জাহীদ রেজা নূর
ভারত বিষয়ে বাংলাদেশের অনেক মানুষের মনে বিদ্বেষ আছে। বিভিন্ন প্রশ্নে ভারতের দাদাগিরির কারণে এই বিদ্বেষ যেমন জন্মেছে, তেমনি কোনো কোনো মহল ভারতবিদ্বেষ উসকে দেওয়ার জন্য নানা কথা ছড়িয়েছে, যা এই বিদ্বেষকে পোক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী চৈনিক বাম আর পাকিস্তানিদের সরাসরি দালাল ইসলামি দলগুলোর মধ্যে এই বিরোধিতার বীজ প্রকট। ভারত কূটনৈতিকভাবেও বাংলাদেশের স্বার্থ বিপন্ন করে থাকে। ফলে ভারত রাষ্ট্রকে বন্ধু ভাবা সহজ নয়। দুই দেশের সম্পর্ক আসলেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যায়। শুধু পানি বণ্টনের প্রশ্নটি নিয়েই আমাদের মাথাব্যথা নয়। আরও অনেক প্রসঙ্গ আছে, যেগুলো নিয়ে গুণগতভাবে বলিষ্ঠ হয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা দরকার। এই লেখার বিষয় সেটা নয় বলে বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভক্ত-সমর্থক বাঘের পোশাকে ঢাকা শরীর নিয়ে, যিনি বাংলাদেশের খেলাগুলোয় প্যাভিলিয়ন আলো করে থাকেন, সেই রবি।
কানপুরে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচের সময় ভারতীয় দর্শকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে সেই রবি অসত্য ভাষণ করে যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে আর যাই হোক, বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি, বরং অকারণে ভারতের হাতে একটি ট্রাম্পকার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই এ নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
২. প্রশ্ন উঠতে পারে, দেশে এত সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, অথচ সেগুলো নিয়ে না লিখে এই মুহূর্তে একজন ক্রিকেট-ভক্তের ব্যাপারে লিখতে হচ্ছে কেন? এর উত্তরে প্রথমে বলতে হয়, রবির করা কাণ্ডটি মোটেই শোভন নয় এবং এই কাণ্ড আমাদের সম্মানহানি করেছে। একজন মানুষের আচরণে (তিনি যদি দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন) যদি আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের সম্মানহানি হয়, তাহলে তার ব্যাপারে আমাদের কী পদক্ষেপ নেওয়া সংগত, সে বিষয়ে কথা বলা দরকার।
এই মুহূর্তে যেকোনো রাজনৈতিক ঘটনারই এত বেশি ডালপালা থাকছে এবং এত বেশি মানুষ তাদের মতামত জানাচ্ছে যে, দিন শেষে মূল বিষয়টিই হারিয়ে যায়। ইলিশ নিয়ে যে বিতর্কটি উঠেছিল, তাতে বাণিজ্য উপদেষ্টা আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার কথাগুলো খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, এই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বন্ধন কিছুটা শিথিল। অন্যদিকে, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দেওয়া হাসিনা আমলের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়েও নেটিজেনরা সরব হন। খালেদ মুহিউদ্দীনকে বিষয়টির ব্যাখ্যা করেন আইন উপদেষ্টা। উপদেষ্টাদের কথা শোনার পর অনুমান করা যায়, প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয় আমাদের দেশে, তা থেকে ভারতে যাওয়া ৩ হাজার টন ইলিশ এতটাই অকিঞ্চিৎকর যে তা নিয়ে কথা ওঠাই অসমীচীন। তা ছাড়া এই রপ্তানি থেকে যে বিদেশি আয় হয়, সেটাও আমাদের জন্য একটা অর্জন।
বাণিজ্য উপদেষ্টার কথা যদি মানতে হয়, তাহলে হাসিনা আমলে ভারতে ইলিশ রপ্তানিও খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা ছিল। এতে দেশের স্বার্থহানি হয়নি। তাই সে সময় হাসিনা সরকারের পাঠানো ইলিশ নিয়ে যে প্রচারণা চলেছিল, সেটা সত্য নয়। এখন যদি সেটা ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে তখনো তো ঠিক ছিল। এখন ইলিশ রপ্তানি নিয়ে নেট জগতে যে বিশাল আলোড়ন উঠেছে, তাতে মনে হয় উপদেষ্টারা বুঝি ভারততোষণ করে চলেছেন। আসলে সত্যটা কী, তা কিন্তু সরল চোখেই দেখা যাচ্ছে। কেউ ইচ্ছে করে দেখছেন না, কেউ অন্ধবিশ্বাস থেকে দেখছেন না। ভারতের সঙ্গে সমানে সমানে কথা বলে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি ব্যাপার। অকারণে কোনো ছোট ইস্যুকে বড় করা হলে তাতে বড় ব্যাপারটি হারিয়ে যেতে পারে।
৩. প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস যখন ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’-এর একটি আয়োজনে গিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড বলে মাহফুজ আলমকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখনো দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিল। সেখানেই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এই আন্দোলন খুব পরিকল্পিতভাবে (অগোছালো নয়) চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছুই হঠাৎ হয়নি।’ তার মানে কি এই যে, এই আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল না? ছিল খুবই পরিকল্পিত আন্দোলন? এ নিয়েও এখন নেট দুনিয়া তোলপাড়। আড়াল থেকে এখন বেরিয়ে আসছেন বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর পরিকল্পকেরা। প্রত্যেকেই কেকের ভাগটা নেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব। কে কার চেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছে, তা নিয়ে হচ্ছে বিতর্ক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না।
এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরি। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপে দেশের জনগণকে এতটাই কোণঠাসা করে রেখেছিল এবং তারা এতটাই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল যে কিছু তেলবাজ ও কিছু গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়া আর কেউ সরকারের পক্ষে ছিল না। ফলে একটা স্ফুলিঙ্গের দরকার ছিল। জুলাই-আগস্ট মাসে সেই স্ফুলিঙ্গের দেখা মিলেছিল। এটি একটি বড় ঘটনা।
এর আগে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল আন্দোলনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু সেভাবে সাড়া পায়নি। দলীয় পরিচয়ে হলে কি আন্দোলন এ রকম দাবানল ছড়াতে পারত? জেন-জি তরুণেরা বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছে। এবং শাসন বলতে তারা দেখেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, হাজার কোটি টাকা লুটপাট। সুতরাং তাদের ক্রোধ আর রাগ সংগত কারণেই গিয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। তারা বিএনপির ২০০১-২০০৬-এর শাসন দেখেনি, ফলে সে সময়ের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার কথা আলোচনায় আসেনি। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর নৃশংসতার কথা কতটা শুনেছে জানি না, কিন্তু সেটা যে পাকিস্তানিদের দালালির সুযোগে যথেচ্ছাচার ছিল, সে কথাও তাদের কেউ মনে করিয়ে দেয়নি।
জামায়াতিরা তাদের একাত্তরের কর্মকাণ্ডের জন্য আজ পর্যন্ত জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। এসব ঘটনাও জানা দরকার। তাতে আমাদের রাজনৈতিক অবয়বটা পরিষ্কার হবে। আর তাতে রাষ্ট্র সংস্কারের অর্থ একটি অন্য মাত্রা পাবে।
দেশকে রাজনীতিহীন করা নয়, বরং রাজনীতিতে দেশপ্রেম আনাটাই এখনকার সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার। সেই কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটছে না।
এ রকম আরও অনেক বিষয় আছে, যার উত্তর মিলছে না। কিন্তু মেলা দরকার।
৪. এসব আলোচনার শেষ নেই। সময় যত যাবে, রাজনীতিও রং পাল্টাবে। তাই এখন বাংলাদেশ দলের সুপার সমর্থক রবির কথা দিয়েই শেষ করব লেখা। ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে রবি জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতীয় দর্শকদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ল থলের বিড়াল। অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় দর্শক আর পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। এরপর আরও জানা গেল, চিকিৎসা ভিসায় ভারতে এসে তিনি চেন্নাই আর কানপুরে খেলা দেখার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন এবং সেই সব শহরে বসেই বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।
ভারত সরকার পাঁচ বছরের জন্য রবির ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। সেটা একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা। কিন্তু রবি যে আমাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করলেন, তার কী হবে? তিনি তো খেলার সঙ্গে বাণিজ্য মিলিয়ে ফেললেন। মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেন, তার কী হবে? তিনি তো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ফান্ড পান, সেই টাকায় খেলা দেখেন; সেই প্রতিষ্ঠানগুলোও যে অসম্মানিত হলো, তার কী হবে? শুধু রবি নয়, বাঘের পোশাকে ‘টাইগার’ সেজে যারা স্টেডিয়ামে যায়, তাদের মধ্যে ফেসবুকে ‘ভিউ’ কামানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। এদের যারা পৃষ্ঠপোষক, তারা যেন এদের জানিয়ে দেয়, দুই নম্বরি করলে ‘খবর আছে’।
বাংলাদেশ দল যখন বিভিন্ন দেশে খেলতে যায় কিংবা আমাদের দেশে যখন কোনো দল খেলতে আসে, তখন বাঘের পোশাকে রবিদের মতো ‘টাইগারেরা’ আমাদের উজ্জীবিত করে। কিন্তু তারা যদি মিথ্যার বেসাতি করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কেন শাস্তির ব্যবস্থা হবে না? ক্রীড়া সাংবাদিক নোমানের মতো আমিও মনে করি, বাংলাদেশের স্টেডিয়ামেও রবির প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা উচিত। অন্য ‘টাইগারেরা’ও যদি তাঁর মতো চালিয়াতি করে থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। খেলা মানুষকে কাছে টেনে নেয়। সেই খেলার আবহকে এভাবে কলুষিত করলে শাস্তি হওয়াই উচিত।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ভারত বিষয়ে বাংলাদেশের অনেক মানুষের মনে বিদ্বেষ আছে। বিভিন্ন প্রশ্নে ভারতের দাদাগিরির কারণে এই বিদ্বেষ যেমন জন্মেছে, তেমনি কোনো কোনো মহল ভারতবিদ্বেষ উসকে দেওয়ার জন্য নানা কথা ছড়িয়েছে, যা এই বিদ্বেষকে পোক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী চৈনিক বাম আর পাকিস্তানিদের সরাসরি দালাল ইসলামি দলগুলোর মধ্যে এই বিরোধিতার বীজ প্রকট। ভারত কূটনৈতিকভাবেও বাংলাদেশের স্বার্থ বিপন্ন করে থাকে। ফলে ভারত রাষ্ট্রকে বন্ধু ভাবা সহজ নয়। দুই দেশের সম্পর্ক আসলেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যায়। শুধু পানি বণ্টনের প্রশ্নটি নিয়েই আমাদের মাথাব্যথা নয়। আরও অনেক প্রসঙ্গ আছে, যেগুলো নিয়ে গুণগতভাবে বলিষ্ঠ হয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা দরকার। এই লেখার বিষয় সেটা নয় বলে বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভক্ত-সমর্থক বাঘের পোশাকে ঢাকা শরীর নিয়ে, যিনি বাংলাদেশের খেলাগুলোয় প্যাভিলিয়ন আলো করে থাকেন, সেই রবি।
কানপুরে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচের সময় ভারতীয় দর্শকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে সেই রবি অসত্য ভাষণ করে যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে আর যাই হোক, বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি, বরং অকারণে ভারতের হাতে একটি ট্রাম্পকার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই এ নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
২. প্রশ্ন উঠতে পারে, দেশে এত সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, অথচ সেগুলো নিয়ে না লিখে এই মুহূর্তে একজন ক্রিকেট-ভক্তের ব্যাপারে লিখতে হচ্ছে কেন? এর উত্তরে প্রথমে বলতে হয়, রবির করা কাণ্ডটি মোটেই শোভন নয় এবং এই কাণ্ড আমাদের সম্মানহানি করেছে। একজন মানুষের আচরণে (তিনি যদি দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন) যদি আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের সম্মানহানি হয়, তাহলে তার ব্যাপারে আমাদের কী পদক্ষেপ নেওয়া সংগত, সে বিষয়ে কথা বলা দরকার।
এই মুহূর্তে যেকোনো রাজনৈতিক ঘটনারই এত বেশি ডালপালা থাকছে এবং এত বেশি মানুষ তাদের মতামত জানাচ্ছে যে, দিন শেষে মূল বিষয়টিই হারিয়ে যায়। ইলিশ নিয়ে যে বিতর্কটি উঠেছিল, তাতে বাণিজ্য উপদেষ্টা আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার কথাগুলো খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, এই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বন্ধন কিছুটা শিথিল। অন্যদিকে, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দেওয়া হাসিনা আমলের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়েও নেটিজেনরা সরব হন। খালেদ মুহিউদ্দীনকে বিষয়টির ব্যাখ্যা করেন আইন উপদেষ্টা। উপদেষ্টাদের কথা শোনার পর অনুমান করা যায়, প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয় আমাদের দেশে, তা থেকে ভারতে যাওয়া ৩ হাজার টন ইলিশ এতটাই অকিঞ্চিৎকর যে তা নিয়ে কথা ওঠাই অসমীচীন। তা ছাড়া এই রপ্তানি থেকে যে বিদেশি আয় হয়, সেটাও আমাদের জন্য একটা অর্জন।
বাণিজ্য উপদেষ্টার কথা যদি মানতে হয়, তাহলে হাসিনা আমলে ভারতে ইলিশ রপ্তানিও খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা ছিল। এতে দেশের স্বার্থহানি হয়নি। তাই সে সময় হাসিনা সরকারের পাঠানো ইলিশ নিয়ে যে প্রচারণা চলেছিল, সেটা সত্য নয়। এখন যদি সেটা ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে তখনো তো ঠিক ছিল। এখন ইলিশ রপ্তানি নিয়ে নেট জগতে যে বিশাল আলোড়ন উঠেছে, তাতে মনে হয় উপদেষ্টারা বুঝি ভারততোষণ করে চলেছেন। আসলে সত্যটা কী, তা কিন্তু সরল চোখেই দেখা যাচ্ছে। কেউ ইচ্ছে করে দেখছেন না, কেউ অন্ধবিশ্বাস থেকে দেখছেন না। ভারতের সঙ্গে সমানে সমানে কথা বলে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি ব্যাপার। অকারণে কোনো ছোট ইস্যুকে বড় করা হলে তাতে বড় ব্যাপারটি হারিয়ে যেতে পারে।
৩. প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস যখন ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’-এর একটি আয়োজনে গিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড বলে মাহফুজ আলমকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখনো দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিল। সেখানেই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এই আন্দোলন খুব পরিকল্পিতভাবে (অগোছালো নয়) চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছুই হঠাৎ হয়নি।’ তার মানে কি এই যে, এই আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল না? ছিল খুবই পরিকল্পিত আন্দোলন? এ নিয়েও এখন নেট দুনিয়া তোলপাড়। আড়াল থেকে এখন বেরিয়ে আসছেন বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর পরিকল্পকেরা। প্রত্যেকেই কেকের ভাগটা নেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব। কে কার চেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছে, তা নিয়ে হচ্ছে বিতর্ক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না।
এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরি। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপে দেশের জনগণকে এতটাই কোণঠাসা করে রেখেছিল এবং তারা এতটাই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল যে কিছু তেলবাজ ও কিছু গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়া আর কেউ সরকারের পক্ষে ছিল না। ফলে একটা স্ফুলিঙ্গের দরকার ছিল। জুলাই-আগস্ট মাসে সেই স্ফুলিঙ্গের দেখা মিলেছিল। এটি একটি বড় ঘটনা।
এর আগে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল আন্দোলনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু সেভাবে সাড়া পায়নি। দলীয় পরিচয়ে হলে কি আন্দোলন এ রকম দাবানল ছড়াতে পারত? জেন-জি তরুণেরা বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছে। এবং শাসন বলতে তারা দেখেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, হাজার কোটি টাকা লুটপাট। সুতরাং তাদের ক্রোধ আর রাগ সংগত কারণেই গিয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। তারা বিএনপির ২০০১-২০০৬-এর শাসন দেখেনি, ফলে সে সময়ের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার কথা আলোচনায় আসেনি। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর নৃশংসতার কথা কতটা শুনেছে জানি না, কিন্তু সেটা যে পাকিস্তানিদের দালালির সুযোগে যথেচ্ছাচার ছিল, সে কথাও তাদের কেউ মনে করিয়ে দেয়নি।
জামায়াতিরা তাদের একাত্তরের কর্মকাণ্ডের জন্য আজ পর্যন্ত জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। এসব ঘটনাও জানা দরকার। তাতে আমাদের রাজনৈতিক অবয়বটা পরিষ্কার হবে। আর তাতে রাষ্ট্র সংস্কারের অর্থ একটি অন্য মাত্রা পাবে।
দেশকে রাজনীতিহীন করা নয়, বরং রাজনীতিতে দেশপ্রেম আনাটাই এখনকার সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার। সেই কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটছে না।
এ রকম আরও অনেক বিষয় আছে, যার উত্তর মিলছে না। কিন্তু মেলা দরকার।
৪. এসব আলোচনার শেষ নেই। সময় যত যাবে, রাজনীতিও রং পাল্টাবে। তাই এখন বাংলাদেশ দলের সুপার সমর্থক রবির কথা দিয়েই শেষ করব লেখা। ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে রবি জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতীয় দর্শকদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ল থলের বিড়াল। অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় দর্শক আর পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। এরপর আরও জানা গেল, চিকিৎসা ভিসায় ভারতে এসে তিনি চেন্নাই আর কানপুরে খেলা দেখার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন এবং সেই সব শহরে বসেই বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।
ভারত সরকার পাঁচ বছরের জন্য রবির ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। সেটা একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা। কিন্তু রবি যে আমাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করলেন, তার কী হবে? তিনি তো খেলার সঙ্গে বাণিজ্য মিলিয়ে ফেললেন। মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেন, তার কী হবে? তিনি তো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ফান্ড পান, সেই টাকায় খেলা দেখেন; সেই প্রতিষ্ঠানগুলোও যে অসম্মানিত হলো, তার কী হবে? শুধু রবি নয়, বাঘের পোশাকে ‘টাইগার’ সেজে যারা স্টেডিয়ামে যায়, তাদের মধ্যে ফেসবুকে ‘ভিউ’ কামানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। এদের যারা পৃষ্ঠপোষক, তারা যেন এদের জানিয়ে দেয়, দুই নম্বরি করলে ‘খবর আছে’।
বাংলাদেশ দল যখন বিভিন্ন দেশে খেলতে যায় কিংবা আমাদের দেশে যখন কোনো দল খেলতে আসে, তখন বাঘের পোশাকে রবিদের মতো ‘টাইগারেরা’ আমাদের উজ্জীবিত করে। কিন্তু তারা যদি মিথ্যার বেসাতি করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কেন শাস্তির ব্যবস্থা হবে না? ক্রীড়া সাংবাদিক নোমানের মতো আমিও মনে করি, বাংলাদেশের স্টেডিয়ামেও রবির প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা উচিত। অন্য ‘টাইগারেরা’ও যদি তাঁর মতো চালিয়াতি করে থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। খেলা মানুষকে কাছে টেনে নেয়। সেই খেলার আবহকে এভাবে কলুষিত করলে শাস্তি হওয়াই উচিত।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে