তা প্রশস্ত করতে চলতি বছরে বাকি বিধানসভা ভোটেও ধরে রাখতে পারে কি না কংগ্রেস। পারলে এক দশক পর মোদি সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী। ফের প্রমাণ হবে, ভারতের মানুষ বিভাজন নয়, বিবিধের মাঝে মিলনেই বিশ্বাসী।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে